মানুষ হচ্ছে চরম আত্মকেন্দ্রিক । মানুষ ভয়ানক স্বার্থপর । মানুষ নিজের জন্য বেঁচে থাকে এবং নিজেরই জন্য অপরকে বেঁচে থাকতে উত্সাহ যোগায় ।
মানুষ সমাজে নিজের অবস্থান সুদৃঢ় করতে পারস্পরিক বিশ্বাস আদান-প্রদান করে । এর থেকেই আন্তরিকতার উদ্ভব । যখন কেউ একজন বিশ্বস্ত অপরকে পায় তখন তার সঙ্গে আন্তরিক একটি বন্ধনে জড়ায় । এই বন্ধনকে কেউ বলে বন্ধুত্ব, কেউ প্রেম, কেউ ভালবাসা কিংবা কেউ শুধু জৈবিক বন্ধন বলে থাকে । সম্পর্কের ধাঁচটাও মানুষের ক্ষেত্রবিশেষ পরিবর্তিত হয় ।
এর পরের ধাপে মানুষ আস্থা খোঁজে । যাকে বিশ্বাস করা যায় তার প্রতি আন্তরিকতা জন্মে এবং আস্থাশীল হওয়া যায় । বিভিন্ন কাজে তখন আস্থাবান ঐ মানুষটাকে খোঁজে অন্যজন ।
মানুষ একটা অদ্ভুত প্রাণী । একমাত্র এই মানুষই সুষ্পষ্ট স্বার্থের জন্য সঙ্গী খোঁজে । সঙ্গী বৃদ্ধি করতে থাকে শিকল প্রক্রিয়ায় । এবং এর প্রতিটি স্তরে পৃথক পৃথক স্বার্থ নিহিত থাকে ।
স্বার্থের ওপর টিকে থাকা এইসব মানবিক সম্পর্কগুলো স্বার্থোদ্ধারের পর উধাও হতে বেশি সময় নেয়না । অনেক মানুষ বৃহত্ স্বার্থের জন্য ক্ষুদ্র স্বার্থের সম্পর্কগুলোকে গুটিয়ে ফেলে । নতুন করে স্বার্থান্ধ আরো মানুষের সঙ্গে সম্পর্কিত হয় অথবা হওয়ার মনোবাসনা থাকে ।
মানুষ হচ্ছে চরম মুখোশধারী । একেক সময় একেক মুখোশ পরে । একটা সময় পর্যন্ত প্রথম মুখোশটা টিকে থাকে, কিন্তু অন্ধ মোহে যখন নতুন নষ্টভ্রষ্টঘৃণ্য স্বপ্ন জাগে তখন ঘপাঘপ মুখোশ পরিবর্তিত হয় । আসল ব্যক্তিত্ব কেবল মুখোশধারীর মুখোশ পরিবর্তনের সময় যে স্বত্বাটি দৈবত্ অথবা পরিকল্পিতভাবে উপস্থিত ছিল সে দেখে । মুখোশধারী মানুষেরা তখন প্রাণপনে পালাতে থাকে ঐ প্রত্যক্ষদর্শনকারীর থেকে । নিজের মুখোশকে প্রতিষ্ঠিত করতে নিঃস্বার্থ প্রাণীদের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ করে এবং প্রাণচাঞ্চল্যে পরবর্তী শিকারের অপেক্ষায় ওঁত্ পেতে থাকে ।
মানুষ তার ভবিষ্যত্ নিয়ে ভাবে । ভবিষ্যতের কাঁঠালের দিকে তাকিয়ে সে দারুন সব স্বপ্নে উজ্জ্বীবিত হয় । ভবিষ্যতের হীনস্বার্থকে আড়াল করতে মানুষ জন্মদাতা-জন্মদাত্রীর সন্ধান করে । তাদের স্বার্থের সঙ্গে মানুষের ধর্ষিত স্বার্থকে লোকদেখানো আবেগ দিয়ে মিশ্রিত করে চমত্কারভাবে পরিবেশন করে । সেই কিম্ভূতকিমাকার 'কাঁঠালেমিশ্রণ' বাজার দরে বিক্রি হয় । অন্য মানুষেরা বিশ্বাস করে খায় ।
এই মানুষই অতীতের মুখোশে কাঁঠালকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়েছে তা কেবল সেই বর্তমানের নিদারুন ভুক্তভোগীই বোঝে । বোঝে আর হাসে, এই হাসিতে চোখ দিয়ে নোনতা জল অবিরাম ঝরে । এ বড় অবিমৃষ্যকারী হাসি !
মানুষ আদিমকাল থেকে ক্যারিয়ার সচেতন । এই সচেতনতা অতিমাত্রায় প্রকাশ পেলেই মানুষের ক্যারিয়ার বিধ্বস্ত হয় । যে বিশুদ্ধ প্রাণিস্বত্বা ক্যারিয়ায় গঠনে সবচেয়ে বেশি সহায়ক এবং কার্যকর এবং সর্বোত্তম আন্তরিক মানুষ তাকে অস্বীকার করে পরিত্যাগ করে । নতুন যেখানে যায় সেইসব মানুষ হয় অতিরিক্ত পশুত্বের অধিকারী । নৈতিকতা নেই কোথাও, খাবা পাতিয়ে থাকে অপরকে গ্রাস করতে । মানুষের ঘোর কেটে যায় । সেই বিশুদ্ধ স্বত্বার খোঁজ পড়ে আবার...
মানুষ হচ্ছে নষ্টপ্রিয় । দুনিয়ার হেন নষ্টামী ফষ্টামী নাই যে সে তা করতে প্রত্যাশা করেনা । এই প্রত্যাশায় বাঁধা পেলেই সে কাছের স্বত্বাটাকে দূরে সরানোর টালবাহানা শুরু করে । একটিবারের জন্যও মানুষ চিন্তা করেনা শুধু এই দিনই দিন না, সম্মুখে আরো দিন রয়েছে এবং সেই দিনগুলোতে পরিশীলিত স্বত্বাটিকে বড় বেশি প্রয়োজন হবে ।
মানুষ হচ্ছে অস্বীকারকারী । যা কিছুসময় পূর্বে সে করেছে জ্ঞাত অজ্ঞাত কারণে সে তা অস্বীকার করে এবং বলে ওটা ছিলনা যদি থাকে তবে একটি অপরিকল্পিত দুর্ঘটনা ছাড়া কিছুই না । মানুষ ভুলে যায় সম্পর্ক বিনির্মানের কোন এক ধাপে এই অস্বীকার তার জীবনকে কীভাবে তছনছ করে দিবে ।
মানুষ কল্পনাবিলাসী । উদ্ভট নোংরামী আর সস্তা শারিরীক খ্যাতি তাকে সাময়িকভাবে নীতিহীন করে দেয় । কিছুক্ষণ আগেও ঈশ্বরকে স্মরণ করে যে আত্মা তাও একটি স্বত্বার উপস্থিতিকে অস্বীকার করে, অথচ এইতো সেইদিন ঐ মানুষের সে যে কী ক্রন্দন ! আজ অবশ্য মানুষ তা সরাসরি অস্বীকার করে । এটাই মানুষের অদ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য ।
মানুষ মাঝে মাঝে আশ্বাস দেয় । শিকল প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হতে দেরি হওয়ায় মানুষ অপরকে আশাও দেয় । তবে সবকিছু ধরা পড়ে একটু কাল অতিক্রান্ত হলে । স্বমহিমায় ফিরে আসে সে । একবারো ভাবেনা কী ভাবে ক্ষয়ে যাচ্ছে সে যে প্রায়শই আশা নিয়ে ফিরে আসে । আশাহত হতে হতে আশায় তার অরুচি ধরেছে ।
মানুষ নরপিশাচবিলাস করে । নরাধম, খবিশ, কুকুরজাত, বেজন্মা, ধ্বজভঙ্গ, দুর্গন্ধময় অক্ষম এই সব বিলাসমগ্নতা মানুষকে তৃপ্তি দেয় । ওষ্ঠের অপপ্রয়োগ ঘটে এসব ক্ষেত্রে । সেই স্বত্বা প্রচন্ড গ্রীষ্মে খাঁখাঁ রোদে ঝরে পড়া পাতার মত মাটিতে গড়িয়ে বেড়ায় । মানুষ তা কদাচিত্ দেখে, অনুভব অনেক অনেক দূর ।
জন্মের পর থেকেই আমি মানুষ হতে পারিনি । মানুষ হতে হলে মুখোশ পরতে হয়, মানুষকে অস্বীকার করার দুর্বার ক্ষমতা থাকতে হয়, প্রতারণা যে একটা শিল্প এবং অপরকে ধ্বংস করেও যে তৃপ্তি পাওয়া যায় এটা মানুষ হলেই বোঝা যায় । মানুষ হলে শৃঙ্খলিত হওয়ার বাসনা থাকে, মানুষ মুহূর্তে চোখ পাল্টে দেয় । আমি মানুষ হতে পারিনা, পারিনা ।
আমি সত্যিই মানুষ হতে চাইনা ।
তবে একথা আমি নির্দ্বিদ্বায় স্বীকার করি আমি যদি মানুষ হতাম তবে এই লেখাটার সৃষ্টি হতোনা । এবং আমি একটা স্বত্বা হিসেবেই বেঁচে থাকবো, তাতে ঐ মানুষ যা ভাবে ভাবুক ।
সে যে অনুশোচনায় একেবারে ন্যুব্জে যাবে তা মনে হয় না বলাটা একটা অন্যায় ।
মানুষের সর্বাঙ্গীন সফলতা এবং চিরস্থায়ী সুখ আর দুশ্চিন্তামুক্ত, চিকন রক্তের ধারাবিহীন একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনের কামনা করছি,করবো ।
[ কারো জীবনের সঙ্গে একটু এমন কী এক চিমটি পরিমাণ মিলে যাওটাও মহাকাকতালীয় ব্যাপার । এটা একান্ত একটি সাহিত্য এবং বাংলা সাহিত্যে এই গ্রুপে ব্যতিত অন্য কোথাও এর চর্চা হবে বলে আমি মনে করিনা । তারপরও যদি কোন মানব, মানবী অথবা 'মানুষের' জীবনের সঙ্গে সামান্যতম সাদৃশ্যতাও যদি থাকে তার জন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী । ]
0 Comments