১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট জাপানের হিরোশিমা নগরে পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এই দিন পৃথিবীর প্রথম পারমাণবিক বোমা (নিউট্রন) হামলা চালায় মানবাধিকারের মিথ্যা ফুলঝুড়ি ছড়ানো আমেরিকা। লিটল বয় নামের সেই ভয়াবহ বোমার আঘাতে অর্ধলক্ষ জাপানী তাত্ক্ষণিক মৃত্যুবরণ করে এবং যাদের ৯৯.৯৯ শতাংশ ছিল বেসামরিক মানুষ। মার্কিন প্রেসিডেন্ট হ্যারি এস ট্রম্যানের নির্দেশে চালানো এই ঘৃণ্য হামলায় তত্কালীন মিত্র শক্তি বলে পরিচিতরা সকলেই খুশি হয়েছিল। তাই মাত্র ২ দিনের ব্যবধানে আরেক ঘনবসতিপূর্ণ নাগাসাকিতে ফ্যাটম্যান বোমা ফেলে আরো প্রায় আধা লাখ মানুষ খুন করে আমেরিকা। অথচ এই বর্বর কর্মকাণ্ডের জন্য আজো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ্যে ক্ষমা চায়নি। অথচ মানবতার নাকি বিশাল ধ্বজাধারী এ রাষ্ট্র!
২।
হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে মার্কিন আক্রমণের 'যৌক্তিকতা' তুলে ধরতে মার্কিন সেবকরা 'বিশ্বযুদ্ধ বন্ধ করতে এর বিকল্প ছিলনা' এই বয়ান দেয় যা সর্বস্ব মিথ্যাচার। প্রকৃতপক্ষে জাপানীরা আত্মসমর্পনের জন্য প্রস্তুত ছিল। তারা শুধু চেয়েছিল তাদের সম্রাটের সম্মান। এর কারণ জাপানীরা সম্রাট হিরোহিতোকে মনে করতো ঈশ্বরের অবতার বা ঈশ্বরের সমতুল্য। অথচ জার্মানী ইতালীর সাথে যুদ্ধবিরতি ও আলোচনা চালালেও জাপানীদের সাথে আলাপে মোটেই আগ্রহ ছিলনা পঞ্চশক্তির। কারণ এই সবকটি মাতব্বরের অযাচিত খবরদারি জাপান চ্যালেঞ্জ করেছিল। প্রাচ্যের মধ্যে জাপানই সেসময় টেকনোলজিতে পশ্চিমকে ছাড়িয়ে যেতে পারতো এবং তার প্রমাণ প্রযুক্তিতে জাপান এখন দেখাচ্ছে।
যে কথা বলছিলাম, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর পরিস্থিতিতে বৈশ্বিক ক্ষমতার ভাগবাটোয়ারায় পাঁচটি দেশ শরীক হল। আমেরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্স, রাশিয়া ও চীন।
তত্কালীন যুদ্ধবিধ্বস্ত পৃথিবীতে কেবল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিই ছিল শক্তিশালী, আর সবকটি দেশ বিধ্বস্ত। কিন্তু সামরিক দিক দিয়ে প্রায় সবার যুদ্ধ করার সমান দক্ষতা ছিল। এ কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে এমন কিছু করতে পরিকল্পনা করতে হয়েছিল যা অন্যদের ক্ষমতার আওতায় নেই। ইহুদীবাদীরা সহায়তা করলো পারমাণবিক বোমা তৈরিতে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এ বোমার প্রয়োগ ঘটিয়ে জানিয়ে দিতে চাইলো যে, বিশ্বে খবরদারি বা মাতব্বরি করার একচ্ছত্র অধিকার আমার , কারণ আমার অস্ত্র সর্বাধিক প্রাণঘাতী এবং আমি সবাইকে হত্যা করে ফেলতে পারি।
তত্কালীন যুদ্ধবিধ্বস্ত পৃথিবীতে কেবল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিই ছিল শক্তিশালী, আর সবকটি দেশ বিধ্বস্ত। কিন্তু সামরিক দিক দিয়ে প্রায় সবার যুদ্ধ করার সমান দক্ষতা ছিল। এ কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে এমন কিছু করতে পরিকল্পনা করতে হয়েছিল যা অন্যদের ক্ষমতার আওতায় নেই। ইহুদীবাদীরা সহায়তা করলো পারমাণবিক বোমা তৈরিতে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এ বোমার প্রয়োগ ঘটিয়ে জানিয়ে দিতে চাইলো যে, বিশ্বে খবরদারি বা মাতব্বরি করার একচ্ছত্র অধিকার আমার , কারণ আমার অস্ত্র সর্বাধিক প্রাণঘাতী এবং আমি সবাইকে হত্যা করে ফেলতে পারি।
৩।
ঠিক একারণেই আমেরিকা পারমাণবিক হামলা চালায় এবং হামলাটি বিশ্বযুদ্ধ যারা শুরু করেছে সেই জার্মানী কিংবা ইতালীতে চালায়নি ওরা, কারণ শ্বেতাঙ্গ রক্ত ঝরাতে ইচ্ছুক ছিলনা ওরা। আর আক্রমণের জন্য এমন দেশ খুঁজতেছিল যেটির সীমান্তে কোন শ্বেতাঙ্গ বা খ্রীস্টান অধ্যুষিত দেশ নাই। তাই ওরা বৌদ্ধ ধর্মে বিশ্বাসী প্রাচ্যের জাপানকে হত্যাযজ্ঞের জন্য বেছে নেয়। একটু ভাবেন তো ক্রিটিক্যালি যে, এই বিশ্বযুদ্ধটি বাঁধলো পশ্চিমাদের পারস্পরিক জাত্যাভিমান থেকে, জার্মানদের ইহুদী বিদ্বেষ থেকে এবং পরে জাপানী সম্রাট হিরোহিতো সেখানে যোগদান করলো অথচ চূড়ান্ত ক্ষতিপূরণটি দিতে হলো জাপানীদের। এর কারণ জাপান হচ্ছে প্রাচ্যের দেশ, কেবল পশ্চিমা হওয়ার কারণে যুক্তরাষ্ট্র জার্মানী বা ইতালীতে আক্রমণ চালালোনা। আমি কয়েকটি বই পড়েছি মার্কিন ভিন্ন মতের লেখকদের যারা দাবি করেছেন অকাট্য যুক্তি দিয়ে যে, জাপান যে মার্কিন পার্ল হারবার বিমান ঘাঁটিতে আক্রমণ করেছে এটি ছিল সাজানো ঘটনা। এই অজুহাতে জায়োনিস্ট আমেরিকা এটমিক বোমা বিস্ফোরণের সুযোগ পায় এবং সরাসরি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জড়িয়ে নিজের শক্তিমত্তা প্রকাশ করার মঞ্চ তৈরি করে। এ বিষয়ে আমার একটি গবেষণা নিবন্ধ আছে।
৪।
টেক্সে মেয়ারের মত অনেক কনস্পিরেসি থিওরিস্ট বলেন, ইহুদীরা জাপানের খ্রীস্টান অধ্যুষিত ঐ দুটি শহর তথা হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে আক্রমণ করার প্রস্তাব দেয়। এ বক্তব্য নিয়ে মূলধারার গণমাধ্যম আলাপে অনাগ্রহী কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা প্রভাবশালী গণমাধ্যমের ৯৬% এর মালিকানা ইহুদী অথবা ইহুদীবাদীদের। তাই এই মানববিধ্বংসী বোমা তৈরি, ফেলার পরিকল্পনায় ইহুদীদের ভূমিকার কথা আলোচনায় তেমন আসেনা। মার্কিন শক্তির উদ্ভব হওয়ার কারণেই ১৯৪৮ সালে ক্যান্সার অবৈধ ইসরাঈলের জন্ম হয়। সেই অবৈধ সন্তানই কালক্রমে মাতা ব্রিটেন ও পিতা আমেরিকার উপর প্রভুত্ব করছে। এখন ইউরোপ ও আমেরিকায় ইহুদীদের নির্দেশ ছাড়া কিছুই হয়না, কে ক্ষমতায় টিকবে আর কে কেনেডির মত খুন হবে তা নির্ধারণ করে দেয় ইহুদী লবি। এই লবির শক্তির কাছে মাথা নোয়া পশ্চিম। সে কারণে পশ্চিমে একটি কথা প্রচলিত যে, এখানে তুমি ঈশ্বরের সমালোচনা করতে পারো , ইহুদীদের নয়।
৫।
সব শেষে এটাই বলতে চাই, মানব ইতিহাসের জঘন্যতম এই হামলা মানবিক কারণে চালানো হয়নি, এটির পিছনে অমানবিক অর্থাত্ শক্তি প্রদর্শনের ইচ্ছা লুকায়িত ছিল এবং সে প্রকল্পে প্রাথমিকভাবে ট্রম্যান, রুজভেল্ট ও রথচাইল্ট পরিবার সফল হয়েছিল। New World Order তৈরি হয়েছিল এবং এর কেন্দ্রে ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ১৯৪৫ সালের ৬ ও ৯ আগস্ট ছিল ইউরোপ থেকে বৈশ্বিক ক্ষমতা আমেরিকার চলে যাওয়ার উপলক্ষ। সেই সাথে প্রাচ্যের উপর ক্ষমতার ছড়ি ঘোরানোর মর্মান্তিক অসাধু উপায় ছিল এই হামলা। এ হামলাই জাতিসংঘ তৈরি করে এবং আমেরিকায় এর সদর দপ্তর করতে বাধ্য করে। এ হামলা ওয়ার্ল্ড ব্যাংক ও আইএমএফ তৈরির মঞ্চ তৈরি করে বিশ্ব অর্থনীতির নিয়ন্ত্রণ তুলে দেয় বিশ্বায়ন নামের নয়া সাম্রাজ্যবাদের সমর্থকদের হাতে। সে কারণে ১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট বিশ্ব ক্ষমতা কাঠামোর একটি ঐতিহাসিক পরিবর্তন রেখা। এ রেখা লাখ লাখ মানুষের রক্ত মাড়িয়ে মার্কিন প্রশাসনের মানবাধিকারের কথা বলাকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়!
১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট নিহত প্রতিটি জাপানী নাগরিকদের আত্মার প্রশান্তি কামনা করি। জাপান হচ্ছে বাংলাদেশের সত্যিকারের বন্ধু রাষ্ট্র যারা আমাদের দেশকে বিনা সুদে বিপুল পরিমাণ অর্থ দেয়। জাপানীদের সঙ্গে আমাদের পতাকার মিল রয়েছে। জাপানীদের সঙ্গে যেন বাংলাদেশীদের কলিজার বন্ধন রয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত বাংলাদেশী ও জাপানীদের বিনম্র শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি।