শিক্ষিত মানুষ সাম্প্রদায়িক হলে সে আর মানুষ থাকেনা, পূর্বে অ যুক্ত মানুষ হয়ে যায়। বিশেষ বিশেষ সময়ে মানুষের ভেতরের পাশবিক প্রতিক্রিয়াশীল রূপটির প্রকাশ ঘটে। পূজা পার্বনে কিছু মানুষের মনের মধ্যে লুকিয়ে থাকা চরম হিন্দু বিদ্বেষ দেখা যায়। এসব সাম্প্রদায়িকতা ধারণ করা মানুষদের কাছে দুর্গা পূজার শুভেচ্ছা জানালেও ঈমান থাকেনা বলে প্রোপাগাণ্ডা চালায়। এদের সংকীর্ণ চিন্তায় কেউ দুর্গা পূজার শুভেচ্ছা জানালো মানে সে দুর্গা পূজা করে ফেললো।এসবের মূলে আসলে তাদের হিন্দু ধর্ম ও হিন্দু বিদ্বেষ প্রকাশ পায় এটা তারা বোঝে কি না কে জানে! এটি মানবিক আচরণ নয়। ধর্ম, বর্ণের ঊর্ধ্বে উঠে মানুষকে মূল্যায়ন না করতে পারলে কিসের মানুষ আমরা? কিসের শিক্ষা পেলাম আমরা? একই ভাবে একটি শ্রেণি আছে যারা কোরবানি আসলে তা নিয়ে শুরু করে সূক্ষ্ম সাম্প্রদায়িক উস্কানি।এই গোষ্ঠী ইনিয়ে বিনিয়ে ইসলাম বিদ্বেষ করে পৈচাশিক তৃপ্তি পায়। এরাও মানবতার শত্রু। ধর্মীয় উৎসবটিকে সাংস্কৃতি পরিমণ্ডলের দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করার জন্য যে উদার ও বড় মন থাকা দরকার তা সংকীর্ণতা ধারণ করা কারো পক্ষে অর্জন করা সম্ভব নয়। সে কারণে তারা পূজা বা ঈদকে ভাবে সাম্প্রদায়িক উৎসব এবং এতে ভিন্ন ধর্মের কেউ শুভেচ্ছা জানালেও তা হয়ে যায় পাপ। এই ফেসবুক মোল্লাদের কবল ও ছোবল থেকে ধর্মকে পবিত্র না করা গেলে দেশে সাম্প্রদায়িক কীটের সংখ্যা বেড়ে যাবে। এরাই দাঙায় উস্কানি দেবে। এরাই হিন্দু-মুসলিম মারামারি বাঁধিয়ে রক্তপাত ঘটাবে। ধর্মকে কলঙ্কিত করবে এরাই। এদের এই পরধর্ম বিদ্বেষ বা নিজধর্মের গোঁড়ামী কোন ধর্মই স্বীকৃতি দেয়না। এদের নিজস্ব ঘৃণাকে জাস্টিফাইড করতেই ধর্মীয় ছদ্মবেশে এরা কথা বলে।
যে কোন কিছুতে বাড়াবাড়ি ভাল নয়। দিন ভর থাকে ইহুদী নাসারাদের ফেসবুকে, দেখে নানা মাত্রার ছবি, ভিডিও, নামাজের টাইমেও দেখা যায় একটিভ নাউ, আবার ফতোয়া দিতেও সবার আগে। এই ফতোয়াবাজরা একটি সুন্দর বাংলাদেশের জন্য বাঁধা। এরাই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করে। এরা মানুষকে ধর্ম দিয়ে বিচার করে। একজন নামধারী মুসলমান যদি ঘুষ খায়, খুন করে, চরিত্রহীনতা করে তাও সে এদের কাছে একজন ঘুষ না খাওয়া চরিত্রবান হিন্দুর চেয়ে ভাল হলে তা সমস্যার কারণ। আবার একজন সনাতনধর্মী ব্যক্তি যখন কেবল ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে একজন ঘুষখোর, অসৎ, চরিত্রহীন ব্যক্তিকে একজন সৎ, চরিত্রবান মুসলমান বা অন্য ধর্মীয় ব্যক্তির চেয়ে উত্তম ভাবে সেটা খারাপ দৃষ্টান্ত। এই ভালত্ব যাদের মনে থাকে তারা ভাল মানুষ নয়।তারা সংকীর্ণ, তাদের এই সংকীর্ণতাই যুগে যুগে গণহত্যা, দাঙা ইত্যাদির সূত্রপাত ঘটিয়েছে। ভাল-মন্দ সব ধর্ম বিশ্বাসে আছে। কিন্তু নিজেরটাকে গোঁড়ামী করে শ্রেষ্ঠ বলে অন্যকে বকাবকি, উপহাস করার মধ্যে শ্রেষ্ঠত্ব্ নেই। এই কাজ করতে নবী স ও নিষেধ করেছেন।বরং অন্যের বিশ্বাসকে সম্মান করার মধ্যেই শ্রেষ্ঠত্ব রয়েছে। মুহম্মদ স এই সম্মান করতেন বলেই তাঁকে সেসময়ের ভিন্ন ধর্মের সাধারণ মানুষেরা পছন্দ করেছে, এই উত্তম আচরণ দেখেই যুগে যুগে ভিন্ন ধর্মের অনুসারীরা ইসলামের ছায়াতলে এসেছে। কিন্ত এখন কিছু নব্য ইসলামিস্ট আছে যারা ফেসবুককে বানিয়েছে ধর্মখানা এবং যত রকমভাবে অন্য ধর্ম ও বিশ্বাসকে ছোট করা যায় তার প্রাকটিস এরা করে। ফলে এই গুটিকয়েক সাম্প্রদায়িক মানুষের জন্য ইসলাম ধর্মের ব্যাপারে অন্য ধর্মের মানুষ নেতিবাচক ধারণা লাভ করে। এরা তাই দিন শেষে ইসলাম ধর্মেরই ক্ষতির কারণ।
গ্রামের অশিক্ষিত মনসুর কাকা, বাব বিদ্যুৎ কান্তি রায় দাদার মধ্যে মিল রয়েছে। তারা কেউই হিন্দু ও মুসলমান এসব নিয়ে তর্কাতর্কি করছেনা। তারা পূজোয় ও ঈদে পরস্পরের বাড়ি যাচ্ছে, পায়েস সেমাই ও নাড়ু খাচ্ছে, তাতে পরস্পরের বিশ্বাস নষ্ট হয়ে যাচ্ছেনা। তবে ফেসবুক ফতোয়াবাজদের উৎপীড়ণে পূজার শুভেচ্ছা জানালেও ধর্ম থেকে নাম কাটা যাচ্ছে। ধর্ম যেন এই ফতোয়াবাজদের পৈতৃক সম্পত্তি। এদের হাত থেকে ধর্মকে রক্ষা করতে হবে। ধর্মীয় বিভাজনকে এরা ফেসবুকের স্ট্যাটাসের মতই সহজলভ্য করে ফেলেছে। এরাই একসময় প্রতিক্রিয়াশীলতা দিয়ে মানবতাবোধের উপর সাঁড়াশী আক্রমণ চালায়। এদের থেকে সাবধান। এরা মানুষ, মানবতা ও ধর্মের পথে প্রতিবন্ধকতা। এরা শান্তির পৃথিবীর জন্য অভিশাপ।