দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে কৃত্রিম দুর্ভিক্ষ তৈরি করে কমপক্ষে ৪০ লাখ বাঙ্গালিকে হত্যা করেছে ব্রিটিশরা, যার অধিকাংশ এই পূর্ববাঙলার বাঙাল ছিল। এ দেশের কৃষকের ঘাম ঝরানো পরিশ্রমে উত্পাদিত বিপুল পরিমাণ খাদ্যশস্য তাদের চোখের সামনে দিয়ে কেটে নিয়ে লণ্ডনের গুদামঘর ভরেছে শ্বেতাঙ্গ লুটেরারা। আর চাল, ডাল না পেয়ে আমাদের পূর্বপুরুষরা না খেয়ে মরেছে। সেই মরণ মন্বন্তর ! খাবারের অভাবে ঘাস, পাতা সেদ্ধ করে খেয়েছেন তারা। সে বিষয়ে পড়লে চোখে পানি আসে।
সময়টা ১৯৪১-৪২। বাংলার পার্শ্ববর্তী বার্মা দখল করে নেয় জাপান। ব্রিটিশ কাপুরুষরা তাদের মোকাবেলা করতে সাহস না পেয়ে বাঙালিদের পাঠায় যুদ্ধে। আর এদিকে বাংলার শস্য কেটে নিয়ে দিল্লী ও লণ্ডনে জমা করে। যে অংশ কাটতে পারেনি সেই জায়গার ফসল পুড়িয়ে দিয়ে যায় ব্রিটিশ কুকুরেরা। ফলে ১৯৪৩ সালে বাংলায় তীব্র খাদ্যাভাব দেখা দেয়। কলকাতার বাবুরা যেহেতু এদেশের গরীবের রক্তচুষে বেঁচে থাকতো তারাও টের পেয়ে ধান-চাল আগে থেকে জমিয়েছে। আর খাদ্যের অভাবে মারা পড়তে লাগলো বাংলাদেশের মানুষ। কলকাতা ও লণ্ডনের ভোগবাদী সমাজ তা উপভোগ করতেছিল। অভাবে এক বিন্দুও খাদ্য সরবরাহ করেনি। অখাদ্য গাছ, ঘাস ও ছালবাকল খেয়ে কলেরা, ডায়রিয়া ও বসন্ত ইত্যাদিতে মরে আরো কয়েক লাখ মানুষ। সে দুর্ভিক্ষ মোকাবেলায় ব্রিটিশ কুকুরদের চাপ দিতে ব্যর্থ হয়েছিল তত্কালীন ক্ষমতাসীন এলিট ভোগবাদী রাজনীতিকরা। তাই সেই ভয়ানক পঞ্চাশের মন্বন্তরে লাখ লাখ মানুষ মরে যায় চোখের নিমিষে। এ দুর্ভিক্ষ বাংলা ১৩৫০ সালে হয় বলে একে 'পঞ্চাশের মন্বন্তর' বলে। পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে কলঙ্কময় এই দুর্ভিক্ষ নিয়ে এদেশের জাতীয়তাবোধহীন ঐতিহাসিক কিংবা মিডিয়ার নীরবতা দেখে ঘৃণা করতে ইচ্ছে করে এদের।
আজ হোক কাল হোক একদিন এই গণহত্যার বিচারের জন্য গণসাক্ষর তুলবো। ব্রিটিশদের কাছে ক্ষতিপূরণ চাইবো। এত বছর পেরোলো অথচ এ ব্যাপারে আমাদের চিন্তাই নেই। ঐতিহাসিক নামের জাতীয়তাবোধহীনরাও কুলুপ এঁটেছে মুখে। অথচ বর্বর ব্রিটিশদের সভ্য জাতি বলে পান্ডিত্য জাহির করা অসভ্য এদেশে বেড়েই চলেছে! দুঃখ! এই দেশে পাকিস্তান ও ব্রিটিশদের গীত যারা গায় ওরা ইতিহাসজ্ঞানহীন, ওরা রাজাকার অথবা ব্রিটিশ দালাল।
যে জাতি তার ইতিহাস বিষয়ে গর্বিত না, যে জাতি তার পূর্বপুরুষের সংগ্রাম, ত্যাগ, তিতিক্ষা ভুলে যায় সে জাতির ভবিষ্যতের অশনী সংকেত শোনা যায়। ৪০ লক্ষ মানুষের হুকুমদাতা হত্যাকারী চার্চিল কেন এদেশের ইতিহাসের পাতায় খুনী চার্চিল নামে পরিচিতি পেলোনা? কেন আজো ব্রিটিশদের কাছে ক্ষতিপূরণ চাওয়া হয়না? কেন ব্রিটিশদের প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানানোর গণমানসিকতা তৈরি হয়না? সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের কবলে পড়ে নিজের জাতিসত্তা নিয়ে গর্ব করার প্রবণতা নষ্ট হচ্ছে। বাংলাদেশকে মাথা তুলে দাঁড়াতে হলে কেবল এর কৃষি, ইতিহাস ও সংস্কৃতির কাঁধে পা রেখে দাঁড়াতে হবে। অথচ এই তিনটি স্তম্ভের ব্যাপারেই উদাসীন আমরা...! কবে খুলবে চোখ? কবে আমরা জাতীয়তাবোধসম্পন্ন হবো?
কেউ না হোক, কেউ কথা না বলুক, আমি বলে যাবো একাই: ১৯৪৩ সালে ৪০ লক্ষ বাঙ্গালী হত্যাকারী বিট্রিশ কুকুররা কবে ক্ষমা চাইবে ও ক্ষতিপূরণ দেবে?