তানজিলা চৌধুরী মিতুর মত নোংরা কীটেরা যদি ব্যভিচারেই অভ্যস্ত হয় তবে মোস্তফার মত ছেলেদের বিয়ে করে কেন? যদি এক পুরুষে না হয় বা এক নারীতে তবে তো তালাকের ব্যবস্থা আছে। সেটাতে কেন যাচ্ছেনা এই ব্যভিচারীপাল? এক জনের ঘরে থেকে বা একজনের সাথে সংসার করে অন্যের সাথে বিছানায়, হোটেলে বা ফ্লাটে যেতে তো শরম-লজ্জা করা উচিত, বিবেকের কাছে দায়বদ্ধ থাকা উচিত। কিন্তু তা হয়না কেন? ছেলেটা তালাক দিতে পারলোনা কেন মিতুকে? কারণ আবেগের পাশাপাশি দেনমোহর। এই যে ৩৫ লক্ষ টাকা দেনমোহরে মিতুকে বিয়ে করেছিল আকাশ, এই অমানবিকতার বিরুদ্ধে কেন মুখ খুলছেনা আইনের সাথে জড়িত লোকজন? চড়া দেনমোহর থাকার কারণে মিতুর মত ব্যভিচারিণী খারাপ মেয়েদের নিয়ে ঘর করতে বাধ্য হচ্ছে কত পুরুষ তার কোন খবর কি নীতিনির্ধারক বা সাংবাদিকরা জানে? স্বার্থপর নারীবাদীদের বা কথিত পশ্চিমাপন্থী খুশি-কামাল গং বা উইমেন চ্যাপ্টার ফ্যাপ্টারে যৌতুক নিয়ে যতটা ফটফটানি দেখি তার ছিটেফোঁটাও ছেলেদের উপর চাপিয়ে দেয়া সামর্থ্যের বাইরের যৌতুক তথা অতিরিক্ত দেনমোহর নিয়ে নেই। এই পক্ষপাতিত্বই মূলত দেশের সামাজিক অস্থিরতার মূল কারণ! লৈঙ্গিক বিভাজন করে সাম্যবাদী, ইনসাফের সমাজ গঠন করা যায়না। আবার চারিত্রিকভাবে মারাত্মক অশুদ্ধ পশ্চিমা বস্তুবাদী ভোগবাদী সমাজের মানদণ্ড নিয়েও এই নৈতিক অবক্ষয়ের সমাধান হবেনা। কেন? কিভাবে?
২।
বলছি। এই যে মোস্তফা আকাশকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করলো তার স্ত্রী নামের কলঙ্ক; এর বিচার কি হবে? মিতুর কি ফাঁসি হবে? প্রচলিত আইনে মিতু যদি গহনা চুরি করতো তারও শাস্তি আছে, কিন্তু তার নির্বিচারে ব্যভিচারের শাস্তি নাই বললেই চলে। সে কারণে পরকীয়া নামের এই নোংরামী সমাজের নৈতিকতার সুরক্ষিত দেয়ালকে ভেঙে দিচ্ছে, প্রচলিত আইন বা পশ্চিমা অনৈতিক চারিত্রিক নীতিমালা ব্যভিচার-পরকীয়াকে থামাতে ব্যর্থ হচ্ছে। কারণ এই ভোগবাদী সমাজে সুস্থ জীবন যাপনকে উৎসাহিত করা হয়না। বিয়ের পূর্বের ব্যভিচারকে এখানে উৎসাহ দেয়া হয়, চাকরির কথা বলে বিয়েকে বিলম্বিত করা হয়, এক্স বিএফ-জিএফ এর প্রাচুর্যে এখানে বিয়ের পর স্বামী বা স্ত্রীর জন্য কিছু কি অবশিষ্ট থাকে? এই ঘৃণ্য জীবনব্যবস্থার কোন স্থান ছিলনা বাঙ্গালির হাজার বছরের ইতিহাসে। বাঙ্গালি হিন্দু-মুসলমান সকলের জীবনই ছিল পরিশুদ্ধ। বিশ্বায়নের কাঁধে চড়ে যে সাংস্কৃতিক আগ্রাসন আমাদের কিশোর কিশোরী থেকে তরুণ তরুণী বা মধ্যবয়সীদের গ্রাস করেছে তাতে এই সমাজ নষ্ট হওয়ার দ্বারপ্রান্তে। স্ত্রী বা স্বামী থাকার পরেও ব্যভিচার করলে এর শাস্তি প্রায় সকল ধর্মে মৃত্যুদণ্ড। ইসলাম ধর্মে এটাকে আরো স্পষ্ট করে বিবাহিত ব্যভিচারীদের পাথর ছুঁড়ে হত্যার কথা বলা হয়েছে, অবিবাহিতদের বেত্রাঘাত ইত্যাদি।
৩।
আমাদের ভোগবাদী নিওলিবারেল অবিশুদ্ধ মানসিকতায় পাথর ছুঁড়ে মৃত্যুকে 'নৃশংস বা বর্বর' মনে হলেও ঘরে স্বামী বা স্ত্রী থাকা সত্ত্বেও অন্য পুরুষ বা নারীর সাথে পশুর মত যৌনকর্মকে বর্বরতা মনে হয়ান। প্রকৃতপক্ষে পরকীয়া বা নির্বিচারে ব্যভিচারের চেয়ে বর্বরতা ও পৈচাশিকতা আর নাই। একবার ভাবুন তো চোখ বুজে, আপনার বিশ্বস্ত স্বামী বা স্ত্রী অন্য এক বা একাধিক ব্যভিচারকারী বা কারিণীর সাথে যৌনকর্ম করে যাচ্ছে দিনের পর দিন এটা কতটা জঘন্য। কিন্তু একে চলচ্চিত্রে, নাটকে, উপন্যাসে ও সস্তা নারীবাদী ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদী বয়ানে চটকদার করে উপস্থাপন করা হচ্ছে। তাই এই নোংরামীকে, অন্যায়কে, প্রতারণাকে অপরাধ ভাবার প্রবণতাও কমছে। সৃষ্টির নিয়মই এমন যে, যে সমাজ বিয়েতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে সে সমাজে ঘূণ হয়ে আসবে ব্যভিচার আর পুরো সমাজকে খেয়ে দেবে ভেতর থেকে। আর ব্যভিচারের ফলে বা ব্যভিচারী সম্পর্কের কাঠামোতে জন্ম নেয়া প্রজন্ম অধিক ব্যভিচারপ্রবণ হবে! এই ব্যভিচারের দুষ্টচক্র একটি জাতির শেষ হয়ে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট। কারণ যে জাতি ব্যভিচারকে স্বাভাবিক ও সহজ করে ফেলে তার কাছে পৃথিবীর আর কোন পাপকে কঠিন মনে হয়না। তখন অন্যায়, অবিচার, সুদ, ঘুষ, জমিদখল, রাহাজানি, খুন, আত্নসাৎ সমাজে ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। কারণ মিথ্যা সকল পাপের মূল আর ব্যভিচারের ভিত্তিই হচ্ছে মিথ্যাচার, প্রতারণা ও ঠকবাজি। যৌনতাকে দেদারছে ভোগ করার চিন্তাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিলে মানবিক মূল্যবোধসহ অন্য অনেক কিছুই গৌণ হয়ে যায়। তার উদাহরণ আমরা দেখেছি অজস্র। শিশু ধর্ষণ, স্ত্রীকে হত্যা, স্বামীকে খুন করে পরকীয়ার সঙ্গীকে নিয়ে ঐ রাতেই যৌনকর্ম করা, মা-বাবাকে জবাই করা, পরকীয়া দেখে ফেলায় সন্তানকে হত্যা করে ফ্রিজে ভরে রাখা, চলন্ত বাসে নারী ধর্ষণ ইত্যাদি। কিন্তু ধর্ষণ, ব্যভিচার পরকীয়ায় এই মৃত্যুদণ্ড আইন কার্যকর থাকলে এতসব যৌনতানির্ভর অপরাধ হতো বলে মনে হয়না। তাতে করে মোস্তফাদের এভবে আত্মহত্যা করতে হয়না স্ত্রীর পরকীয়া সহ্য করতে না পারার যন্ত্রণায়।
৪।
তাই পরকীয়ার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করা হোক। তোমার ভাল না লাগলে তুমি তালাক দাও, কিন্তু মানুষের বিশ্বাস ভেঙে নিয়মিত ব্যভিচারের মত জানোয়ারি কুকর্ম করার বদমায়েশী ও নষ্টামী-নোংরামী-অসভ্যতা চিরতরে বন্ধ হোক। নৈতিকতা ও ধর্মীয় মূল্যবোধ উচ্চ শিক্ষার সিলেবাসেও আওতাভুক্ত করা উচিত। কারণ বয়স বাড়ার সাথে সাথে নৈতিকতা ও ধর্মীয় ভাবনা থেকে আমরা দূরে সরে যাচ্ছি! এ কারণেই সহজেই ব্যভিচারের মত নিকৃষ্ট কুকর্মে জড়িয়েও অনুশোচনা নাই। ব্যভিচার পরকীয়ার এই মহামারীকে কঠিন আইন করে এখনই না থামানো গেলে পারিবারিক সহিসংতা যেমন বৃদ্ধি পাবে, তদ্রুপ যৌনতাকে নির্ভর করে সমাজে নানা অপরাধের হার বেড়ে যাবে! সময় থাকতে এর লাগাম টেনে ধরতে হবে, তা না হলে কাল আপনি বা আপনার পরিবারের কেউ আক্রান্ত হবেনা এর কোন নিশ্চয়তা আছে?
৫।
সকলের পূন্য হোক। মোস্তফার পরিবারকে এই শোক কাটিয়ে উঠার শক্তি দিক প্রভু। মিতু নামের পাপাচারীর ফাঁসি হোক। ব্যভিচার নিপাত যাক, মানবতা ও মূল্যবোধ মুক্তি পাক।
(ব্যভিচার ও মূল্যবোধের অবক্ষয়-১)
0 Comments