জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পিঠা চত্ত্বর
মঈনুল ইসলাম রাকীব
......................................................................................................

যদি প্রশ্ন করা হয় ঠিক কি কি কারণে আপনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম মনে রাখেন তবে কি উত্তর দেবেন? শীতের পাখি, সবুজ ক্যাম্পাস, প্রজাপতি মেলা, লাল ইটের বিল্ডিং, মিডিয়ায় জাবি
শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের নানা আন্দোলন ও কর্মসূচির কথা এবং দেশের একমাত্র আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে জাহাঙ্গীরনগরের পরিচিতি। আজ আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেবো জাবির আরো একটি দর্শনীয় স্থানের সঙ্গে । স্থানটির নাম পিঠাচত্ত্বর। বাংলাদেশের বিচিত্র রকম পিঠা পাওয়া যায় পিঠাচত্ত্বরে । পিঠা চত্ত্বর হচ্ছে পিঠা ও পিঠাপ্রেমীদেরর দৈনিক সমাবেশস্থল ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন চিকিৎ্সাকেন্দ্রের ঠিক বিপরীত পাশের প্রায় একশত মিটার লম্বা জায়গায় বিকাল হলেই জমজমাট আড্ডায় ভরে যায়। এই স্থানটিই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে পিঠাচত্ত্বর নামে পরিচিত। শীতকালে পিঠা চত্ত্বর আরো বেশি প্রাণবন্ত হয়।

ছবি: পিঠা চত্ত্বর।
পিঠাচত্ত্বরে কি পাওয়া যায় তবে? এই প্রশ্নের চেয়ে জাবির পিঠাচত্ত্বরে কোন পিঠা পাওয়া যায়না এটা করাই ভাল। কারণ বাংলার ঐতিহ্যবাহী পিঠার ছড়াছড়ি পিঠাচত্ত্বরে। চিতই পিঠা , আন্দাশা , ভাঁপা পিঠা, পুলি পিঠা, পাটিসাপটা, নারকেল পিঠা, মাংশ পিঠা, সবজি পিঠাসহ কত যে পিঠা এখানে পাওয়া যায়। এগুলোর দাম কম, একেবারেই হাতের নাগালে, তবে স্বাদে ও মানে অনন্য।
পিঠা ছাড়াও আপনি পিঠাচত্ত্বরে পাবেন ডিম চপ ও চিকেন বার্গার। পাবেন গরুর
ভুড়ি দিয়ে তৈরি ভট, নানা ধরনের চপ যেমন মাশরুম চপ, ঢেড়স, ধুনেপাতা ইত্যাদি দিয়ে বানানো চপ। এগুলো তেলে ভাজা হলেও ঢাকা ও বিভিন্ন স্থান থেকে বেড়াতে আসা দর্শনার্থীরা একবার হলেও খেয়ে থাকে।

ছবি: নানা ধরনের তেলে ভাজা পিঠা।
পিঠা চত্ত্বরে সন্ধ্যার হালকা খাবার খেতে জাবির ছাত্র ও ছাত্রীরাও অপেক্ষা কওে সারাটি দিন। বিকালের পর থেকেই ভীড় বেড়ে যায় পিঠাচত্ত্বরে। তৃতীয় বর্ষের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী জামশেদ বলেন, পিঠাচত্ত্বরে আসি পিঠা খেতে, সেই সাথে বন্ধুবান্ধবীর সঙ্গে আড্ডাও হয়ে যায়। অণুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী জালাল উদ্দিন বলেন, এখানে আসি, নাস্তা করি , ভাল লাগে। সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষার্থী ইমরান হোসেন বলেন, পিঠাচত্ত্বরের পিঠা খাওয়া ছাড়া ঘুম আসেনা, সত্যি বলছি। ঢাকা থেকে জাহাঙ্গীরনগরে বেড়াতে আসা দর্শনার্থী আহমেদ কবির বলেন, সেই কবে মায়ের হাতে পাটিসাপটা খেয়েছি , আর এই যে আজ খেলাম। স্ত্রী ও কন্যাও খাচ্ছে। পাশে বসে থাকা জাহাঙ্গীরনর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের ৩৮ তম আবর্তনের ছাত্রী নাবিলা চৈতি বলেন, ক্যাম্পাস ছেড়ে দেয়ার পর পিঠাচত্ত্বর ও এখানের আড্ডাটা মিস করবো খুব। একটি বেসরকারী টেলিভিশন চ্যানেলের সংবাদ উপস্থাপিকা নিপা সাবেরিনা বলেন, প্রতি সোমবার ও শনিবার আমি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আসি এবং এই পিঠাচত্ত্বরের পিঠা খাই ও পরিবারের অন্যদের জন্য নিয়ে য্ইা।


ছবি:মাংশ পিঠা বানাচ্ছেন এক পিঠা বিক্রেতা (বামে)ও পিঠা সামনে পিঠাপ্রিয়দের অপেক্ষায় বিক্রেতা (ডানে)
জাবির এই পিঠা চত্ত্বরের কয়েকজন বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পিঠা বিক্রি করেই তাদেও জীবন অতিবাহিত হয়। শিশু নাজমুলের পিঠার দোকানে গেলে সে বলে, ভাই আমগো এই দোকানডাই সব কিছু। যেডি এইহান থাইকা ইনকাম অয় সেইডা দিয়েই পরিবার চলে। পঞ্চোশোর্ধ এক চাচা ও চাচীও পিঠা তৈরি করেন। সেই পিঠা বিক্রি করেই তারা জীবীকা অর্জন করেন। আবার ইয়াসিন নামের বার্গার বিক্রেতার পরিবারের প্রধান আয়ের উৎম তার এই দোকানটি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একাধিকবার এইসব দোকান তুলে দিতে চাইলেও শিক্ষার্থীদেও দাবির মুখে সেটি সম্ভব হয়নি। অবশ্য প্রশাসনও জীবীকার কথা চিন্তা করে অতোটা কঠোর হয়নি। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা সজল আহমেদ বলেন, আমরা দেখেছি শিক্ষার্থীরা তাদেও প্রয়োজনে এই দোকানগুলো রাখতে চায়। তাই প্রশাসন এ ব্যাপারে এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি।
জাবিতে এখন প্রচন্ড শীত। এসেছে শীতকালীন অতিথি পাখিরা। তাদের পাশাপাশি দেশী পাখীদের মায়াবী কিচিরমিচিরে সম্পূর্ণ ক্যাম্পাস এখন স্বর্গেও মত রূপ ধারণ করেছে। যদি ঢাকার ঐ যান্ত্রিক জীবন থেকে মুক্ত হতে চান তবে মাত্র ৩০ কিলোমিটার দূরত্ত্ব পাড়ি দিয়ে আপনি বেড়িয়ে যেতে পারেন জাহাঙ্গগীরনর বিশ্ববিদ্যালয়। আর সারা দিন ঘোরাঘুরির পর যখন ক্লান্ত হবেন , ক্ষুধায় কাত হবেন তখন আপনি চলে আসবেন পিঠা চত্ত্বরে। পেটের ক্ষুধা নিবারণের পাশাপাশি ঐতিহ্যবাহী পিঠার স্বাদও পেয়ে যাবেন। পিঠা চত্ত্বর আপনাকে মায়ের হাতের পিঠার স্বাদ দিতে না পারলেও মমতাময়ী সেই মায়ের কথা ঠিকই মনে করিয়ে দেবে...।
-মঈনুল ইসলাম রাকীব
মঈনুল ইসলাম রাকীব
......................................................................................................

যদি প্রশ্ন করা হয় ঠিক কি কি কারণে আপনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম মনে রাখেন তবে কি উত্তর দেবেন? শীতের পাখি, সবুজ ক্যাম্পাস, প্রজাপতি মেলা, লাল ইটের বিল্ডিং, মিডিয়ায় জাবি
শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের নানা আন্দোলন ও কর্মসূচির কথা এবং দেশের একমাত্র আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে জাহাঙ্গীরনগরের পরিচিতি। আজ আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেবো জাবির আরো একটি দর্শনীয় স্থানের সঙ্গে । স্থানটির নাম পিঠাচত্ত্বর। বাংলাদেশের বিচিত্র রকম পিঠা পাওয়া যায় পিঠাচত্ত্বরে । পিঠা চত্ত্বর হচ্ছে পিঠা ও পিঠাপ্রেমীদেরর দৈনিক সমাবেশস্থল ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন চিকিৎ্সাকেন্দ্রের ঠিক বিপরীত পাশের প্রায় একশত মিটার লম্বা জায়গায় বিকাল হলেই জমজমাট আড্ডায় ভরে যায়। এই স্থানটিই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে পিঠাচত্ত্বর নামে পরিচিত। শীতকালে পিঠা চত্ত্বর আরো বেশি প্রাণবন্ত হয়।

ছবি: পিঠা চত্ত্বর।
পিঠাচত্ত্বরে কি পাওয়া যায় তবে? এই প্রশ্নের চেয়ে জাবির পিঠাচত্ত্বরে কোন পিঠা পাওয়া যায়না এটা করাই ভাল। কারণ বাংলার ঐতিহ্যবাহী পিঠার ছড়াছড়ি পিঠাচত্ত্বরে। চিতই পিঠা , আন্দাশা , ভাঁপা পিঠা, পুলি পিঠা, পাটিসাপটা, নারকেল পিঠা, মাংশ পিঠা, সবজি পিঠাসহ কত যে পিঠা এখানে পাওয়া যায়। এগুলোর দাম কম, একেবারেই হাতের নাগালে, তবে স্বাদে ও মানে অনন্য।
পিঠা ছাড়াও আপনি পিঠাচত্ত্বরে পাবেন ডিম চপ ও চিকেন বার্গার। পাবেন গরুর
ভুড়ি দিয়ে তৈরি ভট, নানা ধরনের চপ যেমন মাশরুম চপ, ঢেড়স, ধুনেপাতা ইত্যাদি দিয়ে বানানো চপ। এগুলো তেলে ভাজা হলেও ঢাকা ও বিভিন্ন স্থান থেকে বেড়াতে আসা দর্শনার্থীরা একবার হলেও খেয়ে থাকে।

ছবি: নানা ধরনের তেলে ভাজা পিঠা।
পিঠা চত্ত্বরে সন্ধ্যার হালকা খাবার খেতে জাবির ছাত্র ও ছাত্রীরাও অপেক্ষা কওে সারাটি দিন। বিকালের পর থেকেই ভীড় বেড়ে যায় পিঠাচত্ত্বরে। তৃতীয় বর্ষের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী জামশেদ বলেন, পিঠাচত্ত্বরে আসি পিঠা খেতে, সেই সাথে বন্ধুবান্ধবীর সঙ্গে আড্ডাও হয়ে যায়। অণুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী জালাল উদ্দিন বলেন, এখানে আসি, নাস্তা করি , ভাল লাগে। সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষার্থী ইমরান হোসেন বলেন, পিঠাচত্ত্বরের পিঠা খাওয়া ছাড়া ঘুম আসেনা, সত্যি বলছি। ঢাকা থেকে জাহাঙ্গীরনগরে বেড়াতে আসা দর্শনার্থী আহমেদ কবির বলেন, সেই কবে মায়ের হাতে পাটিসাপটা খেয়েছি , আর এই যে আজ খেলাম। স্ত্রী ও কন্যাও খাচ্ছে। পাশে বসে থাকা জাহাঙ্গীরনর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের ৩৮ তম আবর্তনের ছাত্রী নাবিলা চৈতি বলেন, ক্যাম্পাস ছেড়ে দেয়ার পর পিঠাচত্ত্বর ও এখানের আড্ডাটা মিস করবো খুব। একটি বেসরকারী টেলিভিশন চ্যানেলের সংবাদ উপস্থাপিকা নিপা সাবেরিনা বলেন, প্রতি সোমবার ও শনিবার আমি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আসি এবং এই পিঠাচত্ত্বরের পিঠা খাই ও পরিবারের অন্যদের জন্য নিয়ে য্ইা।


ছবি:মাংশ পিঠা বানাচ্ছেন এক পিঠা বিক্রেতা (বামে)ও পিঠা সামনে পিঠাপ্রিয়দের অপেক্ষায় বিক্রেতা (ডানে)
জাবির এই পিঠা চত্ত্বরের কয়েকজন বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পিঠা বিক্রি করেই তাদেও জীবন অতিবাহিত হয়। শিশু নাজমুলের পিঠার দোকানে গেলে সে বলে, ভাই আমগো এই দোকানডাই সব কিছু। যেডি এইহান থাইকা ইনকাম অয় সেইডা দিয়েই পরিবার চলে। পঞ্চোশোর্ধ এক চাচা ও চাচীও পিঠা তৈরি করেন। সেই পিঠা বিক্রি করেই তারা জীবীকা অর্জন করেন। আবার ইয়াসিন নামের বার্গার বিক্রেতার পরিবারের প্রধান আয়ের উৎম তার এই দোকানটি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একাধিকবার এইসব দোকান তুলে দিতে চাইলেও শিক্ষার্থীদেও দাবির মুখে সেটি সম্ভব হয়নি। অবশ্য প্রশাসনও জীবীকার কথা চিন্তা করে অতোটা কঠোর হয়নি। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা সজল আহমেদ বলেন, আমরা দেখেছি শিক্ষার্থীরা তাদেও প্রয়োজনে এই দোকানগুলো রাখতে চায়। তাই প্রশাসন এ ব্যাপারে এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি।
জাবিতে এখন প্রচন্ড শীত। এসেছে শীতকালীন অতিথি পাখিরা। তাদের পাশাপাশি দেশী পাখীদের মায়াবী কিচিরমিচিরে সম্পূর্ণ ক্যাম্পাস এখন স্বর্গেও মত রূপ ধারণ করেছে। যদি ঢাকার ঐ যান্ত্রিক জীবন থেকে মুক্ত হতে চান তবে মাত্র ৩০ কিলোমিটার দূরত্ত্ব পাড়ি দিয়ে আপনি বেড়িয়ে যেতে পারেন জাহাঙ্গগীরনর বিশ্ববিদ্যালয়। আর সারা দিন ঘোরাঘুরির পর যখন ক্লান্ত হবেন , ক্ষুধায় কাত হবেন তখন আপনি চলে আসবেন পিঠা চত্ত্বরে। পেটের ক্ষুধা নিবারণের পাশাপাশি ঐতিহ্যবাহী পিঠার স্বাদও পেয়ে যাবেন। পিঠা চত্ত্বর আপনাকে মায়ের হাতের পিঠার স্বাদ দিতে না পারলেও মমতাময়ী সেই মায়ের কথা ঠিকই মনে করিয়ে দেবে...।
-মঈনুল ইসলাম রাকীব
0 Comments