![]() |
৩৪ তম বিসিএসের এডমিন ক্যাডার আশরাফুল আলম। |
৩৬তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার আগে আমার লেখা কিছু কৌশল যা অবলম্বনে আমি পূর্ববর্তী ৩৪তম ও ৩৫তম বিসিএসে সফলতা পেয়েছিলাম। আমার বন্ধু তালিকার যারা আগামীকালের বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবেন তাদের বিন্দুমাত্র উপকারে আসলেও আমার সার্থকতা। :)
বিসিএস পরীক্ষার মতো আকাশ-পাতাল সিলেবাস কভার করতে গিয়ে পরীক্ষার আগে মাথার প্রসেসর কতোটা গরম থাকে তা পরিক্ষার্থী ছাড়া আর কারো পক্ষে বোঝা একটু কঠিনই বটে। আর মাথা গরম থাকলে অনেক সহজ ব্যাপারগুলোতে তালগোল পাকিয়ে যায়। আমি যেহেতু এখন যথেষ্ট ফ্রি তাই ঠান্ডা মাথায় কিছু রিমাইন্ডার লিখলাম প্রিয় বন্ধু-বড়ভাই-ছোটভাইদের জন্য। এমন অনেক শ্রদ্ধেয় বড়ভাই আছেন যারা ৪র্থ, ৫ম বারের মতো পরীক্ষা দিতে যাচ্ছেন। তাদের তুলনায় আমার অভিজ্ঞতা কিছুই না। তাই ভুল-ত্রুটি উদারভাবে নেয়ার অনুরোধ জানাই।
১। প্রথমেই দেখে নিন প্রবেশ পত্র ডাউনলোড করা আছে কি না। না থাকলে খুব সহজেই বিপিএসসি'র ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোড করে নিন। সীট প্ল্যান ভালো করে দেখে নিন। পরীক্ষার হল যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের হল অথবা বাসা থেকে দূরে হয় তবে আগের দিন কাছাকাছি কোথাও পৌঁছে থাকাই ভালো। তবে অনেকের নতুন পরিবেশে ঘুমে সমস্যা হয়। সেক্ষেত্রে নিয়মিত যেখানে থাকা হয় সেখান থেকে পরীক্ষা দেয়া উচিৎ। আমি কামালউদ্দীন হল থেকেই প্রিলি, রিটেন এবং ভাইভা পরীক্ষা দিয়েছি যদিও জাবি ঢাকা থেকে ৩০+ কিমি দূরে, ২ ঘন্টার জার্নি, তবু আমার রুম আমার জন্য খুব কমফোর্টেবল।
২।প্রবেশপত্রে দেয়া নির্দেশনা ভালো করে পড়ে নিন। ডু'জ & ডোন্ট'সগুলো। যেমন ৩৬তম বিসিএস থেকে পরীক্ষার হলে ঘড়ি বহন করা নিষিদ্ধ করা হয়েছিলো। তবে সঠিক সময়ে পরীক্ষার হলে পৌঁছানোর জন্য সাথে ঘড়ি রাখা ভালো। আমরা কয়েকজন মিলে একজন জুনিয়ার ছোটভাই নিয়ে যেতাম। তার কাছে ফোন, ঘড়ি, ওয়ালেট রেখে এক্সাম হলে ঢুকতাম। রিটেন, ভাইভা সবক্ষেত্রে একই কাজ করেছি।
৩। ভালো পরীক্ষা দেয়ার মূলমন্ত্র আত্মবিশ্বাস। বুয়েট, মেডিক্যাল, আইবিএ, ঢাবি, জাবি'সহ সকল বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজের প্রায় আড়াই লাখ পরিক্ষার্থীর সাথে প্রতিযোগিতাটা আসলেই কঠিন। আমি নিজেও পরীক্ষার হলে গিয়ে ইয়া দামড়া দামড়া এবং সিনিয়ার মানুষজন দেখে হতাশ হয়ে যেতাম! মনে হতো এতো অভিজ্ঞ মানুষজনের সাথে কম্পিট করে পারবো? তবে নিষ্ঠার সাথে পরিশ্রম করে থাকলে অবশ্যই পারবেন, আত্মবিশ্বাস রাখুন শতভাগ।
৪। প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় মাথা ঠান্ডা রাখা ফরজ! মাথা ঠান্ডা রাখার জন্য ঘুম ফরজ! সুতরাং কোনোক্রমেই ছয় ঘন্টার কম ঘুমাবেন না। আই রিপিট, ছয় ঘন্টা অ্যাট লিস্ট। আপনি ৫০ পেইজ কম পড়ে যান সমস্যা নেই, তবে মাথা ঠান্ডা না থাকলে আপনার আগের রাতের ৫০ পেইজ পড়ে ঘুম নষ্ট করার দরুন হাজার হাজার পেইজ পড়ার ক্ষতি হবে।
৫। পরীক্ষার আগে মারাত্মক স্ট্রেস কাজ করে। মূলত মস্তিষ্কে অক্সিজেন সরবরাহ কমে গেলেই নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসার উপক্রম হয়। ডিপ ব্রেথ নিলে ব্যাপক উপকার পাওয়া যায়। কখনো করে না থাকলে লম্বা-- কয়েকটা শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ে দেখতে পারেন, এখনি। ইট ওয়ার্ক্স ওন্ডারফুলি। আমি অবশ্য যতবড় পরীক্ষাই হোক সকালে ওঠে ফজরের নামাজ পড়ি, গোসল করি। নামাজ স্ট্রেস কমানোর ক্ষেত্রে ম্যাজিকের মতো কাজ করে। কেননা সিজদায় মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে। গোসল করতে না পারলেও অন্ততঃ মাথায় পানি ঢেলে যান। অনেক আরাম পাওয়া যায় এতে।
## আগে প্রশ্নপত্র দেখুন, উত্তরপত্র দেখুন একবার। অনেক সময় 'ক' 'খ' 'গ' 'ঘ' এর ওরিয়েন্টেইশান চেইঞ্জ করে দেয়। খেয়াল না করলে অনেকগুলো ভুল হয়ে যায়। আমাদের লিখিত পরীক্ষার মানসিক দক্ষতা অংশে প্রশ্নপত্রে অপশান ছিলো ৪টা অথচ উত্তরপত্রে অপশান ছিলো ৫টা!! আমার নিজের ২টা ভুল হইছে অবচেতন মনে। এসব বিষয়ে সতর্ক থাকুন।
## প্রশ্নের কাঠিন্যের লেভেল দেখুন। দেখে আইডিয়া করুন আপনার সহযোদ্ধারা গড়ে কেমন পাবে। সে অনুযায়ী উত্তর করুন। যেমন ৩৫তম বিসিএসের ইস্পাত কঠিন প্রশ্নে অনেকেই টিকেনি বেশি পূরণ করার জন্য, তেমনি ৩৪তম বিসিএসের পানির মতো সোজা প্রশ্নে অনেকে বাদ পড়েছে কম পূরণ করার জন্য। ২০০ নাম্বারের পরীক্ষায় কাটমার্ক কখনো ১১০'র বেশি ওঠার কথা না। একটু সচেতনভাবে নেগ্যাটিভ মার্কিং এড়াতে পারলে ১১০ পাওয়া কঠিন না। প্রশ্নের কাঠিন্য বুঝবেন কিভাবে?
আপনি বিগত বছরের প্রশ্ন পড়ে থাকবেন হয়তো। ৩৪তম বিসিএসের প্রশ্ন পড়ে দেখুন কতো কমন বিষয়ে প্রশ্নগুলো এসেছে, কোনো প্যাঁচ ছাড়াই। আর ৩৫তম বিসিএসের প্রশ্ন দেখুন কতো উদ্ভট প্রশ্ন এসেছে, যেসব প্রশ্ন একটা শিক্ষার্থী ১০ বছর প্রিপারেইশান নিলেও টাচ করার কথা না, প্রচলিত বইগুলোতেও নেই। নরেন্দ্র মোদি কয়জনকে দাওয়াত করেছেন? এই টাইপ!
প্রশ্ন পারেন আর না পারেন, যদি আপনার মনে হয় এটা আসার মতো প্রশ্ন, আমি একড়ু পড়ে আসলেই পারতাম, তবে তবে বুঝবেন অনেকেই পড়ে এসেছে এবং পারতেছে। সুতরাং কাট মার্ক বেশি হবে। আর যদি মনে হয় আমি ৬ মাস পড়লেও হয়তো এটা আমার অজানাই থাকতো তবে বুঝবেন এটা আরো অনেকের অজানা। সুতরাং কঠিন প্রশ্ন, কাটমার্ক কম হবে।
## কনফিউজড প্রশ্নগুলোতে সর্বোচ্চ ১০-১২টা উত্তর করা যেতে পারে। ধরুন আপনার ১০টার মধ্যে ৩টা হলো, তাহলে বাকি সাতটা ভুলের জন্য আপনি সাড়ে তিন নেগ্যাটিভ খেয়েছেন। আর তিনটা সঠিক উত্তরে তিন পেয়েছেন। তাহলে লস মাত্র আধা মার্ক। এটা কোনো ব্যাপারই না। কনফিউজড প্রশ্নে ১০টার মধ্যে ৬-৭টা সঠিক হয়ে যায়। তাতে লাভই হয়। কনফিউজড প্রশ্ন আর অজানা প্রশ্নের পার্থক্য বুঝতে হবে। ১০টা দাগালে ১০টাই ভুল হয় মানে আপনি অজানা জিনিস দাগান। আমি বলেছি কনফিউজড প্রশ্ন দাগাতে। ধরুন বাংলা সাহিত্যে প্রথম সার্থক উপন্যাসের জনক কে? উত্তর আছে বঙ্কিমচন্দ্র, মধুসূদন, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল। আপনি শিওর নজরুল, রবীন্দ্র হইতেই পারে না। বঙ্কিম অথবা মধুসূদন এই দু'য়ের একজন হবে, তবে কে হবে আপনি শিওর না। এসব প্রশ্ন ১০টা দাগালে ৬টা সঠিক হয়ে যায় অনেক সময়।
### সময় স্ট্রিক্টলি মেইনটেইন করুন। কোনোটা নিয়ে খুব কনফিউজড থাকলে স্কিপ করুন। পরে ঘুরে এসে সময় পেলে পূরণ করুন। নতুবা কনফিউজড জিনিস নিয়ে রিসার্চ করতে গিয়ে সময়ের অভাবে কনফার্ম জিনিস অ্যান্সার করা যায় না। ৩৫তম প্রিলি'তে আমি সময়ের অভাবে ১০টা পূরণ করতে পারিনি। তবু ভাগ্যক্রমে টিকে গেছিলাম। ;)
### ধরুন প্রথম ১০০টা প্রশ্নে আপনি ৫০টাই পারেননি। বারবার স্কিপ করে যেতে হচ্ছে। তবু মাথা ঠান্ডা রাখুন। ভাবুন পরবর্তী ১০০টার মধ্যে হয়তো ১০০টাই হবে আমার। :) ৩৫তম বিসিএসে ১ম প্রশ্ন থেকে শুরু করে ২০০তম প্রশ্ন পর্যন্ত আমি আশায় বুক বেঁধে ছিলাম হয়তো পরের সেকশানটাতে আমি সব পারবো। যদিও অমানবিক কঠিন প্রশ্নের জন্য ২০০ নং প্রশ্ন পর্যন্ত অপেক্ষা করেও কোনো সেকশানই সহজ লাগেনি, না বাংলা, না ইংলিশ, না গাণিতিক যুক্তি। :( তবু হাল ছাড়িনি। :D
শুধু এক্সাম স্ট্রাটেজি'ই আপনাকে অনেকদূর এগিয়ে দিতে পারে। অধিকাংশ শিক্ষার্থী অনেক জানাসত্ত্বেও কৌশলের অভাবে বাদ পড়ে যায়। :(
#আল্লাহর অনুগ্রহ খুঁজুন। আপনার ভাগ্যে যা আছে শেষ পর্যন্ত তাই পাবেন। আমি অবশ্য পরীক্ষা শুরুর আগে যত দু'আ কালাম জানি সবই পড়ি, সারাজীবন...। কমপক্ষে "ইয়া আ'লিমু" (হে সর্বজ্ঞানী) ১০০ বার পড়তাম। উপকারও পেয়েছি অনেক। বিশেষত ভাইভা'তে। এতো কঠিন প্রশ্ন করেছে আমাকে, তবু দেখি ওগুলো আমার জানা। জীবনের কোনো না কোনো পর্যায়ে পড়েছিলাম।
আল্লাহ আমাদের সবার সহায় হোন।
0 Comments