সর্বশেষ

সালমান শাহকে খুন করা হয়েছিল কি? কিছু অমিমাংসিত প্রশ্ন ও উত্তর!

১।
সে একজন ইমন শাহরিয়ার চৌধুরী।
ধুমকেতুর মত এলো,বিদ্যুত্‍ বেগে জনপ্রিয় হলো এবং কৃষ্ণগহবরের মত সবকিছু নিয়ে চলে গেলো!

সালমান শাহ।বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে জনপ্রিয় নায়ক।দেশের প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে যে স্থায়ী শিকড় গেড়ে আছে।জনমনে তাঁর জন্য বরাদ্দ ধ্রুব ভালবাসা।অথচ এই প্রজন্মের সবাই এবং আগের প্রজন্মের অধিকাংশই জানেনা এই মহানায়ককে খুন করা হয়েছিল পরিকল্পিতভাবে।

এ কারণেই ঢাকা এফএমকে সালমান শাহর মা নীলা চৌধুরীর ফোনে দেওয়া সাক্ষাত্‍কারটি তাড়িত করেছে তাঁকে নিয়ে কিছু লিখতে।
২।
এখন থেকে ২১ বছর আগে ১৯৯৩ সালে এই মহানায়কের আবির্ভাব বাংলা চলচ্চিত্রে।সেই সময়ে সালমান শাহ যে কস্টিউম ব্যবহার করেছে সেটা ছিল সময়ের চেয়ে কয়েক যুগ এগিয়ে।ভাবা যায় ৯০ এর দশকে একজন সালমান শাহ যে চশমা,জিন্স প্যান্ট,শার্ট,খোলা জিপ,কোর্ট,টিশার্ট,বাইক ব্যবহার করেছে তা এখন পর্যন্ত অত্যাধুনিক ?তার কলার উঁচু করা,শার্ট গেরো দেওয়া,চুলের বাহারি স্টাইল,দাঁড়ি ও মোচ,ব্রেসলেট পরা,চেইন বের করা,কিম্ভূতকিমাকার ছবি আঁকা বিশাল বড় গেঞ্জি,জুতা ইত্যাদি তখন ছিল চোখে তাক লাগিয়ে দেওয়ার মত ফ্যাশন।বর্তমান আধুনিকতায় এসবকে কি বাদ দেয়া গেছে?
আর তার কথা বলার ধরন?নিখুঁত উচ্চারণ ও প্রমিত ভাষায় এতোটা দক্ষ এখন পর্যন্ত আর কোন নায়কের মাঝে দেখা যায়নি।
এখন থেকে ২১ বছর আগে এক মহানায়ক,এক সুপুরুষ আশির্বাদ হয়ে এসেছিল বাংলার চলচ্চিত্রাঙ্গনে।মাত্র তিন বছরে দিয়েছিল ২৭ টি ব্যবসা সফল দেশকাঁপানো সিনেমা।
কিন্তু ঘরের শকুনের দৃষ্টি তখন সালমানের দিকে...

৩।
'কেয়ামত থেকে কেয়ামত'দিয়ে শুরু!এরপর বিক্ষোভ,মায়ের অধিকার,স্বপ্নের ঠিকানা,স্বপ্নের নায়ক,সত্যের মৃত্যু নাই ইত্যাদি এবং সর্বশেষ প্রেমপিয়াসী।খ্যাতি আর খ্যাতি নায়কের চারপাশে।
তবে তাঁর জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল ছিল সামীরা নামের এক ছদ্মবেশী চরিত্রহীনাকে বিয়ে করা।
সালমানের পরিবারের দৃঢ় অভিযোগ এই সামীরার পরিকল্পনায় সালমানকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিয়েছে খুনীরা।সামিরা তাঁর বান্ধবী পার্লারের বেশ্যা রুবি,সামিরার মদ খেয়ে মাতলামী ও নষ্টামী করার সঙ্গীরা মিলে সালমানকে হত্যা করে আত্মহত্যা নাটক সাজায়।ভিলেন ডন এ ব্যাপারে জ্ঞাত।কাজের মেয়ে জরিনা যাকে পরে সামীরার পরিবার গুম করে দেয় হত্যার ব্যাপারে জেনেছিল।হত্যার পরে পুলিশ ও হলিফ্যামিলি হাসপাতালের আচরণ ছিল খুনীদের সহায়ক বাহিনীর মত।এসব কথা বেরিয়ে এসেছে সালমান শাহর মায়ের মুখ থেকে।

৪।
১৯৯৬ সালের ৫ সেপ্টেম্বর।
প্রেমপিয়াসী সিনেমার শ্যূটিং চলছে।সহঅভিনেত্রী শাবনূর।শ্যুটিংয়ের মধ্যে সালমানের বাবার সঙ্গে শ্যুটিং দেখতে এলো খুনী সামীরা।এসেই অকারণে ঝগড়া শুরু করল,এমন কি শখানেক লোকের মধ্যে সালমান শাহর গায়ে হাত পর্যন্ত দিল।
সামিরার এসব অশিষ্ট আচরণের মূলে ছিল তার অসভ্য জীবনযাপনে সালমান শাহর বাঁধা দেওয়া।সে অনিয়ন্ত্রিত যৌনাচার করতো বা তার অনেক ছেলেবন্ধু বাসায় যাওয়া আসা করতো যেটা সালমান শাহ জানার পর প্রতিবাদ করেন।নিজের অসভ্যতা ঢাকতে সামিরা খুঁত খুঁজতে থাকতো সালমানের।তবে নিরেট ভালো এই মহায়নায়কের ব্যক্তিজীবন পরিচ্ছন্ন হওয়ায় সহশিল্পীদের সঙ্গে নিয়ে কিছু বলার সুযোগে ওঁত্‍পেতে থাকতো খুনী সামীরা।

যাহোক ঐদিন শ্যূটিংয়ে সামীরার এই নোংরা আচরণে শ্যূটিং ভেস্তে যায়।পরিচালক বাদল খন্দকার নিজে সালমান,সামীরাকে বাসায় পৌঁছে দেয় রাতে।ঐ রাতে সালমানের সঙ্গে আরো ঝগড়া করে সামীরা।সালমান তখন সামীরার সব কুকর্মের কথা বলে,তার একাধিক গোপনপ্রেমিকের কথা বলে।সামীরা গায়ে হাত দেয় আবার।খুন করার হুমকী দিয়ে বাড়ি ছাড়তে চায়।তবে শেষ পর্যন্ত বাড়ি না ছেড়ে সালমানের বাসায় পার্টি দেয় সামীরা।সালমানের মা বলেন,আমার ছেলেকে ঘরে আঁটকিয়ে সামীরা ওর সঙ্গীদের নিয়ে মদ খায়,নাচে,যাচ্ছেতাই করে...।বাসার বাথরুমে অনেক ভেজা তোয়ালে পেয়েছি আমি,এগুলো কাদের,কি করেছে তারা?
সালমানের মা বলেন,ঐ রাতেই আমার ছেলেকে খুন করে স্থির করে সামীরা ও তার বন্ধুরা।পার্টিতে যাতে ইমন অসুবিধা না করে তার জন্যই মুখে বালিশ চাপা দিয়ে গলাটিপে,ঘুমের ঔষুধ খাওয়ানো হয় এমন ধারনা সালমানের মায়ের।
সকাল বেলা অজ্ঞান সালমানকে মৃত ভেবে ফ্যানে ঝুলানোর চেষ্টা করে সামীরা।পরে খুন করতে ও ঢাকতে কাহিনীর পর কাহিনী জন্ম দেয় সামীরা গং।পার্লার থেকে ডেকে আনে বান্ধবী রুবিকে।এই রুবি সালমাধের সারা গায়ে সরিষা বা অন্য কোন কিছু মাখে।সালমানের মায়ের অভিযোগ,খুনীরা তাদের হাতের Finger print যাতে সালমানের শরীরে না থাকে সেকারণে তেল দেয়।আমার প্রশ্ন,গলায় দড়ি দেওয়া স্বামীকে বাঁচাতে ডাক্তার না ডেকে সামীরা রুবিকে ডাকলো কেন?
এরপরের কাহিনী আরো ক্ষুব্ধ করার।হলি ফ্যামিলি হাসপাতাল সালমানকে চিকিত্‍সা দিতে অস্বীকার করে।সামীরা ও তার পরিবার নিষেধ করে বলে মায়ের অভিযোগ।ঐখান থেকে সালমানকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে পাঠানো হয় অথচ এমবুলেন্সে তাঁর মাকে বা পরিবারের কাউকে উঠতে দেয়া হয়নি।ঢামেকে গিয়ে সালমানকে মৃত ঘোষণা করেই মর্গে নিয়ে কাঁটাছেঁড়া করা হয়,কিন্তু কেন?
সালমানের মায়ের দৃঢ় বিশ্বাস সালমান তখনো বেঁচে ছিল কি না এই ভয় ছিল খুনীদের।তাই মৃত্যু নিশ্চিত করতেই মর্গে নিয়ে তাঁকে লাশ বানানো হয়...

অতৃপ্ত অকালে শেষ হয়ে যায় চিরদিনের প্রিয় নায়ক সালমান শাহ...

৫।
মৃত্যুর পরে সালমানকে দেখতে সামীরা বা তার পরিবারের কেউ আসেনি।সালমানের মৃত্যুর দিনও সামীরা ঠোঁটে পিংক লিপিস্টিক দিয়ে সাজে বলে সালমানের ছোট ভাই জানায়।তীব্র জনপ্রিয় সালমানের প্রতি ঈর্ষার কারণে তখন চলচ্চিত্রাঙ্গন থেকেও এ খুনের ব্যাপারে প্রশ্ন তোলা হয়নি।পুলিশ আলামত নষ্ট করে বলে সালমানের মায়ের অভিযোগ।সাক্ষীদের গুম করে সামীরা গং।পত্রিকা ও ম্যাগাজিনে রহস্যজনক মৃত্যুর কথা বলা হলেও তা জনমনে পৌঁছায়নি।জনগণ বিটিভি ও বেতারে প্রচারিত 'আত্মহত্যা'টাকেই খায়।

***
৬ সেপ্টেমর সালমান শাহর খুন হওয়া সেই দিন।আমরা সালমানের খুনীদের বিচার চাই এই বাংলার মাটিতে।প্রয়োজনে মিছিল,মানববন্ধন করে হলেও উপযুক্ত বিচার চাইবো।

আপনি আমি আমরা সবাই চাইলেই বিচার হবে খুনীদের।শান্তি পাবে আমাদের

স্বপ্নের নায়ক সেই...
(সালমান শাহ এর মা নীলা চৌধুরীর সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে লিখিত)
পাঠ অনুভূতি

Post a Comment

0 Comments