‘ও
একটা স্টুপিড! নিজেকে নিজে সুপারস্টার বলে। এটা তো সাধারণ মানুষ বলবে।
নিজে নিজে স্বীকৃতি দেওয়ার কিছু নেই। বাংলাদেশে বহু শিল্পীর সুপারস্টার
বলার মত যোগ্যতা ছিল, কিন্তু তারাও কোনোদিন এ কথা বলেনি।’
-শাকিব খান প্রসঙ্গে নির্মাতা আজিজুর রহমান
আমার বক্তব্য:
আমীর খান ও শাহরুখরা যখন নিজেরা নিজেদের সুপারস্টার , বাদশা ফাদশা বলে তখন আজিজুর সাহেব কি এই কথাগুলো বলেন? তখন খুব পূজা
করেন কেন
আজিজুররা? তখন কেন মিডিয়া খুব রসালো করে উপস্থাপন করে ? নিজের দেশের রত্নকে অপদস্থ
করে পৈচাশিক সুখ পাওয়া বাজে প্রবণতা কবে যাবে আপনাদের?
যখন ভারতীয় বডিগার্ড ছবিতে সালমান খান গাঁজাখুরী মারপিট করে সেটি দেখে খুব হাতে তালি দেন, প্রশংসায় পঞ্চমুখ হন এদেশের শিকড়হীন সমালোচকরা। অথচ শাকিব খানরা যখন এমন করে মারামারি করে তখন ট্রল করেন। সমস্যাটা যে রক্তে এটা বুঝতে পারেন? রক্তে মানসিক দাসত্ত্ব বাসা বাঁধছে বলে নিজের পণ্য ও সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধাবোধ হারিয়ে গেছে।
যখন ভারতীয় বডিগার্ড ছবিতে সালমান খান গাঁজাখুরী মারপিট করে সেটি দেখে খুব হাতে তালি দেন, প্রশংসায় পঞ্চমুখ হন এদেশের শিকড়হীন সমালোচকরা। অথচ শাকিব খানরা যখন এমন করে মারামারি করে তখন ট্রল করেন। সমস্যাটা যে রক্তে এটা বুঝতে পারেন? রক্তে মানসিক দাসত্ত্ব বাসা বাঁধছে বলে নিজের পণ্য ও সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধাবোধ হারিয়ে গেছে।
দেখবেন যারা
বাংলাদেশের চলচ্চিত্র, শাকিব খান, বাংলাদেশের সংগীতের অহেতুক সমালোচনা করে তারা জীবনেও
বাংলা চলচ্চিত্রের ধার ধারেনা। তারা বিদেশী পণ্যের প্রতি লালায়িত। গায়ে মাখে বিদেশী
বডি স্প্রে যদিও বাজারে দেশের কুল রয়েছে, খাবে ফান্টা আর মিরিন্ডা, পেপসি আর কোক যদিও
দেশী মোজো, ক্লেমন, স্পিড আছে। দেশের পোশাক খাত সমৃ্দ্ধ হওয়ার পরেও এরা ভারতীয় আর
চীনা পোশাক কিনতে উজবুকের মত বসে থাকে। দেশের শিল্পী লাকি আখন্দ অর্থের অভাবে মরে যায়,
আর এই পরগাছারা দলবেঁধে বিপুল পরিমাণ টাকা ঢেলে নাসিরুদ্দিন, শ্রেয়া ঘোষালদের কোটিপতি
বানায়। এদের থেকে দেশকে বাঁচাতে স্বাধীনতার মহান স্থপতি বাংলাদেশে বিদেশী সংস্কৃতি
বিশেষ করে চলচ্চিত্র আমদানী নিষিদ্ধ করেছিলেন। সেটিকে বলবৎ রাখতে হবে। যারা বঙ্গবন্ধুর
এই আত্মরক্ষামূলক নীতির বাইরে যাবে ওরা দেশদ্রোহী। কারণ সাংস্কৃতিক আগ্রাসন আসে চলচ্চিত্র
ও সংগীতের হাত ধরে। একটি জাতি সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের শিকার হলে অচিরেই সে জাতি অর্থনৈতিক
আগ্রাসনের শিকার হয়। সুতরাং সাবধান। শাকিব খান বিরোধীতা যেন বাংলাদেশ বিরোধীতায় না
চলে যায় সে দিকে খেয়াল রাখবেন।
ফিরে যাই শাকিব খানে। অভিনয়ে
শাহরুখ ও আমিররা অনেকের কাছেই বাচ্চা। সুপারস্টার হতে হলে অভিনয়ের
পাশাপাশি চ্যারিটি, ইন্ডাস্ট্রি , ব্যবসা, জনপ্রিয়তা সব লাগে। সব মিলিয়ে
শাকিব খান আমির শাহরুখদের চেয়ে অনেক জায়গায় এগিয়েও আছে। ওরা ছাড়া বলিউড
চলবে। শাকিব খান ছাড়া ঢাকার চলচ্চিত্র চলা কঠিন। আমি বাস্তবতা কই।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট ভেবে কই। মাথায় বাংলাদেশ থাকে এই কওনের সময়,
বন্ধুবর। চাঁনখারপুল থেকে যারা লিভারপুল ভাল বলে তারাাই বাংলাদেশের
উন্নয়নের সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা। এরা দৈহিকভাবে বাস করে বাংলাদেশে, আত্মা
পড়ে থাকে লিভারপুলের কোন হোটেলের মেঝে পরিস্কার করে। শাকিব খান হিন্দু না ,
তবুও তার ভক্তরা তাকে দেবতার মতই ভালবাসে।
আমার
কাছে মনে হয়, সে মেগা সুপারস্টার। একাই বাংলাদেশের ইন্ডাস্ট্রি টেনে নিয়ে
গেছে। যখন সুশীল আমরা ব্যস্ত ছিলাম ভারতীয় ও ইংরেজি ছবির প্রশংসায়
লালাক্ষরণ করতে , তখন ওই শাকিব খানই ব্যবসা সফল ছবি উপহার দিয়েছে। কার কাছে
ব্যবসা সফল?এদেশের অনুৎপাদনশীল শ্রেনীর কাছে নয়, যারা দেশের পণ্য ও
সংস্কৃতি ত্যাগ করে স্মার্টনেস দেখায়। সে ব্যবসা সফল শ্রমিকের কাছে,
নিম্নবিত্তের কাছে। যদি পরিচালকগুলো ভাল হতো শাকিব খান কি পারে তা সে নয়ন
ভরা জল ইত্যাদিতে দেখিয়েছে। তুলনায় শাকিব খান আমির ও শাহরুখদের চেয়ে বেশি
কিছু। একটা দেশের একটা ইন্ডাস্ট্রিকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করেছে। তার
প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। এই সব ফারুকীগিরি দিয়ে হল চলেনা। ও দিয়ে পত্রিকায়
নিউজ হয়। গরীব ফারুকী টারুকী খায়না। তার ভালবাসা , ভাল লাগা শাকিব খানই।
নিজে নিজেই সুপারস্টার বলবে কেন? সেটা বড়ই হাস্যকর...! why brother? সেটা
তার নিজের আত্মবিশ্বাস। তুমি যদি বলো, ভক্ত হিসেবে আমি এটি চাইনা তবে একটা
কথা থাকে। কিন্তু যদি ভক্ত না হও তবে তোমার আপত্তি কেন? আমি বহু হলিউড
তারকার সাক্ষাৎকার দেখেছি, তারা আত্মগর্বে এভাবে বলেছে। আমাদের রাজ্জাকও
নিজের সাক্ষাৎকারে নিজেকে নায়করাজ বলেছেন।
যারা
শাকিবকে ছাড়িয়ে যাবে তাদের নিয়ে বেশ এক্সপেরিমেন্ট চালাচ্ছে , কত গেলে আর
আসলো। সেই বাপ্পী, আরেফিন শুভ, সম্রাট কম না। আমি চাই আরো নায়ক আসুক।
মনেপ্রাণে চাই। কিন্তু যে দেশের তরুণরা শাকিবকে উপহাস করতে পেরে নিজেকে
স্মার্ট ভাবে এবং বিদেশী চলচ্চিত্রকে ভাবে মানদণ্ড তারা এদেশের জন্য কি
করবে তা বোঝা কষ্টকর। এই শাকিব বিরোধীরা যখন এদেশে ভারতীয় চলচ্চিত্র এনে
চলচ্চিত্রে শেষ পেরেক মারার দ্বাপরপ্রান্তে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল তখন কই
ছিল? ঐ ব্যাটা শাকিবই মাঠে নামছিল তখন। সুশীলরা অঙ্গুলী চুষিয়া তালিয়া
দিতেছিল।
চলচ্চিত্র
উন্নয়নের বিভিন্ন ধারা, আর একটি চলচ্চিত্রকে অন্য দেশের চলচ্চিত্রর সাথে
তুলনা করা ভিন্ন কথা। অন্য দেশ মানদণ্ড হলে ইরানে আলাদা ধারা তৈরি হতোনা,
কোরীয়ায় হতোনা, স্পেনে বা ব্রাজিলে হতোনা। এমন কি তামিলরাও আলাদা হতোনা।
আমাদের দেশের ক্রিটিকদের কাছে চলচ্চিত্র
মানে বলিউড, কলকাতা আর হলিউড।
বাংলাদেশে যে ১৯৭১ সালের পর থেকে আলাদা ধারায় চলচ্চিত্র তৈরি হয়েছে তা এরা
ভুলে গেছে। ফলে আমাদের অথর্ব প্রজন্ম তৈরি হয়েছে যারা নিজেদের চলচ্চিত্রকে
নেতিবাচক ভাবে। এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব আছে। একসময় হীনমন্যতা ঘিরে ধরবে।
অতএব অন্ধ
শাকিব খান বিরোধীতা বাদ দিন।
দিন শেষে ঐ একটি ছেলেই আছে যে এদেশের গরীব-দুঃখী, কৃষক-শ্রমিক,
নিম্নবিত্ত মা আর বোনদের বিনোদন দেয়। চাচ্চু, কোটি টাকার কাবিন ইত্যাদি সিনেমা মানদণ্ডে
ভারতের সিনেমার চেয়েও কয়েক শ গুণ ভাল। শাকিব খানকে বিচার করবেন অভিনয় দিয়ে। তার সিনেমার
কাহিনীর দায় তার নয়। এদেশের গর্দভ বাংলাদেশবিরোধী সমালোচকরা এই কাজটাই করে। শাকিব খানের
চলচ্চিত্রের কাহিনী এই। আরে ব্যাটা, কাহিনী যা হোক, সেই কাহিনীটার শাকিব খানের চরিত্রটা
ফুটিয়ে তুলতে পেরেছে কি না সেটি দেখ। সেটি না দেখে পরিচালক, চিত্রনাট্যকর আর সম্পাদকের
দায় কেন শাকিন খানের কাঁধে দেয়া হয়? ফাইজলামি নাকি?
যে মধ্যবিত্ত
ভণ্ড আর উচ্চবিত্ত ভোগবাদী অসুস্থরা শাকিব খানের সমালোচনা করে তারাই দেখবেন বাংলাদেশের
চলচ্চিত্র ও সংগীত নিয়ে হাস্যরস করে, নির্লজ্জেম মত উপহাস করে। অথচ আমি এদের যতগুলোকে
দেখেছি, কোনটা কোন বাংলা চলচ্চিত্র দেখেনি। যে না দেখে সে কেন সমালোচনা করবে? আর এদেশের
বাজেদের আসলে দেশের কোন কিছুই ভাল লাগেনা। দেশের প্রতি ন্যূনতম দেশপ্রেম নাই। দেশের
মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতা নেই। যে গরীবের টাকায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ফাও ফাও পড়ছে
ছাত্র-ছাত্রীরা তারা গরীবের প্রিয় নায়ক শাকিব খানকে ন্যূনতম সম্মান করেনা। আজ পর্যন্ত
শাকিব খানের কোন চলচ্চিত্র কেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখানো হয়না এটাই আমার প্রশ্ন।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি পশ্চিমা ও ভারতীয় নায়ক-নায়িকাদের নোংরামী, দেহ, নাভি, পেট,
বুক দেখাতে পারে, তবে দেশের নায়ক-নায়িকাদের তা কেন নয়? কেন এই শিকড়হীন আচরণ? কেন এই
জাতীয়তাবোধহীনতা?
আমি-
মঈনুল রাকীব
স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী, সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ।



