সর্বশেষ

রাশিয়া-ইসরাঈলের দহরম-মহরম


খুনী নেতানিয়াহুর সঙ্গে হাসিমুখে নব্য রাশিয়ান সাম্রাজ্যবাদী প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন
আন্তর্জাতিক রাজনীতি একবারে বোঝা দুষ্কর। এই তো কিছুদিন আগে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লেভরভ ফিলিস্তিনীদের প্রতি সমর্থনের কথা বললেন। আর আজ দেখা যাচ্ছে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আড়ম্বর করে অবৈধ ইসরাঈলের যুদ্ধবাজ বর্বর প্রধানমন্ত্রী বেনজামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে মস্কোতে বৈঠক করছেন। বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদার করতে চাচ্ছেন। সন্ত্রাসী রাষ্ট্র ইসরাঈলের প্রধানমন্তী বেনজামিন আবার রাশিয়াকে সেই দখলদার রাষ্ট্রে গ্যাস সরবরাহের আমন্ত্রণ জানিয়েছে। এখানে দীর্ঘদিনের মিত্র রাষ্ট্রের অবৈধ ইসরাঈলের সঙ্গে এই প্রণয়কে ইরান কিভাবে নিচ্ছে সেটা দেখার অপেক্ষায় রইলাম। আমাদের মধ্যে রাশিয়াপ্রীতির যে প্রবণতা আছে তারই বা এখন কি হবে? আমি যেহেতু ভালো ও মন্দ পক্ষ বিচার করি ইসরাঈলের পক্ষ ও বিপক্ষ দেখে সেহেতু আমার ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেয়া কঠিন হবেনা। কিন্তু অন্যদের?যারা ইসরাঈলেরও বিরোধী করে আবার ইসরাঈলের সঙ্গে দৃঢ় সম্পর্ক রাখা রাষ্ট্রকে মানবতার পক্ষের রাষ্ট্র ভাবে তাদের এখন কি হবে? তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে না হয় ইসরাঈলের কাছে জিম্মি ভেবে খারাপ ভাবে, কিন্তু রাশিয়াকে এবার কি ভাববে?
শোনেন, রাশিয়া যে মার্কসবাদ ধারণ করে পৃথিবীতে নাম কামাই করছে সেই কার্ল মার্কসও ইহুদী ছিল। ইহুদীরা তাদের রক্তের পক্ষে উপকারী স্বজাতি খুঁজে বের করতে দেরি করেনা।ইতিহাস ঘেঁটে দেখতে পারেন।
২।
এই সংবাদ দেখলাম ইরানের বাংলাভাষী সংবাদমাধ্যম পার্স টুডে করেই নাই। মানে প্রিয় বন্ধুরাষ্ট্রের অবৈধ ইসরাঈলের সঙ্গে জোট করা মেনে নিতে ইরানের কষ্ট হচ্ছে কি ? নাকি হজম করতে পারছেনা? নিউজ ট্রিটমেন্টের পলিটিক্স।
আমাদের মধ্যে সদ্য একটা প্রবণতা জন্ম নিয়েছে। আর সেটা হচ্ছে রাশিয়াকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে মজলুমের পক্ষের শক্তি ভাবা। এটা চরম অসত্য একটি ধারনা। এই ধারনার জন্ম হয়েছে রাশিয়ার আগ্রাসন, বর্বরতা ও যুদ্ধবাজী সম্পর্কে অজ্ঞতার দরুন। এই রাশিয়াও আমেরিকা, ইরান, ব্রিটেন,ইসরাঈল, ফ্র্যান্স, ইতালি, স্পেন, চীন, ভারত ও তুরস্কেও মত সাম্রাজ্যবাদী শক্তি।বরং যদি বর্বরতা ও নৃশংসতার নিরপেক্ষ দলিল দস্তাবেজ বের করা হয় তবে রাশিয়ার মানবতাবিরোধী জঘন্য কুকর্ম অন্যদেও ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।রাশিয়ান সাম্রাজ্য সাবেক ওসমানীয় সাম্রাজ্য ভেঙে ফেলে জমি লুট করার অন্যতম কারিগর। রাশিয়া বলকান অঞ্চলের মুসলমানদের উপর গণহত্যা চালিয়েছে।
রাশিয়ার প্রোপাগান্ডা মিডিয়া RT এই শিরোনাম করেছে ৮ ‍জুন।
চেচনিয়া, বসনিয়ায় মুসলিমদের জাতিগত বিলোপ করার অমানবিক এজেন্ডার মূল সহায়তাকারী ছিল সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন তথা রাশিয়া। আফগানিস্তানে ২০ বছর ধরে আগ্রাসন চালিয়েছে রাশিয়া। এখনো দাগেস্তানে তারা মানুষ মারছে। সিরিয়ার আলেপ্পোতে পশ্চিমা মদদপুষ্ট বিরোধী সন্ত্রাসীদের চেয়ে রাশিয়া কম মানুষ হত্যা করেনি।সিরিয়ায় আগ্রাসনের অধিকার রাশিয়াকে কে দিয়েছে? রাশিয়া পৃথিবীতে ভারতের মত আরেকটি রাষ্ট যার সঙ্গে কোনকালে তার কোন প্রতিবেশির সুসম্পর্ক ছিলনা, নেই। রাশিয়ার কথিত বলশেভিক বিপ্লবের মূল পরিকল্পনাকারী ছিল ইহুদীরা। জার্মানীসহ দ্বিতীয় বিশ^যুদ্ধের প্রাক্কালে পৃথিবীকে নর্দমা বানাতে ইহুদীরা ও রাশিয়ানরা এক হয়ে কাজ করেছিল। আজ ৭ জুন, ২০১৬ যখন নেতানিয়াহু ও ভ্লাদিমির পুতিন এক হয়ে সংবাদ সম্মেলন করে তখন বুঝতে দেরি হয়না যে পুরোনা দুই মিত্র ফের এক হতে চলেছে। 
৩। 
রাশিয়া যে সিরিয়ায় বাশার আল আসাদকে রক্ষা করতে কিংবা ইরানের কথামত গিয়েছিল এই গাঁজাখুরী কথার কোন ভিত্তি খুঁজে পাবেননা। মূলত সিরিয়া থেকে তেল ও খনিজ নিতে তার সেখানে যাওয়া প্রয়োজন। সেই সঙ্গে অস্ত্র বিক্রিবাট্রা তো আছেই। আর নিজেদের তৈরি অস্ত্রকে কার্যকর পরীক্ষা করার জন্যও সিরিয়াকে ব্যবহার করছে রাশিয়া। সিরিয়া হচ্ছে আমেরিকা, রাশিয়া, ইরান , তুরস্ক ও ইসরাঈল এই চার সাম্রাজ্যবাদী শক্তির প্রক্সি যুদ্ধক্ষেত্র। আর যে দায়েশ ওখানে বসে হুঙ্কার ছাড়ে তার পলিসিও অবৈধ ইসরাঈলের War On Terror নামের সন্ত্রাসী প্রকল্পের সহায়তকারী। এর মধ্যে রাশিয়ার সিরিয়ায় যুক্ত হওয়ার মূল কারণ তার সাম্রাজ্যবাদী পরাশক্তি হওয়ার বাসনার বিশ্বপ্রদর্শনী। তবে রাশিয়া সিরিয়ার অর্থোডক্ত খ্রীস্টানদের রক্ষা করতে সিরিয়া যুদ্ধে যোগ দিয়েছে বলেও অনেক প্রতিবেদনে প্রকাশ হয়েছে।এসব উড়িয়ে দেয়া যাবেনা।তাছাড়া কুর্দিশ সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠন যেমন পিকেকে, ওয়াইপিজে ইত্যাদিকে রাশিয়া ও ইসরাঈল দৃঢ় সমর্থন দিয়ে থাকে বলে তুরস্কের অভিযোগ।
৪।
অতএব রাশিয়া টুডে যখন সংবাদে লেখে,“ On Tuesday, Russian President Vladimir Putin met with Israeli Prime Minister Benjamin Netanyahu in Moscow. They discussed economic cooperation including energy ties.
 "Our doors are open for every company from any country that has vast experience in the development of gas fields, including Russia, of course," said Netanyahu at a joint news conference, adding that there are no legislative barriers stopping Russian companies working in Israel.”(আরটি, ৮ জুন, ২০১৬)
তার পিছনে উদ্দেশ্য নেই এটা ভাবার জো নেই। রাশিয়া দুধে ধোওয়া তুলসি নয়। ইরানের বন্ধু রাষ্ট্র হলেই রাশিয়া মুসলমানদের বন্ধু হবে এমন ভাবার কারণ নেই। ফিলিস্তিন হচ্ছে পৃথিবীর হক ও বাতিলের, খারাপ ও ভাল’র, শয়তান ও মানুষের পার্থক্য নিরুপণকারী। যে ফিলিস্তিনীদের পক্ষে থাকবে, যে আল আকসা অবৈধ ইহুদী সন্ত্রাসীদের কাছ থেকে ফিলিস্তিনীদেও কাছে ফিরিয়ে দিতে চেষ্টা করবে , যে ইসরাঈলী বর্বরতার বিপক্ষে অবস্থান নেবে সে প্রকৃত সত্যেও পক্ষে অবস্থানকারী। অন্যদিকে যারা অবৈধ ইসরাঈলের অস্তিত্ত্বে বিশ^াস করবে, তাদের সাথে সুসম্পর্ক স্থাপন করবে, তাদের অর্থনৈতিক, সামরিক , কূটনৈতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক সমর্থন দেবে তারা মানবতার বিপক্ষের শক্তি। তাদের জন্য করুনা করতেও ঘৃণা হয়। বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু নামের খুনীর সাথে সম্পর্ক স্থাপন করে ভøাদিমির পুতিনও চলে গেল বর্বরদেও অক্ষে, জায়োনিস্ট ইহুদী সন্ত্রাসীদের নীলনকশায়।অতএব রাশিয়া নিয়ে গালগপ্প এবার বাদ দিলাম...! সিরিয়াসলি!
পাঠ অনুভূতি

Post a Comment

0 Comments