অজ্ঞাতনামা মামলায় আতঙ্কিত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের আবাসিক ছাত্ররা আজ বুধবার বেলা ১১টার দিকে উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন বরাবর একটি স্মারকলিপি দিয়েছে ।স্মারকলিপিতে প্রায় শতাধিক সাধারণ ছাত্র স্বাক্ষর করেছে।
মীর মশাররফ হোসেন হলের কয়েকজন আবাসিক ছাত্রের গ্রামের বাড়িতে পুলিশের হয়রানিমূলক প্রবেশের কারণে সাধারণ ছাত্ররা আতঙ্কিত বোধ করছে ।এ আতঙ্কবোধ থেকেই স্মারকলিপি দেওয়া হয় বলে জানায় সাধারণ ছাত্ররা ।
স্মারকলিপিতে 'পুলিশের হয়রানিমূলক আচরণ'থেকে সাধারণ ছাত্রদের নিরাপদ রাখার জন্য প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ চাওয়া হয় ।
মীর মশাররফ হোসেন হল সূত্রে জানা যায়,
৪১তম ব্যাচের রবিন ও ৩৯তম ব্যাচের মারুফের(আইটি বিভাগ)গ্রামের বাড়িতে পুলিশ যায় ।
মারুফের সাথে এ ব্যাপারে কথা বললে তিনি বলেন,
'গত ৩ সেপ্টেম্বর আমার গ্রামের বাড়ি খুলনায় পুলিশ যায় এবং আমার বৃদ্ধ বাবা-মায়ের কাছে আমাকে সন্ত্রাসী হিসেবে তুলে ধরে ।এতে আমার মা অনেকটা ভেঙে পড়েছেন ।'
তিনি আরো বলেন,
দেখছেন,আমি গুলিও খেলাম আবার আসামীও হলাম ।
উল্লেখ্য,গত ১ আগস্ট দিবাগত রাতে মারুফ ও রবিন উভয়েই পুলিশের রাবার বুলেটে আহত হয় ।
স্মারকলিপির ব্যাপারে মীর মশাররফ হোসেন হলের প্রভোস্ট আব্দুল আজিজকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন,
'এ ব্যাপারে আমি কিছু জানিনা ।আমি জানলেতো আমাকে স্মারকলিপি দেখাতো।'
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর তপন কুমার সাহা এ ব্যাপারে বলেন,
স্মারকলিপি যখন দেয় তখন আমি ছিলাম না ।তাই তেমন কিছু বলতেও পারছিনা ।'
ছাত্রদের সহায়তার ক্ষেত্রে প্রশাসন কতটা এগিয়ে আসছে এমন প্রশ্নের জবাবে মারুফ বলেন,
প্রশাসন আমাদের ব্যাপারে নিরব ।তারা বলে,তুমি যদি নিরপরাধ হও তোমার কিছু হবেনা।এতে আমরা আশ্বস্ত হতে পারিনা ।'
মীর মশাররফ হোসেন হলের আবাসিক ছাত্র ৪১তম ব্যাচের ইতিহাস বিভাগের সোহানুর বলেন,
কিছুদিন পরে পরীক্ষা ।এখন পুলিশের এই অজ্ঞাত তালিকায় যদি আমিও থাকি,এই ভয়ে পড়াশোনা হচ্ছেনা ।'
একই কথা বলেন তানজিন আহমেদ নামক আরেক ছাত্র ।
প্রসঙ্গত,গত ১ আগস্ট ছাত্রলীগ নেতা তাহমিদুল ইসলাম লিখনকে ছুরি মেরে আহত করা হলে পুলিশ মীর মশাররফ হোসেন হলের অভিযুক্ত ছাত্র নাহিদসহ কয়েকজনকে গ্রেফতার করতে যায় এবং এ নিয়ে উক্ত হলের ছাত্রদের সাথে বাকবিন্ডা ও একপর্যায়ে সংঘর্ষ শুরু হয়।পুলিশের রাবার বুলেটে আহত হয় পাঁচ ছাত্র ।পরে ছাত্ররা ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে এবং সেখানেও পুলিশের সাথে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয় ।এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ২০০ ছাত্রের নামে মামলা করে ।
এরকম পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট জরুরি সভা ডেকে রমজান ও ঈদের ছুটি এগিয়ে এনে ৩ আগস্ট সন্ধ্যা ৬ টার মধ্যে সকল ছাত্রদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেয় ।
গত ২৫ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে আবারো ক্লাস শুরু হয়েছে ।
[মঈনুল ইসলাম রাকীব
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়]
0 Comments