শিয়া মুসলমানদের কাফের বলার অধিকার কোনো মানুষের আছে?
~°~
শিয়াদের ব্যাপারে যে ঘৃণা উৎপাদন করে আমাদের আহলে সুন্না ওয়াল জামাত নামের সুন্নীরা তা নজিরবিহীন।
আমি নিজে সুন্নি সমাজ থেকে আসায় ছোটবেলা থেকেই শিয়াদের নামে ঘৃণা উৎপাদন করার ফতোয়াবাজি দেখি।
হ্যাঁ, এটা সত্য শিয়া পরিচয়ধারী অনেকেই কোনো কোনো সাহাবা (রা) বা কোনো কোনো সুন্নীদের ব্যাপারে বিদ্বেষ ধারণ বা প্রচার করে। কিন্তু তার জন্য সমগ্র শিয়াদের কাফের ফতোয়া দেওয়া বৈধ হয় না। যেভাবে গুটিকয়েক ওহাবী কট্টরপন্থীদের কারণে পুরো সুন্নীদের ব্যাপারে নেতিবাচক ধারণা করা বেইনসাফ, তদ্রুপ সমস্ত শিয়াদের এক পাল্লায় মেপে ঘৃণা করা বেইনসাফ।
অথচ কোনো কোরান বা হাদিস পেলাম না যেখানে আল্লাহর রাসূল ও তাঁর পরিবারের কাউকে ভালোবাসার দায়ে কেউ কাফের হয়ে যায়৷
এমনকি মহানবী (স) ঈমান আনার ঘোষণা দেওয়ার পরে কোনো সম্প্রদায়কে সামষ্টিকভাবে তাকফির করেছেন এরও কোনো দলিল নাই।
তবু শায়েখ-শায়খুল-যুক্তিবাদী-তর্কবাদীদের শিয়াবিদ্বেষ যায় না!
এরা ওহাবী কট্টরপন্থী মানুষ হত্যার নীতি নিয়ে আবার চুপ।
সমস্ত ঘৃণা কেবল মুহাম্মদ (স), ফাতেমা (রা), আলী (রা), হাসান (রা), হোসেন (রা) কে ভালোবাসে যারা তাদের জন্য সংরক্ষিত।
কট্টরপন্থী মুন্সিরা কট্টরপন্থী তাইমিয়া বা ওহাব এবং সৌদি জায়নবাদের ভক্তদের পীর ভাবলে সমস্যা নেই। শিয়ারা মহররমে হোসাইনের জন্য জান কোরবান করার শোক করলে 'কাফের'!
আজ পর্যন্ত আমি শিয়াদের কারো কাছে সুন্নীদের ঢালাও তাকফির শুনিনি।
শিয়াদের নামে এই পরিমাণ ঘৃণা রাখে কেবল কট্টরপন্থী খারেজিরা।
এই উগ্রদের প্রাকটিক্যালি পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ইরাক-সিরিয়ায় আইএস ও আল-কায়েদা নামে দেখা গেছে৷ বাংলাদেশেও মাথাচাড়া দেওয়ার সুযোগ পায়নি এরা, চেষ্টা চালিয়েছিল। তবে এই জঘন্য মতবাদের সুপ্ত সমর্থন রয়েছে অনেক!
ফিলিস্তিনের মানুষের জন্য ওদের প্রাণ কাঁদেনা৷
সিরিয়া ইরাকের বিশাল অঞ্চল দখল করেও এ খারেজি কট্টরপন্থীরা অবৈধ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেনি। এমনকি একটি গোলাও ওদিকে ছোড়েনি। অথচ ইসরায়েল বিরোধী বাশার আল আসাদ শিয়া, খামেনি শিয়া--এই বলে তাদের অনুসারীদের জবাই করেছে ধরে ধরে!
অনেকেই এ জন্য বলেন, এই কট্টরপন্থীরা মূলত অবৈধ ইসরায়েলের সৃষ্টি। এরা রাসূল ও তাঁর পরিবারের প্রতি যারা মহব্বত ধারণ করে তাদের রক্তকে হালাল ভাবে৷ ঠিক যেন এজিদ-শিমার!
ওরা শিয়া হত্যায় বেহেশত খোঁজে, তবে প্রকৃত জালিমের বিরুদ্ধে কিছুই বলে না।
স্পষ্ট অনেক ইন্ডিকেটর থাকার পরেও আল্লাহর মনোনীত বার্তাবাহক মুহাম্মদ (স) ঈমান আনার পর কাউকে 'মুনাফিক' বা 'কাফের' বলেননি৷ অথচ তারা আশেপাশেই ছিল। এমনকি ঘোরতোর শত্রু আবু সুফিয়ান, জঘন্য হিন্দার বায়াতও তিনি গ্রহণ করেন। এক মুনাফিকের ব্যাপারে তিনি দোয়া করলেও আল্লাহ নিষেধ করেন। সেই রাসূলের ধর্মে কথায় কথায় 'কাফের মুশরিক' বলে মানুষের রক্তকে হালাল করতে চাওয়া স্পষ্ট ইসলামের মৌলিক নীতিবিরোধী কর্ম।
সেই কাজ দেদারছে করে একেক জাহেল ভেবে বসে আছে তারা হেভিওয়েট ' আলেম আর ওয়ারেশ'!
আমি মনে করি, শিয়া-সুন্নী সকলেই তাদের ঈমানের চূড়ান্ত পরীক্ষা দেবে মিজানে। আল্লাহর দরবারে।
এর আগে ঈমান আনার ঘোষণা দেওয়া কোনো মানুষকে ইসলাম থেকে বের করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার কোনো মানুষের নেই। কেউ যদি এই কাজ করে তিনি হক্বপন্থী আচরণ করছেন না।
'সিরাতুল মুস্তাকিম' সোজা পথ। ত্যাঁনা পেঁচিয়ে তাকফিরি ফতোয়াবাজি করে একে জটিল করা ভালো কথা নয়...।
0 Comments