অবশ্যই দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবোধ উত্তম এবং একটি দেশ ও জাতির উন্নয়নের অত্যাবশ্যক পূর্বশর্ত। বিশ্বায়ন মানে সুশীল সাম্রাজ্যবাদ। পশ্চিমা বুদ্ধিবৃত্তিক দাসদের কাছে দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবাদকে মেনে নেওয়ার প্রবণতা কম বা একেবারেই নেই। কারণ জাতীয়তাবোধহীন এরা না ব্যবহার করে দেশের পণ্য, না চর্চা করে নিজের সংস্কৃতি, না গেীরব করে নিজের আত্মপরিচয় নিয়ে। এদের সব কিছুর মানদণ্ড ইউরোপ ও আমেরিকা এবং ক্ষেত্রবিশেষ ইউরোপ-আমেরিকার অন্ধ অনুসারী দিল্লি। পশ্চিম শিখিয়েছে আন্তর্জাতিকতাবাদ, অতএব এর শরবত খাও। এখন যে পশ্চিমই ফের জাতীয়তাবাদে ফিরে যাচ্ছে তা এই সাম্প্রতিক জ্ঞানে পিছিয়ে থাকা দাসদের দৃষ্টিগোচর হচ্ছেনা। কারণ পশ্চিম প্রভুরা এ বিষয়ে এখনো প্রোপাগাণ্ডা শুরু করেনি। ক্যালিফোর্নিয়া থেকে কাতালোনিয়া, ভেনিতো থেকে এ্যরাগান, স্কটল্যাণ্ড থেকে কসোভা বারবার বিশ্বায়নের পুঁজিবাদী মুখে থাপ্পড় দিচ্ছে। এদেশের আন্তর্জাতিকতাবাদীদের তাতে হুঁশ ফিরছেনা। সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের কবলে পড়ে স্মার্ট সাজা শিকড়হীন অপপ্রজন্ম যেমন হিন্দি সিনেমা দেখে ভারতের দাসত্ব করছে, প্রথম আলো গং যেভাবে সংবাদের মাধ্যমে ভারতের বলয় গড়ে তুলতে মগজে, মিডিয়া ও লেখকেরা ইউরোপ ও আমেরিকার দাসত্ব করতে আমাদের উপর এজেণ্ডা সেট করছে। তাদের মোকাবেলা করতেই ফের দেশে উগ্র জাতীয়তবাদ তথা প্রকৃত জাতীয়তাবাদ বা দেশপ্রেমের উদ্ভব ঘটা সময়ের দাবি।
বিশ্বায়ন হলে কেবল বিশ্বের ১% সম্পদ কুক্ষীগত করে রাখা ব্যবসায়ী ও কয়েকটি জাতি ও তাদের ইনটেলেকচুয়াল স্লেভরাই খুশি। কিন্তু এই বিশ্বায়ন প্রতিটি স্বনির্ভর জাতিকে সাম্রাজ্যবাদীদের উপর নির্ভরশীল করছে। সবুজ বিপ্লব নামের কৃষি ধ্বংসকারী পশ্চিমা প্রকল্প এই দেশের সরল কৃষকের উপর চাপিয়ে দিয়ে আজ কেন বাংলার জমির অনুর্বরতা এদের চোখে পড়েনা? কেন ফসলের বৈচিত্র্যহীনতা এরা দেখেনা? কেন খাদ্যে বিষ? কেন বীজের অভাবে পড়ে কিনতে হয় বীজ অপরের কাছ থেকে দেশের কৃষককে? কোথায় তাঁত? কোথায় মোটা চালের ভাত? এসব ধ্বংস করছে পশ্চিমা আধুনিকায়নের এজেন্ট তথা কথিত শিক্ষিত দালালেরা। এদের প্রতিরোধ করতেই দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবাদ দরকার। বিশ্বব্যাংক যখন পদ্মা সেতু করতে টাকা দেবেনা বলে জানালো তখন শেখের বেটি যে নিজেদের অর্থায়নে এই সেতু করার ঘোষণা দিলেন সেটাই উগ্র দেশপ্রেম। তাঁর সাথে এক হয়ে আমরা ছাত্ররা যখন টাকা তুলে তহবিলে জমা দিলাম তা দেশপ্রেম। বাজারে গিয়ে দোকানদারকে পণ্যটি দেশি কি না সেটি জানতে চেয়ে দেশী পণ্য কেনাটাই দেশপ্রেম। টেলিটক সিম ব্যবহার করাই উগ্র দেশপ্রেম। পাকিস্তান ও ভারতের প্রতি পিরিত ভুলে বাংলাদেশকে ভালবাসাই উগ্র দেশপ্রেম।
বিশ্বায়নের সবচেয়ে বড় শত্রু জাতীয়তাবোধ। সে কারণে প্রকৃত দেশ্রপ্রেম বা জাতীয়তাবাদকে দানবায়ন করে একে ‘উগ্র দেশপ্রেম বা উগ্র জাতীয়তাবাদ’ ট্যাগ দেয় বিশ্বায়নের শরবত খাওয়া সাম্রাজ্যবাদের দাসেরা। তারা মিথ্যা ছড়ায় যে, উগ্র জাতীয়তাবাদীরা অন্য জাতির প্রতি ঘৃণা ছড়ায়। এটা চরম মিথ্যাচার। উগ্র জাতীয়বাদীরা বা উগ্র দেশপ্রেমিকেরা সব সময় নিজের জাতির প্রাপ্ত সম্মানের উপর ভিত্তি করে কাজ করে। অন্য জাতির সাথে আত্মমর্যাদার সাথে সম্পর্ক, কূটনীতি বা বন্ধুত্ব করার কথা বলে উগ্র জাতীয়তাবোধ। নিজের দেশ ও জাতির উপর আক্রমণ আসলে তা প্রতিহত করতে যেীক্তিকভাবেই উগ্রতা ধারণ করা উচিত। মুক্তিযুদ্ধে আমাদের প্রিয় পূর্বপুরুষেরা পাকি হারামীদের বর্বরতার জবাব উগ্রতা দিয়েই দিয়েছে, সুশীলরা তখন ব্যস্ত ছিল পাকিস্তান রক্ষায় বিবৃতি ও ফতোয়াবাজি করায়। এখনো এরা দেশের স্বার্থে দেশের প্রেমকে খারাপভাবে চিত্রিত করতে চায়। তাদের নির্লজ্জ অপপ্রচার ও কথায় কান দেবেননা।
এই দাসেরাই পুস্তকে, সেমিনারে, টকশোতে আমাদের ছবক দেয়, ‘উগ্র দেশপ্রেম খারাপ’, যদিও উগ্র দেশপ্রেমিকরা যদি উগ্রভাবে দেশের পণ্য ও সংস্কৃতিকে সবার উপরে স্থান দেয় তাতে কি সমস্য তা কখনোই জানায়না। কারণ ইহাদের একখান ডিগ্রি বাইরের, সন্তানেরা ভিন্ন সংস্কৃতির শিকড়হীন অথবা ইহারা বাইরে গিয়ে দাসত্বের চিন্তাভাবনায় জড়িত। সে কারণে এই দেশে নিয়ে কেউ বিপুল আশার কথা শোনালে, কেউ এই দেশের পণ্যকে বিশ্বমানের করতে চাইলে, কেউ এই জাতির সমৃদ্ধ ইতিহাস ও সংস্কৃতির কথা শোনালে এদের গা জ্বলে, খুব জ্বলে। তারপর কোন কিছু না পেয়ে বলে উগ্রফুগ্র ইত্যাদি। আদতে উগ্র দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবোধ রাষ্ট্রের অধিকাংশ ধারণ করলে সেটিই হবে প্রকৃত দেশপ্রেম। নিজের মা ও মাটির শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণাকে যারা নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করে এসেছে তাদের পরাজিত করা সময় এসেছে। এই সুবিধাবাদী শ্রেণীটাই ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযোদ্ধাদের উগ্রবাদী বলে বিবৃতি ও ফতোয়া দিয়েছিল। তাদের উত্তরাধুনিক প্রেতাত্মাই উগ্র দেশপ্রেম ও উগ্র জাতীয়তাবাদের অযৌক্তিক নিন্দা প্রচার করে বেড়ায়। এদের পরাজিত করতে হবে। স্বদেশপ্রেম ফিরিয়ে আনতে হবে। আব্দুল হাকিমের মত হৃদয় দিয়ে বলতে হবে:
যে সব বঙ্গেত জানি হিংসে বঙ্গবাণী
সেসব কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি।
অতএব, দেশের ইতিহাস, পণ্য, সংস্কৃতি, সংগীত, কৃষিব্যবস্থা, সংগ্রামকে পৃথিবীর সব জাতির চেয়ে উপরে রাখুন। উগ্রভাবে দেশকে, জাতিকে ও দেশের মাটিকে ভালবাসুন। সব বিশ্বায়নপন্থী, আধিপত্যবাদী, পুঁজিবাদী স্বার্থপর ভোগবাদী ব্যক্তিকেন্দ্রীক পশ্চিমা বুদ্ধিবৃত্তিক সেবাদাসদাসীদের অপতত্বকে বাতিল করে লাল-সবুজ পতাকার বিজয় ঘোষণা করুন।
0 Comments