সর্বশেষ

র‌্যাগ উৎসব, জাবির ঐতিহ্য ও স্বকীয়তা এবং ৩৯ এর উপর একটি অযৌক্তিক নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে

৩৯ এর র‌্যাগ উৎসব করার অধিকার ফিরিয়ে দিক সিন্ডিকেট
২৫ অক্টোবর ২০১৬ । জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের এক কলঙ্কিত দিন । এই দিন সিন্ডিকেটে ৩৯ তম আবর্তনের শিক্ষা সমাপনী অনুষ্ঠান তথা র‌্যাগ উত্‍সবের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। বাংলাদেশের সাংষ্কৃতিক রাজধানীখ্যাত জাহাঙ্গীরনগরের বুকে এ যেন আকস্মিক ছুরি চালানো । ভাবতে অবাক হই, এই ধরনের সিদ্ধান্ত সিন্ডিকেটে কিভাবে পাশ হলো? সিন্ডিকেট কি জাহাঙ্গীরনগরের সাবেক শিক্ষার্থী শূন্য হয়ে গেছে? নাকি কথিত Ragging এর সাথে Rag Day কে মিলিয়ে তৈরি উদ্ভট খিচুড়ির ফল এমন জাবিবিদ্বেষী সিদ্ধান্ত? মাননীয় উপাচার্য ও অন্যান্য নীতির্ধারকদের প্রতি অনুরোধ, অবিলম্বে শিক্ষার্থীদের বিদায়ী অনুষ্ঠান করার অধিকারটি ফিরিয়ে দিন । আপনাদের সন্তানেরাই আপনাদের গেীরবান্বিত করে । তাঁদের ক্যাম্পাস ছেড়ে যাওয়াটাকে তীব্র হতাশার কুয়াশা দিয়ে ঢেকে দিবেন না ।

র‌্যাগ উত্‍সব জাহাঙ্গীরনগরের অদ্বিতীয় সংষ্কৃতি

নিঃসন্দেহে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একটি । আবাসিকের পাশাপাশি যা জাবিকে বাংলাদেশে অদ্বিতীয় করেছে তার নাম এর সংষ্কৃতি। কবিতা, গান, বিতর্ক, নৃত্য, চলচ্চিত্র , নাটক এই সব কিছু নির্মাণ ও উপস্থাপনে জাবি প্রথম। আর শিল্প ও সাহিত্যের এই সবগুলো শাখা জাবিতে কেবল একটি অনুষ্ঠানেই সমবেত হয়। সেটিই র‌্যাগ উত্‍সব। এই উত্‍সব জাহাঙ্গীরনগরকে অদ্বিতীয় বৈশিষ্ট্যে সমুজ্জ্বল করেছে। বাংলাদেশের ইতিহাস-ঐতিহ্যের কাঁধে ভর করে ৩ দিনের উত্‍সব জাবিকে দেশব্যাপী নিজস্ব রূপে পরিচিত করে। এই র‌্যাগের উপর নিষেধাজ্ঞা জাবির স্বতন্ত্র পথচলার উপর স্পষ্ট আঘাত বলেই মনে করি। ৩৬ তম আবর্তনের র‌্যাগ উৎসব নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করায় তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়র হোসেন চরমভাবে সমালোচিত হয়েছিলেন ।



 
র‌্যাগ উৎসবে  কি থাকে আসলে? র‌্যাগ কি খায় ? না দেয়? নাকি র‌্যাগ প্রাণের স্পন্দন?

জাবি সম্পর্কে ক্যাম্পাসের বাইরে থেকে অজ্ঞরা ভাবে র‌্যাগ মানে টর্চার ইত্যাদি । এই দরিদ্র চিন্তকদের জন্য করুনা করা ছেড়ে দিয়েছি। কিন্তু যারা জাবির সিন্ডিকেটে র্যাগকে নিষিদ্ধ করেছে তাদের জন্য করুনা করতে ইচ্ছে হয়না । কারণ তারা এসব মানবিক আবেদনের ঊর্ধ্বে। তা না হলে কিছু সংখ্যক সিন্ডিকেট সদস্য কিভাবে হাজার হাজার শিক্ষার্থীদের ভালবাসার, আবেগের, গৌরবের র‌্যাগ উত্‍সবটিকে নিষিদ্ধ করে তা পালন না করার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন ?

যাক সে কথা । র‌্যাগে আমরা কি করি? এটা কি? আসলে একজন ছেলে কিংবা মেয়ের দীর্ঘ ৫-৬ বছরের শিক্ষাজীবনের রঙিন হাইলাইটস যেন র‌্যাগ উৎসব। চলে যাওয়াকে স্মরণীয় করতে ক্যাম্পাসকে কঠোর শ্রম দিয়ে সাজায়ে এসময় প্রতিজন র‌্যাগার । পুরো ব্যাচের থেকে সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় একজন রাজা ও রানী নির্বাচিত করা হয়। 
৩৮ এর জলনিবাস
নির্বাচনের জন্য চলে বিপুল আনন্দদায়ক প্রচারণা । একটি তাবু বানানো হয় অথবা ঘর । ৩৯ সম্ভবত বাতিঘর বানাবে জলসিঁড়ি এর সামনের পুকুরে । ৩৮ তম আবর্তনও বানিয়েছিল জলনিবাস । জলের উপর বাঁশের ঘর । ৩৭ তম আবর্তন করেছিল জলসিঁড়ির উপরে টঙঘর । ৩৬ তম আবর্তন সুপারিতলায় বাতিঘর করেছিল গাছের উপর ।
যাহোক মূল অনুষ্ঠানের জন্য কমপক্ষে তিন দিনব্যাপী উত্‍সব চলে। উত্‍সবে স্মৃতিচারণ, শোভাযাত্রা, রঙ দেয়া, ঘোড়ার গাড়িতে রাজ-রানীসহ ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ , সাংষ্কৃতিক সন্ধ্যা , কনসার্ট ও মহানৈশভোজ থাকে র‌্যাগের ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠানে। আমার পাঁচ বছরের ক্যাম্পাস জীবনে ৩৫, ৩৬,৩৭ ও ৩৮ তম আবর্তনের সমাপণী অনুষ্ঠান নিজের চোখে দেখেছি। কোন বিসৃঙ্খলা হয়নি।৩৯ এরও হবেনা। র‌্যাগ প্রাণের স্পন্দন । শিক্ষাজীবনের শেষের এই স্পন্দন বাকি জীবনে ক্যাম্পাসের সাথে সুদৃঢ় এক বন্ধুন তৈরি করে ।

কিন্তু ৩৯ এর সেই স্পন্দন হবে তো ?

হবে। ৩৯ এর র‌্যাগ উৎসব হবে, হতেই হবে


৩৯ এর কয়েক ভাইয়ের ফেসবুক পোস্ট থেকে দেখলাম, সিন্ডিকেট নিরাপত্তার অজুহাত ও সময়ক্ষেপণের কারণে নিষিদ্ধ করেছে এ ব্যাচের উত্‍সব।কিন্তু কিভাবে র্যাগের কারণে ক্যাম্পাস অনিরাপদ হয় তা বুঝে আসছেনা।আর যদি ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয় প্রশাসন তার দায় ছাত্রদের উপর কেন বর্তাবে ?কোন সূত্রে?

অতএব ঐ সিদ্ধান্ত যৌক্তিক কারণেই টিকবেনা । ক্যাম্পাসের চলমান পনের হাজার শিক্ষার্থী যেমন তা মানবেনা , সাবেক হয়ে জাবির সংষ্কৃতি নিয়ে গৌরববোধ করে লাখখানেক শিক্ষার্থীও তা মানবেনা। সুতরাং র‌্যাগ হবে। হওয়াতে হবে। ৩৯ এর র‌্যাগটি হতেই হবে। প্রতিবাদ করুন। যার যার জায়গা থেকে ৩৯ কে নিঃস্বার্থ সমর্থন দিন। আমি আমার ৪১ ব্যাচের অনেকের সাথে কথা বলেছি। তারা ৩৯ এর সাথে আছে। তদ্রুপ অন্য ব্যাচগুলোও না থাকার কারণ নেই। 
৩৯ তম আবর্তন র‌্যাগ উৎসব উপলক্ষ্যে খোলা ফেসবুক গ্রুপ
কারণ একটি ব্যাচকে জাবির ঐতিহ্যবাহী উত্‍সব করতে না দেয়ার প্রস্তাব যে সিন্ডিকেটে ওঠে সেটি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়কে কতটুকু ধারন করতে পেরেছে সেই প্রশ্ন উঠতে পারে। আমরা জাবি পরিবার। শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মকর্তা-কর্মচারী সকলে এই পরিবারের সদস্য। অন্য সব সদস্যের সব একস্ট্রা কারিকুলার একটিভিটি বেগবান রেখে সংখ্যাগরিষ্ঠের গণসংষ্কৃতিটাকেই কেন আঘাত করা হলো? কে দেবে এর জবাব?

৩৯ এর শিক্ষা সমাপনী উত্‍সব বন্ধ করার অযৌক্তিকতা

ধরে নিচ্ছি ৩৯ তম আবর্তন র‌্যাগ উত্‍সব প্রস্তুতিতে অতিরিক্ত সময় নিয়েছে । তো এখনো যে অনেক ৩৯ তম আবর্তনের স্নাতকোত্তরের ফলাফল দেয়নি সেই সময়টা কে ক্ষেপণ করেছে? টানা ২ মাসের বন্ধ দিয়েছে কারা ? তার আগে টানা এক বছর আন্দোলনে উত্তাল জাবি যে সেশনজটের যুগে পা দিলো তার কারণে কি বিশ্ববিদ্যালয় দিবস বা শিক্ষক সমিতি নির্বাচন বন্ধ হয়েছে? 
৩৮ এর রাজা নির্বাচনের রিকশার‌্যালি
তাহলে ছাত্র-ছাত্রীরা কি করেছে? তাদের নিজেদের রাজা নির্বাচনটা কেন মেনে নিচ্ছেননা? কেন জাকসুহারা ছেলেমেয়েগুলোকে অন্ততপক্ষে নিজেদের একজন রানী নির্বাচনের সুযোগটি কেড়ে নেয়া হলো? কেন একটু রিকশা র‌্যালির আনন্দে আপনারাও অংশ নেবেন না?

এখানে অন্য সকলের অধিকার ঠিকঠাক পাচ্ছে, রাজার হালে জীবনযাপন করছে , শুধু শিক্ষার্থীদের পান আনতে চুন খসলে বেত্রাঘাত । ৩৯ এর র্যাগ উত্‍সব বন্ধ করা তাই অযৌক্তিক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও একজন ট্যাক্স প্রদানকারী নাগরিক হিসেবে এই সিদ্ধান্তকে Anti-mass বলতে দ্বিধাও করছিনা। আশা করি অবিলম্বে এই সিদ্ধান্ত থেকে প্রশাসন সরে আসবে । সেটিই শুভ সিদ্ধান্ত হবে ।

সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তে ফেসবুকে ৩৯ এর কড়া প্রতিক্রিয়া

৩৯ তম আবর্তনের কয়েকজনের টাইমলাইন থেকে নেয়া বিক্ষুব্ধ স্ট্যাটাস নিচে দিলাম ৩৯ তম আবর্তনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখানোর জন্য ।
মাহিদুল ইসলাম মাহি
#Rag (শিক্ষা সমাপনি উৎসব) খুব খারাপ।
#Rag প্রোগ্রামে মানুষ হত্যা করা হয়।
#গান - বাজনা মজার মধ্যেও মারামারি হয়।
রিক্সা #Rally তেও মারামারি হয়।
#Rag অনুষ্ঠানে ক্যাম্পাস নোংরা হয়।
Rag অনুষ্ঠানে প্রশাসন থেকে #ডিনারের ব্যবস্থা করে সরকারি টাকা নষ্ট করা হয়।
#অদূর ভবিষ্যতে (৫০ ব্যাচের পর) #প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা Rag অনুষ্ঠান সম্পর্কে এমন ধারণাই পোষণ করবে।
#কেননা Rag অনুষ্ঠান অাজকাল সিন্ডিকেটে বাতিলও করা হয়।
#নিরাপত্তার অজুহাতে প্রশাসন সিন্ডিকেট সভা ডেকে ৩৯ ব্যাচের #Rag. উৎসবে বিধিনিষেধ অারোপ করলো।
৩৯ ব্যাচের র্যাগ না হলে অন্যান্য ব্যাচেরও হবেনা। 

৫০ ব্যাচের পরবর্তী ব্যাচ গুলো র্যাগ উৎসব নিয়ে উপরোক্ত ধারনাই পোষণ করবে।
#অবাক হই যখন দেখি সিন্ডিকেটে জাবির সাবেক ছাত্র-ছাত্রীরা ( শিক্ষক) থাকা স্বত্তেও rag উৎসব বাতিল করা হয়।
#সিন্ডিকেট সদস্যদের দোষ দিয়েও লাভ কি! এটা তো ডিসিপ্লিনারি বোর্ডের সিদ্ধান্ত। সিন্ডিকেট অনুমোদন দিছে। অাজ মনে হচ্ছে ডিসিপ্লিনারি বোর্ডে কোন জাবিয়ান নাই! সবাই প্রশাসনের...
#প্রশাসনের প্রতি শ্রদ্ধ্যা রেখেই বলছি... সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত বাতিল করুন... জাবির ঐতিহ্য #Rag উৎসব অায়োজনের অনুমতি দিন।

ওয়ালিউল্লাহ ওলি
ঊনচল্লিশ ব্যাচকে র‍্যাগ উদযাপন করতে না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট!
খুবই সুন্দর কথা। শিক্ষার্থীদের জন্য অত্যন্ত সুসংবাদ। আগামীতে মুক্তমঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানগুলোর উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করুন। মুছে যাক সাংস্কৃতিক রাজধানী খ্যাত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের চরিত্র। মুছে যাক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সেলিম আল দীন স্যারের নাম, বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্য, গৌরব এবং কৃষ্টি-কালচার।
খুব জানতে ইচ্ছে করছে- কোন স্যার বিষয়টি সিন্ডিকেটে তুলেছিলেন? তাঁকে ঊনচল্লিশের পক্ষ থেকে অভিনন্দন। ব্যাচের পক্ষ থেকে আপনাকে সম্মাননা দেয়ার দাবী জানাচ্ছি।

খালেদুন রাতুল


প্রশাসন, ভাড়ামী বন্ধ করুণ!!!
ঊনচল্লিস ব্যাচ সাবেক হয়ে গেছে, তাই শিক্ষা সমাপনী উৎসব “র‌্যাগ” বন্ধ । ও প্রশাসন, ছাত্রত্ব থাকা অবস্থায় র‌্যাগ উৎসব করেছে এমন কোন ব্যাচ দেখাইতে পারবেন?
নিরপত্তার অজুহাতে সিন্ডিকেট বসিয়ে র‌্যাগের উদযাপন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আমরা নাকি অনেক দেরী করে ফেলেছি। আচ্ছা, প্রতিবছর নবীনবরণ অনুষ্ঠানে নবাগতদের হাতে একাডেমিক ক্যালেন্ডার ধরিয়ে দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কোন শিক্ষক কি বুক ফুলিয়ে বলতে পারবেন যে, সেই একাডেমিক ক্যালেন্ডার বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এখনও কয়েকটি বিভাগ আছে যাদের মাস্টার্সের ফলাফল ই হয়নি। শিক্ষকরা দুই দুই বার ভিসি বিরোধী আন্দোলনে নেমেছেন। নিজেরদের স্বার্থে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করেছেন মাসের পর মাস। তাতে খেয়ে ফেলেছেন আমাদের জীবনের ১ টি মূল্যবান বছর। বলেছিলেন, অতিরিক্ত ক্লাশ পরীক্ষা নিয়ে পুষিয়ে দিবেন। সময়ের আবর্তনে সেই পুষিয়ে দেয়ার প্রতিশ্রতি আজ ‘জাদুঘরে’। ফিরিয়ে দিন আমাদের একটি বছর। আপনারা ১টি বছর ধ্বংস না করলে আমরা ১ বছর আগেই ‘র‌্যাগ’ শেষ করতাম। বন্ধ করুন যত্তসব ভাড়ামী।

ইয়াসির আরাফাত বর্ণ

এ জায়গাতেই যদি জাকসু থাকতো তাহলে কী প্রশাসন এতটা সাহস দেখাতে পারতো ? আমরা অনেক কিছুর জন্যই তো হাঁক ডাক দেই, জাকসুর জন্য কথা বলার সময়েই কিন্তু আমরা বোবা ।


Soyeb Ibn Ishaque Srijon

There should be a definite reason and a little limit even to exhibit such sort of absurdity, let alone stupidity. I mean surely they do not have any concrete and logical explanation to make a festive program like Rag just null and void simply out of nowhere. It's a shame for them you know guys! Giving away such lame excuses to hold up a whole batch and embarrass the fraternity.

নাজমুল হাসান

৩৯ কে র‍্যাগ করতে দেয়া হবে না, এটা কি আমাদের সংস্কৃতির সাথে যায়??? প্রশাসনের মাথায় কি গন্ডগোল হইসে?? নিজেদের কাজ একটাও ঠিকঠাক করে না, সারাদিন করে বালের পলিটিক্স, ঠিক মত ক্লাস নেয় না,সপ্তাহে ২/৩ দিনের বেশি বিভাগে আসে না, আসলেও ২ ঘন্টাও থাকে না,এগুলো দেখবে কে??সিন্ডিকেট কি এগুলো বন্ধ করতে পারে না?? নিজেদের দায়িত্ব পালন না করে, শুধু পলিটিক্স করার জন্যই কি তাদের সরকার নিয়োগ দিসে?? আহা গত কয়েকদিন ধরে কি তেলবাজি করছে, এগুলো যাস্ট ছেছরামী ছাড়া কিছুই নয়!! মানুষের বুদ্ধি শুদ্ধি সব লোপ পেলেই এমন ননসেন্সের মত সিদ্ধান্ত নেয়।

রবিউল ইসলাম

সংস্কৃতির রাজধানীখ্যাত আমাদের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়.........
র্যাগ উৎসব এই সংস্কৃতির একটি ঐতিহ্য।ঐতিহ্য না থাকলে সংস্কৃতি দিয়ে আর কি হবে?
প্রশাসনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বলতে চাই,এই র্যাগ উৎসব আমার,আপনার,আমাদের,জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের।দয়া করে এই উৎসব থেকে,এই ঐতিহ্য থেকে আমাদের বঞ্চিত করবেননা।
 
আমরা অন্যান্য আবর্তনের শিক্ষার্থীরা এই পরিস্থিতিতে কি করবো ?

আমরা ৪১ তম আবর্তনের শিক্ষার্থীরা গণরুমে যে জীবন কাটিয়েছি তাকে মিষ্টি-মধুর ও বাস্তবজ্ঞানসম্পন্ন করেছিল এই ৪১ এর ভায়েরা । তাদের আন্তরিকতা-মেধা-প্রতিভা আমাদের মুগ্ধ করেছিল । ক্যাম্পাসে চলার নয়, সারাটা জীবনের কিছু বিচিত্র অভিজ্ঞতা তাদের কাছে পেয়েছি আমরা । তাদের এই খারাপ সময়ে আমরা কি তবে মজা দেখবো?

আমি ছোট। ৪১ তম আবর্তনের এক নগন্য শিক্ষার্থী । আমার ব্যাচও ৩৯ না । তবে আমি স্পষ্টত বুঝতে পারছি, যে এই সিদ্ধান্তটি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অমঙ্গলজনক। এর প্রতিবাদ হওয়া উচিত । একটি মানববন্ধন করা অথবা স্মারকলিপি দেয়া যায় উপাচার্য বরাবর। তবে সিন্ডিকেট সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিটি কার্যকর কত দ্রুত হবে সেটি দাবি উপস্থাপনের তীব্রতার উপর নির্ভর করে। সাংবাদিকতা করার কারণে এই বোধটুকু হয়েছে যে, সিন্ডিকেটে পাশ করা সিদ্ধান্ত বাতিলের জন্য সসংগঠিত এবং ঐক্যবদ্ধ থাকা প্রয়োজন । 
৩৮ তম আবর্তনের শিক্ষাসমাপনী উৎসবের একটি মুহূর্ত
আমরা যারা ৪০ থেকে ৪৫ তম আবর্তন এখনো ক্যাম্পাসের হলে থাকার অধিকারী তারা ন্যায্য আন্দোলনে ৩৯ তম আবর্তনের পাশে থাকতেও যেন কুন্ঠাবোধ না করি। কারণ আজ যদি ৩৯ এর র‌্যাগ উৎসব বন্ধ করতে সফল হয় প্রশাসন কাল যে আপনারটা আমারটা করবেনা তার গ্যারান্টি আছে ?
জার্মান সেই কবি Martin Niemöller (১৮৯২–১৯৮৪) এর ভাষায় , “ প্রথমে ওরা (নাৎসি পার্টি) সোস্যালিস্টদের জন্য এসেছিল, আমি চুপ করে ছিলাম কারণ, আমি সোস্যালিস্ট ছিলাম না ।... শেষে যখন আমার জন্য আসে কেউ কথা বলার ছিলনা । ” পড়েছেন কবিতাটি?

আজ আমাদের প্রশাসন ৩৯ এর র‌্যাগ উৎসবকে “না” করেছে। আপনি চুপ কারণ আপনি ৪০/৪১/৪২/৪৩/৪৪/৪৫ বা সাবেক কোন ব্যাচের কেউ । কিন্তু ক্যাম্পাসের একটি ব্যাচের উৎসব করা বন্ধ করে যদি প্রশাসন সফল হয় তবে অন্যদেরটারও একই অবস্থা হতে পারে । তারপর সাবেক শিক্ষার্থীদের সাধের পূনর্মিলনীরও বারোটা বাজতে পারে । সুতরাং নিজেকে ৩৯ উপর নিষেধাজ্ঞার বাইরে ভাববেননা।

জাবির সেই রকম দৃঢ়বন্ধনের সম্পর্কের উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা জাহাঙ্গীরনগরীয় সংষ্কৃতির বিশুদ্ধ সন্তানদের একটি এই ৩৯ তম আবর্তন। 
৩৯ এর ওয়ালিউল্লাহ ওলির টাইমলাইন থেকে।
এই ব্যাচ থেকে যদি জাবির অবিচ্ছেদ্য সংষ্কৃতিকে নিষিদ্ধ করা যায় তবে অন্য ব্যাচগুলো মোটেই ধোপে টিকবেনা । কারণ ৩৯ এর চেয়ে একতাবদ্ধ ব্যাচ ক্যাম্পাসে এখন আর কোনটা আছে? যারা আছে তাদের একাংশ আত্মকেন্দ্রিক এবং যারা আসবে তারা সবাই ঘরকুনো। অতএব ৩৯ এর র‌্যাগ উত্‍সবটি বন্ধ হলে এখানেই কবর রচিত হতে পারে বাংলাদেশের সমবয়সী দেশের একমাত্র আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়টির অদ্বিতীয় সাংষ্কৃতিক বৈচিত্রতা। সেটি আমরা চাইনা। হৃদয় থেকে বলি, ৩৯ এর র‌্যাগ উৎসব করার পূর্ণ অধিকার ফিরিয়ে দিন।
                                                 

শেষকথা


আমরা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের গর্বিত সন্তান । এই বিশ্ববিদ্যালয় একাডেমিক শ্রেষ্ঠত্ত্বের পাশাপাশি সাংষ্কৃতিক কর্মকান্ডে বাংলাদেশে অদ্বিতীয় । সেই অদ্বিতীয় জাবির দেহকে ক্ষতবিক্ষত না করার জন্য আমরা অনুরোধ জানাই প্রশাসনের প্রতি । 

যে ছেলেটি ৫-৭ বছর প্রান্তিক থেকে শহীদ মিনার হয়ে প্রধানফটক চষে বেড়িয়েছে ছন্দহীন ভাললাগায়: যে মেয়েটি চেীরঙ্গী থেকে মু্ন্নী চত্ত্বরকে ধারণ করেছে হৃদয়ের পরতে : যারা মুক্তমঞ্চের লাল বেদিতে বসে জীবনকে দিয়েছে কিছু চিরস্মরণীয় মুহূর্ত; যে শিক্ষার্থী কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে চাঁদ দেখে স্বপ্ন গেঁথেছে; হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে পড়াশোনা করেও যে ছাত্র-ছাত্রীরা দেশের কল্যাণের নিমিত্তে একাডেমিক ফলাফল করেছে অনুগ্রহ করে তাদের  আবেগ, তাদের ভালবাসা, তাদের ক্যাম্পাসকাতরতা এবং তাদের পছন্দের প্রতি অবিচার করবেন না ।

আর কোন দিন যে ছেলেটি হলে তার বেডের অধিকার দাবি করবেনা, যে মেয়েটিও আর কখনো নিজের আসনকে দ্বিতীয় ঘর ভাববেনা তাদের আনুষ্ঠানিক বিদায়গাঁথাকে জাহাঙ্গীরনগর থেকে বিলুপ্ত করবেন না । অনাকাঙ্খিত সিন্ডিকেট সিদ্ধান্তে জাহাঙ্গীরনগরের হৃৎপিন্ড আজ ক্ষতবিক্ষত । ৩৯ এর প্রতিটি শিক্ষার্থীর সাথে সেখান থেকে ঝরেই যাচ্ছে বঞ্চনা-ব্যথা-কষ্টের নীল বর্ণের রক্ত । সেই রক্ত স্পষ্ট কেবল তাদের চোখে যারা ট্রান্সপোর্টের এক কাপ চায়ে জীবনের মানে খুঁজে পায় । যারা পুরাতন কলা ভবন থেকে নতুন কলা, সমাজবিজ্ঞান ভবন থেকে বিজ্ঞানবিষয়ক অনুষদগুলোর লাল ইটের গাঁথুনীর ভাষা পড়তে পারে; যারা ছাতি-জারুল-কৃষ্ণচূড়া-অলকানন্দার সৌন্দর্য দেখে দেখে জীবনের কঠিন পথ পাড়ি দেয়ার দীক্ষা নিয়েছে । তাদের শেষবেলার র‌্যাগ উৎসবটি বন্ধের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতেই হবে । অন্যথায় জাবি তার সন্তানদের বিক্ষুব্ধতাকে নিরবে সহ্য করবেনা । জাহাঙ্গীরনগরের প্রাণ এই আবর্তনগুলো । প্রাণের ব্যথায় কেবল সম্মিলিত প্রাণই ছটফট করতে পারে ।

৩৯ তম আবর্তনের র‌্যাগ উৎসবটি হতে হবে । এই মুহূর্তে ৩৯ ই  আমাদের জাবি । জাহাঙ্গীরনগর । তাঁকে উজ্জ্বীবিত রাখুন ।
পাঠ অনুভূতি