সর্বশেষ

ডুব চলচ্চিত্রের ২৫ টি ভুল ও মোস্তফা সারোয়ার ফারুকীর ডুবে যাওয়ার বীণ


ডুবের যৌক্তিক সমালোচনা। ডুব দেখে হতাশ। নাটককে সিনেমা বলে খাওয়ানোর প্রতি নিন্দা। এটি এমন একটি চলচ্চিত্র যা নিয়ে অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করেছে পরিচালক মোস্তফা সারোয়ার ফারুকী ও তার প্রতি অনুরাগী এক শ্রেণীর গণবিরোধী সংবাদমাধ্যম। ডুব সত্যি বলতে একটি বাজে মানের চলচ্চিত্র।

ডুব এক কথায় একটি নিম্নমানের নাটক। শট,সংলাপ, পরিচালনা ও গভীরতা সব মিলিয়েই নিম্নমানের। এটিকে অহেতুক অতিরঞ্জিত করে বৃদ্ধি করা হয়েছে। ফারুকীর এই ফালতু জিনিস নিয়ে লাফালাফি আর কত? শাওন আপত্তি না জানালে এই নিম্নমানের নাটক দেখতে কেউ হলে যেতো বলে মনে হয়না। ফারুকীর উচিত শাওনকে গিয়ে ধন্যবাদ দেয়া, না হলে চালানও উঠতোনা।


তারকোভস্কি বা আব্বাস আব্বাস করা ফারুকী যে একটি মাকাল ফলের চেয়েও অধম নির্মাতা তার উজ্জ্বল প্রমাণ ডুব। নন লিনিয়ার মুভি বলে যা খাওয়ালো তা নন লিনিয়ার মুভির ইতিহাসের কলঙ্ক।
২৫ টি অসঙ্গতি:
১। ১৯৯০ সালের সেট কোথায়? ১৯৯০ সাল টাইমলাইন , অথচ ঢাকার প্লট ২০১৭ সাল। পুলিশের ড্রেসটাও ২০১৭ সালের পুলিশ। কি আর বলবো।

২। ১৯৯০ সালের পোশাক-আশাক কোথায়?

৩। ১৯৯০ সালের মোটা বড় ফোন কোথায়? অমন কিউট ফোন ৯০ এ ফারুকী দিয়ে আসছিল?

৪। ১৯৯০ সালে পুলিশের পোশাক কি এমন ছিল, হে ফারুকী গং? এই সেন্স নিয়ে পরিচালনায় আসতে লজ্জা করা উচিত।

৫। বাবা মরে যাওয়ার খবর শুনে ডিম পোচ রোজ রোজ ভাল লাগেনা বলবে ছেলে মেয়েরা এই গাঁজাখুরী ভাবনা আসলো কেমনে ফারুকীর?

৬। আবেগের গভীরতা দেখাতে যে ক্লোজ শটের ব্যবহার করা হয় তা ফারুকীর কি জানা নেই? পুরো ছবিতে একটিও ক্লোজ আপ বা এক্সট্রিম ক্লোজআপ শট নেই। অথচ ছবিটি নাকি ইনার মিনিং ফোটাবে। হাস্যকর

৭। লেফট থেকে বা রাইট থেকে প্যান করে একটি লম্বা শট নেয়া ছাড়া আর কিছু কি নেই ফারুকীর? মানুষ কি ক্যামেরা ঘোরানো দেখতে হলে যায়?

৮। সাউন্ড কোয়ালিটি দুর্বল। অনেকেই কথা শুনতে পারেনি। চলচ্চিত্রের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ যে সংলাপ তা ভুলে গেছিলেন কি? সংলাপ এত কম শব্দে যে ভিজুয়াল প্রেজেন্টেশনটি ব্যাহত হয়েছে।

৯। বাবার লাশের পাশে সাবেরির কান্না দেখে হাসি পায় কেন? আবেগ কই? মৃত বাবার মুখটা একবার দেখবেনা মেয়ে? এত প্রিয় মেয়েটা কান্না করলো এত পরে? বাঙালি মেয়েরা বাবা মা মরলে যে বুক ফেটে কাঁদে তা কই? পোশাক আশাক মৃত্যু দিনেও সকলের ঝকঝকে কেন?

১০। মায়া কোচিং ক্লাস নিয়ে জীবীকা নির্বাহ করে আর তার মেয়ে বাথটাবে গোসল করে, এই হচ্ছে ফারুকীর মত লোকের সেন্স। সরাসরি হুমায়ূনের কাহিনী ছাড়া এই প্লটটাই সস্তা ও বাজে।


১১।এই ছবি কোন আগামাথা কিছুই হয়নি। এটি সুররিয়ালিস্ট ছবি না যে, উল্টাপাল্টা বলে আর্টের কথা বলবে। এটি রিয়েলিস্টিক ছবি। তবে কোন রিয়েলিটিই নেই। নীতুর যে পরিবার বলে কিছু আছে তা যেন সকলেই ভুলে গেছে। ফারুকী কি দর্শকদের বোকা ভেবেছেন? কি বোকা ভাবনা ফারুকী গংয়ের। না আছে এর কোন নন্দনতত্ত্ব না আছে কাহিনী, না আছে সংলাপ বা শট। এ দিয়ে ফারুকীর অযোগ্যতার চূড়ান্ত উপস্থাপন হয়েছে এই যা।

১২। বাচ্চা ছেলের সাথে সিরিয়াস মুহূর্তে জাভেদের ইংরেজি বলাটা হাস্যকর।

১৩। এত বেশি উপর থেকে শট নেওয়ার কোন যেীক্তিকতা ছিল কি? ছিলনা। কেবল বান্দরবানের দৃশ্যগুলোাই ভাল ছিল

১৪। বাবা মরে যাওয়ার পরে কোচিং থেকে আনতে যাওয়ার সংলাপটি খুবই অপ্রাসঙ্গিক এবং অনিপুণতার পরিচায়ক এবং ভুল।

১৫। সুমীর গানটির করুণ মৃত্যু হয়েছে ফারুকীর নিম্নমানের পরিচালনায়



১৬। মৃত্যুর পর জাভেদের জানাজার সময় ছোট ভাই যে সংলাপ বললো, ‘ আপনারা জানেন আমার বড় ভাই জাভেদ সাহেব ইন্তেকাল করেছেন’ কোন জাতীয় নিম্নমানের সংলাপ তা কি ফারুকী বুঝেছে? স্ক্রিপ্টবিহীন চলচ্চিত্রের এমন করুণ পরিণতি হয়। মৃত ব্যক্তির জানাযায় সব সময় বলা হয়, দেনা থাকলে তা মিটিয়ে দেবো আমরা। সেই কথাটিই নেই। অধিকাংশ সময় সংলাপকে গুরুত্ব দিয়ে ফ্রেমিং করা হয়েছে অথচ সংলাপ খুবই নিম্নমানের।

১৭। ননলিনিয়ার ছবির ইতিহাসে সবচেয়ে খারাপ ছবি এটি। একটি শটের সাথে অন্য শটের যে মন্তাজ তার কোন ধরনের রিয়েলিস্টিক রিলেশন নেই। কিংবা সুররিয়াল তো নয়ই। জাভেদ হাসান যদি চলচ্চিত্র নির্মাতা হয় তবে তার চলচ্চিত্রের সাথে সংশ্লিষ্টতা কেবল শাশুড়ির ফিল্ম বানায় পর্যন্ত হবে কেন?

১৮। বায়োপিক না হোক মূল কাহিনীর নির্যাস হুমায়ূন আহমেদ এর জীবন থেকে নেওয়া এটি ফারুকী স্বীকার করেছেন। তো সেখানে যথন নয়নতারার কথা আসলো সেই নয়নতারা আসলে কি সেটি কি জানাতে হবেনা? নয়নতারা কি জায়গা না কবরস্থান ,নাকি ঢাকায় না কি সৈয়দপুর তা কে কিভাবে জানবে? এটি মাথায় ছিলনা ফারুকীর?



১৯। পুরো ছবিতে মোস্তফা সারোয়ার ফারুকীর চরম পুরুষতান্ত্রিক রূপটি পাওয়া গিয়েছে। তিনি এমনভাবে জাভেদকে পোর্ট্রে করেছেন যেন , সব দোষ নীতুর। তো নীতুর প্রতি জাভেদের কোন আবেগ নেই? ইশ, কি পুরুষতান্ত্রিক চিন্তা। নীতুকে নেতিবাচক দেখানোর জন্য তার হাতে তুলে দিয়েছে ফারুকী একের পর এক সিগারেট। এটি সিনেমাতে একটি পুরুষতন্ত্র ও সিস্টেমের দাস ফারুকীকে উপস্থাপন করেছে। পুরুষতন্ত্রের মুখপাত্র ফারুকী।

২০। নীতু যখন জাভেদকে জড়িয়ে ধরে এবং প্রথমবারের মত জড়িয়ে ধরে, তার পরের শটেই মৃত্যু আনার কোন যেীক্তিকতা নেই। এখন ফারুকী বলতে পারে, এখানে আর্ট আছে। না নেই, কারণ দর্শককে এক সেকেন্ডও ভাবার না টাইম দিয়ে মেরে ফেললো? এর নাম রিয়েলিস্টিক ফিল্ম? এইটা ফারুকী মার্কা খিচুড়ি ফিলম।

২১। ছবিতে সময় ও স্থানের মধ্যে যে দূরত্ব বা সম্পর্ক তার কিছুই ঠিক ছিলনা। কোথায় মরছে আর কোথায় বাঁচছে তার কোন পার্থক্যই বোঝা দায়। যে কোন ব্যক্তির মনে হবে পুরো সিনেমা একটি বাসায় শ্যুট করা। রিক্রিয়েটেড স্পেস তৈরি করতে অদক্ষতার এমন নিপুণতা না দেখালেও চলতো।

২২। পুরো সিনেমাটি দেখানো হয়েছে দুই বান্ধবীর দ্বন্দ্ব হিসেবে। ফারুকীর এই কুৎসিত চিন্তাটা অভিনব। তবে তা ফুটিয়ে তুলতে সে ব্যর্থ হয়েছে। না ছিল দুই জনের মধ্যে কোন হিংসাত্মক মনোভাব, না ছিল কোন সরাসরি ঝগড়া-দ্বন্দ্ব দৃশ্য। তারপর ২০১৭ সালে পুনর্মিলনীতে তারা পাশাপাশি বসে ছবিকে ড্রাইভ করলো। তো ড্রাইভ করাতে হলে যে ড্রাইভারকে প্রতিষ্ঠিত করতে হয় তা জানা ছিলনা?

২৩। পুরো সিনেমা একটি উৎকৃষ্ট হ-য-ব-র-ল। কার পয়েন্ট অব ভিউ থেকে সিনেমা বলা হলো সেটি কোন দর্শকই বুঝবেনা। সেই পুরোনো দিনের কথা, কল্পনায় সিনেমা হয়েছে ভেবে দর্শকরা তাই ফারুকীকে বকা দিতে দিতে বের হয়েছে।

২৪। ‘তোমরা কি কেউ বুঝতে পারছেনা চাচ্চু , ও এটা কেন করছে?’ বা ‘এই দুই ঘণ্টার মধ্যে শেষ ইচ্ছে ম্যানুফ্যাকচার্ড হয়ে গেলো’ মার্কা ঘৃণামূলক সংলাপ মূলত ছিল নীতুর প্রতি ঘৃণা তৈরি করতে। এটি সত্যিই দুঃখজনক যে, চলচ্চিত্রটি দেখে মানুষ শাওনের প্রতি ঘৃণা অনুভব করতে পারে। শাওন সন্তানের মা। তার প্রতি যে ঘৃণার বীজ উৎপাদনের চেষ্টা ফারুকী করেছেন সেটি মনে হয় সফল হয়নি।

২৫। দিন শেষে এটি একটি শর্ট ফিল্ম বা নাটক হওয়ার যোগ্য যাকে টেনে টুনে জোর করে সিনেমা বানিয়েছে ফারুকী।

ধন্যবাদ। ফারুকীর প্রতি অনুরোধ থাকবে দয়া করে , নাটক বানান। স্ক্রিপ্টবিহীন ফোর টুয়েন্টি মার্কা নাটকে আপনাকে মানায়। সেখানে স্ক্রিপ্ট লিখতে হয়না, সংলাপের উপর জোর নেই, ভাষাশৈলী নিয়ে ভাবতে হয়না , সেখানে যান। আপনার জন্য ঐ সস্তা নাটকই মানানসই। চলচ্চিত্র এত বড় একটি বিষয় যেটি আপনার মত ক্ষুদ্র হৃদয়ের মানুষের জন্য প্রযোজ্য নয়। আপনার মধ্যে সততারও অভাব আছে। শাওনের আপত্তি আপনার সেই অসততার দেয়ালে আঘাত করেছে এবং দেখেন পুরো সিনেমায় ফিল্মমেকার জাভেদকে আপনি কারো পয়েন্ট অব ভিউ থেকেই ব্যাখ্যা করতে পারেনি। বরং যে কেউ সিনেমার আগাগোড়া বুঝবেনা। লজ্জাজনক ব্যাপার এটি। যাহোক, মিডিয়া আপনাকে নিয়ে যে মিথ্যা মিথ তৈরি করেছিল তার মুখোশ সাধারণ মানুষ খুলে দেবে।  আপনার পুরো সিনেমা একবার দেখে এই অবস্থা। আর যখন সকলের কাছে চলে আসবে তখন না জানি আরো কত কিছু বের হয়। সাইলেন্ট ফিল্ম বলে এইসথেটিক সেন্সের কল্পিত দেয়াল দিয়ে এবার আর জনতার আদালতের থেকে মনে হয় আপনি অপদস্থ না হয়ে যাবেননা।

নাটককে টেনটুনে সিনেমা হিসেবে দেখানোর এই নষ্ট প্রচেষ্টার প্রতি ধিক্কার জানাই। এটা মূলত মোস্তফা সারোয়ার ফারুকীর বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগতে ডুবে যাওয়ার বীণ বাজালো।
পাঠ অনুভূতি

Post a Comment

0 Comments