সর্বশেষ

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন বুর্জোয়া ও সাম্রাজ্যবাদের বুদ্ধিবৃত্তিক প্রতিনিধি: একটি তথ্যসমৃদ্ধ বিতর্ক



আমি:
কাজী নজরুল আর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর  এক নয়।দুইজন দুই জগতের সূর্য।নজরুল সাম্রাজ্যবাদবিরোধী বিপ্লবের রবি আর রবীন্দ্রনাথ সাম্রাজ্যবাদের পক্ষের সূর্য। একজন প্রলেতারিয়েত ,একজন বুর্জোয়া।একজন নিওলিবারেল ক্যাপিট্যালিস্ট ,আরেকজন সাম্যবাদের আহবায়ক।

পাল্টা(এম আর জুয়েল):
ছোটভাই, রবীন্দ্রনাথকে সাম্রাজ্যবাদীদের সহায়ক বলার আগে মনে হয় আরেকটু নিবিড় পড়াশোনার প্রয়োজন।রবীন্দ্রনাথ যদি সাম্রাজ্যবাদীই হতেন, তাহলে জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে বৃটিশ প্রদত্ত 'নাইটহুড' ত্যাগ করতেন না, ইংরেজের চক্ষুশূল নেতাজি সুভাষ বসুকে দেশনায়ক বলে স্তুতিবাক্য লিখতেন না। এরকম আরো হাজারটা উদাহরণ দেয়া যাবে।রবীন্দ্রনাথ হিন্দু ছিলেন, রবীন্দ্রনাথ জমিদার ছিলেন এইজন্য আমরা মধ্যবিত্ত /নিম্নবিত্ত বাঙালী মুসলিমরা তাকে গালি দিয়ে একধরনের আত্মসুখ লাভের চেষ্টা করি মাত্র। আর নজরুলের সাথে রবি ঠাকুরের তুলনা করতে যাওয়াটা নেহায়েত বোকামি। কোনদিন শুনিনি কোন ইংরেজ বায়রন কিংবা শেলীর সাথে শেক্সপিয়রের তুলনা করেছে। কারও সাথে তুলনা করে কাউকে কোনদিন উপরে উঠানো কিংবা নিচে নামানো যায় না। আর সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী লেখা রবীন্দ্রনাথও লিখেছেন। যদি সময় হয় কখনো, তাহলে রবীন্দ্রনাথের 'আফ্রিকা' কবিতাটা পড়ে নিও।

 প্রতিজবাবে আমি:

'মনে রাখতে হবে জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকান্ড তাঁকে নাইটহুড ত্যাগের মতো বিচলিত করেনি,ভিতরকার চাপে সিদ্ধান্ত নিতে তাঁর ছেচল্লিশ দিন লেগেছিল।চল্লিশ বছর বয়স্ক কবি সম্রাজ্ঞী ভিক্টোরিয়ার মৃত্যুতে রাজভক্তির প্রতীক মাতৃশোকাচ্ছ্বাস রচনা করেন,'নাইট' উপাধি পেয়ে আনন্দিত ও ধন্য হন।এবং বঙ্গভঙ্গ রদ করায় সম্রাট পঞ্চম জর্জের উদ্দেশে ভারতীয় হিন্দুর পক্ষে কৃতজ্ঞ কবি উচ্ছ্বসিত ভাষায় 'জনগণ মন অধিনায়ক' প্রশস্তিটি ১৯১১ সনে রচনা করেন।
...লক্ষণীয় যে গদ্যে পদ্যে কোন রূপক সাংকেতিক রচনায় রবীন্দ্রনাথ রাজা রানীর নীচে নামেননি।তাঁর গল্পে উপন্যাসেও নেই গণমানব।'
পৃষ্ঠা ১৪,নির্বাচিত প্রবন্ধ,আহমদ শরীফ ।
অনেক কথা লেখার আছে।আমি এসাইনমেন্ট করছি তাই দেরি হবে।আপনার মন্তব্যটিকে সম্মান করি।সে কারণেই সময় নিয়ে জবাব দিবো।

জুয়েল: অপেক্ষায় রইলাম


আমার জবাব:

'রবীন্দ্রনাথকে সাম্রাজ্যবাদীদের সহায়ক বলার আগে মনে হয় আরেকটু নিবিড় পড়াশোনার প্রয়োজন।' তাঁর ব্যাপারে যখন সিদ্ধান্তমূলক একাধিক শব্দ লিখেছি তাই নিবিড় পড়াশোনা করেই করেছি।আপনার তার প্রতি যে বায়াসনেস এটা থেকে বেরিয়ে নিবিড় অধ্যয়ন প্রয়োজন।...:)
 
২।'রবীন্দ্রনাথ যদি সাম্রাজ্যবাদীই হতেন, তাহলে জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে বৃটিশ প্রদত্ত 'নাইটহুড' ত্যাগ করতেন না'
নাইটহুড মিথ নিয়ে আহমদ শরীফের যে বক্তব্য দিয়েছি তার পরে এ ব্যাপারে আপনার রাবীন্দ্রিক রোমান্টিক ধারনা থাকা উচিত নয়।
 

৩।'ইংরেজের চক্ষুশূল নেতাজি সুভাষ বসুকে দেশনায়ক বলে স্তুতিবাক্য লিখতেন না।'ব্যাপারটা হচ্ছে উনি সম্রাট পঞ্চম জর্জকে স্তুতি করেও লিখেছেন 'জনগণ মন অধিনায়ক' ।জীবনে একটি অক্ষর লিখেননি যাতে আছে ইংরেজ ভারতে শিকড় গাঁড়ছে তা অন্যায়।তো আপনি পাড়ার এক লাঠিয়ালকে উপরে প্রশংসা করলেন ,আর ভিন্ন পাড়ার মাতুব্বরকে তৈল দিলেন এই স্ববিরোধী ফাজিলতাকে আপনারা জাস্টিফাইড করেন কেমনে?এই লোক ব্রিটিশবান্ধব,টোট্যালি ব্রিটিশের বুদ্ধিবৃত্তিক দাস ।আহমদ শরীফ লিখেছেন,...উপনিবেশবাদে তাঁর ঘৃণা ছিলনা।(পৃষ্ঠা,১৫,প্রাগুক্ত)
 

৪।'এরকম আরো হাজারটা উদাহরণ দেয়া যাবে।' কিছুতেই আপনি হাজারো দূরে থাক বিশ পঁচিশটা উদাহরণও দিতে পারবেন না।বরং রবীন্দ্রনাথ জমিদারী করতে এসে অত্যাচার করতেন এ প্রমাণ আছে।বাংলার বিখ্যাত ব্যক্তিত্ত্ব কাঙাল হরিনাথ অক্ষয়কুমারকে পত্র লেখেন।পরে এ নিয়ে একটি প্রবন্ধ 'সাহিত্য' পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।এতে ক্ষুব্ধ আপনার ঠাকুর মহারাজা জগদীন্দ্রনাথ রায়কে বলে অক্ষয়কুমারের 'রানী ভবানী' গ্রন্থপ্রকাশের অর্থ-সাহায্যের প্রতিশ্রুতি প্রত্যাহার করান।কোন মানের নীচ মানসিকতা তা ভেবেছেন?
 

৫।'রবীন্দ্রনাথ হিন্দু ছিলেন, রবীন্দ্রনাথ জমিদার ছিলেন এইজন্য আমরা মধ্যবিত্ত /নিম্নবিত্ত বাঙালী মুসলিমরা তাকে গালি দিয়ে একধরনের আত্মসুখ লাভের চেষ্টা করি মাত্র।'এটা সম্ভবত আপনার ব্যক্তিগত অনুভূতি।আমি আসলে যারা একজন সাম্রাজ্যবাদের দোসরকে নিয়ে আত্মসুখে মেতে আছে তাদের মৌলবাদী চিন্তায় আঘাত করি। আপনার প্রিয় ঠাকুর হালের বিজেপীর মত তার জমিদারী এলাকায় গো কোরবানী নিষিদ্ধ করেন(পৃষ্ঠা,২০)এবং শুধু মধ্যবিত্ত মুসলমান রবী বাবুর আসল রূপ চিনেছেন তা নয়,অনেক সনাতনধর্মী মহত্‍প্রাণও তাকে চিনে ফেলেছিলেন।তার মধ্যে রবীর সেজো ভাইয়ের পৌত্র সুভোঠাকুর [সুভগেন্দ্রনাথ ঠাকুর] ছিলেন।এই ঠাকুর জমিদারী প্রথা উচ্ছেদের ঘোর বিরোধী ছিলেন।(প্রমথ চৌধুরীর রায়তের কথার ভূমিকা দেখুন)।এই লোক তার দুঃখী প্রজাদের তথা গণমানুষের দুঃখের কথা উপেক্ষা করেছেন।আহমদ শরীফ লিখেছেন , শোষক তিনি যত বড়ো মহাপুরুষই হোন শোষিতের পক্ষে লড়াই দূরে থাক তার প্রতি সহানুভূতি প্রকাশেও অনীহ।(পৃষ্ঠা,১২৭,প্রাগুক্ত)।
 

৬।'আর নজরুলের সাথে রবি ঠাকুরের তুলনা করতে যাওয়াটা নেহায়েত বোকামি।'তাইলে উনাকে বিশ্বকবি বলা কি চালাকি?কার সাথে তুলনায় উনি বিশ্বকবি?প্রশংসা বলতেই তুলনা।তা রবীন্দ্রনাথের তুলনা হবেনা কেন?আহমদ শরীফ তো উনাকে বিদ্যাসাগরের চেয়ে নিচের কাতারে ফেলেছেন।
 

৭।'কোনদিন শুনিনি কোন ইংরেজ বায়রন কিংবা শেলীর সাথে শেক্সপিয়রের তুলনা করেছে।'বাহ ,ইংরেজ করছে কিছু এটা না শুনলে তা করা যাবেনা?আমি করি ভাই।আমরা প্রাচ্যের মানুষ এটা করি।ইংরেজ ও পশ্চিমকে আপনার মত সবাই মানদন্ড ভাবতে বাধ্য না এটা ভুলে গেছেন?
 

৮।'কারও সাথে তুলনা করে কাউকে কোনদিন উপরে উঠানো কিংবা নিচে নামানো যায় না।'এখানে উঁচু ও নিচু করার কিছু করা হয়নি।জাস্ট ব্রিটিশ তথা সাম্রাজ্যবাদ বিরোধীতায় রবীঠাকুরের নির্লজ্জ নিরবতার কথা বলা হয়েছে।
 

'আর সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী লেখা রবীন্দ্রনাথও লিখেছেন। যদি সময় হয় কখনো, তাহলে রবীন্দ্রনাথের 'আফ্রিকা' কবিতাটা পড়ে নিও।' আহারে বেচারা রবী, আফ্রিকা নিয়ে লিখেছেন তবে ভারতে ইংরেজের নিমক খাওয়ায় এখান থেকে চলে যাওয়ার কথা সাহস করে বলতে পারেননি।তাকে আমি পড়েছি।হাড়ে হাড়ে চিনেছি।আপনিও তাকে পড়ুন।নিরপেক্ষভাবে পড়ুন।আমার মায়ের প্রিয় কবি তিনি।তার প্রতি একসময় আমিও রবীন্দ্র মৌলবাদী কাতারের অনুরাগী ছিলাম।তবে তার আসল রূপটা এতোটা কুত্‍সিত ভোগবাদী ,পুঁজিবাদী ও সাম্রাজ্যবাদী তা ধীরে ধীরে জেনেছি।আপনিও মাথা থেকে বায়াসড ভক্তিকে সরিয়ে পড়ুন।ফল ভিন্ন আসতে পারে।ধন্যবাদ।
 

এম আর জুয়েল:

আমিও একটু ব্যস্ততার মধ্যেই আছি,পরশু পরীক্ষা। তাই তোমার এই বিশাল প্রতিমন্তব্যের জন্য এবারে শুধু ধন্যবাদ জানিয়েই ক্ষান্ত হই। আপাতত নিজের অবস্থানটাকে একটু পরিষ্কার করি।পশ্চিমকে কখনোই আমি মানদণ্ড হিসেবে ভাবি নাই (শুধু উদাহরণ হিসেবেই বায়রন, শেলীদের কথা বলেছিলাম)। বহু আগে উপনিবেশবাদ, নব্য -উপনিবেশিকতা সম্পর্কে খুব ছোট একটা লেখা লিখেছিলাম, নিচে লিঙ্ক দিলাম,পড়ে দেখতে পার । আর রবীন্দ্রনাথে একটু দূর্বলতা আছে স্বীকার করি। তবে নজরুলের প্রতিও সেটা কোন অংশে কম নয়। তবে দুইজনের আবেদন ভিন্ন ভিন্ন। যাহোক সামগ্রিক বিষয়েই একদিন মুখোমুখি আলাপ হবে আশাকরি। ভাল থেকো। https://mobile.facebook.com/story.php...

আমার কথা:
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নি:সন্দেহে ভালো সাহিত্যিক তবে তিনি সমালোচনার ঊর্ধ্বে নন। তিনি মানুষ এবং তিনি পশ্চিমা সাহিত্যের দেশীয় রূপ। তার আলোচনায় তার ব্যাপারে এ সত্য তুলে ধরতে হবে। মনে রাখতে হবে বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতীয় কবি হিসেবে কাজী নজরুল ইসলামকে নিয়ে এসেছিলেন বাংলাদেশে।নজরুল ছিলেন ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রামের বুদ্ধিবৃৃত্তিক মহাবীর। স্বাধীনতা সংগ্রামেও তার সাহিত্য ও গান আমাদের অনুপ্রাণিত করেছে। তাই বাংলাদেশ রবীন্দ্রনাথ অপেক্ষা নজরুলের চর্চা পিছনে পড়ে থাকার কথা নয়। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে দুখু মিয়া জাতীয় কবি হয়ে দু:খের সাগরে বঞ্চনা কাঁধে নিয়ে সাঁতরে বেড়াচ্ছেন..।
পাঠ অনুভূতি

Post a Comment

0 Comments