সর্বশেষ

প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থা ও সৃজনশীলতা ধ্বংসের নির্মমতা

বাংলাদেশের বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় অষ্টম শ্রেণীতে এসে আরো একটি পাবলিক পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। এই পরীক্ষার সময় একটি শিশু বয়:সন্ধিক্ষণের কাছাকাছি বা সন্ধিক্ষণেই থাকে। এসময় প্রতিটি শিশু থাকে নিজস্ব জগৎ নিয়ে। অভিভাবককে তাই শিশুকে দিতে হয় প্রচুর সময়। মানুষ ও জীবন সম্পর্কে সে হয়ে ওঠে কেীতূহলী। তার সংবেদনশীল হৃদয়কে যথাসম্ভব আনন্দ ও চাপহীন সচেতনতা দিয়ে গড়ে তুলতে হয়। অথচ এই সময়ে সে কিভাবে পরীক্ষায় পাশ করতে হবে সেই চিন্তায় থাকে। কোচিং, প্রাইভেট এরও কদর বেড়ে যায়্ । ফলে শিক্ষা ও জানার চেয়ে সনদপত্রে জিপিএর পরিমাণ হয়ে যায় মূখ্য। এটি সৃজনশীলতা হতে পারেনা, এটি সৃজনঅশীলতা-অপ্রিয় হলেও সত্য।
এখানে দ্বিতীয় ধাপে শিশুদের মধ্যে বৈষম্য ও অসমতার ধারনা জন্ম নেয়। একটি শিশু তার প্রাপ্ত জিপিএ দ্বারা মূল্যায়িত হয়। কম জিপিএধারীর বাবা মা মিষ্টি কিনে আনেনা, তবে বেশি জিপিএ প্রাপ্ত শিশুর বাবা মা আনে। ফলে যে শিশুটি কম পেল তার ধারণা জন্মে সে কম মেধাবী এবং তার দ্বারা এর চেয়ে ভালো কিছু অসম্ভব। অথচ প্রকৃতপক্ষে প্রতিটি শিশুই সমান মেধাবী এবং সঠিক পরিচর্যায় প্রতিটি শিশুই হতে পারে সমান যোগ্য ও সৃষ্টিশীল।
**************************************
কথিত জেএসসির সনদপত্রে প্রাপ্ত নম্বরটি আমাদের দেশের সিস্টেমে নির্লজ্জের মত বলে দেয় একটি শিশুর মেধা, দক্ষতা এবং জ্ঞান ধারণ ক্ষমতা। এর উপর ভিত্তি করে অভিভাবক ও শিক্ষকরো একটি শিশুকে বিজ্ঞান, মানবিক অথবা ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে পড়ার সুযোগ দেন যেটা একটি সরাসরি অবিচার ঐ শিশুর উপর। দেখা যায় একটি শিশু আঁকছে ভালো, গল্প বলতে পারে ভাল, দারুনভাবে লিখতে পারে যেকোন রচনা-ভালো জিপিএ তাকে নিয়ে যায় বিজ্ঞান অথবা ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে। আরেকটি শিশুর যন্ত্রপাতি নিয়ে নাড়াচাড়া করতে, খেলনা মেরামত করতে ভালো লাগে-তারপরেও কম জিপিএ প্রাপ্তি তাকে নিয়ে যাচ্ছে মানবিক বিভাগে। এটা মেনে নেয়া যায়না। আমাদের দেশের নীতিনির্ধারকেরা এখন পর্যন্ত এমন একটি শিক্ষাপদ্ধতি তৈরি করতে পারেননি যেখানে মানবিক, ব্যবসায় শিক্ষা ও বিজ্ঞানকে সমান দৃষ্টিতে দেখতে পারবে একটি শিশু, তার অভিভাবক, শিক্ষক এবং পারিপার্শ্ব। এক্ষেত্রে দেশের গণমাধ্যমও দায় এড়াতে পারেনা।
এর ফলে যেটা দাঁড়িয়েছে সেটা খুবই ভয়ের কথা এবং এই ভয়ঙ্কর কথাটি দানবের মত বড় হয়ে উঠছে দিনদিন। একটি শিশু নবম শ্রেণী থেকে এই সমাজে হয় বিজ্ঞানের, না হয় ব্যবসায় শিক্ষার অথবা মানবিক বিভাগের স্থায়ি বাসিন্দা হয়ে যাচ্ছে। লজ্জার কথা আমাদের দেশের পদ্ধতি বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীকে বেশি মেধাবী, ব্যবসায় শিক্ষাকে তারচেয়ে কম মেধাবী এবং মানবিককে একেবারে খাতায় না গুনেই এগিয়ে যাচ্ছে এবং বছরের পর বছর ধরে আমরা তা দেখে যাচ্ছি। অথচ প্রকৃতপক্ষে এ্ই তিন বিভাগের শিক্ষার্থীই সমান মেধাবী এবং ক্ষেত্রবিশেষ পরিশ্রমের ক্ষেত্রে একে অপরের চেয়ে এগিয়ে, সেটা কখনোই সামগ্রিক ফল নয়। কিন্তু আমাদের ঘূণধরা পদ্ধতি বলে ৯০ % ক্ষেত্রে নবম শ্রেণীর জিপিএ ভালোধারীরা বিজ্ঞান বিভাগ নেয়। কিন্তু কেন ? দেশের শিক্ষাপদ্ধতি কেন মানবিককে সমানগুরুত্ত্ব দিয়ে প্রচার করতে পারছেনা ? কেন দেশের নীতিনির্ধারকেরা তিনটি বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্যই সমান কর্মসংস্থাপনের ব্যবস্থা করতে পারছেননা বা করছেননা ?
আর উন্মুক্ত বা কারিগরি ব্যবস্থায় যারা পড়াশোনা করছে তাদের যেীক্তিক মূল্যায়নের ক্ষেত্রে আমাদের কার্পণ্যকে এই সমাজ এই রাষ্ট্র কতটুকু বিবেচনায় রাখছে তা ভেবে দেখার সময় এসেছে। কেন আমরা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বছরের পর বছর ফেলে রাখছি ? কেন তারা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পারছেনা? দোষটি কি তাদের মেধার না আমাদের পদ্ধতির?

৩ অক্টোবর , ২০১৪ ।
পাঠ অনুভূতি

Post a Comment

0 Comments