সর্বশেষ

ময়ূরী ও শফিকের বিয়ে: মিডিয়া ও শিক্ষিত সমাজের প্রতিক্রিয়াশীল অসুস্থ আচরণ নিয়ে কিছু তিতা কথা

ময়ূর শফিক জুয়েল ও ময়ূরী। ছবি/ শফিকের টাইমলাইন।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের ৪১ তম আবর্তনের শিক্ষার্থী শফিক জুয়েল ও সাবেক চলচ্চিত্র অভিনেত্রী ময়ূরীকে নতুন দাম্পত্য জীবনের জন্য বিলম্বিত অভিনন্দন। আশা করি তাদের দাম্পত্য জীবন চিরকাল সুখে কাটবে। শফিক শহীদ রফিক জব্বার হলের আবাসিক শিক্ষার্থী। ময়ূরী ও শফিক জুয়েলের বিয়ে ও বিয়ের ব্যাপারে চলমান প্রতিক্রিয়াশীলতা নিয়ে কিছু কথা বলতে চাচ্ছি। আমিও জাবির ৪১ তম আবর্তনের শিক্ষার্থী। তবে শফিকের সাথে কোন দিন পরিচয় হয়নি, হয়তো দেখা হয়েছে। তবু এই ছেলেটির জন্য কিছু লিখতে বাধ্য হচ্ছি বিবেকের তাড়নায়। যা এখানে লিখবো সেই কথাগুলো অপ্রিয় সত্য হবে বলে ভাষায় কাঠিন্য থাকতে পারে। সে কারণে যারা অপ্রিয় সত্য শুনতে অভ্যস্ত নন তারা এই ‘স্ট্যাটাসটি’ (প্রথমে স্ট্যাটাস আকারে লিখছিলাম। পরে ব্লগ পোস্ট করি) নাও পড়তে পারেন।


যা বলার এখানে বলেছি। কঠিন করে সত্য লিখেছি। যারা অপ্রিয় সত্য হজম করতে কষ্ট পান তারা পড়বেন না। যারা শফিককে নিয়ে এই গ্রুপে বা অন্য কোথায় হাসিতামাশায় মেতেছেন তারা পড়বেন। আপনাদের পড়া উচিত। শফিক বা ময়ূরী তো আর লিখে আপনাদের অশ্লীল মানসিকতার জবাব দেবেনা। জবাব তবু আছেই। #শফিক হচ্ছে এ সমাজের নায়ক। ট্রল করে এই নায়ককে অপমান করা মানে আপনি প্রতিক্রিয়াশীতার ধারক ও বাহক। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ছেলের কথা পুস্তকে পড়েছেন, বাস্তবে তাকে খুঁজে পেতে শফিক জুয়েলকে দেখুন। নারায়নচন্দ্রের উত্তরাধুনিক রূপ শফিক জুয়েল। সন্তানসহ বিধবা এবং এই পুঁজিবাদী সমাজের কারণে যে ভুল সময়ে পা দিয়েছিল তাকে বিয়ে করা মানে বিপ্লব করা। শফিক এক বিপ্লবীর নাম। এই বিপ্লবীকে সম্মান করুন। এই বিপ্লবীর মানহানি করা মানে মানবতার প্রতি অশ্রদ্ধা পোষণ। শফিক হচ্ছে ময়ূরীর ময়ূর। শফিক জাবির জন্য কলঙ্ক নয়, সম্মান বয়ে আনছে। সানি লিওনে বিমুগ্ধ সংকীর্ণ মানসিকতা দিয়ে সেই মর্যাদা উপলব্ধি করা যায়না।তার জন্য উদার হতে হয়, মানুষ হতে হয়। অভিনন্দন শফিক। অনেক শুভকামনা। অনেএএএক...
১।
বিয়ের খবর এ সপ্তাহেই ছড়িয়েছে। তবে বিয়ে করেছে জুয়েল জুলাই মাসের দিকে। ভাল কথা। সেটি নিয়ে দেশব্যাপী বিশেষ করে ভার্চুয়াল পৃথিবীতে নানা আলাপ চলছে। সে আলাপ ইতিবাচক ও নেতিবাচকতার মিশ্রণ হলেও ইতিবাচকভাবে নেওয়া মানুষের সংখ্যা বেশি। আমি সামাজিক মাধ্যম কিভাবে গণমিথস্ক্রিয়ার মাধ্যম হচ্ছে সেটি নিয়ে গবেষণারত থাকায় বিষয়টি সম্পর্কে অনুসন্ধান করে এই তথ্য পাই। তো ময়ূরীকে আপামর জনসাধারণ জুয়েলের সাথে স্বাভাবিকভাবে নিতে পারলেও কিছু মানুষ পারেনি। তারা কিন্তু অশিক্ষিত না, তারা তথাকথিত শিক্ষিত এবং তাদের প্রতিক্রিয়ার ধরণ অসভ্য ও জংলীদের চেয়েও নিকৃষ্ট। একজন নায়িকা ময়ূরী বিয়ে করে শফিক জুয়েলের সাথে এক ঘরে থাকছে, একটি নতুন ঘর তৈরি করছে এই বিষয়টিকে সাধারণ মানুষ স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করতে পারলো আর তথাকথিত শিক্ষিত পাবলিকে তা পারছেনা। কি করুণ অবস্থা এই শিক্ষিত নামধারীদের! মানসিকতার কি দৈন্যদশা! এরাই না সমাজ পাল্টে দিতে চায়। কিভাবে দেবে? প্রতিক্রিয়াশীলতা দিয়ে? একটি সন্তানসহ একজন বয়সী নারীকে বিয়ে করলে যাদের নোংরা মন ও দেহে চুলকানী জাগে এরা তো এই জগতের বোঝা, আগাছা। শফিক জুয়েলরা  এ জগতের শোভা, ওরাই এই পৃথিবীর প্রাণ। ওদের জন্য সম্মান।

 
২।
বাইরের বিভিন্ন পেইজ ও গ্রুপের মত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এই গ্রুপেও (আমরাই জাহাঙ্গীরনগর) ময়ুরী ও শফিকের বিয়ের ব্যাপারে কয়েকটি পোস্ট আসে। ভেবেছিলাম বিষয়টিকে সবাই ইতিবাচকভাবে নেবে। কারণ এই গ্রুপে শিক্ষিত মানুষজন আছে। কিন্তু এ কী দেখলাম! যেখানে অর্ধশিক্ষিত মানুষ জনও এ বিয়েকে স্বাগত জানালো, এইখানকার শিক্ষিতরা তাতে প্রতিক্রিয়াশীল আচরণ করলো। কমেন্ট বক্স দেখে একপাল অসুস্থ বিকারগ্রস্তের দেখা পেলাম। সংবাদের পোস্টে এংরি রিয়েক্ট দেখেও হতবাক হলাম। সত্যিই অবাক হলাম। কমেন্ট বক্সে মানুষ কতটা নিচু প্রকৃতির হলে অন্য কারো ব্যক্তিহত জীবন নিয়ে এতোটা কুৎসিত মন্তব্য করতে পারে তা ভেবে ঘেন্না হয়। লজ্জার কথা কিছু নারীও আরেক নারীকে হয়ে করার সেই মিছিলে যোগ দিলেন। তারা শিক্ষিত, তাহারা আমার আপনাকে নারী প্রতি সম্মান পোষণ করার ছবক দেয়, তাহারা ব্যাপক মাত্রার অপরের অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। বিশেষ বিশেষ পরিস্থিতিতে তাদের লজ্জাশরমহীন রূপটি প্রকাশিত হয়। ময়ুরী যেন এই সব অসুস্থ মেয়েদের কাছে কোন মেয়ে নয়। অথচ ময়ূরীদের যে পুঁজিবাদী সমাজ তৈরি করে সেই সমাজের ভোগের বস্তু হতে প্রস্তুত থাকে এই সব মেয়েরা। ময়ুরী যে সুস্থ জীবনযাপন করছে তা দেখে মনোবিকারগ্রস্ত হয় যেন এরা। ময়ূরীকে নিয়ে হাসিতামাশায় অংশ নেওয়া এসব নারী ও নারীবাদীরাই মূলত পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। তাদের কপালে পুংদণ্ড স্থাপিত থাকে বলে একজন নারী ময়ুরীর স্বাধীনভাবে বয়সে ছোট সঙ্গী খুঁজে নেওয়াকে তারা ছোট করে দেখে। আসলে তারাই ছোট। তারাই সংকীর্ণ। ময়ূরী ও শফিক সত্য, ওরা সত্যের ময়ূর ও ময়ূরী। ওরা পেখম মেলেছে বলে অনেক সুশীল শয়তান ও শয়তানীর সংকীর্ণতা ও নির্লজ্জতা চোখে ধরা পড়েছে।
৩।
যারা এই বিয়ে নিয়ে আজেবাজে কথা লিখছে নিঃসন্দেহে তারা বিকারগ্রস্ত। মানুষের ব্যক্তিগত জীবনের প্রতি ন্যূনতম শ্রদ্ধাবোধ থাকলে কেউ শফিক ও ময়ূরীর বিয়ে নিয়ে বাজে কিছু লিখতে পারেনা। খোঁজ নিয়ে দেখেন, এসব বিকৃত মস্তিষ্কের অনেকেই সানি লিওনে বুঁদ হয়ে থাকে। তখন কি ইজ্জত যায়না? না যায়না, কারণ তাদের নিকৃষ্ট ও ঘূণে ধরা মানসিকতায় পর্ণোস্টার সানি লিওন পর্ণ ছেড়ে পেট আর নাভি দেখালেও সম্মান পায়, ভাল হয়ে গেছে বলে বাহবা পায়, তবে দীর্ঘদিন চলচ্চিত্রের বাইরে থাকা ময়রী বিয়ে করে সুখে থাকতে চাইলেও তাদের কাছে খারাপ ব্যাপার! দেশের একটি বিধবা মেয়েকে পছন্দ করে একটি ছেলে বিয়ে করেছে আর এখানে কথিত শিক্ষিত জনগোষ্ঠী তার ব্যাপারে অশিক্ষিতদের মত প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে। এটা নিকৃষ্ট আচরণ। দেখলাম কিছু নারীও একজন নারীকে হেয় করতে কুরুচীপূর্ণ ধাঁচে মন্তব্য করছে। এসবই কলঙ্কিত কর্ম। বিয়ে করে সুস্থ জীবনযাপন করছে এটা দেখলে চুলকানি জাগা সভ্য আচরণ না। বরং বিয়ে না করে চিপাচাপায়, ফ্ল্যাটে, রুমে গিয়ে যা করা হয় তা অসভ্য আচরণ, তা বাঙালি সংস্কৃতির বিরোধী এবং তা নৈতিকতা পরিপন্থী কাজ। সে ব্যাপারে এসব মানসিকভাবে পঙ্গু মানুষগুলো কিছু কি বলবে? বলার আছে?
৪।
ক্ষতিকর নির্বোধ গাছে ধরেনা, এগুলো আমাদের আশাপাশেও মানুষের বেশে থাকে। সে হেদায়েত না ফিদায়েত বা অন্য যেকোন উদ্দেশ্যে বিয়ে করুক ,তার বিয়ের বিষয়ে সিদ্ধান্তে দেয়ার আপনি-আমি কে? আপনার পারিবারিক জীবন নিয়েও যদি লোকে আপনার মত হেদায়েত দিতে আসে নিবেন তো তা? আর চলচ্চিত্র সম্পর্কে ন্যূনতম সেন্স থাকলে কেউ চলচ্চিত্র ধ্বংসের দায় নায়িকাদের দেয়না। চলচ্চিত্র নায়িকারা বানায়না, চলচ্চিত্র বানায় পরিচালক, টাকা দেয় প্রযোজক ও ছাড়পত্র দেয় সেন্সরবোর্ড। ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকা ব্যক্তিরা চলচ্চিত্র এর দুঃসময়ের জন্য দায় এড়াতে পারেন কি? তো সংবাদমাধ্যমে ময়ূরীর বিয়ের সংবাদের আগে কেন ‘অশ্লীল নায়িকা’ ইত্যাদি অপমানজনক শব্দ জুড়ে দেয়া হচ্ছে? এটা অন্যায়, এটা অবিচার। এটা নারীর প্রতি অসম্মান, এটা মানুষের ব্যক্তি অধিকারে হস্তক্ষেপ। ময়ূরীর সাথে অভিনয় করা নায়কদের তো অশ্লীল নায়ক বলা হচ্ছেনা? এই নিওলিবারেল যুগে নিওলিবারেলিজমের কাঁধে বন্দুক রেখে যারা ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্যবাদীতা প্রচার করছে ও তা বিশ্বাস করছে তারাই ময়ূরী ও শফিকের ক্ষেত্রে চরম ভণ্ডামীপূর্ণ আচরণ করছে।



ময়ূরীকে যেভাবে ব্যবহার করা হয়েছে এই পুঁজিবাদী সমাজের চলচ্চিত্রে সে সেভাবে ব্যবহৃত হয়েছে। প্রযোজক, পরিচালক, সেন্সরবোর্ড সৎ হলে ময়ূরী, নিপুণ, মুনমুনরা ভিন্নভাবে পর্দা কাঁপাতে পারতেন। তাকে নেতিবাচকভাবে পর্দায় তুলে আনা কলাকুশলী ও প্রশাসনকে দায়ি না করে কেন তাকে করে আপনাদের সংকীর্ণ আত্মা? চালবাজদের ঘৃণা না করে গুঁটিকেই কেন আপনারা তীর নিক্ষেপ করে হত্যা করতে চান? তাকে বিক্রি করে সে সময়ের পুঁজিবাদী হল, পত্রিকা যেভাবে চলেছে তার বিয়ের পরও তার ভুল সময়ের অর্ধনগ্ন ছবি ব্যবহার করে বসুন্ধরা গ্রুপের সারমেয় শাবকেরা কালেরকণ্ঠে নিউজ করেছে। এটা মানা যায়না। দেখবেন, টিভি ও অনলাইন মিডিয়া ও ইউটিউবের কিছু কুকুরেরা এই বিবাহিত দম্পতিকে হেয় করতে শিগগিরই উঠে পড়ে লাগবে। চলুন ওদের প্রতিরোধ করে মানবিক দায়বদ্ধা পালন করি।

এই সমাজে একটি মেয়েসহ কোন বিধবা মহিলাকে যে শফিক বিয়ে করেছে সে এই দেশের , এই জাতির গৌরব। তাকে হাসির খোরাক বা ঘৃণার পাত্র হতে দেয়া যাবেনা। যে ঈশ্বরচন্দ্রের পুত্রের কথা পুস্তকে পড়েছেন সে তো ঐ শফিক জুয়েলের মধ্যেই বাস করছে। এমন ভালো মনের শফিককে তার স্ত্রী ময়ূরীর সাথে স্বাভাবিকভাবে সংসার করার অধিকার আদায়ে চলুন না, ক্ষুদ্র জায়গা থেকে হলেও চেষ্টা করি। কোন মিডিয়ায় ময়ুরীর ভুল সময়ের ছবি ও ভিডিও প্রকাশ করলে প্রতিবাদ জানান। যদি সেই সময়টি অশ্লীল সময় হয়, তবে সেই সময়ের ছবি বা ভিডিও প্রকাশ করে ময়ুরীর সংবাদ প্রচার করা কেন অশ্লীল ও নেতিবাচক আচরণ নয়? বরং পেপারের কাটতি বাড়াতে বা পোর্টালের ক্লিক বাড়াতে, ইউটিউবের ভিউ বাড়াতে, ফেসবুকের লাইক কামাতে বা টিভির টিআরপি বাড়াতে যারা ময়ূরীর ভুল সময়ের ছবি ব্যবহার করে তারা চরম খারাপ। তাদের বিচার হওয়া উচিত। তারা এই সমাজের কীটপতঙ্গ। তারাই ময়ূরীদের মন্দপথে নেওয়ার মূলহোতা। তাদের মত মানসিকতার ছোটলোকগুলোই ময়ূরীদের বাধ্য করিয়েছিল খোলামেলা হতে। তাদের বিষয়ে রাষ্ট্রের আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারীদের ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। টেলিভিশন চ্যানেল ও পত্রিকাগুলো বিনোদন সংবাদের নামে ২০০৬ সালের পরে জন্ম নেওয়া প্রজন্মের কাছে ময়ূরীকে নেতিবাচকভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করলে তা অবশ্যই বাজে কাজ। তার প্রতিরোধ আমাদেরই করতে হবে সোস্যাল মিডিয়ায় ও বাস্তব জগতে।
৫।
বিয়ে একটি সামাজিক চুক্তি। এই চুক্তি দুটি পৃথম মানুষকে এ ঘরে আবদ্ধ করে। সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত ব্যাপার এটি। দুজনের বিয়ের ব্যাপারে তৃতীয় কেউ কথা বলা তাই ধৃষ্টতা, অসৌজন্যতা ও অসুস্থতার প্রকাশ। এই অসুস্থরাই রেলমন্ত্রীর বিয়ে নিয়ে নাক সিঁটকিয়েছে, এরাই সুমাইয়া শিমুর স্বামী কেন কালো তাই নিয়ে বেহায়া আলাপ তুলেছে, এরাই হুমায়ূন আহমেদ ও শাওনের জীবনকে বিষিয়ে তুলেছে। এদের কাছে বিয়ে কের সুস্থ জীবন যাপন করা অন্যায়, তবে বিয়ে না করে যাচ্ছেতােই ভোগবাদী কুকুরের মত দেহ ভোগ করে বেড়ানো বিরাট পূন্যের ব্যাপার এবং ক্ষেত্রবিশেষ তারা মাসে মাসে ব্রেকাপকে শৈল্পিক রূপে উদ্ভাসিত করে। যে পুরুষ একাধিক নারীর সাথে অনৈতিক কিছু করে বা যে নারী একাধিক পুরুষের সাথে অপকর্ম করে তারা হয় স্মার্ট, যুগোপযোগি, প্লেবয়, প্লেগার্ল ইত্যাদি। তো সে বিষয়ে যদি কেউ আলাপ তুলতে যায় তখন এরা বলে ‘এটা ওর পারসোন্যাল ব্যাপার। এ ব্যাপারে আমাদের মাথা ঘামানোটা ঠিক না’। অথচ সেই তারাই বিয়ে করা ময়ূরী ও শফিককে নিয়ে মজামাস্তি ও অসভ্য ট্রলিংয়ে ব্যস্ত। এটাতো ঠিক নয়। এটা তো জঘন্য দ্বিচারীতা। আপনি বিয়ে না করে বাঙালি সংস্কৃতি বিরোধী শরীরী কুকর্ম কড়ে বেড়াবেন এবং পশ্চিমা এই অপকর্ম বিষয়ে প্রতিবাদ জানালেও তা পারসোনাল ম্যাটার হবে আর জুয়েল শফিক ময়ূরীকে বিয়ে করে বাঙালি সংস্কৃতির সুস্থ ধারার একগামীতা চর্চা করতে গেলেই তা পাবলিক ম্যাটার হয়ে যাবে? তা নিয়ে হাসাহাসি করা যাবে? কেন এই নষ্ট , অসভ্য রূপ আপনাদের?
৬।
আচ্ছা, শফিক ‍জুয়েলের পরিচয়ে মাদরাসা শিক্ষক লেখা হচ্ছে কেন? মুখে দাঁড়ি থাকলেই সে মাদরাসায় পড়ে বা মাদরাসার শিক্ষক এই বদমায়েশিপূর্ণ সাধারণীকরণ করার ধৃষ্টতা কিভাবে দেখায় ‘সাংবাতিকপাল’? তার সবচেয়ে বড় পরিচয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪১ তম আবর্তনের শিক্ষার্থী। সে তাবলিগ করে। শিরোনামে সে পরিচয় দিতে সাংবাদিক নামের স্টুপিডগুলোর কার্পণ্য কিসের? জাবিতে পড়লে কি বাংলা চলচ্চিত্রের নায়িকাকে সে বিয়ে করতে পারেনা? বরং এক বিধবা মেয়েকে বিয়ে করে জুয়েল তো চরম মানবিকতার পরিচয় দিয়েছে। আবার মানবিকতা প্রশ্ন আনাটাও সঠিক নাও হতে পারে জুয়েল ও ময়ূরী আপত্তি জানালে। কারণ তাদের মধ্যে ভালবাসার সম্পর্ক তৈরি হয়ে যদি বিয়ে হয় তবে সেখানে দুজনেই দুজনকে পেয়েছে হৃদয়ের টানে। আর ময়ূরীকে বিয়ে করে জুয়েল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়কে বাংলা চলচ্চিত্রের নায়িকাদের ব্যাপারে মিথ্যা ট্যাবু জর্জরিত সমাজের কাছে দৃষ্টান্ত হিসেবে নিয়ে এসেছে। এই সমাজে বখে যাওয়া নারৗ ও পুরুষ কেবল মিডিয়ায় নেই, সর্বত্র আছে। তাই ময়ূরীদের এ সমাজে বাস করার অধিকার রয়েছে। সে অধিকার ক্ষুণ্ণ করার নোংরা অধিকার আপনাদের কারো নেই। সুতরাং এমন একটি বিষয়ে প্রতিক্রিয়াশীলদের মত কথাবার্তা অন্ততপক্ষে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের তথাকথিত সুরুচিবান শিক্ষিতদের শোভা পায়না। 
৭।
আচ্ছা, শফিকের মুখে দাড়ি না থাকলে সমালোচনার তীরটি এতটা নিষ্ঠুর হতো কি? ময়ূরী হিজাব পরেছে বা বোরখা পরেছে বলেই কি সমালোচনায় হাসি তামাশা এসেছে? কই স্ক্যান্ডাল বের হওয়া প্রভা তো এ সমাজে দিব্যি হাসি তামাশায়ই মেতে আছে। তাকে মিডিয়ায় পুনঃপ্রতিষ্ঠিতও করা হয়েছে। তাতে ইজ্জতের কিছু আসেনা যখন ময়ূরীর বৈবাহিক জীবনে ইজ্জত পাংচার হতে চায় কেন? নাকি সর্ষের মধ্যে ভূতের মতই ইজ্জতেই ঝামেলা আছে। চুলকানির দীর্ঘমেয়াদী বিষয়টি যদি দাড়ি বা বোরখায় গিয়ে পড়ে তবে সেটি তথাকথিত শিক্ষিত মানুষের প্রতিক্রিয়াশীল রূপের এক জঘন্য প্রকাশে হবে। সেটি যেন না হয় সেই কামনা করি। ময়ূরীর এই সরল স্বীকারক্তির প্রতি শ্রদ্ধা যদি না আসে তবে আপনি মানুষ না। আপনি মানুষরূপী অমানুষ। মানবজমিনকে ময়ুরী বলেন,
‘জুয়েলই আমার দ্বিতীয় এবং শেষ স্বামী। দোয়া করবেন তার স্ত্রী থাকাকালীনই যেন আমার মৃত্যু হয়। আরেকটি কথা, জুয়েলই আমাকে ধর্মের পথে আসতে সহায়তা করেছে। তার উৎসাহ, অনুপ্রেরণায় আমি এখন নিয়মিত ধর্মকর্ম করি। তাবলীগেও গিয়েছি। বলতে পারেন আমি এখন পুরোদস্তুর পর্দার ভেতর চলাফেরা করি।’’

দোয়া ও আশির্বাদ রইলো ময়ুরীর সুস্থ জীবনের প্রতি। অনেক ভালবাসা তাদের জন্য। এভাবে শফিক জুয়েলের মত দেবদূত ক্যাটেগরির মানুষ এ সমাজে অনেক প্রয়োজন। সমাজকে ‘গোপনে নারী ও পুরুষ বেশ্যার ভাত খাওয়াদের’ একচোখা দৃষ্টির হাত থেকে রক্ষা করতে হবে। আমার বিশ্বাস, ময়ূরী বা জুয়েলের জয় হবেই। কিছু অসুস্থ সাইকোপ্যাথ তার বৈবাহিক জীবনকে পাবলিক বিষয়ে পরিণত করেছে। এই সাইকোপ্যাথিক সিকগুলোর জন্য করুণা হয়। পরাজয় হবে এই সাইকোদের। এরাই যুগে যুগে মানুষের অধিকার হরণ করে। এরাই ট্রল করতে করতে নিজেরাই তামাশার বস্তুতে পরিণত হয়। আর সমাজে মাথা উঁচু করে মানুষের জন্য কাজ করে শফিক জুয়েলরা, মানুষের অমানবিক আচরণকে আমাদের সামনে তুলে ধরে ময়ুরীরা। 

হৃদয়ের একেবারে গভীর থেকে শ্রদ্ধা, ভালবাসা ও শুভেচ্ছা শফিক জুয়েল ও ময়ুরী ভাবিকে। শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত পরম করুণাময় প্রতিপালক তোমাদের একসাথে, একসূতায় সুখের বন্ধনে গেঁথে রাখুক। শফিক হচ্ছে ময়ূরীর আরাধ্য সেই ময়ূর। সুখে কাটকু চিরকাল ময়ূর ও ময়ূরীর এই কামনায় শেষ করছি।
পাঠ অনুভূতি