![]() |
| মার্কিন ও ভারতীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী।ছবি/ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল। |
ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পরস্পরের স্থল, নেী ও বিমান সামরিক ঘাঁটি ব্যবহারের এক ঐতিহাসিক চুক্তি সাক্ষর করেছে (ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল, এনডিটিভি)। সংবাদটি খুবই গুরুত্ত্বপূর্ণ যা প্রয়োজনীয় মিডিয়া কাভারেজ পায়নি বলে মনে হয়। পুরো এশিয়ার রাজনীতির প্যারাডাইম ১৮০ ডিগ্রি ঘুরিয়ে দেয়ার মত পূর্ণ যোগ্যতাসম্পন্ন সংবাদ এটি। ভারত-যুক্তরাষ্ট্র ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ও তাৎপর্যপূর্ণ এই সামরিক চুক্তি সাক্ষর করেছে ৩০ আগস্ট, 2016 । চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে। চু্ক্তি সাক্ষর করেন ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পারিকর ও মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী আ্যাশ কার্টার। যখন কেরিকে নিয়ে ভারতীয় মিডিয়া উচ্ছ্বাস প্রকাশে ব্যস্ত তখন ওদিকে মোদি তার রাজনৈতিক জীবনের সবচেয়ে বড় আন্তর্জাতিক সাহসী ও বিপজ্জনক অভূতপূর্ব সিদ্ধান্তটি নিয়ে ফেলেছেন।
২।
চুক্তির কারণ হিসেবে ভারত মনে করছে কিংবা দাবি করছে্ ক্রম আগ্রাসী চরিত্রের পরাশক্তি চীনকে মোকাবেলা। অর্থাৎ দক্ষিণ চীন সাগর নামের গুরুত্ত্বপূর্ণ জলপথ এবং ভারত মহাসাগরের একাংশের দখলে নিতে চীন যে মহাআগ্রাসী রূপ ধারণ করছে তা ঠেকাতে ভারতের সহায়তা নিতে চুক্তি করা হয়েছে । আমেরিকার বক্তব্য এখনো পাওয়া যায়নি। তবে চীনকে হুঁশিয়ারী দিতে দক্ষিণ কোরীয়া, জাপান, কম্বোডিয়া, ফিলিপাইন থাককে অকারণে ভারতে যে আমেরিকা আসেনি এটা ধরে নেয়া যায়। চীন নিজের পানি সম্পদ নিয়ন্ত্রনের জন্য প্রস্তুত হতে জনগণকে War On Water এর জন্য সতর্ক করছে। পানির জন্য যুদ্ধ। বিষয়টি এতোটা হালকা নয়। বিশ্ব রাজনীতি খুবই জটিল রূপ ধারণ করছে। মার্কিন-ভারত এ চুক্তির সাথেও রাজনীতি রয়েছে। ভারত অরুণাচল প্রদেশ নিয়ে চীনের সাথে চলমান দ্বন্দ্বকে নিজের পক্ষে আনতে পশ্চিমা পরাশক্তিকে প্রাচ্যে ডেকে এনেছে বলে কেউ কেউ সমালোচনা করছেন। পাকিস্তানী বর্বরদের সাথে বর্তমানে আমেরিকার এই ঘাঁটি ব্যবহারের সুমধুর চুক্তি রয়েছে। তার পরিণতি কি প্রিয় ভারতীয় নীতিনির্ধারকরা দেখেননি? দেখেও যে আগুন হাতে নিয়েছে ভারত তা হয় তার বৃহৎ হস্তকে পুড়িয়ে দেবে , অন্যথায় ভারতের অনলে শত্রুরা পুড়ে যাবে।এ চুক্তির ভারতীয় পয়েন্ট অব ভিউ সম্ভবত, আধুনিক পৃথিবীর এক অপ্রতিদ্বন্দ্বী শক্তি হয়ে ভারতের আগমন। প্রশান্ত ও আটলান্টিক মহাসাগর থেকে চীন ও আরব সাগর পর্যন্ত দাপিয়ে বেড়ানোর এটাই প্রথম চুক্তি হতে পারে। কারণ চুক্তিতো বলেছেই, ভারতও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তিন ধরনের ঘাঁটি ব্যবহারের সুবিধা ভোগ করবে।৩।
চুক্তির কারণ হিসেবে ভারত মনে করছে কিংবা দাবি করছে্ ক্রম আগ্রাসী চরিত্রের পরাশক্তি চীনকে মোকাবেলা। অর্থাৎ দক্ষিণ চীন সাগর নামের গুরুত্ত্বপূর্ণ জলপথ এবং ভারত মহাসাগরের একাংশের দখলে নিতে চীন যে মহাআগ্রাসী রূপ ধারণ করছে তা ঠেকাতে ভারতের সহায়তা নিতে চুক্তি করা হয়েছে । আমেরিকার বক্তব্য এখনো পাওয়া যায়নি। তবে চীনকে হুঁশিয়ারী দিতে দক্ষিণ কোরীয়া, জাপান, কম্বোডিয়া, ফিলিপাইন থাককে অকারণে ভারতে যে আমেরিকা আসেনি এটা ধরে নেয়া যায়। চীন নিজের পানি সম্পদ নিয়ন্ত্রনের জন্য প্রস্তুত হতে জনগণকে War On Water এর জন্য সতর্ক করছে। পানির জন্য যুদ্ধ। বিষয়টি এতোটা হালকা নয়। বিশ্ব রাজনীতি খুবই জটিল রূপ ধারণ করছে। মার্কিন-ভারত এ চুক্তির সাথেও রাজনীতি রয়েছে। ভারত অরুণাচল প্রদেশ নিয়ে চীনের সাথে চলমান দ্বন্দ্বকে নিজের পক্ষে আনতে পশ্চিমা পরাশক্তিকে প্রাচ্যে ডেকে এনেছে বলে কেউ কেউ সমালোচনা করছেন। পাকিস্তানী বর্বরদের সাথে বর্তমানে আমেরিকার এই ঘাঁটি ব্যবহারের সুমধুর চুক্তি রয়েছে। তার পরিণতি কি প্রিয় ভারতীয় নীতিনির্ধারকরা দেখেননি? দেখেও যে আগুন হাতে নিয়েছে ভারত তা হয় তার বৃহৎ হস্তকে পুড়িয়ে দেবে , অন্যথায় ভারতের অনলে শত্রুরা পুড়ে যাবে।এ চুক্তির ভারতীয় পয়েন্ট অব ভিউ সম্ভবত, আধুনিক পৃথিবীর এক অপ্রতিদ্বন্দ্বী শক্তি হয়ে ভারতের আগমন। প্রশান্ত ও আটলান্টিক মহাসাগর থেকে চীন ও আরব সাগর পর্যন্ত দাপিয়ে বেড়ানোর এটাই প্রথম চুক্তি হতে পারে। কারণ চুক্তিতো বলেছেই, ভারতও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তিন ধরনের ঘাঁটি ব্যবহারের সুবিধা ভোগ করবে।৩।
![]() |
| মোদি ও ওবামা। ফাইল ছবি। |
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ভারত কি কোনদিন আমেরিকার স্থল, নেী ও বিমান ঘাঁটি ব্যবহার করতে পারবে? আর ধরলাম, আমেরিকা চুক্তি অনুযায়ী ঘাঁটি ভারতকে দিলো তা ব্যবহারটি আটলান্টিক মহাসাগরে গিয়ে ভারত কার বিরুদ্ধে করবে?বিষয়টি বুঝতে পারছিনা। পক্ষান্তরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে বঙ্গোপসাগর ও ভারত মহাসাগরের আশেপাশে একটি সামরিক ঘাঁটি স্থাপনের পাঁয়তারা করছে। বাংলাদেশ তা দেয়নি এবং দেবেও না কোনদিন। তো আমেরিকা চীনকে দমাতে বা নিজের পরাশক্তিসম্পন্নতা প্রমাণে প্রায়শই ভারতের ঘাঁটি ব্যবহার করবে। তাহলে চুক্তিতে ভারতের কি লাভ? মোদি কি একটি ভুল পদক্ষেপ নিলেন? খোদ ভারতের অনেক সামরিক বিশ্লেষক এই চুক্তিকে আত্মঘাতী বলে অভিহিত করছেন। কারণ ভারত তো আমেরিকার মত যুদ্ধবাজ নয়, তার তো বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা আমেরিকার ঘাঁটি ব্যবহারের কোন প্রয়োজনীয়তা থাকার কথা নয়। দুটি কারণ থাকতে পারে এই চুক্তি করার।
ক. ভারত অর্থনীতির মত সামরিক পরাশক্তি হিসেবে নিজের প্রদর্শন করতে বিশ্বকে জানাতে চায়। কিছুদিন পর হয়তো নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যপদও চেয়ে বসতে পারে।
খ. রাশিয়া ও চীনকে স্পষ্ট জানিয়ে দেয়া যে তাদের বৃহৎ ঐক্যকে মোকাবেলার পর্যাপ্ত শক্তি ভারতের রয়েছে যেহেতু আমেরিকা তার বন্ধু।
তৃতীয়ত কারণটি গেীণ তবে ফেলে দেয়ার মত নয়। সেটি হচ্ছে, পাকিস্তানকে মার্কিন ব্লক থেকে ছিটকে ফেলা। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এসব কি রাশিয়া দেখছেনা? কিংবা এসব কি চীন দেখছেনা? চীন ইতোমধ্যে ভারতকে এ চুক্তির ফলে ‘অনিরপেক্ষ” বলে দিয়েছে।
৪।
আর রাশিয়া ? কিংবা ইরান? তারা কি করবে? পররাষ্ট্র রাজনীতির স্বাভাবিক নিয়মে ভারত শিগগিরই দীর্ঘদিনের মিত্ররাষ্ট্র রাশিয়ার সাথে বাণিজ্যিক ও সামরিক সহায়তা কমিয়ে দিতে পারে। আমাদের মনে রাখতে হবে ভারতের সেরা মিত্র ইসরাঈল, আবার রাশিয়ার পরীক্ষিত মিত্র ইরান। ইরান ও ইসরাঈল মহাশত্রুভাবাপন্ন রাষ্ট্র। সুতরাং এই সূত্রে ভারত আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে এক নয়া গ্যাঁড়াকলে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।ইরানের সাথে তেলসহ ভারতের বাণিজ্যিক সম্পর্ক অনেক জোরালো। সেই সম্পর্ক কি এখন অক্ষুণ্ণ থাকবে? হরমুজ প্রণালী দিয়ে ভারতের সব তেল আসে। আর হরমুজ প্রণালীর নিয়ন্ত্রণ প্রায় সবটুকু ইরানের হাতে। ইরান আবার আমেরিকাকে বড় শত্রু ভাবে। পারস্য মহাসাগরে মার্কিন সামরিক রণতরী রয়েছে। এ চুক্তি অনুযায়ী ভারতও পারস্য মহাসাগরে সামরিক উপস্থিতি নিশ্চিত করতে পারে। এমন কি হরমুজ প্রণালী দিয়ে ভারতের তেলগামী জাহাজ পাহারায় ভারতীয় যুদ্ধজাহাজ মোতায়িত হতে পারে। তা না হলে মার্কিন যুদ্ধজাহাজ ভারতের সহায়তায় এগিয়ে আসতে পারে। পুরো পরিস্থিতি তখন কিন্তু এক নয়া রূপ ধারণ করবে। আরব সাগরে ভারতের যাতায়ত সেীদি আরবসহ গল্প স্টেটগুলো মেনে নিবে কি? মধ্যপ্রাচ্যের ধনকুবেররা কি আমেরিকার মত ভারতের সামরিক উপস্থিতি সহজে মেনে নেবে? আমেরিকার সাথে ভারতের এই চুক্তি তাই ইরানের প্রতিরক্ষানীতিকে নতুন করে তৈরি করতে উৎসাহিত করতে পারে। প্রশ্ন হচ্ছে নিজের মহাশত্রুর দীর্ঘদিনের মিত্রর নতুন সামরিক মিত্রতা করলে ইরান কি নাখোশ হবেনা? ইরান নাখোশ হলে রাশিয়া কি হবে? তারা তো প্রাণের মিত্র। তাছাড়া পুতিনের নেতৃত্ত্বে যে নয়া সাম্রাজ্যবাদী রাশিয়ার উত্থান ঘটেছে তারা ইউরোপের বাইরেও নিজেদের পরাশক্তি প্রমাণে উঠেপড়ে লেগে উঠেছে। সিরিয়া ইস্যুতে রাশিয়া তার প্রমাণ দিয়েছে কিন্তু। নাকি?
ভারতের সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল শংকর রায়চেীধুরী চুক্তির ব্যাপারে শঙ্কা নিয়ে বলেছেন,তাদের পুরোনো বন্ধু রাশিয়ার প্রতিক্রিয়া দেখতে হবে। নন এলাইনড (জোট নিরপেক্ষ)ভারত এখন এলাইনড ( পক্ষপাতী)। তো ইন্দো-মার্কিন এ সামরিক চুক্তিটির ভবিষ্যৎ খুবই স্পষ্ট নয় কি? নিরপেক্ষ ভারত কি তবে এবার পক্ষে আসার মত অবস্থায় চলে এসেছে? উত্তর জানতে আরো কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে।
৫।
এখন ভারত-মার্কি সামরিক ঘাঁটি ব্যবহারের এই নয়াচুক্তি বাংলাদেশকে কি প্রভাবিত করবে? বিষয়টি জটিল। এর উত্তর এক কথায় দেয়া সম্ভব না। বাংলাদেশ ভেীগলিকভাবে পশ্চিমা শক্তির কাছে ভারতের চেয়ে গুরুত্ত্বপূর্ণ। কারণ হচ্ছে বাংলাদেশে যদি কোন স্থল বা নেী বা বিমান ঘাঁটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র করে তবে তা ভারত ও চীন উভয়ের জন্য ভয়াবহ অশনী সংকেত হবে। একই সাথে এই দুই দেশকে শাসানোর মত জিওপলিটিক্যাল অবস্থান কেবল বাংলাদেশেরই রয়েছে। সেটি মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর জানেনা এটা মনে হয়না। তাই অফ সিজনে হঠাৎ করে চন কেরির বাংলাদেশ সফরের গুরুত্বকে খাটো করে দেখা যাবেনা। একই সাথে বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকদের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে যেকোন চুক্তির আগে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। প্রকৃতপক্ষে সামরিক ও বাণিজ্যিক প্রতিটি চুক্তি ভাল করে হিসেব করে করতে হবে। কারণ বাংলাদেশ এখন আন্তর্জাতিক রাজনীতির ক্রীড়াঙ্গনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। জাতীয়তাবোধসম্পন্ন চিন্তার এখন বিকল্প নেই। ওয়ার অন টেরর নামের যে বিশ্বপ্রকল্প আমেরিকার তাতে বাংলাদেশকে সংযুক্ত করার দীর্ঘ দিনের অভিলাষ মার্কিন নীতিনির্ধারকদের।সেই ব্যাপার ও মার্কিন-ভারত নয়া সামরিক চুক্তির প্রতিচ্ছবি মাথায় রেখে বাংলাদেশের প্রতিটি পদক্ষেপ নিতে হবে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি স্পষ্ট করে গেছেন। তিনি ছিলেন সাম্রাজ্যবাদবিরোধী বাঙালি প্রতিরোধ যোদ্ধা। বৈশ্বিকভাবে তিনি জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের অন্যতম উদ্যোক্তা। আজ তার উত্তরাধীকার হিসেবে আমাদেরও বিশ্বরাজনীতিতে নিরপেক্ষ অবস্থানে থাকা জরুরী। সেকারণেই ভারত-চীন-রাশিয়া-আমেরিকার সঙ্গে কেীশলগতভাবে অনেক ভেবেচিন্তে যেকোন চুক্তি ও জোট গঠন করতে হবে। বিশ্বরাজনীতির গতিপ্রকৃতির পরিবর্তন যেন আত্মমর্যাদাশীল, সার্বভেীম এবং স্থিতিশীল বাংলাদেশকে বিচলিত না করে। বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণকে নিয়ে যেকোন বহি”শক্তির সঙ্গে চুৃক্তি ও আলোচনাকে সাহসের সাথে মোকাবেলা এবং দেশের স্বার্থে প্রয়োজনে বৃু্দ্ধিবৃত্তিক, কেীশলপূর্ণ দেনদরবার করতে হবে।



0 Comments