সর্বশেষ

পর্ণগ্রাফি: নৈতিকতা, নারী ও তরুণ প্রজন্মের জন্য হুমকি


পর্ণগ্রাফি মানুষের সভ্যতার সবচেয়ে বাজে উদ্ভাবনের একটি । পর্ণগ্রাফি নৈতিকতা বিধ্বংসী। পর্ণগ্রাফি সেই নিকৃষ্ট চিত্র যা মানুষের গোপনীয় জীবনকে সহজলভ্য করে দেয়। এর ফলে একদিকে মানুষের জৈবিক জীবনের প্রতি আকর্ষণ নষ্ট হয় , অন্যদিকে মগজে বাসা বাঁধে নানা বিকৃতি চিন্তা ভাবনা। সে কারণে পর্ণগ্রাফি বন্ধ করা উচিত। পর্ণগ্রাফি নারীর জন্য অবমাননাকর। কারণ পুরুষতান্ত্রিক এই পুঁজিবাদী সমাজে নারীর শরীরকে পুঁজি করা হয়েছে পর্ণগ্রাফিতে। পর্ণগ্রাফির মাধ্যমে প্রতিনিয়ত নারী ও পুরুষকে অপমান করছে ভোগবাদে বিশ্বাসী পশ্চিমা নোংরা  সমাজ। বাংলাদেশকে তাই পর্ণগ্রাফির ভয়াল ছোবল থেকে রক্ষা করতে হবে। (ঐশীর ফাঁসি নিয়ে কি বলছে সাধারণ মানুষ?)

পর্ণগ্রাফি সাংষ্কৃতিক আগ্রাসনের সবচেয়ে নগ্ন ও ভয়াবহ একটি রূপ। পর্ণগ্রাফি সাংস্কৃতিক আগ্রাসন এবং এটি বাংলাদেশি বাঙালের সংস্কৃতি বিরোধী। এই সাংস্কৃতিক আগ্রাসন নিয়ে কিছু কথা বলবো আজ।

(মিডিয়ায় না আসা এ এক অবর্ণনীয় সেন্টমার্টিন্স দ্বীপ! সময় থাকলে এখানে ক্লিক করে দেখুন কয়েক মিনিটে)
পর্ণগ্রাফির মত নিকৃষ্ট জিনিসের পক্ষে যারা নির্লজ্জের মত কথা বলে তারা ধর্ষণের বিরুদ্ধে যে অবস্থান নেয় তা লোক দেখানো। প্রত্যেকটি পর্ণপন্থী একেকটি সুপ্ত ধর্ষক। পশ্চিমা পুঁজিবাদের সবচেয়ে নোংরা ও অসভ্য উদ্ভাবন পর্ণগ্রাফি। নারীকে পশুর চেয়ে জঘন্য করে অসুস্থ পর্ণখোর ভোগবাদী মানসিক ধর্ষকদের জন্য উপস্থাপন করা হয় পর্ণগ্রাফিতে। Gerbner এর Cultivation তত্বানুসারের পর্ণে আসক্ত যে কেউ পৃথিবীর সব মেয়েকে ভোগ্য ভাবতে বাধ্য। সাইকোপ্যাথিক ফ্রয়েডকে পূজা করা এই পশ্চিমা আধুনিকতায় এমন বাজে জিনিসকে আবার আদর করে ডাকা হয় Porn Industry। যেসব অসুস্থ লোক পর্ণ সাইট চালু রাখার জন্য দাবি করেছিল এবং বন্ধ হবে শুনে ব্যক্তিস্বাধীনতা যায় যায় করছিল এরা কি জানে যে চিকিত্‍সা শাস্ত্রেও পর্ণগ্রাফিকে মানসিক ও শারিরীক অবনতির কারণ হিসেবে অধ্যয়ন করা হয়? (সেন্টমার্টিন্সে উড়ন্ত গাঙচিলের মুখে চিপস ছুঁড়ে দিয়ে খাওয়াচ্ছে ভ্রমণকারীরা!) নিওলিবারেলিজমের অজুহাতে পর্ণ চালু রাখতে চাওয়া প্রত্যেকটি ব্যক্তি অন্তরালে পর্ণগ্রাফির মতই ভয়ঙ্কর। এদের সর্বগ্রাসী চোখ ও কলুষিত কল্পনা থেকে কোন নারী-পুরুষই নিরাপদ নয়। শুধু সময় ও সুযোগের অভাবে এরা ধর্ষক সাফাত-নাঈমের মত ঝাঁপিয়ে পড়ছেনা।


খোদ পুঁজিবাদী ব্রিটেনের বিখ্যাত মেইল অনলাইন, বিবিসি পর্যন্ত পর্ণগ্রাফির ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করেছে। পৃথিবীর অধিকাংশ স্বাস্থ্য ম্যাগাজিন ও জার্নাল পর্ণগ্রাফিকে যৌন জীবনের জন্য না শুধু সমাজের জন্যও হুমকি হিসেবে লিখেছে। পর্ণ আসক্তি ধীরে ধীরে মানুষের স্বাভাবিক চিন্তাকে নষ্ট করে দেয়। তখন সে চূড়ান্ত পশু হয়ে ওঠে। যে কোন নারী হয়ে ওঠে তার পর্ণ দেখা নোংরা চোখের খাদ্য। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে হলে থাকি। এখানে যে সকল ছেলে পর্ণগ্রাফি দেখে নিয়মিত তাদের নিজস্ব স্বীকারক্তি এটি যে, পর্ণ তাদের মানসিক শক্তিকে নষ্ট করে দিচ্ছে। একজন বড় ভাই যিনি এক সময় পর্ণগ্রাফিতে আসক্ত ছিলেন তিনি তো ভয়াবহ কথা বলেছিলেন। তিনি বলেন, তিনি এতটাই পর্ণে আসক্ত ছিলেন যে এক সময় তিনি রাস্তায় বের হলে নারীদের নগ্ন দেখতেন। এসব ভয়াবহ ব্যাপার। এবং যদিও অনুমান নির্ভর একটা দাবি আমার এটি তবু বলবো, যারা ধর্ষণের সঙ্গে জড়িত তাদের উপর গবেষণা চালালে তাদের পর্ণ ভিডিও আসক্তি থাকার প্রমাণ পাওয়া যেতে পারে।
আবার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় ফিরে আসি। আমি ইন্টারমিডিয়েট পেড়েছি ঢাকা কলেজে। এটি শুধু বালকদের কলেজ। তখনও দেখেছি যারা পর্ণগ্রাফিতে আসক্ত হয়েছে তারা মাদকেও আসক্ত হয়েছে। পর্ণগ্রাফি যেীনতাকে  কৃত্রিমভাবে উস্কে দেয়। যে কোন কৃত্রিমতাই খারাপ। এর ফলে দেখা যায়, এক সময় মানুষ জৈবিক চিন্তাও করতে পারেনা। আমার যে কয়েকজন বন্ধু ডাক্তার তাদের স্পষ্ট কথা, যারা পর্ণগ্রাফিতে আসক্ত হচ্ছে এরা সাইকোলজিক্যালি অসুস্থ হয়ে যাবে। এবং বৈবাহিক জীবনে অসুখী হবে। কারণ বিয়ের পর পর্ণগ্রাফিতে দেখা ঐ প্লাস্টিক সার্জারি করা পুঁজিবাদী পুতুলকে সে বাস্তবে তার স্ত্রী বা স্বামীর মধ্যে পেতে চাইবে। তখন দেখা দেবে ঝামেলা। ভার্চুয়াল বাজে জিনিস আর বাস্তবতার মধ্যে আকাশ পাতাল পার্থক্য দেখে সে বিবাহিত জীবনের পবিত্র সম্পর্কটার প্রতি আকর্ষণ হারাতে পারে। (ইভটিজিং চান ? ৫ মিনিট সময় নিয়ে এই ভিডিওটি দেখবেন) আমার ডাক্তার বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলে এটাও জেনেছি যে, অতিরিক্ত পর্ণগ্রাফি দেখার ফলে চোখ ও মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তাই কোনক্রমেই পর্ণগ্রাফির পক্ষে সাফাই গাওয়ারা মানব কল্যাণকামী হতে পারেনা। নিজেদের ভোগবাদী অসুস্থতাকে জাস্টিফাইড করতে তারা পর্ণগ্রাফির পক্ষে কথা বলে। আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের  একজন বন্ধু যে মাঝে মাঝে পর্ণগ্রাফি দেখে সে সরল স্বীকারক্তি দিয়েছে, যে যখন কোন মেয়ে তার সামনে দিয়ে হেঁটে যায় তখন কিছু বিশেষ কারণে (প্রকাশ অযোগ্য কারণ) তার পর্ণগ্রাফি দেখার কথা মনে পড়ে যায় এবং এই নারীকে ধরতে ইচ্ছে করে। 

যারা পর্ণগ্রাফি দেখে ওদের মুখের ভাষাও খারাপ। দিনভর গালিগালাজ করতে থাকে তারা। সময় পেলেই বিকৃত কথাবার্তা বলে। পর্ণগ্রাফি আমাদের বাঙালি সংস্কৃতি বিরোধী। আমাদের ধর্মীয় অনুশাসনেও এমন অশ্লীলতার ন্যূনতম স্থান নেই। পর্ণগ্রাফিতে আসক্ত ছেলে ও মেয়েদের ন্যূনতম নৈতিকতাও থাকেনা। আমি খুব কাছ থেকে দেখেছি পর্ণে আসক্তরা কিভাবে বহুগামীতার মত এইডসবাহী আচারে ঝুঁকছে। পর্ণগ্রাফি সম্পর্কের ও আবেগের ঘনত্বকে হ্রাস করতে করতে শূন্যের কোঠায় নিয়ে আসে। পর্ণগ্রাফি সমকামীতার মত অসুস্থতাকে আমাদের দেশের মাটির সহজ-সরল সংস্কৃতিতে প্রবেশ করাচ্ছে। নানা বিকৃতি আচার করতে করতে পশ্চিমা পর্ণগ্রাফি আমাদের যুব সমাজের নৈতিকতাকে নষ্ট করে দিচ্ছে। নৈতিকতাহীন যুবক সমাজ দেশ ও মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতা অনুভব করেনা। (কাব্যনাট্য ভালবাসেন? এখানে ক্লিক করুন) পর্ণগ্রাফিতে আসক্তরা ব্যক্তিকেন্দ্রীক এক ভোগবাদী জীবনে অভ্যস্ত হচ্ছে। সেখানে মা-বাবা, সন্তান এবং দাদা-দাদীর কোন স্থান নেই। কারণ তাতে পর্ণ দেখায় বা পর্ণে আসক্ত হওয়ার বা পর্ণের বিকৃত আচরণ করায় বাঁধা তৈরি হতে পারে। ফলে ভেঙে যাচ্ছে যৌথ পরিবার। গড়ে উঠছে ইউরোপ ও আমেরিকার এবং ভারতীয় সিরিয়ালের আত্মকেন্দ্রীক একক পরিবার যার সাথে বাংলাদেশ ও বাঙালির কোন সম্পর্ক নেই।

মাদক ও পর্ণগ্রাফির মধ্যে পার্থক্য নেই। মাদকের ভার্চুয়াল সংস্করণ পর্ণগ্রাফি। কোন কোন ক্ষেত্রে মাদক ও পর্ণগ্রাফি চলে সমানতালে কাঁধে কাঁধে মিলিয়ে। কিছুদিন আগে ইউটিউবে একটি প্রতিবেদন দেখেছিলাম। দেখি একটি মেয়ে একটি বারে এসে শিসা খাচ্ছে ছেলেদের সাথে। পুলিশ ও সাংবাদিকরা মিলে হাতেনাতে ধরার পর মেয়েটি বলে, সে সমাজের উচ্চবিত্ত একটি পরিবারের সন্তান এবং এখানে এসে বন্ধুদের সাথে একত্রে জৈবিক কুকর্ম করতে। এই বাজে কাজ তারা পশ্চিমা জীবনধারন ও পর্ণগ্রাফি দেখে করতে আগ্রহী হয়েছে বলে স্পষ্ট স্বীকারক্তি দেয়। ভয়ঙ্কর ব্যাপার না? এখনই যদি পর্ণগ্রাফি না ঠেকানো যায় তবে দেশের যুবক ও যুবতীদের নৈতিকতা হারিয়ে যাবে। আর এদের সন্তান যারা হবে তারা কতটুকু নৈতিকতা ধরে রাখতে পারবে? যে জাতির নৈতিকতা ধ্বসে যায় সে জাতির অন্য জাতির কাছে পরাজয় ঘটে। সেই আদ-সামূদ থেকে, তুর্কি, মায়ান সভ্যতা থেকে বর্তমান ফরাসী কিংবা পাকিস্তান এদের পতনের কারণ নৈতিকতা হ্রাস পাওয়া। নৈতিকতা এত বড় শক্তি যে , এটি সকল ভাল কাজের জ্বালানি দেয়। আমরা কি পর্ণগ্রাফিতে আসক্ত হয়ে আমাদের প্রজন্মকে ধ্বংসের মুখে ছেড়ে দিচ্ছি?
(জাতীয় দলের ক্রিকেটার সুপ্তা এখন ছাত্রলীগ নেত্রী! দেখুন)
পশ্চিমে (ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকা) পর্ণগ্রাফি একটি ব্যবসা। সেদেশে শিল্প বিপ্লবের পর নারীকেও পন্য উৎপাদনে সমান শ্রম দিতে ডেকে নিয়ে গেছে পুঁজিবাদীরা। নারীর মাতৃত্ব কেড়ে নিতে তার হাতে তুলে দিয়েছে শরীরের জন্য ক্ষতিকর নানা জন্মনিরোধক। নারীর শরীরকে কেন্দ্র করে জমিয়েছে ভোগ ও ব্যবসার আসর। নারীকেও ওরা পণ্য করেছে। পশ্চিম থেকে আসার কর্পোরেট নারীবাদ কখনোই বিজ্ঞাপনে নারীদেহের অপ্রাসঙ্গিক ব্যবহার কিংবা পর্ণগ্রাফির বিরুদ্ধে কথা বলেনা। এই অসুস্থ ধাঁচের নারীবাদীরা পর্ণগ্রাফির সমর্থক হিসেবে দেখা যায়। পশ্চিমে পর্ণগ্রাফির মত খারাপ কর্মকে ব্যবসা বলা হয় এবং পর্ণগ্রাফির মত ঘৃণিত ব্যবসায় যারা অভিনয় করে তাদের পর্ণস্টার বলে সম্মানিত করা হয়। বাংলাদেশের প্রথম আলোর মত পত্রিকা এসব পর্ণস্টারদের আবার বিজ্ঞাপন দেয়, নায়িকা হিসেবে প্রচার করে। এরা কিভাবে একটি জাতি গঠন করবে?

আমার একটি সাধারণ তবে খুব মূল্যবান দাবি, যে বাংলাদেশের স্বার্থে দেশের সকল পর্ণ ওয়েবসাইট বন্ধ করে দেয়া হোক। আজ পর্ণগ্রাফিতে দেশ ছেঁয়ে গেছে। সমাজতাত্ত্বিকরা কি এর প্রভাব সম্পর্কে ভেবেছে? দেশের যে প্রজন্ম বড় হচ্ছে স্মার্টফোন নিয়ে তাদের  কে যদি নৈতিককতা সম্পন্ন না করা যায় তবে তারা সাইবার জগতকে নষ্ট করে দেবে। তারা ব্যক্তিজীবনকে অতিষ্ট করবে। তারা ধর্ষণ করবে। যারা ইভটিজিং বা যৌননিপীড়ণ করছে তারা পর্ণগ্রাফিতে আসক্ত কি না তা নিয়ে কেন গবেষণা হচ্ছেনা? থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে? আপনি একদিকে নারী নিপীড়ণ, ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়ণ বন্ধ চান আবার পর্ণগ্রাফি চালু রাখতে চান , তা তো হবেনা। যে কোন একটির পক্ষে আসতে হবে। পর্ণগ্রাফি মানব সভ্যতার নৈতিক রূপের জন্য হুমকিস্বরূপ। একে প্রতিরোধ করা আপনার আমার সামাজিক, নৈতিক ও মানবিক দাবি।
(ডুবো তেলে মাছ ভাজা দেখেছেন? তরতাজা মাছ)
অতএব, সমাজ ও মানবিকতা রক্ষায় পর্ণগ্রাফির বিরুদ্ধে সোচ্চার হন। পর্ণগ্রাফি আমাদের সামাজিক মূল্যবোধের শিকড় খেয়ে দিচ্ছে ধীরে ধীরে। মূল কেটে গাছের অগ্রে যতই পানি ঢালুন না কেন তা আর তাজা হবেনা। বাংলাদেশী বাঙালির মূল নৈতিকতা। সেই নেতিকতা ধ্বংস করছে পর্ণগ্রাফি। পর্ণসাইট বন্ধের জন্য জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজন। (আপনি কি আঁখি আলমগীরকে খুঁজছেন?এখানে আঁখি) পর্ণের পক্ষে যারা ওকথা বলবে ওরা অমানুষ এবং ওদের নৈতিকতা বলে কিছু নাই। যাদের নৈতিকতা নাই তারা বুদ্ধিবৃত্তিক দ্বন্দ্বে টিকে থাকার মত যোগ্য না। পর্ণগ্রাফির সাথে পর্ণপন্থী অসুস্থদেরও এই সমাজ থেকে মূলোত্‍পাটন করতে হবে। আগামী প্রজন্ম মানুষ হবে না অমানুষ হবে তা নির্ভর করছে এর উপর...!
পাঠ অনুভূতি