সর্বশেষ

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অবরোধ-আন্দোলন: সারসংক্ষেপ, পক্ষ-বিপক্ষ ও কিছু অপ্রিয় কথা


আন্দোলনরত সাংস্কৃতিক কর্মী ও বামপন্থী শিক্ষার্থীরা জাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম ম্যামকে বাসায় অবরুদ্ধ করে রেখেছে। (VIDEO: বাসের ধাক্কায় জাবির ২ ছাত্রের লাশ ছিটকে পড়ে আছে রাস্তায়) বিকাল থেকে এখনো বাসা ঘেরাও করে রেখেছে তারা। বাসার সামনে থাকা তিনটা সিসিটিভি ক্যামেরা ভাঙচুর করেছে আন্দোলনকারীরা। বাসভবনের গেটে তালা মারা হয়েছে। সকালে আন্দোলনরত সাধারণ শিক্ষার্থীদের কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা গেলো, যে এই বাসভবন অবরোধের সঙ্গে তারা নেই। ৪৩ তম আবর্তনের এনাম বলেন, আমরা দাবি আদায় করে ফিরে আসি। এখন যা হচ্ছে সেটিতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা নেই। ৪১ তম আবর্তনের ফারুক স্ট্যাটাস দেন, ক্যাম্পাসের তথাকথিত বুদ্ধিজীবীদের বলছি, আপনারা কী মনুষ্যত্ব, বিবেকবোধ শব্দগুলোর সাথে পরিচিত? যদি পরিচয় না থাকে তাহলে কিছু বলার নাই।(ভিডিও: বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের সামনে অসহায় জাবি উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম) যদি আছে বলে দাবী করেন, তাহলে বলবো আপন ভাইয়ের লাশ নিয়ে রাজনীতি কোন ধরনের মানবতাবোধের মধ্যে পড়ে? আর আপনারা হচ্ছেন অতিমাত্রায় নিকৃষ্ট স্তন্যপায়ী প্রাণী, যারা মানুষ এবং ভাস্কর্যকে এক কাতারে নিয়ে আসছেন ।
দাঙ্গা পুলিশ একশনে। নির্দেশের অপেক্ষায়...
এদিকে দাঙ্গা পুলিশ কর্তৃক টিয়ারশেলে কিছু শিক্ষার্থী আহত হলে উত্তেজিত বামধারার শিক্ষার্থীরা প্রধান ফটক ছেড়ে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে দৌড়ে আসে। রাত পৌনে আটটার দিকে কিছু শিক্ষকের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয় আন্দোলনকারীদের। (দুই ছাত্রের একসিডেন্ট করার পরের মুহূর্তের দেহ: ভিডিও) এসময় ছোট্র একটা কাঁঠাল দিয়ে ঘাঁ দেয়ায় তার আঘাতে একজন শিক্ষক আহত হন। তবে এ ঘটনা অস্বীকার করেছে আন্দোলনকারীরা। তারা বলেছে, ইচ্ছা করে মারেনি। কিন্তু শিক্ষকরা এর জন্য আন্দোলনকারীদের দায়ি করেছেন। এই স্ট্যাটাস লেখা পর্যন্ত বামপন্থী শিক্ষার্থীদের গেইটে তালা মারার কারণে সাংবাদিকরা ভেতরে প্রবেশ করতে পারছেনা। ফলে ভেতরে ঠিক কি হচ্ছে তা বলা মুশকিল। (ভিডিও: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মাজার, কবর, পৈতৃক নিবাস)) তবে ভেতরে থাকা আন্দোলনকারীদের চিত্‍কার শোনা যাচ্ছে। সম্ভবত পুলিশকে বাসভবনের নিরাপত্তার জন্য ডাকা হচ্ছে। সংকট কেটে যাক সেটা চাই। অস্থিতিশীলতা কামনা করিনা। সকল পক্ষকে দায়িত্বশীল আচরণ করার অনুরোধ করছি। বিশ্ববিদ্যালয় ভ্যাকেন্ট করতে আমরা যেন প্রশাসনকে বাধ্য না করি সে দিকে সতর্ক থাকুন প্লিজ। ম্যাম সব দাবি মেনে নেয়ার পরও কেউ যদি রাস্তা আটকে থাকে তবে তার জন্য ম্যামকে দায়ি করা যাবে কি

প্রশাসন তাৎক্ষণিক স্পিডব্রেকার নির্মাণ কাজ শুরু করে দেয়।
মার্কেটিং বিভাগ, মাইক্রোবায়োলজি বিভাগ ও আল বেরুনী হলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বললে তারা সবাই জানায়, উপাচার্য ম্যামের বাস ভবন ঘেরাওয়ের সাথে আমরা নেই। ম্যাম তাদের দাবি পূরণ করতে প্রতিশ্রুতি দিলে তারা রাস্তা অবরোধ ছেড়ে হলে ফিরে আসে। এ ব্যাপারে বামপন্থী ও সাংস্কৃতিক কর্মীদের মন্তব্য পাওয়া যায়নি এখনো। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, তাদের আন্দোলনটা দখল করে নেয় কিছু বাম। এই ধরনের ছিনতাই কোন দিন দেখি নাই। কিভাবে একটি সুন্দর-গোছানো প্রতিবাদকে বামপন্থী ও সাংষ্কৃতিক কর্মীরা নষ্ট করলো তা দেখলাম। ধিক্কার জানালাম! আরাফাত ও রানা , ক্ষমা করিস না আমাদের। যারা তোরা তাবলিগ করতি বলে রাস্তায় নামেনি প্রথম দিন তারা তোদের পরিবারের ক্ষতিপূরণটাও ঠিকমতো হতে দিলোনা। আমি তাদের বললাম, আপনারা এখন বামদের সামনে গিয়ে কথাগুলো বলেন। তারা বললেন, ওরা অল্প হলেও, এক হয়ে আমাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়বে।
(ভিডিও: বাসের ধাক্কায় নিহত জাবির ২ ছাত্রের লাশ পড়ে আছে রাস্তায়)

এখন আমার কিছু কথা। সাংবাদিকতার কারণে আমি এই আন্দোলন খুব কাছ থেকে দেখেছি। এখানে পক্ষ ছিল চারটা যারা আন্দোলন করেছে।
১। আরাফাত-রানার হল আল বেরুনীর ছাত্ররা
২। মার্কেটিং ও মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের শিক্ষার্থীরাজাবি ছাত্রলীগের পদপ্রাপ্তদের অনুভূতি
৩। বামপন্থী ও সাংস্কৃতিক কর্মীরা এবং
৪। অন্যান্য সাধারণ শিক্ষার্থীরা
রানা ও আরাফাতের মৃত্যুর দিন অর্থাৎ ২৬ মে আন্দোলন শুরু করে ১,২ ও ৪ নং পক্ষ। তারা ৭ দিনের একটি আশ্বাসে প্রথম দিন ঘরে ফেরে। ৩ নং পক্ষ প্রথম দিন রাস্তায় আসেনি। তবে সন্ধায় তারা থেমিস রক্ষা আন্দোলনের পাশে রানা-আরাফাতকে স্থান দেয়। আজ ২৭ মে সকাল থেকে ১, ২, ৪ নং পক্ষ ফের জড় হতে থাকে। পরে সেখানে ধীরে ধীরে ৩ নং পক্ষও আসতে থাকে। এই চতুর্পাক্ষিক আন্দোলনে ফলে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ভিডিওতে দেখুন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে র‌্যাগিং হয় কি না! এরপর উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম ম্যাম এসে লিখিত দিয়ে যান যে, তিনি সকল দাবি পূরণ করবেন। এ ঘটনার পর ১, ২ ও ৪ নং পক্ষ সড়ক অবরোধ বন্ধ করতে চায়। কিন্তু ৩ নং পক্ষ তাতে রাজি হয়নি। তারা তাদের কর্মীদের উপর ছাত্রলীগের আক্রমণের অভিযোগ আনে।তার বিচার চায়। এর মধ্যে উপাচার্যের নির্দেশে শিক্ষার্থীদের উত্তেজনা থামাতে বেলা দেড়টার দিকে ইট-বালি-সিমেন্ট এনে তাৎক্ষণিক স্পিডব্রেকার নির্মাণ কাজ শুরু হয়। তখন অধিকাংশ শিক্ষার্থী গণদুর্ভোগ দেখে সড়ক অবরোধ তুলে আনতে বলে। কিন্তু যারাই সড়ক অবরোধ তুলে আনার কথা বলে তাদেরকে ৩ নং পক্ষ ‘প্রশাসনের দালাল’ বা ‘সমঝোতা মানিনা’ শ্লোগান শুনিয়ে দেয়।
উপাচার্য লিখিত দেন যে তিনি সব দাবি পূরণ করবেন। তারপরেও কেন অবরোধ হলো?
এ পর্যায়ে ১, ২ ও ৪ নং (৪ এর অর্ধেক) পক্ষ রাস্তা অবরোধ ছেড়ে হলে বা যার যার কাজে চলে আসে। বামপন্থী ও অন্যান্যরা তখন ছাত্রলীগের বিচার, তাৎক্ষণিক ক্ষতিপূরণের চেক দাবি করে। উপাচার্য সময় চায়। এ সময় উপাচার্য আন্দোলনকারী ও ছাত্রলীগের মধ্যে সংঘর্ষ নিজে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে থেকে থামিয়ে দেন। পরে বিক্ষোভকারীদের পক্ষে কিছু প্রতিনিধি উপাচার্যের কাছে যায়। উপাচার্য তাদের আশ্বাস প্রদান করেন, কিন্তু তারা তা গ্রহণ করেনি। পরে আগে থেকে উপস্থিত দাঙ্গা পুলিশ আক্রমণ করে শিক্ষার্থীদের। এ পর্যায়ে ২ পক্ষের মধ্যে ইটপাটকেল ছোড়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে ভাঙচুর করা হয় এবং পুলিশের টিয়ারশেলে বামপন্থী শিক্ষার্থী, সাংবাদিক হাফিজ ও নিরাপত্তা কর্মকর্তা সুদীপ্ত শাহিন আহত হন। এতে ক্ষুব্ধ বামপন্থী শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে উপস্থিত ছাত্ররা উপাচার্যের বাসভবন ঘেরাওয়ের সিদ্ধান্ত নেয়।(ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ নিয়ে বাংলাদেশের তরুণদের ভাবনা কি?)
এনামুল হক শামীম একজনই
পরে দৌড়ে তারা উপাচার্যের বাসভবনের দিকে রওনা হয়। এ সময় অমর একুশে ভাস্কর্যের সামেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের বহনকারী একটি মাইক্রোবাসে উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা ব্যাপাক ভাঙচুর চালায়। অতর্কিত হামলায় মাইক্রোবাসে থাকা ব্যক্তিবর্গ আহত অবস্থায় পালিয়ে যান। এই পুরো সময়ে প্রক্টর বা প্রক্টরিয়াল বডির কাউকে দেখা যায়নি।
এটা ভাঙচুর করা হয়
পরে সেখান থেকে মিছিল করে বামপন্থী ও সাংস্কৃতিক কর্মীরা উপাচার্যের বাসভবনের দিকে যায়। তারা এসময় উপাচার্য বিরোধী শ্লোগান দেয়। একই সাথে প্রক্টর ও নিহত ২ শিক্ষার্থীর লাশ ক্যাম্পাসে আনতে না দেওয়া শিক্ষকদের বিরুদ্ধেও শ্লোগান দেয়। মিছিলটি চৌরঙ্গী পার হওয়ার পরই মারমুখী আন্দোলনকারীরা উপাচার্যের বাসভবন ঘেরাও করে। এ সময় কিছু আন্দোলনকারী উপাচার্যের বাসভনের মধ্যে ইট পাটকেল ছুড়ে মারে। ভিডিও: ২ ছাত্রের লাশ পড়ে আছে রাস্তায় কিছু লোক বাসভবনের গেইটে লাথি মারে । এসময় তারা বাসভনের সামনের তিনটি সিসিটিভি ক্যামেরা ভেঙে ফেলে। পরে নিরাপত্তাকর্মীদের কাছ থেকে চাবি নিয়ে আন্দোলনকারীরা মূলগেইট ও কলাপসিবল গেইটে তালা মেরে দেয়। এসময় ভেতর বা বাইরের সকলের স্বাভাবিক প্রবেশাধীকার ক্ষুন্ন হয়। আমি সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে ভেতরে যেতে চাইলেও যেতে দেয়া হয়নি। বরং বলা হয় ‘গেট ডিঙিয়ে যায়’। এরপর অবরুদ্ধ উপাচার্য ম্যামকে দেখতে কিছু শিক্ষক ভেতরে প্রবেশ করতে চাইলে তাদের সাথে ধস্তাধস্তি হয়। কয়েকজন শিক্ষক এসময় আহত সহয়। এসময় শিক্ষকদের অভিযোগ, তাদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে শিক্ষার্থীরা। অন্য দিকে শিক্ষার্থীরা বলছে, তারা দাবি আদায়ে সহযোগিতা ছাড়া আর কিছু গ্রহণ করবেনা।
বিষের জ্বালায় কাতর আঁখি আলমগীর
কয়েকজন বাম নেতা-কর্মী এসময় উপাচার্য তাদের দাবি না মানলে আমরণ অনশন করবেন বলে ঘোষণা দেন। কিন্তু ভেতরে প্রবেশ করতে না পারায় কি হচ্ছিল তা জানা যায়নি। এরপর বিপুল সংখ্যক পুলিশ উপচার্যের নিরাপত্তা দান করতে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করছে এমন খবর ছড়িয়ে পড়ে। এতে বাম ও সাংস্কৃতি কর্মীরা আরো ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। তারা উপাচার্যের বিরুদ্ধে একের পর এক কথা বলতে থাকে। এসময় বাইরে কিছু শিক্ষকদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। তারা তাদের উপর কাঁঠাল দিয়ে আক্রমণের ব্যাপারে হা-হুতাশ প্রকাশ করেন। ইতিহাস ও সরকার  ও রাজনীতি বিভাগের দু্ই নারী শিক্ষক এসময় বারবার কাঁঠাল নিয়ে আলাপ করছিলেন। তবে কাঁঠালের ব্যাপারে আন্দোলনকারীদের বয়ান যা তা হাসির উদ্রেক করে বলে এখানে প্রকাশ করা হলোনা।

আরাফাত ও রানার লাশ রাস্তার দুই পাশে পড়ে আছে
অন্য দিকে পুরো পরিস্থিতিতে ছাত্রলীগ নিরব ভূমিকা পালন করছে। মাঝখানে কিছু উচ্ছৃঙ্খল কর্মীরা বেপরোয়া হতে চাইলে সভাপতি জুয়েল ও সাধারন সম্পাদক চঞ্চল তাদের মারধর করে তাড়িয়ে দেন। কিন্তু কিছু ছাত্রলীগের অসাধু কর্মী এসময় সাংবাদিক সায়েমের উপর বর্বর আক্রমণ করে। এর আগে তারা বামপন্থী ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর আক্রমণ করে বলে ভিডিও প্রকাশ পায়। তবে পরিস্থিতি আর অশান্ত করেনি ছাত্রলীগ। পরে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা যান চলাচল বন্ধ হওয়ায় দুর্ভোগে পড়া সাধারণ মানুষকে পানি খাওয়ায়। এ ব্যাপারে ছাত্রলীগ সহসভাপতি তাজ বলেন, ছাত্রলীগের ভাল কাজ তো কারো চোখে পড়েনা। কেন এমন পক্ষপাত আমাদের সাথে?

তবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে ছাত্রলীগ যেকোন সময় বামপন্থী ও সাংস্কৃতিক কর্মীদের অবস্থান ও অবরোধ প্রতিরোধ করতে নামতে পারে বলে কয়েকজন ছাত্রনেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। ছাত্রদের আন্দোলনকে বামরা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করছে বলে তাদের অভিযোগ। তারা বলেন, ছাত্র-ছাত্রীদের দাবি মেনে নিয়েছেন উপাচার্য। কেন এখন উপাচার্য বিরোধী এই আন্দোলন? রাত ১০ টা পর্যন্ত এই ছিল আপডেট।
সেন্টমার্টিন যাওয়ার আগে একবার এই ভিডিওটি দেখে যাবেন! মিডিয়ার আড়ালে কারা বাস কারে সেখানে?

এখন আমার ব্যক্তিগত কয়েকটি কথা। যারা উপাচার্য পদত্যাগের জন্য আন্দোলন করছেন, তারা কেন করছেন আমি জানিনা। উপাচার্য পদত্যাগ করলে কি কোন সমাধান আসবে? নিহত রানা ও আরাফাতের পরিবারের ক্ষতিপূরণ দিতে আশ্বাস দিয়েছেন উপাচার্য মহোদয়। এরপরেও কেন তার পদত্যাগ? একজন উপাচার্য পদত্যাগ করলে নতুন উপাচার্য আসতে যে সময় ও প্রক্রিয়া তাতে নিহত রানা ও আরাফাতের পরিবারকে দিতে চাওয়া ক্ষতিপূরণ যদি না আসে? ম্যাম তো চাকরীও দিতে চেয়েছেন আরাফাতের দুলাভাইকে। তাহলে কেন তার পদত্যাগ? এর যৌক্তিকতা কতটুকু?

যখন সাধারণ শিক্ষার্থী, আল বেরুনী হলের শিক্ষার্থী ও মার্কেটিং-মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের শিক্ষার্থীরা রাস্তা অবরোধ ছেড়ে দিতে বললো কেন অন্যরা তা করলোনা? সেটি তখন করলে তো টিয়ারশেল পর্যন্ত পরিস্থিতি যায়না। নাকি?উত্তাল জাবি: সূত্রপাত এভাবে: ভিডিও দেখুন
২৬ মে কেন বামপন্থী ও সাংস্কৃতিক কর্মীরা সাধারণ শিক্ষার্থী ও আল বেরুনী হলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে রাস্তায় এলোনা? ছেলে দুটির জন্য মায়া জাগতে কেন একদিন সময় লাগলো? ওরা তাবলিগ করে বলে অনেকেই অভিযোগ করে। আমি তার সাথে পুরোপুরি একমত নই। আমার মনে হয়েছে বামপন্থী নেতৃত্ব ২ টি লাশের গুরুত্ব বুঝতে এক দিন দেরি করেছে।

যদি এখন হল ভ্যাকেন্ট করে দেয়া হয় তাতেও রানা ও আরাফাতের পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। কারণ অনির্দিষ্টকালের বন্ধ বড় ভয়াবহ ব্যাপার। এতে সকলেই ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
দ্বিতীয় দিন অর্থাৎ ২৭ মে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ: ভিডিও

সে কারণে আমি বলবো, উপাচার্য ম্যাডাম লিখিত দলিলে যখন প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তাঁতে তা বাস্তবায়নের সুযোগ প্রদান করা উচিত। কারণ তিনিও একজন মা। তাঁকে সুযোগ না দিয়ে অতিআন্দোলন ভাল কিছু বয়ে আনবে বলে মনে হয়না। কারণ তিনি স্পিডব্রেকার ও ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণের কাজ শুরু করেছেন ২৭ মে দুপুরেই। আর ২ পরিবারকে ক্ষতিপূরণ ও চাকরী দেয়ার কথাও দিয়েছেন। তারপরেও যারা আন্দোলন করছেন তাদের ব্যাপারে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ইতিবাচক কোন কথা বা সাড়া পাইনি। সুতরাং বিশ্ববিদ্যালয় ও নিহতের পরিবারের স্বার্থে সকল ধরনের অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি হওয়ার সম্ভাবনাকে আমরা সকলেই চলুন ‘না’ বলি।
এখন ভিসির বাসভবনের মধ্যে যা হচ্ছে তা শান্তিপূর্ণভাবে সমাধানের পথ দেখছিনা। ভয় হচ্ছে, কি জানি কি হয়। বিপুল সংখ্যক পুলিশ এবং উত্তেজিত ছাত্ররা বেশিক্ষণ পাশাপাশি থাকবে বলে মনে হয়না।

এই ব্লগটার লেখা শেষ করতে করতেই শুনলাম ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক বশির আহমেদ স্যারের থেকে যে, অনিদির্দষ্টকালের জন্য জাবির হল ভ্যাকেন্ট করে দেয়া হয়েছে। এর মানে বিশ্ববিদ্যালয়ে জরুরি অবস্থা। এখন যে দুটি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হলো তাদের দায়ভার কে নেবে? কে দেবে তাদের সুবিধা? যারা আন্দোলনটা ছিনিয়ে নিয়ে সাধারণের কাছ থেকে উপাচার্যের বাসভবনে নিয়ে গেছে তারা আশা করি যৌক্তিক উত্তর দেবেন?
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভ্যানচালক সেই ইমাম শেখের সাক্ষাৎকারে শুনুন কি বলেছে শেখ হাসিনা তাকে

আমার মনে হয়, যখন উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম লিখিত দিয়েছিলেন তখন রাস্তা ছেড়ে দেয়া উচিত ছিল। কারণ ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক দেশের দক্ষিণের ও উত্তরাঞ্চলের এবং ইপিজেড এর সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র রাস্তা। লাখ লাখ মানুষের ভোগান্তি করার অধিকার আমাদের নেই। একটি সময় পর্যন্ত থেকে ক্যাম্পাসের ভেতরে এসে আন্দোলন করলেই হতো। কারণ রাস্তায় স্পিডব্রেকার নির্মাণের কাজও শুরু হয়েছিল। তো পরে যারা ছাত্রলীগের আক্রমণকারী অসাধুদের বিচার চেয়েছিলেন সে দাবি যৌক্তিক, কিন্তু তার অবস্থান যৌক্তিক ছিলনা। কারণ এই দাবিটি প্রশাসনিক ভবনের নিকট এসেও করা যেত। রাস্তা আটকে নয়। রাস্তায় অবস্থানের পরেই পুলিশ আক্রমণের অজুহাত পেয়েছে। তবে আন্দোলনকারীরা উপাচার্য এর কাছ থেকে ১৫ মিনিট সময় চেয়ে নেয়ার পরেও মাত্র ২-৫ মিনিটের মাথায় পুলিশের একশনে যাওয়া মেনে নেয়া যায়না। সম্ভবত পুলিশের ভুলে বা অতি উৎসাহে এই অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটেছে।

তবে গভীর রাতে আমরা জানতে পারি ৪২ জন শিক্ষার্থীকে পুলিশ ভিসির বাসভবন থেকে গ্রেফতার করেছে। এটা সঠিক সিদ্ধান্ত হয়নি। পরবর্তিতে ৫৪ জনকে আসামী করে মামলা করে প্রশাসন। সেই মামলাটির কারণে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সুযোগ ফের তৈরি হবে বলে মনে হয়। সে কারণে মামলা তুলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনির্দিষ্টকালের বন্ধ প্রত্যাহার করে এবং যেকোন ধরনের অস্থিতিশীলতার পরিস্থিতি না তৈরি করে বিশ্ববিদ্যালয় চালু হবে সেটিই কামনা করি। ভালো থেকো, প্রিয় জাহাঙ্গীরনগর। ভাল থাকিস রানা-আরাফাত।
পাঠ অনুভূতি