সর্বশেষ

প্রাচ্য ভাবনা ও পশ্চিমা সভ্যতার (?) অসারতার কিছু কথা


সোজাকথায় বললে এই পৃথিবীর তাবত্‍ কল্যাণকর কাজ, উদ্ভাবন ও নীতি এসেছে প্রাচ্য থেকে। প্রাচ্যকে বাদ দিয়ে পৃথিবীর অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজনীতি, ইজম, বাদবিবাদ, ডিসকোর্স, কাউন্টার ডিসকোর্স কিছুই হতে পারেনা। প্রাচ্য যখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে কলা ও সাহিত্য চর্চা করেছে পশ্চিম তখন না খেয়ে পথে পথে বর্বর জীবনযাপন করেছে। প্রাচ্য যখন সোমপুর বিহার, নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় গড়েছে পশ্চিম তখন শিক্ষা কি তা জানেনা। প্রাচ্য যখন সোনারগাঁয় পানাম নগর গড়েছে, ইউরোপ ও আমেরিকা তখন পাহাড় পর্বতে বাস করে কিংবা আমেরিকা বলে তখন কিছু এই দুনিয়ায় নেই। এখান থেকেই পশ্চিম গুহামানবের খোঁজ পায়। নিজেদের পূর্বপুরুষদের বর্বর ও অসহায় জীবনযাপনের করুণচিত্রকে ইতিবাচক করতে প্রস্তর যুগ ইত্যাদি কাল্পনিক শ্রেণী করে। অথচ এই প্রশ্ন কেউ করেনা যে বাংলাদেশ বা ভারত বা আফ্রিকা বা মধ্যপ্রাচ্যের পাহাড়গুলায় গুহা খুব কম বা থাকলেও মানববসতির চিহ্ন নেই। তাহলে এখানে জনমানব ছিলনা? পশ্চিমা পন্ডিত ও পশ্চিমপন্থীরা এর উত্তর দিতে পারেনা

আবার সভ্যতার যে সূতিকাগার তথা মেসোপটেমিয়া তথা ইরাকে অনেক আগে থেকেই সভ্য জীবনযাপনের চিহ্ন পাওয়া যায়। বাংলার উয়ারী বটেশ্বর ইউরোপ ও আমেরিকার জানা ইতিহাসের পূর্বের কিছু। পশ্চিমা অধ্যাপক ও গবেষকরা একদিক দিয়ে বলছে মানবসভ্যতার উদ্ভব ও বিকাশ নদীকেন্দ্রিক, আবার তারাই বলছে পাহাড়, প্রস্তর, আগুনমানবের কল্পগাঁথা। হ্যাঁ,এটা অস্বীকার করা হচ্ছেনা যে মানুষ পাহাড়ে বসবাস করেনি, করেছে তবে অবশ্যই তা জেনারেলাইজড করে সকল মানবজাতির উপর চাপানো যাবেনা। প্রাচ্য যখন সংস্কৃতি চর্চা করেছে, সংগীত, খাবার, বিশ্বাস, পোশাক দিয়ে উন্নত সভ্যতা গড়েছে দরিদ্র পশ্চিম তখন বেঁচে থাকার করুণ যুদ্ধে ব্যস্ত ছিল। প্রাচ্যকে প্রতিহত করতে কল্পিত সব তত্ব প্রচার করছে পশ্চিম এবং তৈরি করছে পশ্চিমাপন্থী শিক্ষক, গবেষক, চাকুরীজীবী, বুদ্ধিজীবী, সরকার ইত্যাদি। প্রাচ্য তার ঐতিহ্য খুঁজে একবার দাঁড়িয়ে গেলে পশ্চিমের টিকে থাকার যোগ্যতা নেই। ইতিহাস বলে অতীতে কখনোই প্রাচ্যের সামনে প্রতিযোগিতায় পেরে ওঠেনি পশ্চিম। প্রাচ্য সৃজনশীল ও স্বয়ংসম্পূর্ণ। পশ্চিমের এই ভিত্তিহীনতা ও অনুৎপাদনশীল বর্বর অতীতকে ঢেকে রাখতেই প্রাচ্যকে বর্তমানে পশ্চাৎপদ বলতে চায়। দেয় আমার আপনার স্বয়ংসম্পূর্ণ জীবনে তাদের অমানবিক, অনৈতিক জীবনযাপনের মানদণ্ড। সেটি কেউ বুঝে খাচ্ছে নিজ সংকীর্ণ স্বার্থে আর কেউ না বুঝে গিলে নিজের স্বকীয়তাকে ধ্বংস করছে।

এই আদিম ইত্যাদি সমাজ ব্যবস্থা বা বিভিন্ন যুগ মূলত পশ্চিমা কাল্পনিক তত্ত্ব।এগুলোর বৈজ্ঞানিক ভিত্তিও নেই। মর্গানের আদিম সমাজ পড়েছি, কোথাও বিজ্ঞানভিত্তিক প্রমাণ নেই।ডারউইনের খুনীতত্বের কোন প্রমাণ নেই, ফ্রয়েডের বিকৃত মানসীকতার কোন প্রমাণ নেই, পুঁজিবাদ ও গণতন্ত্রের ব্যর্থতা এখন সর্বজনবিদিত। পশ্চিম তার মেশিন বিক্রি করতে মানবসভ্যতার প্রকৃতির সাথে নিবিড় সম্পর্ককে ধ্বংস করেছে, বীজ ধ্বংস করেছে। জিএম ফুডের নামে মৃত্যু খাওয়াচ্ছে, সারের নামে বিষ খাওয়া শিখিয়েছে। উর্বর বসুমতিকে অনুর্বর করেছে। বোমা এনেছে, এইডস এনেছে, কথিত সভ্য দুনিয়ায়ও গণহত্যা এনেছে। মানুষকে বিদ্যুৎ বা টেকনোলজির উপর নির্ভর করে প্রকৃতিতে অসহায় করে তুলেছে। সব মিলিয়ে প্রাচ্যর স্বয়ংসম্পূর্ণতা ধ্বংস হওয়া মানে পৃথিবীর কল্যাণকামীতা ধ্‌বংস হওয়া। সেটিই হচ্ছে। প্রাচ্যকে প্রান্তীকরণ করতে সমর্থ হয়েছে পশ্চিম। এতে ভূমিকা রেখেছে পশ্চিমা শিক্ষায় শিক্ষিত ভোগবাদী শ্রেণী। তারা নিজস্বতা ত্যগ করে জাতীয়তা ভুলে পশ্চিমের আত্মকেন্দ্রীক অসুস্থ্ সভ্যতার নোংরা স্রোতে গা ভাসিয়েছে। পাশ্চাত্য তার পূর্বপুরুষদের অসহায় ও বর্বর জীবনযাপনকে সমগ্র মানবজাতির উপর চাপাতে যেসব গালগল্প ছড়িয়েছে তা প্রচার করেছে এরা।কারণ প্রাচ্যে যখন সভ্যতা গড়ে উঠেছে পশ্চিম তখন অন্ধকার যুগে। সভ্যতা ও জ্ঞান চর্চায় পেরে না উঠেই পশ্চিম বর্ণবাদী এনথ্রোপলজি দিয়ে প্রাচ্যকে অবদমন করতে চেয়েছে। আহা, কবে বুঝবে এইসব পন্ডিতেরা! কবে! কবে যে!
(আমার প্রাচ্য ভাবনা ১। ৬ নভেম্বর, ২০১৫।)
পাঠ অনুভূতি

Post a Comment

0 Comments