সর্বশেষ

জুলিয়ান এসেইঞ্জ : এক তথ্য বিপ্লবীর কথা



...
২০০৩ সালের ২০ মার্চ Weapons of Mass Destruction (WMD) এর অজুহাতে মার্কিন যুদ্ধবাজ প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ ইরাক আক্রমণ করে। সাজানো গোছানো সম্পদশালী ইরাককে জ্বালিয়ে দেয় বুশ নামের শয়তানের নব্য ক্রুসেড। তারপর লাখ লাখ মানুষ হত্যা করে মার্কিন নেতৃত্বাধীন ন্যাটো জোট। যে জুজু দেখিয়ে ইরাকে আক্রমণ চালালো তার কোন প্রমাণ মিললোনা। খুনী বুড়ো ইহুদীবাদী শয়তান জর্জ বুশ জুনিয়র ও তার সহশয়তান টনি ব্লেয়ারকে কেউ যুদ্ধাপরাধী বললোনা। কেউ তাদের বিরুদ্ধে মামলাও করলোনা। কারণ তাদের খুনখারাপির প্রমাণ নাই। ২০০৩ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত খুন করতেই থাকলো আগ্রাসী পশ্চিমারা।
২০১০ সালে এসে উইকিলিক্স নামের একটি অল্টারনেটিভ ওয়েব প্লাটফর্ম Collateral Murder নাম দিয়ে বুশ বাহিনীর ঠাণ্ডা মাথার খুনের প্রামাণ্য প্রকাশ করলো! চেলসি ম্যানিং ও এওয়ার্ড স্নোডেনের সহায়তায় মার্কিন ইহুদীবাদী সরকারের একের পর এক গোমর ফাঁস হতে থাকে উইকিলিক্সে। চারদিকে হৈচৈ পড়ে গেলো! ছি ছি রব উঠলো মার্কিন আগ্রাসনের ব্যাপারে। দেশে সেনা ফিরিয়ে আনার চাপ বৃদ্ধি পেলো। কিছুদিন পর Afghan War Logs ও Iraq War logs শিরোনামে মার্কিন নেতৃত্বাধীন বাহিনীর যুদ্ধাপরাধের বিশাল প্রমাণ হাজির করলো উইকিলিক্স। সারা বিশ্ব দেখলো ০ ও ১ এর উপর ভিত্তি করে যে জগৎ গড়ে উঠেছে তা দিয়ে বিশ্বের খুনী ও মোড়লদের টুঁটি চেপে ধরা যায়। আমরা জুলিয়ান এসেইঞ্জ নামের এক নয়া বিপ্লবীর সাথে পরিচিত হলাম। তাঁর জন্ম ১৯৭১; প্রাচ্যে যখন বিপ্লবের মাধ্যমে বাংলাদেশ নামের রক্তাক্ত কাব্যের জন্ম।
১। 
২০১১ তে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসি। ক্লাসে এসে জটিল সব বিষয় আলোচনা করেন গুরু আদনান স্যার। প্রোপাগাণ্ডা, এজেণ্ডা, মিডিয়া ট্রায়াল, এমবেডেড জার্নালিজম, মোজো, মনোজগতে উপনিবেশ, তথ্য সাম্রাজ্যবাদ, উইকিলিক্স ইত্যাদি! আমরা দৃশ্যমান জগতের বাইরের বা ভেতরের একটি নতুন জগৎ সম্পর্কে জানা শুরু করলাম তখন। উইকিলিক্স এর প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান এসেইঞ্জ সম্পর্কে জানলাম। হ্যাকার বা প্রোগ্রামার বলতেই যে নেতিবাচক রূপ আমাদের মগজে গেঁথে ছিল সে বিষয়ে প্রথম ধাক্কা দেয় জুলিয়ান ও তার উইকিলিক্স! বিশ্বব্যাপী মোড়লদের গোপন কুকীর্তি একের পর এক ফাঁস করে উইকিলিক্স! মুখোশের আড়ালের বড় বড় শয়তান মানুষ খুনীদের খুনের ছবি, ভিডিও নথি সাধারণের সামনে নিয়ে আসেন এসেইঞ্জ! সে অস্ট্রেলিয়ান নাগরিককে ধরতে একের পর এক তালবাহানা করে মানবাধিকারের বুলি আওড়ানো পশ্চিমারা! অবাধ যৌনতা যেখানে শিল্প সেখানে দুই যৌনকর্মীকে দিয়ে মিথ্যা অভিযোগ করানো হয় জুলিয়ানকে ফাঁসাতে! অযথা গ্রেফতার করে ব্রিটিশ পুলিশ! তবু আমেরিকা, ব্রিটেন, সুইডেন সবাই এক হয়ে একজন ব্যক্তি জুলিয়ান এসেইঞ্জকে হারাতে পারেনি। তখনকার ইকুয়েডরিয়ান বিপ্লবী প্রেসিডেন্ট রাফায়েল কোরিয়ে তাঁকে ইকুয়েডরের এমব্যাসিতে আশ্রয় দেন। বিশ্ব যখন আমেরিকার ভয়ে লেজ গুটিয়েছিল তখন লাতিন মানবতাবাদী রাফায়েল খুলে দেন ইকুয়েডরের দুয়ার! জুলিয়ান রাশিয়ায় আশ্রয় নেননি বা পুতিনও তাকে আশ্রয় দেয়নি কারণ উইকিলিক্স পুতিনেরও গোপন খবর প্রকাশ করেছে। যদিও আমেরিকা জুলিয়ানকে রাশিয়ার হ্যাকারদের সাথে যুক্ত বলে অভিযোগ করে তথাপি এসেইঞ্জ একাধিকবার এ কথা অস্বীকার করেছেন। আমরা এসেইঞ্জকে বিশ্বাস করি। কারণ সে বিপ্লবী, তথ্যবিপ্লবী, প্রতিরোধ যোদ্ধা, সত্যের বাহক। 
২। 
২০১৭ সালে ইকুয়েডরের ক্ষমতার রদবদল হয়। মার্কিন ও পশ্চিমাপন্থী লেনিন মরিনো ক্ষমতায় আসে। এসেই তার প্রভুদের খুশি করতে জুলিয়ান এসেইঞ্জের নাগরিকত্ব বাতিল করে। তারপর এসেইঞ্জের আশ্রয়যোগ্যতাকে বাতিল করার কথা বলে। আর ২০১৯ এর ১১ এপ্রিল লেনিনের ইকুয়েডর সত্য ও ন্যায়ের সাথে বেঈমানী করে ব্রিটিশ পুলিশকে দূতাবাসে ডেকে এনে এসেইঞ্জকে গ্রেফতার করায়! লেনিনের বাবা মা হয়তো ছেলে অনেক বড় বিপ্লবী হবে এই স্বপ্ন দেখে সন্তানের নাম রেখেছিলেন। কিন্তু এই সন্তান যে সাম্রাজ্যবাদের দোসর হয়ে এক প্রতিরোধ যোদ্ধা, সত্যানুসন্ধানকারী বিপ্লবীকে শয়তানদের হাতে তুলে দেবে তা কে জানতো? এ কারণেই নামে নয়, কাজেই আসলে আদর্শের পরিচয়! লেনিন মরিনো চিরকাল ঘৃণাভরে উচ্চারিত নাম হবে জুলিয়ান এসেইঞ্জের পাশে। পশ্চিমা কথিত ধান্ধাবাজ মানবাধিকার সংগঠন যেমন এমনেস্টি, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এবং ফ্রিডম অব স্পীচের বুলি আওড়ানো মিডিয়া একজন তথ্য শ্রমিককে শিষ্টাচারবিহীনভাবে গ্রেফতার করা নীরবে উপভোগ করলো।
৩।
জুলিয়ান এসেইঞ্জ আসলে কী?
হ্যাকার? ক্র‍্যাকার?
হ্যাক্টিভিস্ট?
প্রোগ্রামার?
হুইসেলব্লওয়ার?
ডাটা জার্নালিস্ট?
নিও জার্নালিস্ট?
মানবাধিকারকর্মী?
....
প্রকাশক?
সম্পাদক?
নাহ! কোন শব্দ এই মহান ব্যক্তিকে সংজ্ঞায়িত করতে পারবেনা। নয়া মাধ্যম দিয়ে তাবৎ পৃথিবীর সামনে সাম্রাজ্যবাদীদের ঘৃণ্য রূপ তুলে ধরে ২০১০ সালে টাইমের বর্ষসেরা এ ব্যক্তি। ডাটা সাংবাদিকতাকে অনন্য উচ্চতায় নিয়েছেন তিনি। সুডেয়েচের পানামা পেপারস কেলেঙ্কারি থেকে হিলারীর ইমেইল, মার্কিনীদের কর্তৃক ইরাক-আফগানিস্তানে খুনোৎসব থেকে সিআইয়ের অন্য দেশের সরকার পরিবর্তনের নীল নকশা প্রকাশ করে বা প্রকাশে উৎসাহ দিয়ে অমর হয়ে রইবেন জুলিয়ান এসেইঞ্জ। একজন ব্যক্তি, একটি ওয়েবসাইট দিয়ে বিশ্বের অশান্তির বাহকদের চপেটাঘাত করেছেন: এ কারণেই চিরকাল বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করা হবে তাঁকে। ভবিষ্যত প্রজন্মের বিপ্লবীরা হয়তো ট্যাব বা স্নার্টফোন হাতে নিয়ে গর্বের সাথে বলবে,
"আমরা জুলিয়ান এসেইঞ্জের মত সত্য উদঘাটন করবো..."
হয়তো মা-বাবা তাদের সন্তানদের নামও রাখবেন জুলিয়ান এসেইঞ্জ! শত শত জুলিয়ান তখন আজকের জুলিয়ানের অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করে তথ্যকে সবার জন্য উন্মুক্ত করবে। কারণ তথ্যের মুক্তির মধ্যেই মানুষের মুক্তি নিহিত। আধিপত্যবাদীদের হাতে গ্রেফতার থাকা জুলিয়ানের মুক্তির জন্য আওয়াজ তুলতে হবে। মুক্তির আগ পর্যন্ত মুক্তিকামী প্রতিটি মানুষের হৃদয়ের পরিচয় হোক
#আমিওজুলিয়ান
#IamJulianAssange
#FreeJulianAssange
#WikiLeaks 
#WeAreWikiWikiLeaks 
জয় হোক সত্যের, জয় হোক ন্যায়ের
ভয় হোক মিথ্যার, ক্ষয় হোক ভয়ের।
পাঠ অনুভূতি

Post a Comment

0 Comments