![]() |
শুধু জানটা বাঁচাতে বাংলাদেশের সীমান্তে ভয়ে জবুথবু ওরা। আমাদের বিজিবি সাধ্যমত নিরাপত্তা দিচ্ছে। |
ফের অশান্ত মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশ যা আরাকান নামে পরিচিত। ইতোমধ্যে দুই দিনের মধ্যেই প্রায় শখানেক রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে মিয়ানমারের বাহিনীর সন্ত্রাসী তৎপরতায়। বাস্তুহারা হয়েছে হাজার হাজার রোহিঙ্গা নরনারী, শিশু ও কিশোর। ধর্ষণের শিকার হচ্ছে রোহিঙ্গা নারী। বাংলাদেশের গণমাধ্যমে এবার বেশ বড় করে তার খবর এসেছে। যদিও নিপীড়িত রোহিঙ্গাদের ‘সন্ত্রাসী ’ লিখে বেশ সমালোচিতও হয়েছে। তবু আসার কথা ঐ অত্যাচারিত জাতির কথা মিডিয়ায় আসছে। যদিও BBC, CNN, FOX, REUTERS, NDTV গরীব রোহিঙ্গাদের নিয়ে তেমন চিন্তিত না। জাতিসংঘও কোনভাবে তৎপর না। ওআইসি নামের ইহুদীস্বার্থ রক্ষাকারী সংস্খাও নীরব। ২ তারিখ ঈদ। আর রোহিঙ্গারা মৃত্যুর ভয়ে ঘর ছাড়ছে, ওদের ঘর পুড়িয়ে দিচ্ছে মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় মদদে চলা সন্ত্রাসীরা। আহা! রোহিঙ্গাদেরও ঈদ আসবে? আসবে কি?
সন্ত্রাসী শ্রেণীর রাষ্ট্র মিয়ানমার কি জাতিসংঘের চেয়েও শক্তিশালী যে গণহত্যা চালালেও কোন নিন্দা হয়না? জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী শরণার্থীদের ব্যাপারে পৃথিবীর সকল জাতির নমনীয় আচরণ করার কথা। আমরা সেই কনভেনশন মেনে চলেছি।বাংলাদেশ প্রায় ১০ লক্ষ রোহিঙ্গাকে ভরণপোষণ করছে। বাংলাদেশের দরদের ঘাটতি ছিলনা। কিন্তু আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কেন মিয়ানমারকে এক ঘরে করে দেয়না? কেন মিয়ানমারের উপর জাতিসংঘ অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করেনা? কেন ইউরোপীয় ইউনিয়ন মিয়ানমারের সন্ত্রাসী কার্যক্রমের তীব্র নিন্দা জানিয়ে মিয়ানমারের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করেনা? চীন চুপ কেন? অং সান সুকি নামের বেহায়া চুপ কেন? এ অঞ্চলের দাদাগিরি করা ভারতও চুপ। সব দায় কেবল বাংলাদেশের হলে পরিস্থিতি তো স্বাভাবিক রাখা কঠিন হবে, তাইনা? মিয়ানমারের সন্ত্রাসী সীমান্তরক্ষী বিজিপি বাহিনী কিছুই মানছেনা। কারণ ওরা দেখেছে আন্তর্জাতিক নপুংশক সংস্থাগুলো রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে ততোটা আগ্রহী না। আমরা কিছু না বলতে বলতে ওরা বাংলাদেশের সীমান্তেও গুলি চালিয়েছে। এত বড় পাপিষ্ঠ এই মগ বুদ্ধগুলো যে নিরীহ নারী ও শিশুরা যখন পালিয়ে বাংলাদেশ সীমান্তে ঢুকছিল তখনও গোলা ছোঁড়ে।আরাকানের অধিবাসীরা যেন জ্বলন্ত কড়াইয়ে জীবনযাপন করে। নিজের পৈতৃক ভিটায় ওরা পরবাসী। অথচ আরাকান নামের স্বাধীন রাজ্য একটি ঐতিহাসিব ও নৃতাত্ত্বিক সত্য। বাংলাদেশের চট্রগ্রামের মানুষের মুখের ভাষা ও আরাকানী ভাষা প্রায় এক। তাহলে আরাকানী তথা রাখাইন প্রদেশের থেকে বিশ্ব মানবতা কেন মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে? মসুলিম বলে? মানবতার ক্ষেত্রে ধর্ম কোন বাধা হওয়া উচিত না। ধর্মের কাঁধে বন্দুক রেখে যে মায়া বা ঘৃণা জাগে সেটি সন্ত্রাসী মানসিকতা। আইএস টেররিস্টদের মত সিলেক্টিভ হলে হিউম্যান রাইটস একটিভিস্টদের মহানুভবতা কোথায়?
আমাদের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কাছে অনুরোধ করি, মৃত্যুর ভয়ে যে মানুষগুলো বাংলাদেশে ঢুকতে চায় তাদেরকে ঐ নরখাদক বর্মি সন্ত্রাসীদের হাতে তুলে না দিয়ে নিরাপদে কিছুদিন থাকতে দিন। মনে রাখবেন, ১৯৭১ সালের ৯ মাসের প্রতিটি দিন ঠিক ওভাবেই ভারতে ছুটে পালিয়েছিল আমাদের বাংলাদেশের মানুষ। ভারতীয় বন্ধুরা আমাদের বাংলাদেশে পুশ ব্যাক করেনি। এমন কি শরণার্থীদের ঢল নামা ইউরোপও পুশ ব্যাক করেনি অসহায় আরব ও ইয়াজিদিদের। আমরা নিপীড়িত হয়েছিলাম পাকিস্তানী সন্ত্রাসী বাহিনী কর্তৃক, রোহিঙ্গারা হচ্ছে মিয়ানমারের সেনা কর্তৃক। আমাদের খুঁচিয়ে খুন করেছিল রাজাকার নামের ধর্মের ধ্বজাধারীরা, ওদের কুপিয়ে খুন করছে ধর্মের ভীক্ষু নামের ন্যাড়া ধ্বজাধারীরা। ১৯৭১ এর মজলুম বাঙালি আর এই মজলুম রোহিঙ্গার মধ্যে তফাৎ কোথায়? কেন তবে আমরা ওদের মৃত্যুকুপে ঠেলে দিচ্ছি? তারচেয়ে বরং আমরা জাতিসংঘ ও ওআইসি এর কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ দাবি করে এই অসহায় মানুষগুলোকে আশ্রয় দিয়ে জীবনের নিরাপত্তা দিতে পারি। নাকি গরীব, দুঃখী বলে রোহিঙ্গাদের বেঁচে থাকার অধিকার নেই?
আমরা যেন ভুলে না যাই, রোহিঙ্গাদের আজকের এই দুর্দশার জন্য ব্রিটিশ অসভ্যদের মতই আমাদের পূর্ব পুরুষরাও কিছুটা দায়ি। ১৯৪৭ সালের দেশভাগের সময় রোহিঙ্গারা একাধিকবার তৎকালীন পূর্ববাঙলার সাথে মিশে যাওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল। সেই প্রস্তাব আমাদের তৎকালীন নেতৃবৃন্দের গাফিলতিতে গুরুত্ব পায়নি। আমার মাঝেমাঝে সেসময়ের নেতাদের প্রতি তীব্র অসন্তোষ জন্ম নেয়। ভোট দিয়ে আসামের করিমগঞ্জ বাংলাদেশের সাথে মিশতে রায় দিলো অথচ আমাদের তৎকালীন নেতৃত্ব তা আনতে ব্যর্থ হলো।সিলেটের জাফলং যান, সবচেয়ে ভাল জমিটুকু যেখানে একসময় আমাদের পূর্বপুরুষ দাপিয়ে বেড়িয়েছে সেখান থেকেই আমাদের সীমান্তের শেষ। রোহিঙ্গাদের বসতির স্থল আরাকানকে যদি আমরা সে সময় মূল পূর্ববঙ্গের সাথে যুক্ত করে নিতাম তবে বঙ্গপোসাগরের বিশাল সম্পদের উপর আমাদের থাকতো সবচেয়ে বেশি কর্তৃত্ব। পাকিস্তান নামের জঘন্য রাষ্ট্রব্যবস্থার স্বপ্নে বিভোর আমাদের নেতারা সেই ভূ-রাজনৈতিক সুবিধা আদায়ের দূরদর্শীতার কোন প্রমাণই রাখতে পারেননি। সে সময়ের নেতৃত্বের এই দুর্বল বিষয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর আত্মজীবনীতে লিখেছেন। তিনি তখন তরুণ ছিলেন। বড়দের নিজেদের অধিকার আদায়ের ব্যর্থতা তাঁকে প্রবলভাবে আহত করেছিল। তিনি যদি সরাসরি আলোচনায় যেতেন আমার বিশ্বাস এই উপমহাদেশের মানচিত্রের পরিবর্তন হতো। যাহোক, কোথা থেকে কোথায় চলে গেলাম। এই রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে সহজে সমাধান হচ্ছেনা।কারণ বিষয়টি জাতিতাত্ত্বিক। মিয়ানমারের সন্ত্রাসীদের নিন্দা করেছেন এ বিষয়ক কমিশনের প্রধান কফি আনান। আরো বেশি চাপ প্রয়োগ করা দরকার মিয়ানমারের জান্তা ও সুকি সরকারের প্রতি। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ মধ্যস্ততা করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও সংস্থাকে নিয়ে শান্তি আলোচনা শুরু করতে পারে। সেটি আমাদের ভাবমূর্তি উন্নত করতে পারে। শান্তি আসুক রাখাইন বা আরাকানে। শান্তি আসুক পৃথিবীর প্রতি খণ্ড ভূখণ্ডে। মানবতার জয় হোক, অসুরতা ধ্বংস হোক।
আর সর্বশেষ একটা কথা বলি। চলুন আমরা বার্মা থেকে আসা সকল পণ্য বয়কট করি। পারবেন সেটি? চট্রগ্রাম, কক্সবাজার, সিলেট, রাঙামাটি, বান্দরবান বা দেশের যেকোন জায়গায় বার্মিজ পণ্য কেনা থেকে যদি আমরা বিরত থাকি তবে মায়ানমার অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুক্ষিণ হবে। আর আজ আমরা একটি টাকার বার্মিজ পণ্য কিনবো মানে বার্মিজদে গুলি কেনার ্জন্য একটি টাকা দিলাম যা ওরা হতদরিদ্র রোহিঙ্গা জাতিকে খুন করতে ব্যবহার করে। এমন কি মিয়ানমারের সন্ত্রাসী সীমান্তরক্ষী পুলিশ বিজিপি আমাদের বিজিবি জোয়ান মিজানকে পর্যন্ত হত্যা করেছিল। ওদের কোন পণ্য ক্রয় করা থেকে বিরত থাকলে সেটি অনেক বড় ধরনের একটি মানবতাবাদী কাজ হবে। এভাবে শা্ন্তিপূর্ণ উপায়ে আমরা যুদ্ধবাজদের প্রতিরোধ করতে পারি। আপনি যতই স্ট্যাটাস দিয়ে রোহিঙ্গাদের জন্য মায়াকান্না কাঁদেন তা কোন কাজে আসবেনা যদিনা বার্মিজ পণ্য বয়কট না করেন। বার্মিজ জুতা, স্যান্ডেল, লঙ্গী, চাদর, আচার, শাড়ি, অলঙ্কার, সাবান ইত্যাদি সব কিছু চলুন আমরা বয়কট করি। বার্মিজ পণ্য বয়কট করতে পারার মধ্যেই আপনার অত্যাচারের প্রতিবাদ নিহিত রয়েছে।
বয়কট বার্মিজ পণ্য।