সর্বশেষ

আমার কোন আত্মজীবনী নেই

যখন বুর্জ খলিফা অথবা টুইনটাওয়ারে,
জৌলুসে পরিপূর্ণ অভিজাত পিশাচদের জম্পেস আড্ডা চলে,
ঠিক তখনই আমার বুকে একে-৪৭,
ঝাঁঝরা করে দেয় অতীত ও ভবিষ্যত্‍ ।
আমার বর্তমান অনেক আগেই মৃত ।

যেদিন নিরাপত্তা পরিষদে আমাকে অনিরাপদ করতে
কয়েকটি বিল পাশ হয়,
সেদিনো আমি এক কাপ চায়ের বিল দিতে পারিনি ।
অথচ আতিথেয়তায় আমি অদ্বিতীয় ছিলাম ।

অনাবিল নষ্টামীর অভিপ্রায়ে
জাস্টিন বিবার,ম্যাডোনা অথবা খান ফান,
নীলছবির অভিনেত্রীদের কনসার্টে
ঝাঁকানাকা দেহ যখন দোলা দেয়,
তখন আমি মহাসন্ত্রাসী,
সুমধুর সুরে সাড়া দেই বলে
আমার উপাসানালয় পুঁড়ে ছাই হয় ।


পারস্য অথবা আরব সাগর,
ভূমধ্যসাগর দিয়ে
চলে আসা বৃহত্‍ জলযানগুলো তরল স্বর্ণে টুইটুম্বুর,
আমার তাতে ছিল পূর্ণ অধিকার,
সেই তেলে পশ্চিমের যে উড়োযান চলে,
তা আমারই উপর বোমা ফেলে ।
আমার স্বপ্নগুলো নগরীর ধসে যাওয়া বহুতল ভবনের মত হয়ে যায়
নিস্তব্ধ ।
আমার শাসকদের তখন গলা টিপে ধরে,
জিহবাটা টেনে ছিঁড়ে ফেলতে ইচ্ছে হয় ।

প্যারিস,বার্লিন,লন্ডন,ওয়াশিংটন,দোহা,রিয়াদ,দিল্লী ও
অবৈধ ইসরাঈলে যখন একটি বাড়ি মানে খামার,
তখন আমার ঘর শরণার্থী শিবিরে ।
তাবুটানানো ঘরে আমি কুঁকড়ে থাকি ।

ইউনিসেফ,সেফ দি চিল্ড্রেন
পৃথিবীর সব শিশুর জন্য,
আমারটি ছাড়া।
মাথায় ও বুকে গুলি লাগা
রোগের প্রতিষেধক ওদের নেই ।
আমার সন্তান জন্ম দিতে ভয় লাগে ।

অসাম্প্রদায়িক,মানবিক ও পরধর্মে বিশ্বাসীতে পূর্ণ এ ধরা !
গুজরাটে,আরাকানে,আসামে,জেরুজালেমে ও
সেব্রেনিত্‍সায় এবং কাশ্মিরে বসবাসকারী জনসমষ্টি
মানুষ নয়,
হিউম্যান রাইটস্ ওয়াচকে তারা চেনেনা ।

ওদের নির্বিচারে গুলি করলে পার্টিতে নারী ও মদ পাওয়া যায়।


লালমোহন আদভানি,ব্রেইভেক,অং সান,বুশ-ব্লেয়ার,নেতানিয়া হু,কিংবা
সন্তু লারমা,ইউপিডিএফ,রেড আর্মি,ন্যাটো,শিবসেনা
কত মহান এই নামগুলো ।
নিরস্ত্র "সন্ত্রাসীদের" নিজভূমে খুন করে,
ধর্ষিত করে,
গ্রন্থ পুড়িয়ে ও উপাসানালয় ভেঙে
অথবা
শরণার্থী করার কৃতিত্বে
এরা শান্তি পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য বটে!

আমি কাঁদি,আমি চিত্‍কার করি,
আমি দেখি আমার সন্তান অনাহারে,
স্ত্রী ছেঁড়া জীর্ণ কাপড়ে তার শীর্ণ শরীর ঢাকতে ব্যস্ত।
সম্মুখে বিএসএফ,ইহুদী নরখাদক,সিআইয়ে এজেন্ট,ব্লাক ক্যাট,মোসাদ,
জাতিসংঘের নপুংশক,
বিশ্বব্যাংকের চোষক ও
খাদ্য সংস্থার প্রতিনিধি ।
মৃত্যু ও দুর্ভিক্ষের দুষ্টচক্রে
আমাকে ফেলতে ওগুলো প্রতীক্ষায় ।

রয়টার্স,এএফপি ও সিএনএন,বিবিসি, আলজাজিরার দূর্ধর্ষ ফটোগ্রাফাররা ব্যস্ত
আমার করূন দৃশ্য চিত্রায়নে ,
এবছরের পুলিত্‍জারটি তাদের চাই ই চাই ।

আমার কোন মাটি নেই,
অথচ তা আমার ছিল।
আমার জন্য আইন নেই,
কিন্তু আমি আইন মেনে চলতাম ।
আমার কোন গণমাধ্যম নেই,
তা থাকা অত্যাবশ্যক ছিল ।
আমি নেতৃত্বশূণ্য আজ,
অথচ আমার নেতা ছিল যোগ্যতম ।
আমি আজ উদভ্রান্ত,
আমাকে জাগানোর কেউ নেই,
আমার প্রজন্ম তার শিকড় নিজে
টেনে উপড়ে ফেলছে ।
আত্মমর্যাদাবোধ হারিয়ে গেছে,
তাই আমি নির্লিপ্ত।
পৃথিবীর অধিপতিদের আমি ঘৃণা করি,
ঘৃণাই আমার ক্ষেপণাস্ত্র ।


[সাম্রাজ্যবাদী ও পুঁজিবাদীদের অপদখলের স্বীকার
'একটি জাতির 'অভিব্যক্তি]
পাঠ অনুভূতি

Post a Comment

0 Comments