সর্বশেষ

অধ্যাপক জাফর ইকবাল স্যারের বৃষ্টিতে ভেজা,চলমান শাবিপ্রবি আন্দোলন ও ক্লাস্টার কাউন্টার ডিসকোর্স

আসুন,কাউন্টার ডিসকোর্স তৈরি করি।শাবিপ্রবির অধ্যাপক জাফর ইকবাল স্যার বৃষ্টিতে ভিজেছেন,গলায় দড়ি নিতে চেয়েছেন এই আলোচনায় সত্য যেন চাপা না পড়ে যায়।জাফর স্যার যে শিক্ষকদের পক্ষে বৃষ্টিতে ভিজেছেন তাদের আন্দোলনের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষকের সম্পৃক্ততা নেই এটি গণমাধ্যমে আসে নাই।বৃহস্পতিবার উপাচার্য অধ্যাপক আমিনুল ইসলামের পক্ষে কয়েকশ সাধারণ শিক্ষার্থী মৌন মিছিল করে এটি আলোচনায় আসে নাই।আন্দোলনের সঙ্গে একজন সাধারণ শিক্ষার্থীও কি সম্পৃক্ত?এর উত্তর 'না'।সাধারণ শিক্ষার্থীদের ঢাল বানিয়ে শিক্ষকদের সামান্য একটি অংশ এ আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিলেন।আচ্ছা,বৃষ্টিস্নাত জাফর ইকবাল স্যারের পাশে ছাতা মাথায় শিক্ষকরাও কি আন্দোলনকারী?তারাও কি লাঞ্ছিত?যদি তারা আন্দোলনকারী বা লাঞ্ছিত বা এদের যেকোন একটি হয় তবে তাদেরও কি স্যারের সাথে ভেজা উচিত ছিলনা?কেন ভিজলোনা?স্যারের ভেজাটা কি প্রতীকি আন্দোলন ছিল না?সেই আন্দোলনে অন্য শিক্ষকেরাও এসে কেন ভিজলোনা?অথবা তারা কেন স্যারের মাথায় ছাতা ধরলোনা?
ক্যামেরাম্যান চৌকস নয়।সে কেবল স্যারকেই ফোকাস করলে এইসব প্রশ্ন আসতো না।বেচারা ভেবেছে ছাতা মাথায় স্যারদের চেয়ে স্যার পৃথক এটি দেখাতে হবে,এটা ভাবেনি যে কখনো কখনো 'একটি ছবি ঠাস ঠাস করে কথা বলে'।
২।
আন্দোলনরত শিক্ষকদের অন্যতম প্রধান সংগঠক অধ্যাপিকা ড ইয়াসমীন।তিনি জাফর ইকবাল স্যারের স্ত্রী।জাফর স্যার আন্দোলনে সরাসরি আসেননা।তাঁর স্ত্রী আন্দোলনের নেতৃত্ত্বে দেন এবং তিনি উদ্ভূত পরিস্থিতি বিবেচনা করে বিবৃতি দেন বা বৃষ্টিতে ভিজে আন্দোলনকে বেগবান করেন।দুই পাশে পানির বোতল রেখে একা বৃষ্টিতে ভেজার মধ্যে আমরা প্রতীকি আন্দোলনের স্পষ্ট চিহ্ন খুঁজে পেতে পারি।এটিকে আমরা ইমোশনাল এজেন্ডা বিল্ডিংয়ের একটি ধাপ বললে অতিরঞ্জন হবেনা।
৩।
আমরা যেটি জেনে জাফর স্যার তথা আন্দোলনকারী শিক্ষকদের প্রতি সহানুভূতিশীল সেটি কি নিরপেক্ষ?আন্দোলনকারীরা অভিযোগ করেছেন 'তারা শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত',এটি মিডিয়ায় এসেছে।উপাচার্য যে এসব শিক্ষকদের দ্বারা পাল্টা লাঞ্ছিত হওয়ার অভিযোগ তুলেছেন সেটি মিডিয়ায় আসেনি।কারণ জাফর স্যারের স্ত্রী আন্দোলনকারী এবং তিনি উপাচার্যের পদত্যাগের আন্দোলনের শতভাগ সমর্থক।আর মিডিয়া জাফর স্যারের ব্যাপারে উচ্চমাত্রার পক্ষপাতদুষ্ট বা সুশীল পরিভাষায় সিমপ্যাথেটিক।
রবিবারের ঘটনার সারসংক্ষেপ হচ্ছে,উপাচার্য সকাল সাতটায় নিজ কার্যালয়ে যাবেন।আন্দোলনরত শিক্ষকরা তাঁকে যেতে দিবেননা।উপাচার্যকে শিক্ষকরা প্রশাসনিক ভবনে প্রবেশ করতে না দিতে তার পথ আগলে ধরেন।এসময় নানা কটূকথাও শোনান তারা।শিক্ষকদের এই বাঁধার সময়ে আগে থেকে উপস্থিত সাধারণ শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পক্ষে দাঁড়ান।তারা উপাচার্যের পথ আগলে থাকা শিক্ষকরা যখন উপাচার্যের সঙ্গে বাকবিন্ডা করছিলেন তখন উপাচার্যকে জোর করে ভেতরে ঢোকান।সম্ভবত এসময় যেতে দেয়া না দেয়া নিয়ে ধস্তাধস্তি হয় এবং অধ্যাপক জাফরর স্যারের স্ত্রী অধ্যাপক ইয়াসমীন ও অন্যানরা শিক্ষার্থীদের রোষানলে পড়েন।ধস্তাধস্তির সময় গায়ে ধাক্কা লাগাকেই হয়তো শিক্ষকদের গায়ে হাত দেয়া হিসেবে এসেছে মিডিয়ায়।মিডিয়া অতিরঞ্জন করতে ভালবাসে।
৪।
মিডিয়ার এই Pseudo Crisis তৈরির প্রবণতা অনেক আগের।পত্রিকার কাটতি বৃদ্ধি বা লাইক শেয়ার বাড়ানো বা নিজস্ব পলিসি বা এজেন্ডার বাস্তবায়ন ঘটাতে মিডিয়া আংশিক সত্য প্রচার করে।বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের একটি থাকে 'লাঞ্ছনার'।এটি জাবির কিছু আন্দোলন কাছ থেকে দেখার ও তা নিয়ে সংবাদ করার অভিজ্ঞতা।জাবিতে যখন উপাচার্যের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষক ও অধিকাংশ শিক্ষার্থী অবস্থান নিয়েছিল তখন কিন্তু অধ্যাপক জাফর ইকবাল কান্ডারী হয়ে উপাচার্যের সমর্থনে কলাম লিখেছিলেন।ঘটনাস্থলে উপস্থিত না হয়ে এতবড় যৌক্তিক আন্দোলনকে তিনি গ্রাহ্য না করে অধ্যাপক আনোয়ার হোসেনের পক্ষে লিখেছিলেন এবং উপাচার্যকে আটকে রেখে আন্দোলনরত শিক্ষকদের অবস্থানকে অন্যায্য বলেছিলেন।
৫।
জাফর ইকবাল স্যারের স্ত্রীসহ অন্যরা যে অবস্থান করে উপাচার্যের পথরোধ করলেন সেটিও কি পদ্ধতিগত কারণে তাঁর বিরোধীতা করার কথা না?স্যার সেটি করছেন না।স্যার বলেছেন,শিক্ষকদের গায়ে হাত তার ছাত্ররা তুললে তাঁর আত্মহত্যা করা উচিত।স্যার বলেননি,এই অবস্থা কে সৃষ্টি করেছে?কেন উপাচার্যের পথরোধ করা হলো?স্যারদের পক্ষে সাধারণ শিক্ষার্থীরা কেন নামছেনা?তাঁরা কি গণসম্পৃক্ত নয়?নাকি আন্দোলন গণ অসম্পৃক্ত?ঘটনার নিরপেক্ষ ফলাফল নির্ণয়ে এইসব প্রশ্নের উত্তর বের হওয়া জরুরি।
৬।
অনেক সংবাদমাধ্যমেই শিক্ষকদের ঘেরাও থেকে উদ্ধার করা শিক্ষার্থীদের আগে 'ছাত্রলীগ' লিখে দেয়া হয়েছে।অথচ তারা সেখানে 'সাধারণ শিক্ষার্থী'ব্যানারে গিয়েছে।জাফর স্যারপন্থী মিডিয়ার সংবাদ দেখে মনে হয়েছে ছাত্রলীগ নেতা বা কর্মীরা যেন সাধারণ ছাত্রের মধ্যে পড়েনা।ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠন করলে কি সাধারণ ছাত্রের খাতা থেকে নাম কাটা যায়?একজন সংগঠনহীন ছাত্র যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে আন্দোলন করতে পারে তবে ছাত্রলীগ কেন পারবেনা?কোন যুক্তিতে ছাত্রলীগের প্রতি এই পক্ষপাতদুষ্টতা?
৭।
দুইদিন আগে অধ্যাপক জাফর ইকবাল স্যার একটি কলামে বিশেষ ঘটনার প্রেক্ষাপটে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের 'সর্বগ্রাসী লোভী' বলেছেন।আচ্ছা,স্যার যে শিক্ষকদের জন্য বৃষ্টিতে ভিজলেন তারাও কি সর্বগ্রাসী লোভী?তাদের উপাচার্য বিরোধী আন্দোলন কি লোভ মুক্ত?
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রতিটি আন্দোলনের পক্ষ ও বিপক্ষ সমাজের কমবেশি স্বার্থজড়িত।সেই সব স্বার্থ আদায়কারী আন্দোলন পরিচালিত হয় মূলত 'শিক্ষার্থীদের স্বার্থে' বা 'বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে' নামের দুটি প্রতীকি শব্দযুগলের কাঁধে বন্দুক রেখে।
অধ্যাপক জাফর ইকবালের আন্দোলনরত শিক্ষকসমাজ ও উপাচার্যপন্থীদের স্বার্থ পাশাপাশি আলোচনা করেই সমাধান বের করতে হবে।এটা ছাড়া এই ভেজাভিজি কেবল মাঠকে কর্দমাক্তই করবে।নাকি?
পাঠ অনুভূতি

Post a Comment

0 Comments