সর্বশেষ

তুচ্ছ কারণে মানুষ পেটানো জানোয়ারপাল ও মজলুম প্রত্যয় বিষয়ক তিনটি কথা


প্রত্যয় নামের ৪০ তম আবর্তনের এক বড় ভাইকে কিছু জানোয়ার মেরেছে। কেন জানোয়ার বলেছি সেটি পরে বলছি। আমি ব্যক্তিগতভাবে প্রত্যয় ভাইকে চিনিনা। কোন দিন কথাও বলিনি, আমার বিশ্বাস তাকে দেখিওনি। কিন্তু তাকে মেরেছে শোনার পর ভীষণ খারাপ লেগেছে বলেই এই লিখা। প্রত্যয় ভাইয়ের বয়ানের বিপরীতে জানোয়ারদের বয়ানে সেখানে সম্ভাব্য আর কি হতে পারে যার কারণে একজন সিনিয়রকে এভাবে মারবে? একটু চোখ নিচে বুলাই।

ক। প্রত্যয় ভাই ওখানে দাঁড়ানো ছিলেন না। এসেই দাবি করেছেন। আমরা দাঁড়াতে না দিলে উনি রাগ করেছেন। তাই মারছি। রানিংদের উপর রাগ করা সহ্য করা যায়?
খ। তিনি আমাদের বলেছেন, ভাইয়া, এটা আমার জায়গা। আমি প্রত্যয় ৪০। কলম আনতে গিয়েছিলাম। একটু সরো। সরতে বলায় মারছি। উনি কি ক্যাম্পাসের নাম করা ফিগার, না নেতা না ফিতা, না অন্য কোন হ্যাডম যে সরবো? ফলে আমরা যে ইতর এটা প্রমাণের জন্য মারামারি অনিবার্য হয়ে দাঁড়ায়...
গ। আমরা অহেতুক তর্ক করছি। তর্কের অবস্থা এমন: আপনি কি জায়গা কিনে নিছেন? কোন প্রমাণ আছে এখানে ছিলেন? প্রতয় ভাই এই কুতর্কে বিরক্ত হয়ে আমাদের ‘বেয়াদব’ বলেছেন দেখে আমরা উনাকে মারছি। আমরা যে শুধু বেয়াদব নয়, জানোয়ারও এটা প্রমাণ করা জরুরি ছিল ঐ মুহূর্তে ইত্যাদি।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, উপরের তিনটি কাল্পনিক ঘটনা ঘটে থাকলেই কেউ কেন কারো গায়ে হাত তুলবে? কেন কাউকে কিলঘুষি মারবে? কাউকে লাথি দেবে? কে দিয়েছে এই ক্ষমতা কাউকে কাউকে? সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে বসে পেশী শক্তি দেখানোর এই কুশিক্ষা নিয়ে যারা বড় হচ্ছে তারা দেশ, জাতি ও মানবতার জন্য কি কাজে লাগবে? ক্যাম্পাসে সিনিয়র পরিচয় দেয়ার পরেও গায়ে হাত দেয়ার এই নোংরা ও জানোয়ারি রীতি কতটুকু স্থায়িত্ব পাচ্ছে? কবে থেকে পাচ্ছে? এর কি সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা শুরু হয়ে গেছে? এই মূল্যবোধের অবক্ষয়ের ভয়াবহ পরিণতির কথা আমরা ভেবেছি? জাবিবন্ধন বাদ, মানবিকতার খাতিরেও তো প্রত্যয় ভাই মাইর খেতে পারেননা। তো তাদের মানবতা ছিলনা? সিনিয়রের পা ধরে মাফ চেয়ে মাইরের হাত থেকে বাঁচা লাগলো! এরা মনে হয় জানেনা যে, জাবিতে যে যা করে তা্র সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া নিয়ে ফিরে যায়। বুক ‍ফুলিয়ে না চোরের মত পালিয়ে চুপিসারে হল ছাড়তে হয় জুলুমবাজ বাজে লোকগুলোর। সেসব ভুলে একজন সিনিয়রকে মারলো ওরা! আরে বাহ! কি চমৎকার! খুশি হয়ে মানুষ থেকে তাদের জানোয়ার উপাধি দেয়া হলো এদের এবং এ জাতীয় পাশবিক আচরণ যারা আগে করেছে ও ভবিষ্যতে যারা করবে তাদের! জানোয়ারের অনেক সাহস, জানোয়ার যাকে তাকে যেকোন সময় আক্রমণ করে বসে! তার কাছে মূল্যবোধের কোন মূল্য নেই। 

২।
সিনিয়র (কিংবা জুনিয়র বা সহপাঠী বা শ্রমিক) পেটানো ওহে জানোয়ারপাল! কান পেতে একটু শুনে রাখুন, এই ৭০০ একরের বাইরে সকলের যেতে হবেই, বেঁচে থাকলে, মরে গেলেতো অবশ্যই। এই যে আমরা ৪১ তম আবর্তন। আমরাও ভাবতাম, ক্যাম্পাস লাইফ কত্ত দীর্ঘ। কিন্তু দুদিন আগে প্রশাসন আমাদের র‌্যাগ শেষ করার দিন পর্যন্ত দিয়ে দিছে। মনে হচ্ছে এই এলাম, আর এই চলে যেতে হবে! তো এখন অনেকের বিগত ৬ বছরের সব পার্ট, মাস্তি, ফাও খাওয়া, সংবাদে পক্ষপাতিত্ব করা, অসহায়কে পেটানো, টিজ করা, চুরি করা, প্রতারণা, চাঁদাবাজি, লুচ্চামী, তেলবাজি ও নীরব দর্শক সেজে থাকা সব কিন্তু শেষ হয়ে যাবে। যারা চলে যায় তাদের কাছে থেকে শুনেছি, ক্যাম্পাসে জানোয়ারপাল কিন্তু বুক ফুলিয়ে ফিরতে পারেনা। লজ্জায় আসেনা, আসলেও কোন জুনিয়র আশেপাশে থাকেনা। আর বিভিন্ন চা ও সিগারেটের দোকানদার বা খাবারের দোকানদারকে দেখে মুখ লুকিয়ে থাকতে হয়। লুকিয়ে থেকেও পার পায়না। এসব দোকানদাররা দূর থেকে দেখিয়ে খুব গল্প করে যে, ঐ যে দেখছেন ঐ লোক অমুক হলের, অমুক বিভাগের, ঐ লোকের কাছে এতো টাকা পেতাম, অতো পেতাম, ছ্যাঁচড়া একটা! আহা সে যে কি মর্মান্তিক বর্ণনা! সাংবাদিকতায় পড়ার সুবাদে সমাজের এই নিচুতলার মানুষদের কথাগুলো শুনেছি বহুবার। তারা মিথ্যা বলতে পারেননা।

৩।
যারা এইভাবে হামবাড়া ভাব নিয়ে যত্রতত্র যাকে তাকে খুব সহজেই মেরে বসেন তারা সময় থাকতে মানুষ হন, ভ্রাতঃ। আজীবন বেয়াদবরা সমাজে ঘৃণ্য। এ ক্যাম্পাসে ‘বেয়াদব’ ও ‘শিবির’ গালি ছিল! এখন? পানি হয়ে গেছে সব! বেয়াদব আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত। কিভাবে বঞ্চিত তা এইসব বেয়াদবদের অগ্রের বেয়াদবপালের সর্বশেষ অবস্থা কি তা থেকে জেনে নিতে পারেন! একটাও ভাল নাই! মজলুমের চোখের পানি কিন্তু খুবই ভয়ানক! এই চোখের পানি ফেলে সে যে দোয়া বা বদদোয়া করবে সেটাই আল্লাহ কবুল করবেন বলে ওয়াদা করেছেন। স্রষ্টা প্রতিশ্রুতির খেলাপ করেন না। সুতরাং যাকে তাকে মারা বা অত্যাচার করা থেকে বিরত থাকুন। আপনি এমন একজনকে মারলেন বা অত্যাচার করলেন যে আপনার সমশক্তিসম্পন্ন না, কিন্তু মাইর খেয়ে চোখের পানি ফেলতে ফেলতে সে শুধু এইরকম ভাবলো যে, ‘আল্লাহ, আজ যদি আমার শক্তি থাকতো আমিও এই অন্যায় আচরণের জবাব দিতে পারতাম...।’ তখনই এই মজলুমের দোয়া সরাসরি প্রভু গ্রহণ করবেন এবং তারপর জুলমুবাজের কি হয় তা যুগে যুগে বা আপনার আশপাশের অত্যাচারীদের বর্তমান পরিস্থিতি দেখে টের পাবেন। মজলুমের কান্না কোন দিন বৃথা যায়না। মজলুমের চোখের পানি আপনার হামবড়া ভাব, বুক ফুলিয়ে চলা, ফুটানি, ক্ষমতার গরম, অর্থের দাপট সব নিঃশেষ করে আপনাকে সমাজের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ করবে। 

সবাই ভাল থাকুন। মানুষকে সম্মান ও স্নেহ করুন। বিনয় কখনো কাউকে ছোট করেনা। বিনয় মানুষের বড় হওয়ার পূর্বশর্ত। আপনি আপনার পরিবার ও মা-বাবার প্রতিনিধি। আপনার খাসলাত আপনার পরিবারের ব্যাপারে মানুষকে ধারণা দেবে। বেয়াদবী ও অহংকারী পতনের পূর্বের করুণ বীণ! সেই বীণ ভেঙে ফেলে আদব-কায়দা শিখে আবার তোরা মানুষ হ! সিনিয়র, জুনিয়র বা সমবয়সী কারো গায়ে অন্যায়ভাবে তুচ্ছ কারণে হাত দেয়ার আগে কিছুক্ষণ ভেবে নিজের মনুষ্যত্ত্বের প্রমাণ রাখুন। চিন্তা করুন, বিবেককে কাজে লাগান। বিবেকের চেয়ে বড় শিক্ষক কেউ নয়। বিবেক নিস্ক্রিয় থাকলে আপনার আর জানোয়ারের তফাৎটা কিসে থাকবে? 

সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগ, ৪১ তম আবর্তন।
পাঠ অনুভূতি

Post a Comment

0 Comments