আমরা যখন সিদ্ধান্ত নিলাম যে জয়বাংলা গেইট বা প্রান্তিকে গিয়ে নতুন ফ্রাই টাউন নামক দোকানটার ভাজা মুরগী ইত্যাদি খাবো মেয়েটি তখনো পুরোপরি জানেনা ব্যাপারটি । সম্ভবত তার বিলাসী বান্ধবীরা ডেকে নিয়ে এসেছে তাকে। ফলে আমরা আড্ডা দিতে থাকলাম ট্রান্সপোর্টে এবং মাঝেমাঝে চা খেলাম । প্রায় বিকালের শেষ তখন । এরপর আমরা হাঁটতে থাকলাম । গল্প করলাম । খুনসুটি করলাম । চলতেই থাকলো তা । তারপর কোন এক মেয়ে চিল্লিয়ে বলে উঠলো “ নিশ্চয়ই খুব মজা হবে ফ্রাইড চিকেন...” ও আরো আরো ফ্রাই । আমি দেখলাম, স্পষ্ট দেখলাম যার কথা বলছি সেই মেয়েটির চোখ দুটি কেঁপে উঠলো !
ধরা যাক ওর নাম নাই । মেয়েটি ক্লাস করে রাজ্যের চিন্তা নিয়ে । আমাদের পরিচিত জগতের কাছে তারা মেধাবী তবে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী । এখানে গ্লামারহীন , ন্যাকামোহীনরা পিছনেই থাকে । ক্লাস শেষে দ্রুত ফিরে যায় সে। আমি শুনেছি তার প্রায় চারটি টিউশনি করাতে হয়। যখন আমার মেইনস্ট্রিম বান্ধবীরা তুমুল আনন্দ করে, তখন সে হলে বসে অঙ্ক প্রাকটিস করে অথবা রান্না করে সব্জি ও ডাল । আমি কোনদিন তাকে বয়ফ্রেন্ড ইত্যাদির আলাপে দেখি নাই। মানে তার এসবের সময় নেই । সে ছুটতেই থাকে । যেমন মেইনস্ট্রিম ছুটতে থাকে ফূর্তির দিকে, সে ছুটতে থাকে জীবনের দিকে । একের পর এক নতুন ড্রেস কেনারও তার সামর্থ নেই । অথবা সংকটে তার আরো টাকা পাঠাতে হচ্ছে বাড়িতেই বরং । সে কাউকে ট্রিট দেয়না, তেমনি ট্রিটেও তাকে পাওয়া যায়না । তবে কেউ বিপদে পড়লে সবার আগে ছুটে আসে । আমাদের ধুমধাম ভোগের রাজ্যে তারে কোনদিন দেখি নাই বলতে , উফ লাইফটা ভালো লাগেনা। সে সংগ্রাম করছে । তার যেহেতু বটতলায় খাওয়ার পর বিল দেয়ার কেউ নেই , তেমনি ফ্রাই টাউন কিংবা নানান ধরনের কাবাবের জগতেও তার যাওয়া হয়না । মাঝেমাঝে তাঁকে দেখা যায় ব্যাগে মুড়ে বাজার নিয়ে যেতে হলে । সে সময় সন্ধ্যা অথবা তার পরে হয় । কারণ সে সময়টি মজা -মাস্তি, ঘোরাফেরা, এনজয় করা ফ্রেন্ডস’র অনেকের সাথে দেখা না হওয়ার ৯০ শতাংশ নিশ্চয়তা দেয় মেয়েটিকে ।
সুতরাং সেই সন্ধ্যায় তাকে আমি চলে যেতে দেখেছি । তার কষ্টের উপার্জন হাসি তামাশায় খরচ হতে পারেনা । তার চলতে হয়, চালাতে হয় । সে বলেছিল, আমার হলে কাজ আছে রে । অথবা বলেছিল, না আমার আর ক্ষিধে নাই রে...। আমার ঠিক মনে নেই । আমরা গিয়ে ধুমসে খেলাম । সেলফি তুললাম । আমি দেখলাম একপাল বন্ধু ও বান্ধবীরা বিকারহীন খেয়েই যাচ্ছে তাকে ছাড়া । আমি গলা দিয়ে খাবার নামাতে পারিনি । তবু খেতে হয় । আমি সোসাইটির ফরমালিটির জালে বন্দি তাই চুপ করে মানসিক অত্যাচার সহ্য করেছি। আমার ঐ মেয়েটির মত সৎ সাহস ছিলনা “ না ” বলার।
যখন চৌরঙ্গী দিয়ে সোজা আল বেরুনী হল বরাবর হেঁটে যাচ্ছিলাম আমি তখন এসব কথা মনে পড়েছে । আমি ভাবলাম মেয়েটিকে নিয়ে একটি গল্প লিখবো । ভাবলাম তার নাম দিবো কি না । তারপর এমন সহস্র নারীকন্ঠের স্বর শুনলাম । তাঁরা বলছিল,” এই গল্পটি আমার । আমার নামটা দিও ভাই... ।”
মেয়েটির নাম...। থাক , সেও মেয়ে । তার দিকে আমাদের চোখ দেয়ার সময় নাই । তার চেক ইন অথবা ক্যান্ডি ক্রাশ অথবা হিন্দিতে স্ট্যাটাস অথবা পারফিউমের সুবাস নেই । সুতরাং তার নাম গল্প । গল্পরা এক কোণে বসে বসে চেয়ে থাকে আকাশের দিকে । হলের ছাদে কিংবা ছোট্র রুমের জানালা খুলে আসমানে তাকিয়ে মনে মনে কারে যেন কি বলে !
#ছোটটো #এটটা #গল্প
0 Comments