আল্লামা আহমেদ শফি হুজুরের কাটছাট বক্তব্যে তেঁতুল আছে দেখে যাদের খুব জ্বলে এরাই কিন্তু গৌরবের সাথে ফ্রয়েডের অসুস্থতা পড়ে ও তা বলে পাণ্ডিত্য জাহির করে। দুনিয়ায় ফ্রয়েডের চেয়ে নারীর প্রতি অবমাননা আর কে করছে রে, সুশীল নারীবাদী? ফ্রয়েডের অসুস্থ তত্ত্বের মতে, নারী অসম্পূর্ণ সৃষ্টি ও আরো নোংরা সব কথা! আর আজাদ যে গর্ভবতী নারীদের কুৎসিতভাবে আক্রমণ করলো তার কি হবে? তসলিমা যে বাংলার নারীরা তার মত অবাধ যৌনাচার করেনা বলে পশ্চাৎপদ আছে প্রমাণ করতে চায় তা নিয়ে আপত্তি নাই কেন? শুধু শফি হুজুরের বয়ানে আপত্তি তোলাই আপত্তিজনক! কি কচু পড়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শফিবিরোধী নারীবাদীরা তা জানা আছে! পশ্চিমা কয়টা বইয়ের অনুবাদ, যার মধ্যে নৈতিকতা ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক জ্ঞান নাই, এই প্রাচ্যের জীবনব্যবস্থার কথা নাই। আছে শুধু দেদারছে যেমন ইচ্ছে নিজের শরীরকে ব্যবহার করার তালিম! তাই সমাজের সুবিধাবঞ্চিত নারীরা এই সব নারীবাদী ও নারীবাদ নিয়ে বেখেয়াল, এদের নিয়ে হাসাহাসি করে তারা! পুঁজিবাদের উপজাত হিসেবে আসা নারীবাদ ও নারীবাদীরা কোনকালে নারীর প্রকৃত মুক্তি এনে দিতে পারবেনা। ওরা নারীকে পুঁজির দাসী বানাবে, বানিয়েছে, বানাচ্ছে। পশ্চিম থেকে আসা নারীবাদ কপচানোর পূর্বে পশ্চিমে নারীর যে করুণ দশা সেটি দেখেনা এরা। সেখানে পরিবারপ্রথা ভেঙে গেছে! তার অন্ধ অনুকরণ করে এই দেশের বিকৃত নারীবাদীরাও পর্নস্টার বানাবে, মডেল বানাবে, বিজ্ঞাপনের পণ্য বানাবে এই আর কি!! নারী যে তার ইজ্জত-আব্রু ঠিক রেখে সফল হতে পারে সেই কথা ওরা বলবেনা! ওদের এই ভণ্ডামি আর কতকাল? শফিরা মূলধারায় এলে ওরা আর এনজিও, টকশো, সেমিনার, প্রজেক্ট করে খাইতে পারবেনা বলে এই বিরোধীতা?
২।
ডিসকভারি চ্যানেলে Science of Lust দেখে নারী ও পুরুষের স্যালিভা বিষয়ক ন্যারেটিভকে এরা বিজ্ঞানসম্মত বলবে, চোখ পাকিয়ে অন্ধভাবে তা গিলবে ও অন্যদের গেলাতে চাইবে! কিন্তু বিশেষ প্রেক্ষাপটে শফির তেতুলতত্ত্ব বা বয়ান শুনলে এদের চোখ গাছে চড়বে! কারণ শফি প্রাচ্যের! প্রাচ্যের সবকিছুতে নাক সিঁটকানোর নোংরা শিক্ষাটাই পশ্চিমের বুদ্ধিবৃত্তিক দাসদাসীরা ধারণ করে। আমি এদের ভাঁড়ামী দেখে ক্ষণিক আনন্দিত হই, ক্ষণিক করুণা অনুভব করি। এরা না থাকলে কবে যে পশ্চিমের নৈতিকতাহীন (অ)সভ্যতা ধসে যেতো! এদের আদর করে ইউরোপ ও আমেরিকা বলে Change Agents । আমি সরল মানুষ। আমি এইটার অনুবাদ করি, পশ্চিমের দালাল ও মানসিক দাস হিসেবে। হে কওমী বিদ্বেষী এদেশের মাটি ও মানুষবিরোধী গুটিকয়েক পশ্চিমা দাসদাসী, শফিরা আসছে! ওরা এ মাটির সন্তান, ওরা প্রলেতারিয়েত। ওদের আর বঞ্চিত করা যাবেনা..! নৈতিকতায় ওদের চেয়ে অনেক পিছিয়ে আপনারা, এবার দুনিয়ার জ্ঞান-গরীমায়ও আপনাদের পিছিয়ে পড়া সময়ের ব্যাপার মাত্র! দেইখেন।ওরা যা পড়ে, যত কষ্ট করে পড়ে, যেভাবে হৃদয় দিয়ে পড়ে তা আপনারা ও আপনাদের ছাত্রছাত্রীরা করে কি না নিজে বুকে হাত দিয়ে বলুন। আমাদের সরকারের উচিত খুবই যত্নের সাথে কওমী পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন করে মূলধারার নানা শিক্ষাক্রম দেয়া। একই সাথে চাকরি নয় কেবল, উদ্যোক্তা হওয়ার গুরুত্বও তুলে ধরতে হবে। এইসব আলেমরা ঠিকাদারি বা এই জাতীয় কাজে যুক্ত হলে চুরি-বাটপারি ব্যাপকহারে কমে যাবে বলে আমার বিশ্বাস। একই সাথে তাদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে পাঠালে রেমিট্যান্সও বৃদ্ধি পাবে।
৩।
কওমীরা এই দেশে ব্রিটিশ অপশাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে যখন তখন বঙ্গীয় সেক্যুলারদের পূর্বপুরুষরা ব্রিটিশদের পদলেহনে ব্যস্ত। ভারতীয় স্বাধীনতার ইতিহাসে যে কিছু মওলানার নাম আসে তারা কারা কখনো খোঁজ নিয়েছেন হে সুশীল, হে কওমী বিদ্বেষী? মজলুম জননেতা ভাসানীও কওমী ভুলে গেছেন? এরশাদের সাথে যখন আপনারা গাঁটবেধে সুযোগ সুবিধা লুটতেছিলেন তখন হাফেজি হুজুর নামে এক কওমীই কিন্তু প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেছিল সাহস করে। কওমীরা সরকার থেকে আলাদা থেকেছে ব্রিটিশদের সহযোগিতায় চলবেনা বলে। তাদের শক্তির উৎস আল্লাহ ও তার বান্দা। এই নৈতিক শক্তিকে পরাজিত করার শক্তি পৃথিবীর কোথাও নাই।
৪।
ঘৃণা ছড়িয়ে কখনো বৃদ্ধিবৃত্তিক নেতৃত্ব দেয়া যায়না। বঙ্গের সেকুলার মানে আসলে ঘৃণার ফেরিওয়ালা ও ফেরিওয়ালী। এরা সব কিছুতে প্রাচ্যকে নাকচ করে পশ্চিমকে উপরে রাখে। এরাই এই দেশ থেকে বাতিল হয়ে যাবে জ্ঞানচর্চায় পরাজিত হয়ে। আমরা দেখতে পাই। আমাদের চোখ আছে। আমরা অন্ধ নই। সেকুলার অন্ধদের কান্নার বীণ বাজিয়েছে ঐ শফির সন্তানেরা। এবার ভেজাল তেঁতুল অথবা তেতুলের আচার খেতে খেতে মিথ্যাকে পালিয়ে যেতে দেখেন! কারণ, সত্য আসলে মিথ্যা অপসৃত হয়। মিথ্যা টিকে থাকেনা, মিথ্যা নিয়ে টিকে থাকা যায়না। একটা উদাহরণ দিই।
এদেশের কওমী বিরোধীদের জ্ঞান নাই যে, কওমীরা স্পেস পাইলে কতটুকু যুক্তি ও বুদ্ধি দিয়ে সেকুলারিজমকে বাতিল করে দেয়! কয়দিন টকশো তে গিয়ে কিন্তু এরা সুলতানা কামাল, ইমরান এইচদের দাঁতভাঙা জবাব দিয়ে আসছিল। ইউটিউবে সেই ভিডিওগুলো আছে, দেখতে পারেন! একটা ভিডিওতে আছে, ইমরান সরকার বলছে, কওমীরা খারাপ, হ্যানত্যান,... কওমী লোকটা বললো কোথায় পেয়েছেন? আমরা তো এমন কিছু করি নাই, বলিওনা। ইমরান বলে, এগুলো পত্র-পত্রিকায় আসে। এইবার কওমী হুজুর বলে, পত্রিকায় তো আপনি রাজাকারের নাতি এটাও আসে। সেটাও বিশ্বাস করেন, নাকি? ইমরান চপেটাঘাত খেয়ে কুঁকুঁ করতে থাকে! যাহোক, যা বলতে চাচ্ছি তা হচ্ছে এই বিপুলসংখ্যক আলেমদের মূলধারার বাইরে রাখা ঠিক হবেনা। এতে করে খারাপ হতে পারে। তারচেয়ে এদের মূলস্রোতে মিশিয়ে দিলেই ভাল হয়! তারা নরম হবে, তারা ভালবাসবে, তারা কাঁধে কাঁধ রেখে দেশ গড়বে! তাদের জন্য দরজা বন্ধ করে দিলে অনুৎপাদনশীল প্রজন্ম তৈরি হবে। আর দেশের ইতিবাচক কিছু করার মানসিকতা ভার্সিটির ছেলেমেয়েদের চেয়ে কওমীদের কম না।
৫।
বিভাজনের ইতিহাসকে পিছনে ফেলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে লাল-সবুজ পতাকাকে উড়াতে হবে আকাশে। লুঙ্গি, শাড়ি, পাঞ্জাবী, শার্ট, টিশার্ট, সব এক হয়ে দেশকে ভালবাসতে হবে। দেশের পণ্য ক্রয় করতে হবে। দেশের সংস্কৃতি চর্চা করতে হবে। ধর্মীয় বা ধর্মদ্বেষী উভয় ধরনের গোঁড়ামীকে জয় করতে হবে। উৎপাদনের সাথে দেশের সর্বস্তরের মানুষকে সম্পৃক্ত করতে হবে।কৃষক-শ্রমিক-ব্যবসায়ী হওয়ার ও শ্রমিকদের সম্মান করার দীক্ষা নিতে হবে। তবেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি পিছিয়ে পড়া গোষ্ঠীকে মূলধারায় আনার এই সুপ্রচেষ্টা সফল হবে। মনে রাখতে হবে, আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, কওমী, আলিয়া, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান, আস্তিক-নাস্তিক-সংশয়বাদী, নারী-পুরুষ, দেশী-প্রবাসী, কৃষক-শ্রমিক-উদ্যোক্তা সবাইকে মিলেই গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশকে বিশ্বে অনন্য করে গড়তে হবে। বাংলাদেশের বিজয় ঐক্যবদ্ধতায়। ঘৃণায়, বিভাজনে, কর্মে অনাসক্তিতে বা পারস্পরিক বিদ্বেষে বাংলাদেশ হেরে যায়, হেরে যাবে। তা হতে দেয়া যাবেনা...! তা আমরা হতে দেবোনা, বুঝা গেছে?
শেখ হাসিনা মানুষের নাড়ি-নক্ষত্র বোঝেন। তিনি বুঝেছেন এই দেশের মানুষ ধর্ম নিরপেক্ষ এবং ধর্মপ্রাণ, দুইটি সত্তা একই সাথে কার্যকর। সেকারণেই তিনি এই বিপুলসংখ্যক কওমী আলেমদের স্বীকৃতি দিয়েছেন। কওমী জননী হিসেবে অনেকেই তাকে আখ্যায়িত করেছেন। আমি এই ঘটানাকে ভিন্নভাবে অধ্যয়ন করি।
কওমী আলেমরা এই দেশে মওদুদীর অনুসারীদের শিকড় গাঁড়তে দেয়নি। একইভাবে এরা তসলিমার মত অশিক্ষিত-ইতর, খবিশদেরও জায়গা দেয়নি। এরা রাজনীতি করেনা। তবে নৈতিকতা বিধ্বংসী যে কোন রাজনৈতিক সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে। এটি প্রশংসনীয় ব্যাপার।
আশা করি, কওমী সনদ পেয়ে কওমী মাদরাসার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা মূলধারার সাথে মিশে একটি সম্মৃদ্ধিশালী বাংলাদেশ গড়তে মূখ্য ভূমিকা পালন করবে। বঙ্গবন্ধুতনয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কওমী সনদের স্বীকৃতি ও কওমী মাদরাসাকে মূলধারার সাথে সম্পৃক্ত করার এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে ঐতিহাসিক ও অবিস্মরণীয়। সকলের ভুল ত্রুটি থাকে। মানুষ হিসেবে আমরা কেউ ভুল-ত্রুটির ঊর্ধ্বে নয়। তাই যার যতটুকু প্রাপ্তি, দেশগঠনে যে অবদান তা স্বীকার করে নেওয়াই ভাল মানুষের বৈশিষ্ট্য। বাংলাদেশ ও বিশ্বের সকল শান্তিকামী মানুষের উপর শান্তি বর্ষিত হোক। আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ।
(ফেসবুকে কওমী বিদ্বেষ ছড়ানো কিছু সেকুলার আবর্জনার স্ট্যাটাসের জবাবে স্ট্যাটাস হিসেবে লিখিত।)
0 Comments