দেশের ঔষধ শিল্পে ভারতীয় শকুনের দৃষ্টিকে উপড়ে ফেলতে হবে

ভারতীয় নিম্নমানের কোম্পানী আজটেকের মেয়াদোত্তীর্ণ ও নষ্ট ভিটামিন এ ক্যাপসুল বাংলাদেশে আমদানিতে যুক্ত যারা তাদের বিচার হওয়া উচিত। দেশের স্বাস্থখাতের অন্যতম কলঙ্কজনক অধ্যায়ের ব্যাপারে খুবই কম গুরুত্ব দিয়ে সংবাদ প্রচার কি চোখে পড়েছে? এটার নাম 'নিউজ কিলিং'। সংবাদমাধ্যমে ঠিক করে দেয় আপনি কি নিয়ে কিভাবে ভাববেন। এই আজটেক নিয়ে সব চ্যানেলে, পত্রিকায়, অনলাইন মিডিয়ায় খবর হওয়ার দরকার ছিল। কিন্তু তা হয়নি। তাই আমি-আপনি আমরাও এ নিয়ে তেমন ভাবিনি। কিন্তু এই ঘটনা পশ্চিমা কোন দেশে, এমন কি খোদ ভারতে হলেও এটাই হতো ওদের মিডিয়ার প্রধান আলোচ্য, সেরা নিউজ, ব্যানার নিউজ, এক্সক্লুসিভ নিউজ, স্কুপ, ব্রেকিং ইত্যাদি। এ নিয়ে হতো ইনভেস্টিগেশন, সাপ-কেঁচো-বোয়াল সব বের করে ফেলতো ওরা। বাংলাদেশের মিডিয়া জেসিয়ার বাড়ি ভাঙ্গা, সানি লিওনের নতুন গান আর দেশে গরু-ছাগলের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার সংবাদ নিয়ে ব্যস্ত! ভীষণ ব্যস্ত! বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীরা ইকনমিস্ট বা এনওয়াই টাইমসের সংবাদ অনুবাদে ব্যস্ত, বাংলাদেশের প্রতিবাদের বয়সী শিক্ষিত আত্মকেন্দ্রীক গোষ্ঠী ব্যস্ত ফেসবুকে 'খুশিতে, ঠ্যালায়, ঘোরতে'...!
২।
কিন্তু সবাই ঘুমালেও রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভের তো ঘুমানোর কথা না। ঘুমায় কেন? এর কারণ কী? কারণ, গণমাধ্যমে কাজ করাদের জাতীয়তাবোধ খুবই কম। এর মালিক সমাজ কেবল পুঁজি চায়, দেশ ও জাতির প্রতি দায়বদ্ধতা চায়না। ফলে এমন জাতীয় ক্ষতি করা ভীণদেশি কোম্পানির ব্যাপারে দেশের কোন মিডিয়ার কোন এডিটোরিয়াল পলিসি দেখা যায়নি। কোন ফলোয়াপ নাই এ নিয়ে, অনুসন্ধানী বা ব্যাখ্যামূলক  সংবাদ বা টকশো কিছু চোখে পড়েনি।

অথচ বাংলাদেশ নিজের ৯৭% চাহিদা পূরণ করে বিশ্বে অত্যন্ত উঁচ্চ গুণগত মানের ঔষধ রপ্তানী করে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে। সেই দেশে অপেক্ষাকৃত নিম্নমানের ঔষুধ প্রস্ততকারী এবং বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের প্রতিদ্বন্দ্বী দেশের কোন তৃতীয় শ্রেণির নিম্নমানের কোম্পানীর ক্যাপসিউল কেন আনা হবে? এর সাথে কারা জড়িত? আর যতদূর জানলাম, বাংলাদেশের কোম্পানিটি আন্তর্জাতিক মান মেনে কাজটি পেয়েছিল। সেই কাজ আদালতের রায়ে ভারতীয় কোম্পানি পায়। এই আদালত কোন দেশের সেটা অবশ্য গণমাধ্যম লেখেনি। কিন্তু আদালত বাংলাদেশের হলে ভারতীয় কোম্পানির পক্ষে এই দেশেরই অর্থলোভী, জাতীয়তাবোধহীন কোন আইনজীবী দাঁড়িয়েছে, তাইতো? আর তা তখন জাতীয়তাবোধহীন কোন সংবাদমাধ্যম প্রকাশই করেনি। অথচ এই দেশটা না থাকলে এর কিছুই থাকতোনা। এরা তা ভুলে যায়!
৩।
শুধু আদালতের রায়ে বিদেশী একটি খারাপ মানের কোম্পানি দেশের কোম্পানির বৈধ ও যোগ্য কাজটি নিয়ে যায় ইতিহাসে হয়তো এমন নজির এটাই প্রথম। কিন্তু সর্বশেষ ১৯ জানুয়ারি হতে যাওয়া ক্যাম্পেইনকে স্থগিত করা হয়েছে ভারতীয় কোম্পানির নিম্নমানের ক্যাপসুলের প্রমাণ পাওয়ার পর। এটা আশার কথা। যারা এই মহৎ কাজ করেছেন তাদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা রইলো। আশা করি এর সাথে জড়িতদের দ্রুতই বিচারের আওতায় আনা হবে। একবার ভেবেছেন এই নষ্ট ক্যাপসুল খাওয়ালে যদি কোন রোগ ছড়িয়ে যেতো এই শিশুদের মাঝে? পুরো একটি প্রজন্ম ধ্বংস। কে জানে অতীতে কতবার এই নিম্নমানের ক্যাপস্যুল এসেছে! এ নিয়েও সংবাদমাধ্যমে কিছুই আসছেনা! একটা দেশে এত্তগুলো নিউজ মিডিয়া ও শত শত সাংবাদিক তাইলে কি জন্য থাকে? ঘাস কাটতে? নাকি জাবর কাটতে? দেশপ্রেমিক নাগরিক, রাজনীতিবিদ, মন্ত্রী, আমলা, পুলিশ ও সাংবাদিকদের কাছে অনুরোধ, দেশ ও জাতীয় স্বার্থে ছাড় দিয়েন না। জাতীয় স্বার্থে বীরের মত আত্মমর্যাদাবোধ নিয়ে দরকষাকষি করাই ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের শিক্ষা। এই শিক্ষা ভুলে গেলে, না ধারণ করলে আমাদের জাতীয় সম্পদ অন্যরা লুটে নিয়ে যাবে! আমরা তখন 'এই মনে করেন খুশিতে, ঠ্যালায়, ঘোরতে ঘোরতে' অন্য কোন জাতির বা দেশের মানসিক দাসত্বের অভিশপ্ত শৃঙ্খলে বন্দি হবো। তা থেকে মুক্তি দিতে ভবিষ্যতে আবার কোন বঙ্গবন্ধুর আসবে এর কোন গ্যারান্টি কিন্তু নাই। সুতরাং এখনই দেশটাকে ভালবাসুন। দেশের সম্পদ ও সংস্কৃতি রক্ষায় সচেতন হন। লাল-সবুজ পতাকার সম্মান রক্ষায় রক্ত দিতে সর্বদা প্রস্তুতি নিন। জাতীয় স্বার্থে চোখ কান খোলা রাখুন। আপনি জেগে থাকলেই 🇧🇩 নিরাপদ থাকে, ভাল থাকে, আপনার জন্য নিবেদিত থাকে...।