সর্বশেষ

শিয়া-সুন্নী প্রসঙ্গ, রাজনীতি এবং উদ্ভবের নেপথ্য

সুন্নী ও শিয়া পরিচয়কে বড় করে দেখিয়ে মুসলমানদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করছে সৌদি আরব ও তার পেইড দালাল,আইএস ও আইএসপন্থী, আল কায়েদা ও আল কায়েদাপন্থী, কিছু কওমী শিক্ষক ও শিক্ষার্থী, ওয়াহাবী গোমরাহ ও ইহুদীবাদীরা।শিয়াদের উপর ঢালাওভাবে তাকফির করে তাদের কাফের,রাফেজি,মুরতাদ ইত্যাদি বলা চরম জুলুম।মহানবী স,তাঁর আদরের মেয়ে ও জামাই,তাঁর চাচাতো ভাই ও তাঁর পরিবারের প্রতি গভীর ভক্তি ও শ্রদ্ধার কারণে কোন মুসলমান ব্যক্তিগতভাবে অমুসলিম হয়ে যেতে পারেনা,আর পুরো সম্প্রদায় তো সম্পূর্ণ অসম্ভব।আমরা ভুলে যাই, সাহাবীদের মধ্যে উদ্ভব হওয়া অনাকাঙ্খিত দ্বন্দ্ব রাজনৈতিকভাবে মুসলমানদের বিভক্ত করেছিল।শিয়া সুন্নী কোন ধর্মীয় বা মতাদর্শিক বিভাজন নয়।যেসব কথিত আলেম এক আল্লাহ ও শেষ নবী স এর উপর অগাধ বিশ্বাসের পরও শিয়া সম্প্রদায়ের উপর ঢালাওভাবে তাকফির করে তারা চরম বিভ্রান্ত,তারা ইসলামকে খন্ডিত করার জন্য অভিযুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।তারা শিয়া নয়,সমগ্র মুসলমান জাতির উপর জুলুম করছে।কারণ এমন একটি কোরআন হাদিসের দলিল (অন্ধভাবে তাকফির করা এই কথিত আলেমরা) কেউ দেখাতে পারবেনা যেখানে মহানবী স কোন একটি সম্প্রদায়ের বিপুল সংখ্যক মানুষকে (যারা নিজেদের মুসলমান দাবি করে) কাফের,রাফেজি,মুরতাদ বা অমুসলিম ঘোষণা করেছেন।অতএব যারা শিয়াদের ব্যাপারে অপপ্রচার চালাচ্ছেন তারা সাবধান হোন।অন্যথায় উম্মতের একটি মাত্র ঐক্যবদ্ধ দেহে বিভক্তির ভাইরাস ঢোকানোর দায়ে আল্লাহ আপনাকে পাকড়াও করবেন।

ব্যক্তিগতভাবে চাই শিয়া ও সুন্নী এ শব্দ দুটির বিলুপ্তি।কারণ এই দুটি শব্দ সমগ্র মুসলমানদের মধ্যে শক্ত এক দেয়াল গড়ে দিয়েছে।এই দেয়ালের কারণেই পৃথক পৃথকভাবে ইহুদীবাদী ও অত্যাচারীরা জুলুম করছে মুসলিম জনগোষ্ঠীকে।শিয়া ও সুন্নী মিলে এক না হলে অত্যাচারীরা পরাজিত হবেনা।কারণ এই দেয়াল ভাইয়ে ভাইয়ে রক্তক্ষয়ী বিভাজন রেখা টেনে দেয়।
২।
আমাদের মধ্যে অধিকাংশই জানেনা শিয়া সুন্নী ইসলামের শুরু থেকেই ছিলনা।এটি এসেছে হযরত আলী রা এর খেলাফত প্রাপ্তির পরের দুঃখজনক ঘটনাপুঞ্জ থেকে।হযরত উসমান রা কে হত্যার পর উদ্ভূত অরাজক পরিস্থিতি মোকাবেলায় হযরত আলী রা এর সঙ্গে উমাইয়া গোত্রের সাহাবীদের মতপার্থক্য হয়।এই মতপার্থক্যকে পুঁজি করে সিরিয়ায় দীর্ঘদিন অবৈধভাবে শাসনকার্য পরিচালনা করা মক্কা বিজয়উত্তর মুসলিম মুয়াবিয়া (খলিফা আলী রা বিরুদ্ধে বিদ্রোহের কারণে আল্লাহ তাঁকে ক্ষমা করুন)আলী রা এর বৈধ খেলাফতের বিরুদ্ধে অযৌক্তিক,অপ্রয়োজনীয় ও ফিত্‍না সৃষ্টিকারী বিদ্রোহ করে।অনাকাঙ্খিতভাবে সাহাবীরা এই দ্বন্দ্বে দুইটি পক্ষে যেতে বাধ্য হন।মহানবী স এর স্ত্রী ও মুয়াবিয়ার আত্মীয় মা আয়েশা রা যখন আলী রা এর বিরুদ্ধে তথা মুয়াবিয়ার সঙ্গে যোগ দিলেন তখন পরিস্থিতি আরো ঘোলাটে হয়ে যায়।এসময়ই সাধারণ মুসলমান ও সাহাবীদের মধ্যে চরম সংকটের উদ্ভব ঘটে।প্রথমত,মহানবী স এর আস্থাভাজন ও তাকওয়ায় অন্যতম শ্রেষ্ঠ সাহাবী আলী রা এর বৈধ খেলাফতের বিরোধীতা করা ইসলাম থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সমতূল্য।দ্বিতীয়ত,মা আয়েশা রা সহ উমাইয়া কুরাঈশদের একটি বড় অংশ এই খলিফার প্রকাশ্য বিরোধীতা করছে।এমন পরিস্থিতিতে শিয়া অর্থাত্‍ অনুসারী ধারনার উদ্ভব হয়।এই সময়ে মহানবী স এর যেকোন পরিস্থিতিতে আলী রা কে সমর্থনের হাদিসের উপর ভিত্তি করে সাহাবীদের যে বড় অংশ ও সাধারণ মুসলমানরা আলী রা কে জোরালো সমর্থন করে তারাই পরবর্তী সময়ে শিয়া বলে পরিচিত হয়।কিন্তু তারা কখনোই চায়নি পরবর্তিতে শিয়া নামে পৃথক সম্প্রদায় তৈরি হয়ে মুসলমানদের মধ্যে বিভাজন তৈরি হোক।বর্তমানের শিয়া পরিচয়ধারীরা যেভাবে গোঁড়ামী করে নিজেদের শিয়া পরিচয় দিয়ে গর্ববোধ করে প্রাথমিক যুগের শিয়া বিষয়টি তা ছিলনা।
তো এরপর সিফফিনের প্রান্তরে মুয়াবিয়া ও আয়েশা রা এর নেতৃত্ত্বে আলী রা এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ হয়।এ যুদ্ধে উটের পিঠে চড়ে আলী রা এর বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারন করেন মা আয়েশা।সে কারণে এ যুদ্ধকে জঙ্গে জামাল বা উস্ট্রের যুদ্ধও বলা হয়।যুদ্ধের ময়দানেও আলী রা পরাজিত ও গ্রেফতারকৃত শ্বাশুড়ী আম্মাকে স্বসম্মানে ঘরে পৌঁছে দিয়ে আসেন।এদিকে ধুরন্ধর উমাইয়ারা পরাজয় নিশ্চিত জেনে বর্শার মাথায় কোরআন বেঁধে যুদ্ধবিরতির চক্রান্ত করে।আলী রা এর প্রবল আপত্তির পরেও আব্দুল্লাহ ইবনে সাবার মত মোনাফিক এবং অন্যান্য সরলমনা মুসলমানরা মুয়াবিয়ার ফাঁদে পা ধরা পড়ে।যুদ্ধ বন্ধের নামে ষড়যন্ত্র করে মিথ্যা আপোষরফার আয়োজন করে মুয়াবিয়া।তাতে এক ঐতিহাসিক অন্যায় চক্রান্তের মাধ্যমে উপস্থিত খলিফার সামনেই ধূর্ত মুয়াবিয়াকে নয়া খলিফা ঘোষণা করা হয়।অথচ এই মুয়াবিয়াই যুদ্ধের আগে উসমান রা হত্যার বদলার কথা বলে আলী রা এর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে জনতাকে উত্তেজিত করেছিল।আর এখন খলিফা!হায় উমাইয়া!হায় রে মুয়াবিয়া!সেদিনই কারাবালার মহাট্রাজেডির পটভূমি রচিত হয়।
৩।
সাহাবী রা প্রতি বিভ্রান্ত ও গোমরাহ জামায়াতি মওদূদির মত আমরা একবিন্দু বিদ্বেষ পোষণ করিনা।তবে ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় কোরআন ও হাদিস অনুযায়ী আমরা সত্যকে চিহ্নিত করতে পারি।হযরত আলী রা এবং আয়েশা রা ও মুয়াবিয়া রা এঁদের মধ্যে আমাদের কাছে হযরত আলী রা কে অধিক ও যুক্তিসঙ্গত সত্যন্থী বলে মনে হয়।এর মানে এই না যে আলী রা এর বিরুদ্ধকারীরা কাফের বা মুরতাদ।আমাদের মতে তাঁরা সকলে মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে গিয়ে জবাবদিহি করবেন নিজেদের অবস্থানের ব্যাপারে।তবে হযরত আম্মার ইবনে ইয়াসের রা এর হযরত আলী রা এর পক্ষে শহীদ হওয়া আলী রা এর ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় সঠিক অবস্থানকে জোরালো করে।তারপরও উম্মতের ঐক্যের মত গুরুত্ত্বপূর্ণ বিযয়ের কারণে আমরা অন্যদের অবস্থানকেও আলী রা অপেক্ষা কম হকপন্থী মনে করি,বাতিল নয়।

এরপর অনেক ঘটনা পাল্টা ঘটনার পালাক্রমে শিয়া মতাদর্শের স্থায়ি রূপ দাঁড়ায়।হাসান রা কে বঞ্চিত করে ইয়াজিদের খলিফা হওয়া,হোসাইন রা সহ পুরো নবী পরিবারকে কারবালায় বর্বরভাবে হত্যা,খুত্‍বায় আলী রা ও তাঁর পরিবারকে গালিগালাজ ও অভিশাপ দেয়া,আব্বাসীয় ও ফাতেমীদের উদ্ভব এসবের পরেই একটি শক্ত রাজনৈতিক মত ধর্মীয় আবেগ যুক্ত হয়ে 'শিয়া' নামে পরিচিত হয়।
পাঠ অনুভূতি

Post a Comment

0 Comments