সর্বশেষ

যে ছেলেটির কথা ইতিহাস বলেনা

হতাশার দারুন ছাপ নিয়ে শ্রেণীকক্ষের শেষ অথবা তার আগের বেঞ্চে বসে থাকা ছেলেটির কথা
কেউ বলেনা,কেউ শোনেনা,প্রভাষণ তার মাথা চীরে বেরিয়ে যায়
দারিদ্রের কষাঘাতে,পোশাকের বাহার না থাকায়
পাশের বেঞ্চের মেয়েটিও ফেরেনা,আড্ডায় ডাকেনা তাকে,
বিকৃত ভীণদেশী গান না জানায় চুপিচুপি সরে পড়ে সে,
প্রথম দিন থেকে ভাল লাগা নারীকে কখনো সে বলতে পারেনি,
এই,আমি তো তোমাকে ভালবাসি ।


প্রতিটি মাস কাটে তীব্র যাতনায়
কখনো একপ্লেট ডাল ভাত,কখনো একটি পুরী অথবা কলা,
কখনো শুধু পানি খেয়ে কাটায় সে,
হাজার খাদ্যপ্রেমীদের মহড়ার দোকানের সুগন্ধী খাবার বিচলিত করে সবার অজান্তে,
হয়তো তখন হেঁটে যায় দূরদিগন্তে ঈশ্বরকে জানাতে,
তার মুখের খোঁচা দাড়ি ধ্রুব,
একটা টাকা নেই অপচয় করে প্রতিদিন শেভিংয়ের...
যে বিকেলে তোমরা রঙ্গ করো,রসকস মেখে শরীরকে উপভোগ করতে
বিদেশী সুগন্ধী নিয়ে হল ছাড়ো-
আজিজের চে কিংবা জন ডেনভারের টিশার্ট গায়ে প্রেমিকাকে আনতে
ছেলেটি তখন একটানা সাত দিন গায়ে দেওয়া নিউমার্কেট, বঙ্গবাজার কিংবা সাভারের ফুটপাথের গেঞ্জি গায়ে
টিউশনির পথে,মাথা নিচু করে বড় করুন তার পথ চলা।

রিকশায় চড়ো তোমরা শখ করে
ও ছেলেটি কেবল হাঁটে,
ঘাম ঝরানো টিউশনির একটি টাকাও অকারণ বিলাবে না,
তোমাদের উত্‍সবে তার খুব অসুবিধা হয়
দিনভর স্বেচ্ছায় বন্দি ছোট ঘরে,
আমি দেখি কি অশান্ত উদ্বেগে তার দিন কাটে ।
তোমাদের মত ওর জীবনের চাকা বাবা মা ঘুরায়না
ওর বই,ওর খাতা,ওর কলমের পয়সা নিজে যোগায়
ওর জামা,ওর প্যান্ট ওর দেড়শ টাকার স্যান্ডেল নিজে কেনে
ওর কথা তোমাদের সমাজে আসেনা,
ওর ব্যথা তোমাদের গুরুজনে শোনেনা,
ওর গাঁথা তোমাদের দেশে গাওয়া হয়না
ঐ ছেলেটির কথা তোমাদের ইতিহাস বলেনা ।
তোমাদের ইতিহাস এইডস আক্রান্ত
প্রাত্যহিক মরণের বাণ
সত্যিকার নায়কের প্রতি উপেক্ষা ছেলেটির
জীবনের বিষাদের ক্ষণ।
(২০১৪ সালের ১ সেপ্টম্বর লেখা।)
পাঠ অনুভূতি

Post a Comment

0 Comments