টেকনো মোবাইলের জন্য করা নুহাশের শর্টফিল্ম-কাম বিজ্ঞাপনটির নন্দনতাত্ত্বিক গুরুত্ব নাই। সত্য ঘটনা বললেও এখানে সত্যের সাথে সাংস্কৃতিক পার্থক্য স্পষ্ট! এর দায় স্ক্রিপ্ট রাইটির, নির্মাতা নুহাশের উপরই যায়! স্বাভাবিক বোধ থাকলে এমন অবাস্তব মিথ্যাচারকে সত্য বলে চালিয়ে দেয়া যায়?
নুহাশের মত এমন অপরিপক্ব, বাস্তব জ্ঞান ও বুদ্ধিহীন বাবার নাম বেচে এ পর্যন্ত এসেছে। এ ছাড়া ওর দেড় ইঞ্চি যোগ্যতা, বা প্রতিভা বা জ্ঞান নাই এদের লেখার, নাটক, সিনেমা, বিজ্ঞাপন বানানোর। এদেশের মিডিয়া-শিল্পের বিভিন্ন ক্ষেত্রে এই পারিবারিক কোটা আমরা প্রবলভাবে দেখতে পাই। অথচ শিল্প-সৃজনশীলতা-প্রতিভা বাপের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মত উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া যায়না। কিন্তু সংবাদমাধ্যম ও বিনোদন মাধ্যমে এদের এমনভাবে উপস্থাপন করা হয় যেন এরা জন্মেছেই বিরল প্রতিভা নিয়ে! স্পষ্ট বর্ণবাদী ও ব্যক্তি পূজারি এই মানসিকতাই এই দেশে গুণীজনের জন্ম দিচ্ছেনা আর। বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে এই পোষ্য কোটা দেখবেন। শিক্ষকের ছেলে বা মেয়ে অযোগ্য কোটা দিয়ে চান্স পেলেও তাকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে বাতাবি লেবুর বাম্পার ফলন করা হয়। এ কারণে সহস্রগুণ প্রতিভা নিয়ে এদেশে কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাল করতে পারছেনা বা এফডিসি বা টিভিতে যেতে পারছেনা আর কেউ কেউ বাপ-চাচা-স্বামী-প্রেমিকের কাঁধে বন্দুক রেখে উঠে যাচ্ছে কথিত শীর্ষে! এভাবেই মেধা-যোগ্যতা-প্রতিভা-পরিশ্রমকে প্রতিনিয়ত এই দেশে অবমূল্যায়ন করা হয়, হচ্ছে।
২।
তো নুহাশ। হুমায়ূন আহমেদের পুত্র। তার আসলে পাহাড়ের ভাষা-জীবন-সংস্কৃতির জ্ঞান নাই এটা সত্য, পাহাড়ী একটা ছেলের নাম 'রাফি' হয় কী করে? যদি ধর্মান্তরিত মুসলমানও হয় তবুও রাফি ত্রিপুরা বা খেয়াং বা চাক বা চাকমা বা মারমা কিছু একটা তো হবে! অন্তত মুসলিম পাহাড়ী নৃগোষ্ঠী পাঙন বললেও সত্যের সাথে সম্পর্কিত থাকে! তার কোন আলামত নাই। পাহাড়ের মুসলিম এলাকায় কিন্তু অনেক মসজিদ আছে। জানেন? নাকি পোল্ট্রি মুরগীর মত না জেনেই কককক করলেন? অন্যদিকে পাহাড়ে ধর্মান্তরিত হয়ে উগ্র জেসএসস বা শান্তি বাহিনীর ভয়ে কেউ এভাবে থাকতেও পারেনা। রাফির মত অবাধে দৌড়ানোর আগে পাহাড়ী সন্ত্রাসীরা তাকে গলা কেটে ফেলতে দ্বিধা করবেনা, তবে এই ছেলেটি আবার ধর্মান্তরিত হয়ে খ্রিস্টান হলে তাদের কিছু যায় আসতো না! ছেলে চরিত্রটিকে স্থানীয় বানিয়ে বিজ্ঞাপনটিকে আবেগপূর্ণ করা যেতো। তাই দেখা যাচ্ছে অথর্ব নুহাশের আসলে সাংস্কৃতিক জ্ঞানই নাই এই বিষয়ে। আবার খচ্চরের বিবেক দিয়ে "আমি তো হিন্দু" এই কথা বলিয়েছে যা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জন্য হুমকি হওয়ার মত সংলাপ। এটি বরং পাহাড়ীদের মধ্যে বিদ্যমান বাঙালি ও ইসলাম বিদ্বেষ উস্কে দেবে কারণ, মঙ্গোলয়েড চোখের কাউকে রাফি নাম দিয়ে নামাজ পড়িয়েছে। পাহাড়ী সন্ত্রাসীরা এটা ব্যবহার করে প্রোপাগাণ্ডাও চালাবে যে, "দেখো, পাহাড়ে ইসলামাইজেশন হচ্ছে! আমাদের জাত থাকবেনা, আরো বাঙালি আসবে, আসো অস্ত্র ধরি, আর্মি ও বাঙালি মারি আর জম্মুল্যান্ড গড়ি" ইত্যাদি।
৩।
দ্বিতীয়ত, পাহাড়ী ভাষা। এই ভাষা কোন দিন "আমগো লগে ইফতার করো" জাতীয় ঢাকার শিকড়হীন ছেলেমেয়েদের মত নয়। এগুলো ব্রাকের বারান্দায় চলা জগাখিচুড়ি ভাষা! এই ভাষাজ্ঞান নিয়ে বিজ্ঞাপন বানাতে লজ্জা করেনা? ছেলেটিকে একের পর এক ট্রাকস্যুটের মত করে পোশাক কে কিনে দিছে? যেহেতু প্রথমে সত্য ঘটনা অবলম্বন করে লেখা সেহেতু অসত্য বিষয়গুলো ধরিয়ে দেয়া গণমাধ্যমের ছাত্র ও শিক্ষক হিসেবে আমার দায়। একটা কথা বলতে চাই, নুহাশকে মিডিয়া ব্যাকয়াপ না দিলে এই রকম নিম্নমানের বোধ নিয়ে কেউ নির্মাতা হয়না। ওর চেয়ে কোটিগুণ মেধাবী ছেলে এদেশে রয়েছে। কিন্তু তাদের কোন "বাপ চাচা কোটা" নাই মিডিয়ায়! এই কোটা-ই খেয়ে দিলো এদেশের মিডিয়াকে। শুভ কামনা পরবর্তী সময়ে কিছুটা হলেও পড়াশোনা করে ভালো কিছু করার জন্য, এভাবে যাচ্ছেতাই বানালে মূর্খদের কাতারেই পড়বেন। বাবা-চাচার কোটা কিন্তু সাধারণ মানুষের কাছে খাটেনা। সাধারণ মানুষ ছুঁড়ে ফেলে দিতে দ্বিধা করেনা অযোগ্য-অথর্বদের। একটু সময় লাগলেও ছুঁড়ে কিন্তু ফেলেই দেয় দিন শেষে! মানুষের হৃদয় জয় করার মত সৃজনশীলতা সবার থাকেনা। যাদের থাকে তারা হয় 'নির্মাতা', যাদের থাকেনা তারা নির্মাতাবেশী অপনির্মাতা! নুহাশ হুমায়ুন একজন অকালপক্ব, মিডিয়াসৃষ্ট অপনির্মাতা! নুহাশ তার বাবাকে, তার বাবার ব্রান্ড ভ্যালুকে বিক্রি করে আর নুহাশকে বিক্রি করে মিডিয়া: পত্রিকা, টেলিভিশন, অনলাইন পোর্টাল ইত্যাদি। অযোগ্যতার দুষ্টচক্র। মুনাফাখোরদের এই পরস্পরের সঙ্গে তেলবন্ধন চলমান। আমরা আম জনতা বাধ্য হয়ে এসব দেখছি; ক্ষেপে গেলে খুব বিপদ আছে ভোগবাদীদের। অযোগ্যদের জন্য তখন খুবই অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি হবে।
1 Comments
খুবই তথ্যবহ এবং বেসিক আলোচ। Give your youtube channel adress.
ReplyDelete