ডেসটিনি-২০০০ নিয়ে সাত-সমাচার ও কিছু প্রশ্ন
~~~~
ডেসটিনি নিয়ে ফের লোকে কথা বলছে। ডেসটিনির এমডি রফিকুল আমিন জুম ক্লাউডে মিটিং করছে---এটা ইস্যু। আসল কথা কেউ বলছেনা।
১। যদি ডেসটিনির এমডি রফিকুল আমিন অপরাধী হয়ে থাকে তার মামলার নিষ্পত্তি এই ৯-১০ বছরেও না করে তাকে জেলের নামে হাসপাতালে বসে মিটিং এর সুযোগ দেয়া হচ্ছে কেন এ প্রশ্ন তোলা উচিত মিডিয়ার। কিন্তু এটি তারা করবেনা৷ কারণ তাদের মালিকগণের নির্দেশ ছিলো ডেসটিনির বিরুদ্ধে এজেন্ডা সেট করে প্রোপাগাণ্ডা চালানোর। পরে আসছি।
২। রফিকুল-হারুনের ভুল-ভ্রান্তির শাস্তি দিয়ে তার এমএলএম বিজনেস তাকে রান করতে সুযোগ দিচ্ছেন না কেন? তার বৈধ পথে গ্রাহকদের টাকা ফেরত দেয়ার ক্যাপাসিটি যদি থাকে সেটি কাজে লাগাতে দেয়ার ব্যাপারে বরং আলাপে অনাগ্রহ কেন?
৩। হাই-স্কুল বা কলেজে থাকতে আমাদের কাছের দূরের বন্ধু-বান্ধব পরিজনদের ডেসটিনিতে দেখেছি। সবাই রফিকুল আমিনের প্রতি অগাধ বিশ্বাসী। এমনকি আজ পর্যন্ত এসব গ্রাহকদের ডেসটিনি বা এর এমডির বিরুদ্ধে অভিযোগ নেই। এরা আজো বিশ্বাস করে তাদের এমডি বের হলেই ফের ডেসটিনি ঘুরে দাঁড়াবে। তাদের বিনিয়োগ তারা ফিরে পাবে। এ বিষয়টি কি আপনাদের ভাবায়না? গ্রাহকদের বক্তব্য নিয়ে নিউজ কই মিডিয়ায়?
ফেসবুকে যারা ডেসটিনির বিরুদ্ধে লেখে এদের মধ্যে শ্রেণিঘৃণা প্রবল। গ্রামের রিকশাওয়ালা, বেকার ছেলেটি গাড়ি-বাড়ি করার স্বপ্ন দেখতো---এটিকে নিয়ে উপহাস করে নিজেদের সেই পুরোনো জেলাসির বিস্ফোরণ ঘটাতে এরা লজ্জিত হয়না। তবে কোটি টাকা কোথায় বা কেন গ্রাহকরা পাচ্ছেনা সেটি নিয়ে আলাপ নাই। ডেসটিনির সূক্ষ্ম শক্তিশালী ডাটাবেজ ও নেটওয়ার্ক ছিলো। এদের টাকা ফেরত দেয়া ওয়ান-টু'র ব্যাপার। কই সুশীল, সে নিয়ে আলাপ কই? আর কত মিডিয়ার উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অর্থে মগ্ন হয়ে ভাজবেন খই?
৪। এসব বিষয়ে সংবাদমাধ্যমে সংবাদ পাবেন না৷ কারণ, ডেসটিনি'র এমডির বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ প্রচারণা চালিয়েছিলো বাংলাদেশে ভূমিদস্যু গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ এক এক হয়ে। যমুনা, ট্রান্সকম, বসুন্ধরা ডেসটিনি ইস্যুতে এক হয় এবং তাদের সঙ্গে বোনাস হিসেবে যোগ দেয় জামাতি মিডিয়া। এর কারণ, রফিকুল আমিন ডেসটিনি দিয়ে এদের ভালোভাবে চ্যালেঞ্জ করছিলো। মানে নয়া প্রভাবশালী ভূমিগ্রাহক হিসেবে বসুন্ধরা বা যমুনার সামনে দিয়ে বিশাল বিশাল জমি কিনে নিচ্ছিল। এমন কী ঢাকার হার্টল্যান্ডে অবস্থিত আনন্দ সিনেমা হলটিও ডেসটিনি কিনে নেয় সরকারের নিকট থেকে। সরকারের সঙ্গেও বেশ বোঝাপড়া ছিলো এর। এসব দেখে সব পেঁয়াজ-রসুন এক হয়ে ডেসটিনি'র বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লাগে অথচ এরকম শখানেক মিডিয়ায় নিউজের পরেও ডেসটিনির গ্রাহকদের অভিযোগ তারা মিডিয়ায় আনতে ব্যর্থ হয়। এসব বিষয় কাউকে ভাবালোনা?
৫। ডেসটিনির নিজস্ব দৈনিক ছিলো ডেসটিনি, তার টেলিভিশন চ্যানেল ছিলো বৈশাখী। বৈশাখী ও অন্তর শোবিজ কোলাবোরেট করে শাহরুখ খানকেই দেশে নিয়ে এসেছিল। মনে আছে? এদের এতো অর্থ, এতো প্রতিষ্ঠান তার খবর কী? দেশের সচেতন নাগরিক হিসেবে বা একজন আদর্শ সাংবাদিক হিসেবে আপনার মনে এ প্রশ্ন জাগেনা? নিজ নিজ মালিকের এলসেসিয়ান হয়ে এডভোকেসি রিপোর্ট করে এত্তগুলো মিডিয়া এক হয়ে কথিত 'হাজার কোটি টাকা জালিয়াতের' প্রোপাগাণ্ডা চালালেন, সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপর প্রেসার ক্রিয়েট করে এর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা একজন মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক সেনা প্রধানকে পর্যন্ত জেলে নেওয়ালেন, এরপরও ৯-১০ বছরে সেই আসামীর ব্যাপারে তথ্য-উপাত্ত প্রামাণ্যের ভিত্তিতে এখনো রায় ঘোষণা হচ্ছেনা। নিউজে তো এগুলোও ফোকাস হতে পারে। কেন হয়না?
সরকার ডেসটিনির হাজার কোটি টাকা সিজ করে কী করেছে? কে খাচ্ছে এ টাকা? প্রশ্ন করেছেন?
৬। ডেসটিনি ও এর বিপুল পরিমাণ অর্থের নিরাপত্তার জন্য সরকার সেখানে এক বা একাধিক প্রশাসক নিয়োগ দেবে বলে গুঞ্জন উঠেছিল। এতে করে ডেসটিনির গ্রাহকরাই খুশি হয়েছিল। সেই চিন্তা আবছায়া হয়ে গেলো কেন? সেটা নিয়ে নিউজ নেই কেন? নাকি ডেসটিনির গ্রাহকরা তাদের কোম্পানি বা এমডির বিরুদ্ধে অভিযোগ করেনা---এটাই তাদের নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করার জন্য যথেষ্ট? বাহ! কী চমৎকার হিতাকাঙ্ক্ষী আপনারা।
৭। ডেসটিনি নির্ভুল সেটি বলছিনা। কিন্তু এর ভুল কোথায় সেটি স্পষ্ট করে কেউ কি জানিয়েছে? এতে ট্রি প্লানটেশন নামের একটি প্রকল্প ছিলো যেটিতে মানুষ বিনিয়োগ করেছিলো বেশ। এখন এর সাপেক্ষে পর্যাপ্ত বাগান দেখাতে পারেনি হয়তো কিন্তু তাকে সময় দিয়ে বাগান সম্প্রসারণের সুযোগ তো দেবেন? অন্যায় হলে সাজা দেবেন। শুধরে নিয়ে কাজ করতে দেবেন। পৃথিবীর উন্নত প্রায় সব দেশে প্রডাক্ট বেইজড এমএলএম বিজনেস আছে। এ বিজনেসের পক্ষে আমি সেটি বলছিনা কিন্তু এখানে 'সাম্য' আছে। অর্থাৎ কেবল প্রভাবশালী, প্রতিপত্তি, উচ্চডিগ্রি আছে বলে এখানে আপনি ভালো করতে পারবেন না। মানুষকে কনভিন্স করা ও শ্রমসাধ্য এ অর্জনে একজন সাধারণ মানুষেরও স্বপ্ন দেখার সুযোগ আছে গাড়ি-বাড়ির। এটিতে রফিকুল আমিন ক্লিক করেছেন। তিনি বাংলাদেশের প্রায় ৬৪ জেলাতেই একঝাঁক স্বপ্নবাজ তৈরি করেছিলেন। আপনাদের, মিডিয়াসহ সংশ্লিষ্টদের এই স্বপ্নবাজদের খবর নেয়ার প্রয়োজন নেই? নাকি ডেসটিনি করেছে বলে তাদের ক্ষতির মূল্য আপনাদের কাছে শূন্য?
আমার কথা হচ্ছে, অপরাধী যে হোক তার শাস্তি হওয়া উচিত। কিন্তু প্রাপ্য শাস্তির আগেই অভিযুক্তকে দোষী করে তার ব্যবসাকে ধসিয়ে দেয়ার ধ্বংসাত্মক কার্যক্রমকে আমি সাপোর্ট করিনা। রায় হওয়ার আগ পর্যন্ত ডেসটিনির যেসব ভ্যালিড গ্রুপ বা প্রতিষ্ঠান ছিলো সেগুলোকে চলতে দেয়ার প্রক্রিয়া প্রশাসক নিয়োগ করে শুরু করা যেতো। এসব আলাপ প্রডাক্টিভ। জুম ক্লাউডে আসামীর আলাপ কারা আইনে অপরাধ---কিন্তু তারচেয়ে হাজার গুণ বড় আলাপ ডেসটিনির হাজার কোটি টাকা ও হাজার কোটি টাকার সম্পদ এখন কোথায় আছে, কেমন আছে, কার কাছে আছে সে প্রশ্ন তোলা।
0 Comments