সর্বশেষ

জগন্নাথ হল: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাম্প্রদায়িকতার নিদর্শন? | Jagannath Hall Dhaka University Bangladesh

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০০ বছরে এর বুকের মধ্যে একটি সাম্প্রদায়িক পুরুষ হল রয়েছে--এ নিয়ে আলাপ উঠুক।
জগন্নাথ হল--একটি সাম্প্রদায়িকতার নিদর্শন। 
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল বা ঢাকা কলেজের পশ্চিম হল---এগুলো আধুনিক সমাজব্যবস্থায় সাম্প্রদায়িকতার উজ্জ্বল চিত্র।

কেবল পৃথক ধর্মের কারণে আলাদা আবাস যেন অসাড় বিষাক্ত 'দ্বিজাতিতত্ত্বের' নির্লজ্জ উপস্থাপন, যেন ব্রিটিশ আমলের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার বিভাজনরেখা। 

মুখে অসাম্প্রদায়িকতার বুলি আওড়ালেও কাজে ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলের সাম্প্রদায়িক রূপ আজো ছাড়াতে পারেনি আমাদের প্রিয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। 

একটি ছেলে (মুসলিম বা হিন্দু) উচ্চশিক্ষা নিতে এসে উদারতার দীক্ষা নেয়ার বদলে নিজেকে সাম্প্রদায়িক রূপে বিভাজিত করছে। 

একদিকে মুসলমান আর অন্যদিকে অন্য সকল ধর্মের ছাত্রদের রেখে একটি বাইনারি বিষফল স্ট্যাটাসকো তৈরি করে রাখা হয়েছে।

আমরা জানি মানুষের সাংস্কৃতিক আত্মীক সম্পর্ক তৈরি হয় যে কিছু জায়গায় তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে আবাস। 

সেই আবাস পৃথক হওয়ায় দেশের অন্যতম প্রধান এই শিক্ষালয়ের ছাত্রদের মধ্যে অদৃশ্য বিভাজনরেখা থেকে যায়। 

পাশাপাশি, জগন্নাথ হলের ব্যাপারে তৈরি হয় নানা ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ইত্যাদি। 

জমিদারি বা কলোনিয়াল লিগ্যাসির এই সামপ্রদায়িক চিহ্ন বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে আর কত কাল বহন করবে বিশ্ববিদ্যালয়টি?

আবার, এই হলটি (হল সমষ্টি?) এক ধরনের পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থারও প্রামাণ্য। নারী সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিকোণ থেকে মুক্ত।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীস্টান, মুসলমান ছাত্রীরা কিন্তু একত্রে এক হলে বাস করছে (যতদূর জানি)। 

যত বিভাজন পুরুষের ধর্মে বা ধর্মীয় পুরুষদের মধ্যে। 

এর মানে, নারীর ধর্ম নিয়ে কোনো চিন্তা তৎকালীন সাম্প্রদায়িক প্রশাসক-চিন্তক-নির্ধারকদের ছিলোনা। 

তাদের দ্বন্দ্ব বা জাত যাওয়ার বাটখারা ছিলো পুরুষ। 

নারীকে ঠিকই "ম্লেচ্ছ বা যবনের" সঙ্গে থাকতে দিয়ে সাম্প্রদায়িক গং "অচ্ছুৎ" মুসলমানদের থেকে দূরে নিয়ে রেখেছে সিপাহশালার ছাত্রদের। 

শিক্ষিত রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী ছেলেদের মধ্যে বিভাজন-বৈষম্য জিইয়ে না রাখলে সাম্প্রদায়িকতার উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠা রাজনীতির মান বা প্রভাব শূন্য হয়ে দাঁড়ায়। 

গ্রামের নিম্নবিত্ত নিরক্ষর বা স্বল্পশিক্ষিত হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে কিন্তু সাম্প্রদায়িক বিভাজনের কূটচাল টেকসই হয়নি।

শিক্ষিতদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক রূপ প্রতিটি যুগেই টেকসই হয়েছে। সাম্প্রদায়িকতার রাজনৈতিক অর্থনীতির সুবিধা লুটে নিয়েছে শিক্ষিত (বিশেষ করে উচ্চবর্গের) সুবিধাবাদী হিন্দু (কদাচিত মুসলিম) শ্রেণিটি। 

আমি জানি, অনেক হিন্দু, মুসলিম, অমুসলিম বা নাস্তিক ছাত্রছাত্রীও এভাবে একটি হলের মাধ্যমে বিভাজন একবিংশ শতাব্দীতে টিকে থাকাকে সমর্থন করেননা৷ 

কিন্তু এ নিয়ে কথা কেউ বলেন না কেন? সলিমুল্লাহ 'মুসলিম' হল থেকে মুসলিম কেটে আমরা এটি সবার জন্য করতে পেরেছি। 

জগন্নাথকে সবার জন্য করার কোনো উদ্যোগ কি নেয়া হয়েছিলো? হয়েছে? হবে?

দেশের হার্টল্যান্ডে এই সাম্প্রদায়িক বিভাজনরেখাই মনস্তাত্ত্বিকভাবে ঢাবির ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে ক্ষুদ্র করে হলেও ধর্মীয় সংকীর্ণতা জিইয়ে রাখছে কী না সেটি নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০০ বছরে ভাবা উচিত নয় কি? এ নিয়ে কোনো গবেষণা হয়েছে?

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে জাসদের সামরিক শাখার লোক অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন কয়দিন ভিসি হয়ে বেড়াতে এলে সনাতনধর্মীদের জন্য পৃথক হল নিয়ে আলোচনা উঠেছিলো। 

কিছু দুষ্টু লোক (ছাত্র ও শিক্ষক উভয় শ্রেণি থেকে) গোপনে ই প্রস্তাবনা প্রায় পাশ করে ফেলেছিলো যে "বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ" হলটি সনাতনধর্ম+অন্যান্য ধর্মকেন্দ্রীক করা যায় কী না৷ 

কিন্তু জানাজানি হলে হিন্দু, মুসলমান সচেতন শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা ঐক্যবদ্ধভাবে এটা নিয়ে জোরালো প্রতিবাদ জানায়। 

এর ফলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় তার অসাম্প্রদায়িক রূপটি ধরে রাখতে আজো সক্ষম---"জাহাঙ্গীরনগর মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়" নামে চালু হওয়ার পরেও।

এ কারণে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড অনুপ, বড় ভাই সুশান্ত হালদার হতে, এক সাথে খাইতে দাইতে, ঘুমাতে কোনো মনস্তাত্ত্বিক বিভাজন আসেনি৷

অনেকেরই একই অভিজ্ঞতা। 

এর মানে আমাদের আশেপাশে সাম্প্রদায়িকতা নেই এটা বলবোনা। 

কিন্তু দিনের শুরু ও শেষে ঘরে যার সঙ্গে সারাক্ষণ দেখাসাক্ষাৎ খাওয়া দাওয়া হয় তার প্রতি ভালোবাসো ও আত্মিক বন্ধ সুদৃঢ় হওয়ার সম্ভাবনাই তো বেশি হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০০ বছরে দখলদার ব্রিটিশদের সময়ের হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গার প্রতিনিধিত্বকারী, পাকিস্তান আমলের পরিত্যাক্ত দ্বিজাতিতত্ত্বের প্রতীকী অবস্থান এই সাম্প্রদায়িক বিভাজনরেখাকে কীভাবে কেটে অসাম্প্রদায়িক বাঙালি একক সত্তার চেতনা দেশের অন্যতম সেরা মেধাবীদের মধ্যে দেয়া যায় সে নিয়ে আলাপ হোক ছোট-বড় সকল ভার্চুয়াল ও বাস্তব পরিসরে। 

জয় হোক মানবধর্মের, জয় হোক অসাম্প্রদায়িক বাঙালি জাতিসত্তার, জয় হোক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের। 

জয় হোক প্রতিটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের। জয় হোক মানুষের। জয় হোক সত্যের।

জয় হোক শান্তির।
পাঠ অনুভূতি

Post a Comment

0 Comments