এই ভারতীয় উপমহাদেশের অবিসংবাদী এক নেতা সুভাষ চন্দ্র বসু। তার নেতৃত্ত্বে প্রথম ব্রিটিশদের সশস্ত্র উপায়ে তাড়ানোর পরিকল্পনা করা হয়। তিনি ছিলেন জাতীয়তাবাদী। তিনি ছিলেন সাম্যবাদীও। এ কারণেই নেহেরু, জিন্নাহ ও মহাত্মা গান্ধী নামের ব্রিটিশ পূজারীরা তাঁকে মেইনস্ট্রিম থেকে ছিটকে ফেলা উপভোগ করেছেন। কংগ্রেসের দুই মেয়াদের প্রেসিডেন্ট ছিলেন এবং তার জনপ্রিয়তা দেখা গান্ধী ও তার পূজারীরা তাকে কংগ্রেস থেকে সরাতে চেষ্টা করে। যদি ১৯৩৯ এর পর এই পুঁজিবাদী ব্রিটিশসেবক কংগ্রেসীরা সুভাষকে সহায়তা করতো তবে উপমহাদেশের ইতিহাস অন্যভাবে লিখতে হতো। এই জাতিগত বিদ্বেষ, বাঙালি জাতির কয়েক খন্ডে বিভক্তি এসব হয়তো হতোনা। সুভাষ চন্দ্র সেই মাটির সন্তান যে মাটিতে তার পিতা ব্রিটিশদের দেয়া রায়বাহাদুর উপাধী ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেন।
১৮৯৭ সালের ২৩ জানুয়ারী উড়িষ্যায় জন্মগ্রহণ করেন সুভাষ । কংগ্রেস ত্যাগ করে তিনি আজাদ হিন্দ ফৌজের প্রতিষ্ঠা করেন। চিত্ত রঞ্জন দাসের স্বরাজ দলের মাঠকর্মী তিনি। তিনি একটি সরকারও গঠন করেছিলেন যা ইতিহাসে আড়াল করে রেখে নেহেরু ও গান্ধীবাদীরা ভারতে ব্রিটিশ প্রভুদের কর্তৃত্ববাদ টেকাতে কাজ করেছে। সুভাষ হিটলারের সাথে দেখা করেছেন। স্ট্যালিনের ঘনিষ্ট ছিলেন। জাপানের রাষ্ট্রীয় বন্ধুও ছিলেন। কিন্তু ব্রিটিশপন্থী কংগ্রেসী ক্ষমতালোভীদের কারণে ভারতে তিনি জনপ্রিয়তা পাননি। এমন কি তার অসাম্প্রদায়িক জাতীয়তাবাদী চেতনার কারণে বিজেপী, শিবসেনার মত কট্রর হিন্দুত্ববাদীরাও তাকে মূল্যায়ন করেনা। তাই তার প্রতিকৃতি বাদ দিয়ে সাম্প্রদায়িক বল্লভ ভাই প্যাটেলেরটা বানিয়ে অর্চনা করে মোদি গং।
সুভাষ ‘মৃত্যুর’ পর এখন যারা 'নেতাজীগিরি' করতেছে এদের পূর্বপুরুষরাই সুভাষ বসুকে রাজনৈতিকভাবে হত্যা করে লুটপাট করা অসভ্য ব্রিটিশদের আরামে ভারত ত্যাগের সুযোগ করে দেয়। অথচ ব্রিটিশ শোষকদের অপদস্থ হয়ে, ক্ষতিপূরণ দিয়ে, সাজা ভোগ করে কোনমতে জান নিয়ে পালিয়ে বাঁচার কথা ছিল। কিন্তু জিন্নাহ-নেহেরু-প্যাটেল গং ক্ষমতার স্বার্থে ব্রিটিশদের অবৈধ কুকর্মের জবাবদিহি করানোর উদ্যোগ নেয়নি। অথচ ১৭৫৭ থেকে ১৮৫৭ ও শত শত প্রাচ্যের অধিবাসী হত্যার জন্য ব্রিটিশদের কবর রচিত হওয়ার কথা ছিল। ১৯৪৩ সালের কৃত্রিম দুর্ভিক্ষে যে বাংলার ৪০ লাখ মানুষকে খুন করলে ব্রিটিশ দখলদাররা তার জন্য ব্রিটিশদের কাছে ক্ষতিপূরণ বা তাদের বিচার করার কথা কেউই বলে নাই। সুভাষ বসু সেটিই চেয়েছিলেন। সে কারণেই তাঁকে মূলধারার রাজনীতি থেকে সরিয়ে দিয়েছিল ওরা। তবে আজ কিন্তু ঠিকই তাঁকে নিয়ে অধ্যয়নের কারণে বের হয়ে আসছে তাঁর প্রবল জাতীয়তাবাদী মানসিকতার ইতিবাচক দিক নিয়ে। আজ এত বছর পর তাই সুভাষ চন্দ্র বসুকে স্বীকৃতি দিতেই হচ্ছে ওদের, এদের, তাদের...।
সুভাষের কীর্তি ভাসমান রয়েছে মাটি ও মানুষের হৃদয়ে। সুভাষ বিপ্লবের সুবাস বিলিয়ে স্বাধীনতাকামীদের কাছে চির ভাস্বর, জীবন্ত, সংগ্রামরত! সালাম হে বাঙালির বিপ্লবী। আপনি থাকলে ১৯৪৭-এ বাংলাদেশের ভূখণ্ড লোপাট করার ব্রিটিশ নকশা বাস্তবায়নকারী কংগ্রেসী-মুসলিমলীগীরা হয়তো পাত্তা পেতোনা...।
0 Comments