সর্বশেষ

ইউটিউব, ব্লগ, ফেসবুক থেকে টাকা আয় ও নাগরিক সাংবাদিকতা

প্রিয় ছোট ভাই ও বোনেরা,
আশা করি ভাল আছো। লিখবো লিখবো করে আর লেখা হচ্ছিলনা কাজের, গবেষণার ব্যস্ততায়। এই গ্রুপটা যিনি খুলেছেন তিনি আমাদের শিক্ষাগুরু শেখ আদনান ফাহাদ। আমি দীর্ঘদিন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে এই একজন ব্যক্তিকে দেখেছি যিনি সারাক্ষণ ছাত্রছাত্রীদের ভাল-মন্দ নিয়ে ভাবেন। তোমাদের সৌভাগ্য আদনান স্যারকে তোমরা বিভাগের সভাপতি হিসেবে পেয়েছো। স্যার বিভাগকে শিক্ষা, কর্ম ও এক্সট্রা-কারিকুলার এক্টিভিটিতে অনন্য উচ্চতায় নেবেন ইনশাল্লাহ তোমরা ঠিক মতো তাঁর শিক্ষা-নির্দেশ-কার্যক্রমের সাথে মনেপ্রাণে যুক্ত হলে। তো যে বিষয়ে বলতে চাই। আউটসোর্সিং।

২। খুব সম্ভবত আমাদের বিভাগের সবার আগে ব্লগিং ও ভ্লগিং ( ব্লগ মানে লেখালেখি আর ভ্লগ ভিডিও) করে গুগল এডসেন্সের মাধ্যমে আয় করেছি। সুতরাং আমার কথাগুলোকে মনোযোগ দিয়ে পড়ার অনুরোধ রইলো। পড়াশোনা শেষে যে মিডিয়া তোমাকে ১২-১৫ হাজার টাকায় দাসদাসী করতে চাইবে তাদের চপেটাঘাত করার একটাই উপায়, আর তা হচ্ছে তোমার আশেপাশে থাকা বিকল্প মাধ্যম বা অল্টারনেটিভ মিডিয়াকে কাজে লাগিয়ে মেইনস্ট্রিমকে চ্যালেঞ্জ করা। সুতরাং  তোমাদের এই সেক্টরের দিকে খুবই মনোযোগ দেয়া উচিত। তোমার একটি পারসোনাল ব্লগ এবং একটি ইউটিউব চ্যানেল হতে পারে তোমার সারাজীবনের উপার্জনের মাধ্যম। এমন কি তোমার ফেসবুক প্রফাইলও। শুধু তুমি দ্রুত একটি ফেসবুক পেইজ বা পাতা খুলে ফেলো। যদি তোমার ইউটিউব চ্যানেল থাকে তবে একই নামে করতে পারো। তোমার লেখা বা ভিডিও তোমার ইনটেলেকচুয়াল প্রোপার্টি। এ থেকে তুমি অনেক টাকা আয় করে নিজেরও পরিবারের উপকার কর‍তে পারবে। কারণ, তোমার চ্যানেলের কনটেন্টের ভ্যালু আজীবন রইবে যদি এটি মৌলিক হয়। এই যে আমি এখন শিক্ষকতা ও গবেষণায় ব্যস্ত অথচ তোমাদের মত ছাত্রজীবনে আনাড়ি হাতে মোবাইল ফোনে করা আমার আপলোডকৃত ভিডিওগুলো এখনো আমাকে টাকা দিচ্ছে প্রায় প্রতিমাসে। এটা ভীষণ ভাল লাগার ব্যাপার হবে যদি তোমাদের Passion কে Profession বানাতে পারো। সুতরাং কোন ধরনের শঙ্কা নিয়ে ইউটিউব বা ব্লগে আসার দরকার নাই, সম্পূর্ণ নিশ্চিন্তে আসতে পারো। গুগল তোমাকে ঠকাবেনা।
৩।
তোমার কোন ক্যামেরা নাই, ট্রাইপড নাই বলে তুমি ভিডিও কনটেন্ট নির্মাণ করে উপার্জন করতে পারবেনা এটা কখনোই ভাববেনা। তোমার হাতে থাকা স্মার্টফোনের চেয়ে শক্তিশালী ডিভাইস আর একটিও নাই। এটিতে এক সাথে হাই কোয়ালিটি ভিডিও ধারণ সক্ষমতা, উন্নত সাউন্ড, এডিটিং সফটওয়্যার ইত্যাদি পাবে। এমন কী তোমার চ্যানেলকে গোছাতে ইউটিউব মোবাইল ডিভাইসের জন্য আলাদা 'স্টুডিও এপ' দিয়েছে।  ইউটিউব নিজেই এখন মোবাইল ব্যবহারকারীকে টার্গেট করে ক্রিয়েটরদের কনটেন্ট বানাতে উৎসাহ দিচ্ছে। সুতরাং আর কোন চিন্তা না করে তোমার আশেপাশে তাকাও। অজস্র কনটেন্ট রয়েছে যা মানুষ দেখতে চায়। এই কনটেন্ট তোমার সংবাদের সোর্স, সংবাদ, তোমার বিনোদন এবং একই সাথে তোমার উপার্জনের হাতিয়ার।  আমি টিউশনি করতে নিরুৎসাহিত করিনা। কিন্তু কেউ যদি টিউশনি না পাও বা অপারগ হও তাহলে টিউশনির চেয়ে অনেক কম সময় ও শ্রম ব্যয় করে কয়েক গুণ বেশি উপার্জন সম্ভব।  আর তুমি যদি ভিডিও এডিটিং,  গ্রাফিক্স ডিজাইন, ওয়েব ডেভেলপ জেনে ফেলতে পারো তাহলে তুমি ছাত্র জীবনে মানুষকে কাজ দেয়ার মত উদ্যোগ নিতেই পারো।

৪।
তোমরা নাগরিক সাংবাদিকতা প্রতিশব্দের সাথে পরিচিতি।  তোমার মোবাইল ডিভাইস তোমার নাগরিক সাংবাদিকতার সবচেয়ে বড় অস্ত্র। আশেপাশের ঘটনা ভিডিও করো, আপ করো, শেয়ার করো। ব্যস, তুমি নাগরিক সাংবাদিকতা শুরু করলে। চোখ খোলা রাখো। অনেক ফিচার তোমার আশেপাশে রয়েছে। ভিক্ষুক থেকে বটতলার দোকানের কর্মী, তোমার ডাইনিংয়ের লোকগুলি, বিসিএস ক্যাডার, গবেষক, ছাত্র নেতা, রিকশাওয়ালা, ট্রাফিক, পথ শিশু, কি নেই তোমার চারপাশে? তুমি বিসিএস পড়ো? কোন ট্রিক্স শিখেছো? এইটাকেই ভিডিও করে আপলোড করোনা, দেখো কত অডিয়েন্সের এটা দরকার। তুমি ঘুরতে যাও, ভিডিও করো, তুমি সমসাময়িক বিষয় নিয়ে বন্ধুদের মন্তব্যগুলোকে Vox Pop বানিয়ে ইউটিউবে দাওনা, দেখো কীভাবে হুমড়ি খেয়ে পড়বে লোকে।  আমাদের আশেপাশের সবকিছু, সবাই সংবাদযোগ্য, প্রকাশযোগ্য।  শুধু তোমার সংবাদ বোঝার জন্য নাকটিকে সক্রিয় করো, অন্তর্দৃষ্টিকে সব সময় খোলা রাখো, অপরকে জানানোর বাসনা রাখো, কিছু করার প্রত্যয় রাখো। তুমি এডিটিং হয়তো প্রথম দিকে পারবেনা, তাতে কী? র ফুটেজ (Raw Footage) দাও। মানুষের এডিটিংবিহীন ভিডিও দেখারও প্রবণতা অনেক। আর ইউটিউবে এডিটিং শিখে নিতে তোমার একটুও বেগ পেতে হবেনা। শুধু সময় দিতে হবে, গুরুত্ব দিতে হবে। গুরুত্ব দিলে জীবনে কিছুই ফেলনা নয়। এমন কি তোমার পড়ার টেবিলে বসে দেয়া অপিনিয়ন ভিডিওটিরও গুরুত্ব রয়েছে। তোমার সেলফি ভিডিওও অনেকে দেখতে পারে। ব্লগিং ও ভ্লগিং করে লাখ লাখ মানুষকে এনগেইজ করছে অনেকে। তোমার হলের বা ঘরের রান্না, বটতলার বা এলাকার খাবারের রেস্টুরেন্ট নিয়ে ভিডিও, বিশ্বরাজনীতি, সমালোচনা, মেকাপ, পোশাক সব কিছু নিয়েই তুমি কনটেন্ট তৈরি কর‍তে পারো। নতুন একটা বই পড়ছো? ভিডিও করে জানাও! জানার ও জানানোর শেষ নেই রে...

৫।
অনেক কথা বলার। সব কিছু লিখে শেষ করা যাবেনা। শুধু এটা বলবো, ডিপার্টমেন্ট-এ এই যে নাগরিক সাংবাদিকতা ও আউটসোর্সিংয়ের যে উদ্যোগ শুরু হয়েছে এটিকে তোমরা কিছুতেই হাতছাড়া করোনা। শুনতে খারাপ লাগলেও এটা সত্য যে, আমাদের বেশিরভাগ এখন জীবনের যুদ্ধে লড়ছে। তারা সময়টিকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারেনি কারণ স্যারের মত এভাবে কেউ উদ্যোগ নেয়নি। তোমরা ভাবতেও পারবেনা কি জিনিসের সাথে তোমরা পরিচিত হচ্ছো। এখানে সাংবাদিকতা, নৈতিকতা, খ্যাতি,অর্থ, প্রভাব সব আছে। তোমরা ভয় পেওনা যে, এডসেন্স কীভাবে করবো, কিভাবে টাকা তুলবো, কিভাবে মনিটাইজড করবো ইত্যাদি। স্যার যখন জানাবে আমি এসে তোমাদের সব করা শিখিয়ে দিবো যতই ব্যস্ততা আসুক। তোমরা শুনলে অবাক হবে যে, আমার টাকা কিন্তু গুগল বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রণী ব্যাংকের একাউন্টেই পাঠায়। ইনশাআল্লাহ তোমাদেরও পাঠাবে। শুধু লেগে থাকতে হবে ধৈর্য নিয়ে। নিরুৎসাহিত করার লোকের অভাব হবেনা, কিন্তু তুমি মাথায় রাখবে তোমাকে তোমার পরিবার দেখতে হবে, দেশকে কিছু দিতে হবে! আর তোমার পড়াশোনার পাশাপাশি আড্ডা-ঘোরার সময়টিকে উৎপাদনমুখী করার এখনই উপযুক্ত সময়। সময় কাজে লাগাতে হবে। আজই দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হও। কারণ, এই সময় আর কোন দিন পাবেনা, কোন দিনও না...

সবার জন্য অনেক অনেক ভালবাসা ও  শুভকামনা।
মঈনুল রাকীব
৪১ তম আবর্তন
সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এবং
প্রভাষক,
সাংবাদিকতা, যোগাযোগ ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন  বিভাগ
বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়।

পাঠ অনুভূতি

Post a Comment

1 Comments

  1. Hey all! this is a new classified website. You can post your ad in this platform free!

    ReplyDelete