মধ্যপ্রাচ্যের সমীকরণ কিন্তু জটিল থেকে আরো জটিল হচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন যে কুর্দিদের সমর্থন করে তাদের সাথে একই সাথে তুরস্ক, ইরান, সিরিয়া ও ইরাক সকলের দ্বন্দ্ব ছিল, বৃদ্ধি পাচ্ছে। সর্বশেষ উত্তপ্ত কথা হচ্ছে ইরাকী কুর্দিস্তান অঞ্চল তথা উত্তর ইরাকের কুর্দি কর্তৃপক্ষ ২০১৭ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর গণভোটের ডাক দিয়েছে। গণভোটের বিষয় ‘স্বাধীন কুর্দিস্তান’ রাষ্ট্র হিসেবে ইরাকের উত্তর ভূখণ্ডের আবির্ভাব। বৃহৎ কুর্দিস্তান গঠনের এটি হবে প্রাথমিক পদক্ষেপ। বিষয়টি অত্যন্ত জটিল ও ভয়ানক। মধ্যপ্রাচ্যের বিষফোঁড়া বা ক্যান্সার জঘন্য খুনী অবৈধ ইসরাঈল একটি বৃহৎ ইহুদীবাদী অঞ্চল গঠনের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন দেখে আসছে। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে সিরিয়া, ইরাক, ইরান ও তুরস্ক। কারণ মিশরের ফাত্তাহ সিসি, সৌদি আরবের সালমান, জর্ডানের আব্দুল্লাহ এরা সবাই তেল আবিভের দাস হিসেবে নিজেদের পরিচয় করিয়েছে। যারা করায়নি তাদের জন্য যে ফাঁদ আসছে তার নাম ‘কুর্দিস্তান’। এই রাষ্ট্রটি গঠিত হলে সেটি হবে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম বৃহৎ রাষ্ট্র এবং যেখান থেকে ইসরাঈল সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যের নাটাই ঘোরাতে পারবে। ইহুদীদের এই চক্রান্তে নিজেদের স্বাধীন রাষ্ট্রের লোভে পা দিচ্ছে কুর্দি জাতি। কিন্তু তাদের যে, ইহুদীদের দাসত্ব মেনে নিতে হবে টিকে থাকতে হলে সেটি বুঝতেছেনা। আবার রাষ্ট্র গঠিত হতে হলে যে চড়াই উৎরাই কুর্দিদের পার হতে হবে তাতে মধ্যপ্রাচ্যে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ বেধে যাওয়ার উপক্রম হতে পারে। বিষয়টি খোলাসা করছি।
একটি 'স্বাধীন কুর্দিস্তান' প্রতিষ্ঠিত করতে হলে তুরস্ক, সিরিয়া, ইরাক ও ইরানের বিশাল ভূখণ্ড কাটা যাবে। অথচ নিজেদের ইহুদীবাদী এজেন্ডা বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে তৈরি পুতুল আইএসের অজুহাতে ইউরোপ ও আমেরিকা কুর্দিদের ভয়ানক সব অস্ত্রে সজ্জিত করছে বা করে যাচ্ছে। তুরস্ক এ ব্যাপারে বারবার আপত্তি জানিয়েছে। তবে ইরান তাতে তখন কর্ণপাত করেনি। বরং ইরানী গণমাধ্যমের প্রোপাগাণ্ডায় তখন কুর্দি পেশমার্গাদের পক্ষে প্রচারণা দেখা গেছে। আমি লিখেছিলাম তখন, মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধে তুরস্কের জড়ানোর উদ্দেশ্য তুর্কিদের নিজস্ব স্বার্থ এবং ইসরাঈলের পরিকল্পনার বিরুদ্ধে। তুরস্ক অন্যান্য সাম্রাজ্যবাদী শক্তির মতই একটি বৃহৎ শক্তি এবং এর ভৌগলিক অবস্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় হওয়ায় দুনিয়ার ইতিহাসের কোন অংশে তুরস্কের গুরুত্ব কমেনি। মধ্যপ্রাচ্যের চলমান যুদ্ধেও তুরস্ক সরাসরি জড়িয়েছে নিজের অস্তিত্বের জন্য। কারণ কুর্দিরা তুরস্কের অভ্যন্তরে অনেক বড় অঞ্চল দখল করে প্রায় ৪০০০০ হাজার তুর্কি হত্যা করেছে বলে টিআরটি তথ্য দিয়েছে।
এখন যখন মসুল জয়ের পর রাক্কায়ও আইএস সন্ত্রাসীদের পতন ঘটতেছে তখনই স্বাধীন কুর্দিস্তানের দাবি উঠেছে কুদিদের মধ্যে। কুর্দিদের রোজা, রুদাও প্রভৃতি গণমাধ্যম এ ব্যাপারে জনমত তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে। অবৈধ ইসরাঈলের টাইমস অব ইসরাঈল, হারেৎজ, জেপোস্ট ইত্যাদি সংবাদমাধ্যম কুর্দিস্তানের স্বাধীনতার প্রশ্নে গণভোটের সংবাদ প্রত্যেকদিন গুরুত্ব সহকারে প্রচার করছে। আগামী সেপ্টেম্বরের ২৫ তারিখ এই গণভোট অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। বিষয়টি খুব সহজ নয়। ইতোমধ্যে তুরস্ক সরাসরি এর বিরুদ্ধে অবস্থান জানিয়েছে। ওদিকে ইরানও তাই। তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভুত চাবুসগুলু বলেন, ‘খোদা মাফ করুক, কুর্দিস্তানের গণভোট রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধ শুরুর কারণ হতে পারে’। তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান সরাসরি গণভোটের পরিকল্পনাকে বলেছেন ‘ভুল ও হুমকি’। অর্থাৎ ইরাকে স্বাধীন কুর্দিস্তান রাষ্ট্র গঠিত হলে তা যে তুরস্কের কুর্দিদের জন্য স্বর্গ হবে সেটি তুরস্ক বুঝে ফেলেছে। একই ব্যাপার কিন্তু ইরানের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। আবার কুর্দিস্তানের পাশ দিয়ে আজারবাইজান, আর্মেনিয়া ও জর্জিয়ার পাশেই রাশিয়া। রাশিয়াও মধ্যপ্রাচ্যের মানচিত্রে এমন কোন রাষ্ট্র দেখতে চায়না যারা হবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিম ইউরোপ (ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি ইত্যাদি) এর সেবক। কারণ যে সকল রাষ্ট্রের জমি নিয়ে স্বাধীন কুর্দিস্তান গঠিত হবে সেসব রাষ্ট্র রাশিয়ার সাথে সম্পর্ক ভাল রেখেছে। নতুন কুর্দিস্তান রাশিয়া নয়, আমেরিকাপন্থী হবে। ফলে কুর্দিস্তান ইস্যুতে রাশিয়া, ইরান ও তুরস্ক এক অক্ষে অবস্থান করছে। ইতিহাসে প্রথমবারের মত সাবেক তিন সাম্রাজ্যবাদী পরাশক্তি কোন বিষয়ে এক পক্ষে অবস্থান করছে। সে কারণে কুর্দিস্তান ইস্যুতেও প্রক্সি যুদ্ধ হলে তা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূত্রপাত ঘটাতে পারে।
মসুল উদ্ধারে ইরাকের সরকারী বাহিনী ও শিয়ারা যুক্ত হয়েছে। কিন্তু রাক্কা উদ্ধারে সিরিয়ায় মার্কিন সমর্থনপুষ্ট কুর্দি ডেমোক্রেটিক ফোর্স যুক্ত হওয়ায় ইরানের মাথা ব্যথার শুরু। কুর্দি সিরিয়ানদের উপর বাশার আল আসাদের সিরিয়ার কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। সে কারণে রাক্কা যখন পুনরুদ্ধার হবে সেটি সিরিয়ার সাথে যুক্ত হবেনা, সেটি মূলত বৃহত্তর কুর্দিস্তান গঠনের একটি ধাপ হবে।আর কুর্দিদের সবচেয়ে বন্ধুপ্রতীম রাষ্ট্র কোন আরব রাষ্ট্র বা ইরান হবেনা, হবে ইহুদীবাদী ইসরাঈল। সেটি ইরানের জন্য ভয়ঙ্কর ব্যাপার। কারণ ইরান যেমন সন্ত্রাসী রাষ্ট্র ইসরাঈলকে মুছে দিতে চায়, ইসরাঈলও ইরানের পরমাণু পরীক্ষা বা অস্ত্রভাণ্ডার ধ্বংস করতে চায়। তাই ইরানের সবচেয়ে বিশ্বস্ত বন্ধু দামেস্ক এর পাশেই দামেস্ক এর প্রভাববলয়ের বাইরের কোন শক্তির শক্ত ঘাঁটি থাকুক তা ইরান চায়না। কিন্তু ইরান না চাইলেও বাস্তবতা হচ্ছে সিরিয়ার বিশাল অংশে বাশার আল আসাদের নিয়ন্ত্রণ নেই। বিশেষ করে মার্কিন সমর্থন পুষ্ট কুর্দি বাহিনী আসাদের সঙ্গে নেই। ইরানের চিন্তার কারণ এটাই। সে কারণে স্বাধীন কুর্দিস্তান গঠন হওয়া মানে ইরানের নিরাপত্তার লৌহদেয়াল দুর্বল হওয়া। আবার ইরানের অভ্যন্তরেও কুর্দি সুন্নীদের একটি অংশ ইরান থেকে পৃথক হয়ে বৃহৎ কুর্দিস্তানের সাথে যুক্ত হতে চায়।
গত ২৬ এপ্রিল ২০১৭ তে কাতারভিত্তিক আল জাজিরা চ্যানেল এ বিষয়ে একটি প্রামাণ্য প্রচার করেছে। এর নাম Return to Arms: Hadaka । এতে দেখা যায়, ইরানে সুন্নী কুর্দিদের বঞ্চনার কথা। কিভাবে ইরানী কুর্দিরাও অস্ত্র হাতে ইরান থেকে স্বাধীন হয়ে স্বপ্নের কুর্দিস্তানের সঙ্গে মিশে যেতে চায়। সে কারণে কুর্দিরা ইরানীদের জন্যও এবার ত্রাস হয়ে এসেছে, যা এতদিন কেবল তুর্কি বা ইরাকীদের চিন্তার কারণ ছিল। সে কারণেই তুরস্ক ও ইরানকে এক রকম কথা বলতে দেখা যাচ্ছে। অথচ এই কিছুদিন আগে ইরানী গণমাধ্যমের প্রোপাগান্ডিস্টরা কুর্দি পেশমার্গাদের ব্যাপারে ইতিবাচক সংবাদ প্রচার করেছে এবং তুরস্ক এদের বিরোধীতা করায় এরদোয়ানকে নিয়ে অপপ্রচার চালিয়েছে। এরদোয়ানের যে কৌশলগত কারণে কুর্দিদের সমর্থন করার ইচ্ছা ছিলনা সেটি এখন পরিস্কার।
প্রশ্ন হচ্ছে, কুর্দিরা কী তবে দীর্ঘস্থায়ী স্বাধীন কুর্দিস্তান গঠনের পথেই হাঁটছে? হতে পারে। অন্তত তারা সেটি করার জন্যলড়াই করবে যদি আমেরিকা, ইউরোপ ও ইসরাঈল সবুজ বাতি জ্বেলে দেয়। ইহুদীবাদী সন্ত্রাসীদের গণমাধ্যমগুলো কুর্দিস্তানের ব্যাপারে সংবাদ প্রচার করেই থেমে যাচ্ছেনা, তারা দেখাচ্ছে কিভাবে কুর্দিস্তান ইস্যুতে ইরান ও তুরস্ক পরস্পরের কাছাকাছি চলে আসছে। এর যৌক্তিক কারণ আছে। আগেই বলেছি, ইহুদীরা মধ্যপ্রাচ্যকে নতুনভাবে তৈরি করার নীল নকশা নিয়ে আগাচ্ছে। তার জন্যই আইএস নামের সন্ত্রাসীদের সমর্থন করে ইহুদীরা। রাশিয়া টুডে নামের রাশিয়ান সংবাদ মাধ্যমে প্রখ্যাত বিশ্লেষক পেপে এস্কোবর বলেছিলেন, আইএস তৈরির উদ্দেশ্য ইরাককে সুন্নী, শিয়া ও কুর্দি এই তিনটি ইরাকে বিভক্ত করা। তার কথা সত্যে পরিণত হচ্ছে।অবৈধ ইসরাঈলের নিরাপত্তার জন্য ইরাক সব সময় একটি হুমকি। এ কারণে ইরাকের অভ্যন্তরে নতুন রাষ্ট্র হলে তার সাথে মূল ইরাকের বিরোধ বাঁধবে। তখন নতুন কুর্দিস্তানের ঘনিষ্ট মিত্র হিসেবে এগিয়ে আসবে ইসরাঈল। তারপর ইরাকী কুর্দিস্তান থেকে তুর্কি, ইরানী ও সিরিয় কুর্দিস্তানকে সংযুক্ত করে একটি বৃহত্তর কুর্দিস্তান গঠন করে সেখানে ইসরাঈল সামরিক ঘাঁটিও তৈরি করতে পারে। সেক্ষেত্রে তুরস্ক, সিরিায়া ও ইরান তো বিশাল অংশ হারাবে।
গত ২৬ এপ্রিল ২০১৭ তে কাতারভিত্তিক আল জাজিরা চ্যানেল এ বিষয়ে একটি প্রামাণ্য প্রচার করেছে। এর নাম Return to Arms: Hadaka । এতে দেখা যায়, ইরানে সুন্নী কুর্দিদের বঞ্চনার কথা। কিভাবে ইরানী কুর্দিরাও অস্ত্র হাতে ইরান থেকে স্বাধীন হয়ে স্বপ্নের কুর্দিস্তানের সঙ্গে মিশে যেতে চায়। সে কারণে কুর্দিরা ইরানীদের জন্যও এবার ত্রাস হয়ে এসেছে, যা এতদিন কেবল তুর্কি বা ইরাকীদের চিন্তার কারণ ছিল। সে কারণেই তুরস্ক ও ইরানকে এক রকম কথা বলতে দেখা যাচ্ছে। অথচ এই কিছুদিন আগে ইরানী গণমাধ্যমের প্রোপাগান্ডিস্টরা কুর্দি পেশমার্গাদের ব্যাপারে ইতিবাচক সংবাদ প্রচার করেছে এবং তুরস্ক এদের বিরোধীতা করায় এরদোয়ানকে নিয়ে অপপ্রচার চালিয়েছে। এরদোয়ানের যে কৌশলগত কারণে কুর্দিদের সমর্থন করার ইচ্ছা ছিলনা সেটি এখন পরিস্কার।
প্রশ্ন হচ্ছে, কুর্দিরা কী তবে দীর্ঘস্থায়ী স্বাধীন কুর্দিস্তান গঠনের পথেই হাঁটছে? হতে পারে। অন্তত তারা সেটি করার জন্যলড়াই করবে যদি আমেরিকা, ইউরোপ ও ইসরাঈল সবুজ বাতি জ্বেলে দেয়। ইহুদীবাদী সন্ত্রাসীদের গণমাধ্যমগুলো কুর্দিস্তানের ব্যাপারে সংবাদ প্রচার করেই থেমে যাচ্ছেনা, তারা দেখাচ্ছে কিভাবে কুর্দিস্তান ইস্যুতে ইরান ও তুরস্ক পরস্পরের কাছাকাছি চলে আসছে। এর যৌক্তিক কারণ আছে। আগেই বলেছি, ইহুদীরা মধ্যপ্রাচ্যকে নতুনভাবে তৈরি করার নীল নকশা নিয়ে আগাচ্ছে। তার জন্যই আইএস নামের সন্ত্রাসীদের সমর্থন করে ইহুদীরা। রাশিয়া টুডে নামের রাশিয়ান সংবাদ মাধ্যমে প্রখ্যাত বিশ্লেষক পেপে এস্কোবর বলেছিলেন, আইএস তৈরির উদ্দেশ্য ইরাককে সুন্নী, শিয়া ও কুর্দি এই তিনটি ইরাকে বিভক্ত করা। তার কথা সত্যে পরিণত হচ্ছে।অবৈধ ইসরাঈলের নিরাপত্তার জন্য ইরাক সব সময় একটি হুমকি। এ কারণে ইরাকের অভ্যন্তরে নতুন রাষ্ট্র হলে তার সাথে মূল ইরাকের বিরোধ বাঁধবে। তখন নতুন কুর্দিস্তানের ঘনিষ্ট মিত্র হিসেবে এগিয়ে আসবে ইসরাঈল। তারপর ইরাকী কুর্দিস্তান থেকে তুর্কি, ইরানী ও সিরিয় কুর্দিস্তানকে সংযুক্ত করে একটি বৃহত্তর কুর্দিস্তান গঠন করে সেখানে ইসরাঈল সামরিক ঘাঁটিও তৈরি করতে পারে। সেক্ষেত্রে তুরস্ক, সিরিায়া ও ইরান তো বিশাল অংশ হারাবে।
ঠিক এ কারণেই এরদোয়ান আগে থেকে আল বাব দখল করে তার রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ঠিক রাখতে তুর্কি সেনাবাহিনী সমর্থিত সিরিয়ান বিদ্রেহীদের নিয়ে Operation Euphrates Shield পরিচালনা করে ঐ এলাকা থেকে আইএস হটিয়ে দেয়।এর কারণ আল বাবের পাশেই মানবিজ। সেটি দখল করে নেয় কুর্দি সশস্ত্র বাহিনী YPJ এবং যদি আল বাব তুরস্ক দখল না করতো তবে YPJ ও এবং এর সিরিয়ান শাখা PYD (Democratic Union Party) এক হয়ে বৃহত্তর কুর্দিস্তান গঠনের কাছাকাছি চলে যেতো। কারণ এই দুইটি ফোর্স এর কাছেই রয়েছে পশ্চিম ইউরোপ, সিআইএ ও মোসাদ কর্তৃক সরবরাহকৃত সর্বাধুনিক অস্ত্র। কিন্তু এই রাজনীতির মারপ্যাঁচ না বুঝে অন্ধ তু্র্কি বিদ্বেষ থেকে ইরানী প্রোপাগাণ্ডা মিডিয়ায় আল বাবে তুরস্কের অবস্থান নিয়ে মিথ্যাচার করা হয়। আজ যখন ইরানের নিজের নিরাপত্তার জন্যই বিষয়টি আলোচিত, যখন Mutual Interest এ তুর্কি ও ইরান পরস্পরের সহযোগিতার জন্য ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে তখনও কিছু ইরানকানা তুর্কি বিদ্বেষ ছড়িয়েই যাচ্ছে।অথচ আমি আজ পর্যন্ত কোন তুর্কি গণমাধ্যমে ইরানের নিন্দা প্রচার করতে দেখিনি। যা বলছিলাম, কুর্দি জাতির কথা। তারা দীর্ঘদিন ধরে যুদ্ধেও পারদর্শী। আইএস সন্ত্রাসীদের পরাজিত করতে তাদের অবদান কিছুতেই ছোট করে দেখা যাবেনা। সে কারণেই তারা দীর্ঘদিন পর স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বের হওয়ার ঐক্যবদ্ধ ডাক দিতে পারে। ইতোমধ্যে ইরাকী স্বায়ত্বশাসিত কুর্দিস্তান স্বাধীন কুর্দিস্তানের বিকল্প নেই বলে জানিয়ে দিয়েছে। যদিও ইরানপন্থী বর্তমান ইরাক সরকার তা নাকচ করে দিয়েছে। তুরস্কও তাই। সৌদি আরব সম্ভবত নীরবতার মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছে যে, স্বাধীন কুর্দিস্তানের পক্ষে তারা। কারণ তাদের প্রভু ইসরাঈলের স্বার্থ জড়িত এখানে। আবার মুসলিম বিশ্বের নেতৃত্বের লড়াইয়ে তুরস্ক ও ইরানের সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলছে আল সৌদের বংশধরদের। সে কারণে ইরান-তুর্কি যদি কুর্দিস্তানের স্বাধীনতায় বিপর্যয়ে পড়ে তবে সৌদি আরব সেটা চাইবে এটাই স্বাভাবিক নয়?
এই যখন পরিস্থিতি তখন তুরস্ক ও ইরান দুই রাষ্ট্রই চিন্তিত। কারণ বৃহত্তর কুর্দিস্তান গঠিত হলে এ রাষ্ট্রটি হবে মধ্যপ্রাচ্যের তৃতীয় বৃহত্তম রাষ্ট্র এবং এর শক্তিশালী অবস্থান যেকোন আরব রাষ্ট্রকে চিন্তিত করার জন্য যথেষ্ট। আর ইরান ও তুরস্কের আঞ্চলিক শক্তির জন্যই এই নীল নকশার কুর্দিস্তান প্রতিবন্ধকতা। এই সব কারণে তুর্কি ও ইরানীরা কাছাকাছি আসতে পারে। এ ইস্যুতে NATO তুরস্ককে বহিষ্কার করতে পারে এ সম্ভাবনা থেকেই তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র বিধ্বংসী ব্যবস্থা S-400 সেদেশে আমদানী করেছে, যদিও আমেরিকা তাতে নাখোশ হয়েছে। যদি তুর্কিদের NATO থেকে সরানো হয় তবে ইতিহাসে প্রথমবারের মত তুর্কি-ইরানী সামরিক জোট দেখা যেতে পারে এবং এ জোটে রাশিয়া যুক্ত হলে তা ইহুদীবাদী পশ্চিমা শক্তির জন্য ১৫ জুলাই ২০১৬ এর মতই আরেকটি চপেটাঘাত হবে। দেখা যাক মধ্যপ্রাচ্যের জটিলতা ঠিক কোন দিকে এবং কোন পর্যায়ে গেলে এসব ঘটে...।
ইরাকি স্বায়ত্বশাসিত কুর্দিস্তানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ বারজানি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, ২০১৭ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর এক মিনিটের জন্যও স্বাধীনতার গণভোট থামাবেনা (২২ আগস্ট, ২০১৭, ইরাকিনিউজডটকম)। তবে ইরাকের সরকার এ ব্যাপারে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে যে, ইরাক থেকে পৃথক হওয়ার চেষ্টা এই গণভোটের ন্যায্যতা ইরাক সরকার প্রদান করেনি। বিষয়টি খুব জটিল পর্যায়ে এ কারণে চলে গেছে যে ইহুদিরা যখন এ গণভোটের পক্ষে প্রোপাগাণ্ডা চালাচ্ছে। সাধারণ কুর্দিরা হয়তো জানেওনা তাদের স্বাধীনতার ইচ্ছা নিয়ে মানবসভ্যতার ইতিহাসের কত বড় জঘন্য কূটকর্ম চলছে।
কুর্দিস্তান গঠনের প্রস্তাবকে অবৈধ ইসরাঈলের ইহুদী ও অন্যান্য অনেকেই ইন্টারনেটে ‘দ্বিতীয় বেলফোর ঘোষণার’ সঙ্গে তুলনা করছে। ১৯১৭ সালের ২ নভেম্বর ব্রিটিশ এক অসভ্য বেলফোর কর্তৃক ইহুদীবাদী রথচাইল্ডকে লিখিত চিঠিতে ওসমানীয় ফিলিস্তিনের ভূখণ্ড লোপাট করে অবৈধ ইসরাঈল গঠনের ঘোষণাকে বেলেফোর ডিক্লারেশন বলে। এটি যেমন খুবই ভয়ানক ছিল, স্বাধীন কুর্দিস্তানের প্রশ্নে গণভোটও তেমন ভয়ঙ্কর। সন্ত্রাসের কারণে একটি রাষ্ট্র যখন রক্তাক্ত এবং সেই ২০০৩ সালের ২০ মার্চ (মার্কিন বাহিনী যখন সাদ্দাম হোসেনের ইরাকে অবৈধভাবে আগ্রাসন চালায়) থেকে যে দেশটিতে আগুন জ্বলছে সেই দেশটি ঘুরে দাঁড়াতে যখন ঐক্যবদ্ধ থাকার দরকার ঠিক তখন কিভাবে দেশের একটি অংশ স্বাধীনতার ডাক দেয়? এর শিকড় অনেক গভীরে। ২০০৩ সালে যখন মার্কিন নেতৃত্বাধীন বাহিনী ইরাকের লাখ লাখ মানুষকে হত্যা করতে আগ্রাসন চালায় তখন ১৯৭০ সালে গঠিত ইরাকি কুর্দিস্তান তা সমর্থন করে। এর ফল হিসেবে তারা ২০০৫ সালের একটি মার্কিন তত্বাবধানকৃত সংবিধান পায় যাতে স্বায়ত্বশাসিত কুর্দিস্তান হয়। এরপর তারা স্বাধীনতার নানা টালবাহানা খোঁজে। তলে তলে সন্ত্রাসী রাষ্ট্র ইসরাঈল ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের বিভিন্ন রাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক রাখে। নিজস্ব সেনাবাহিনী গড়ে তোলে, তেল রপ্তানী করে ইউরোপের কাছে। এসব কারণে কথিত বৃহত্তর কুর্দিস্তান গঠনের পক্ষেই রায় দিবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। কারণ আরব ও ইরানীদের বাইরে তৃতীয় জাতি হিসেবে তেলের মজুদ রাষ্ট্র কুর্দিস্তান পাচ্ছে তারা যেটি একই সাথে সামরিক ঘাঁটি হিসেবেও ব্যবহৃত হতে পারে।
এসব কারণে কুর্দিস্তান নিয়ে আইএস-উত্তর মধ্যপ্রাচ্যে (Post-ISIS Middle East)বেশ বড়সড় একটি ঝামেলার উদ্ভব হবে বলে গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে, যদিও পশ্চিমা মিডিয়া এখনো এ বিষয়টি ফোকাস করছেনা। এ কারণে বাংলাদেশেরসহ বিশ্বের অন্যান্য মিডিয়াও এখন নীরব। কিন্তু সন্ত্রাসী আইএস এর কাছ থেকে যখন কুর্দি বাহিনী রাক্কা দখল করে নেবে তখন থেকেই সংকটের শুরু হবে। আর সেই দখল যদি আগামী সেপ্টেম্বরের আগে হয় তবে ইরাকে যে স্বাধীন কুর্দিস্তান গঠিত হচ্ছে তার অংশ হতে সিরিয়া ও তুরস্কের কুর্দিরাও চাইতে পারে। তখনকার জটিল পরিস্থিতি সামাল দিতেই তুরস্ক ও ইরান ধীরে ধীরে পরস্পরের কাছে আসছে। কুর্দিস্তান নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের মানচিত্র ফের রক্তাক্ত হয়ে উঠতে পারে। সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে পারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ন্যাটো থেকে দ্বিতীয় বৃহত্তম সামরিক শক্তি তুরস্ককে বহিস্কার করা হতে পারে। কি হয় সেটি এখনই বলা যাচ্ছেনা। তবে কুর্দিস্তান যে রক্তাক্ত যুদ্ধক্ষেত্রের নতুন নাম সেটি দেখার জন্য বেশি দিন অপেক্ষা নাও করা লাগতে পারে।