আমরা সবাই কম বেশি কতিপয় মিডিয়ার তথ্যদাস। তারা যে সংবাদ বা নিউজ খাওয়ায় আমরা তাই খাই, যে নিউজকে গুরুত্ব দেয় আমরা তাই নিয়ে স্ট্যান্ড নিই, তা নিয়ে চিৎকার করি, সোস্যাল মিডিয়ায় ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া জানাই। স্পটে না থেকে কতিপয় মিডিয়ার এডিটোরিয়াল পলিসিনির্ভর সংবাদ দেখে আমরা কোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিই। আবার অনেক সময় অপছন্দের মিডিয়ার তথ্যকে বাতিল করি, যদিও তা সত্য হয়। নিজের পছন্দের মিডিয়ার তথ্যকে আসমানী বাণী ভেবে সামাজিক মিথস্ক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করি। অনেক সময় ফেসবুকে বিভিন্ন পোস্টের উপর ভিত্তি করে একটি সিদ্ধান্তে আসি, অনেক সময় ফেসবুকে মতমোড়ল হিসেবে পরিচিতদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে তর্ক-বিবাদ করি। মূলধারা বা বিকল্প যেটা হোক ওরা অদৃশ্য জাদুর গুলি বা ম্যাজিক্যাল বুলেটে আমাদের ঘায়েল করছে। গণমাধ্যমের প্রাথমিক অবস্থায় মানুষ যেভাবে এর দ্বারা আক্রান্ত হতো, এখন ঠিক তাই শুরু হয়েছে। মানুষ যত বেশি প্রযুক্তি নির্ভর হচ্ছে তত বেশি গণমাধ্যম তার উপর প্রভাব ফেলছে। ফলে অডিয়েন্স কী বা কীভাবে ভাববে এটা যেমন ঠিক করে দিচ্ছে সংবাদ মাধ্যম, কী পরবে বা কী খাবে সেটি ঠিক করে দিচ্ছে বিনোদন মাধ্যম। 'গণ' থাকলেও গণমাধ্যমের মালিকানা ব্যবসায়ীদের হাতে। তারা মুনাফাকেন্দ্রীক আধেয় দিয়ে একটি আত্নকেন্দ্রীক প্রজন্ম তৈরি করছে। বই-পুস্তক বিমুখ এই ভিজুয়াল মিডিয়ানির্ভর প্রজন্মকে রাজনৈতিকভাবে পক্ষপাতদুষ্ট করে তোলা বেশ সহজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে উত্তর-সত্য মনোভাব যে জন্ম নিচ্ছে এটির কারণ পারিবারিক ও নিকটস্থদের আদর্শ। কিন্তু সেই পরিবার ও নিকটজনও যদি নিজেদের মত-পথ-আদর্শ গণমাধ্যম দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ধারণ করে? তাহলে আসলে মানুষের স্বাধীন সত্তার বিলুপ্তি ঘটবে। সময় বা শব্দ বেঁধে দেয়া নিউজ, মেগাবাইট বা গিগাবাইট খরচ হওয়ার হিসেবের তথ্য পূর্ণাঙ্গ হবেনা। তথ্যদাতা তার আদর্শ ও এজেণ্ডা বা প্রিয় অংশটুকুই দেবে। তা দেখে যেন তার পক্ষে সম্মতি বা অসম্মতি উৎপন্ন হয় সেই উদ্দেশ্য নিয়ে।
২।
মিডিয়ার পিছনে যে মানুষগুলো রয়েছে ওদের নিজস্ব এজেণ্ডা থাকে প্রতিটি কনটেন্ট প্রচারের পিছনে। মালিকের আদর্শ সবচেয়ে প্রভাবশালী। তারপর বিজ্ঞাপন দাতা। আর সরকার তো সব কিছুকেই নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। কিন্তু বাংলাদেশে সরকারের কাঁধে বন্দুক রেখে দায় সারতে চায় সাংবাদিকেরা। নিজেরা নিজেদের উপর সেন্সর আরোপ করে। যেমন ধরুন, একটি সংবাদে ভারত যে বাংলাদেশের উপর সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক কর্তৃত্ববাদী আচরণ করছে এটা আছে৷ তো হেড অব নিউজ বা বার্তা প্রধান বা সাংবাদিক নিজে এই নিউজকে হত্যা করবে। সে বলবে এ সংবাদ দরকার নাই ইত্যাদি, কারণ কোন পক্ষ রেগে যেতে পারে। আবার মালিকের মনের মত নিউজ হলে সেই অনুসন্ধানে হুমড়ি খেয়ে পড়ে সাংবাদিকেরা। যেমন, ইন্ডিপেন্ডেন্ট চ্যানেল যে আগ্রহ নিয়ে গোলাম মাওলা রণিকে ফাঁসিয়েছে তার শিকিভাগও কি শেয়ার বাজার কেলেঙ্কারি নিয়ে করেছে? করেনি। মিডিয়া ভয়ানক। ডেসটিনি গ্রুপের কথা মনে আছে? এই গ্রুপের রফিকুল আমীনের সাথে ব্যবসায়ীক দ্বন্দ্ব সামনে চলে আসে যমুনা, ট্রান্সকম, বসুন্ধরা, দিগন্ত মিডিয়ার। ফলে এসব মিডিয়া গ্রুপের অন্তর্ভুক্ত ওয়াচডগ সাংবাদিকেরা একযোগে ঝাঁপিয়ে পড়ে ডেসটিনি-২০০০ এর উপর। অথচ এভাবে ঝাঁপিয়ে পড়লে এসব গ্রুপেরও নানা অনিয়ম আসবে সামনে। তা করে কেউ? ওরা ডেসটিনিকে আমাদের সামনে শত্রু হিসেবে নিয়ে আসছে, ওদের শত্রুকে আমাদেরও বানিয়েছে একের পর এক প্রোপাগাণ্ডার মাধ্যমে। এখন পশ্চিমা মিডিয়া ইরানকে আমাদের সামনে শত্রু হিসেবে আনছে, এর আগে সাদ্দাম ও গাদ্দাফিকে এনেছে। অথচ এর সাথে বৈশ্বিক নিরাপত্তার সম্পর্ক একেবারেই নেই বা কম। ওদের মিডিয়া ট্রায়ালের মিথ্যা সাক্ষি করে আমাদের। ওদের এজেন্ডা অনুযায়ী আমাদের ভাবায়। ওদের তথ্য সাম্রাজ্যবাদের ছোট্র তবে কার্যকরী উপনিবেশ হয় আমাদের মাথা, আমাদের মুখ, আমাদের টাইমলাইন। আমরা অদৃশ্য তথ্য সাম্রাজ্যের সামান্য ক্রীতদাস হিসেবে কথা বলি। আমাদের মুখ নিঃসৃত শব্দরা CNN, FOX, BBC, AFP, AP, Reuters এর মত করে কথা বলে।
৩।
Uses and Gratification এই Propaganda Era তে অনেকটা অকার্যকর। এমন কী তত্কালীন সময়েও এটা সমালোচিত হয়েছে। এই তত্ত্ব আমাদেরকে বা অডিয়েন্সকে সক্রিয় বলতে চায়। এটি এ পর্যন্ত সত্য যে, আমি কোন মিডিয়াটা দেখবো সেটা আমিই ঠিক করবো। কিন্তু when it comes to the content? তখনই এটা একদম অথর্ব, ডিজ্যাবল। ধরা যাক, ২০০৩ সালে ইরাক যুদ্ধের আগে পশ্চিমা মিডিয়া বললো ইরাকে WMD আছে। এখন Katz আর Blumler এ পর্যন্ত সত্য যে, আমরা BBC বা CNN বা FOX বা Nytimes এর যেকোন টি থেকে তথ্যটি নেবো। কিন্তু এই কনটেন্টের সবকটিতেই ইরাক ও সাদ্দামকে খলনায়ক বা ভিলেন হিসেবে দেখাবে। তাহলে অডিয়েন্স কিভাবে এটা সিলেক্ট করবে যে তথ্যটি সঠিক নয়? উপায় নেই। কারণ আমরা যা পছন্দ করি তা ওদের Agenda এর আওতাভুক্ত। তাছাড়া ম্যাকলুহানের Medium is the message এ যুগে যে পরিমাণ সত্য হয়েছে তাতে Uses And Gratification আর টেকেনা। যারা প্রথম আলো পড়ে তারা বার্তা২৪ বা যুগান্তর বা ইত্তেফাকের তথ্যকে নেবেনা যদিনা প্রথম আলোতে আসে। এইসব ঘটনা এই ব্যবহার ও তুষ্টি তত্ত্বকে নাকচ করে দেয়। KATZ আর Blumler মিডিয়ায় ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদদের Monopoly দেখলে ঐ তত্ত্ব উঠায় নিতো হয়তো...
#মিডিয়া #ট্রায়াল #Media #PowerOfMedia #AgendaSetting #Propagada
0 Comments