সাংবাদিকতার ছাত্র, শিক্ষক ও সাংবাদিক হিসেবে শ্রদ্ধাভাজন বড় ভাই ও বাংলাদেশের অনলাইন সাংবাদিকতার পথিকৃৎ Alamgir (আলমগীর হোসেন) ভাইয়ের এই মন্তব্যের সঙ্গে আমি একমত। শুধু এইটুকু যুক্ত করবো যে, সংবাদমাধ্যম চাইলে যে কোন বার্তা বা আধেয়কে নিজেদের ইচ্ছানুযায়ী কাটছাট বা বৃদ্ধি করে গুরুত্ব বা কম গুরুত্ব দিতে পারে! সংবাদ প্রচারে মালিকপক্ষের সম্মতি অসম্মতি অনেক সময় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়। ঠিক এই কারণেই পাবলিকের গণচাঁদায় সংবাদমাধ্যম হতে পারে যার কোন কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ থাকবেনা, কিন্তু এটা সবাই চায়না। কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণহীন সংবাদব্যবস্থা নিয়ে এখনো কোনো ভাবনা শুরু হয়নি। আমি চেষ্টা করছি একটি প্রাথমিক কাঠামো দাঁড় করানোর জন্য। সবাই দোয়া করবেন। সমস্যা হচ্ছে, একাডেমিক বা কার্যক্ষেত্র কোথাও আসলে বিকেন্দ্রীকরণপ্রবণতাকে পছন্দ করা হয়না, কারণ এতে বিপ্লব ও নৈরাজ্যের সম্ভাবনা থাকে। প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধাবাদী রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ও যোগাযোগ পদ্ধতি যদি ডিজিটাল যুগে বিকেন্দ্রীকরণ হয় তাহলে কারো একক খবরদারী থাকেনা, এতে কর্তৃত্ববাদী ও পুঁজিবাদীদের ভীষণ সমস্যা! 'বিটকয়েন' নিয়ে এ কারণেই সরকারগুলো ভীত ছিল। তথ্যপ্রাপ্তি ও বিস্তৃতির ক্ষেত্রেও যদি এমন বিকেন্দ্রীকরণ শুরু হয় তবে ক্ষমতা কাঠামোর গোঁড়া ধরে আসলে টান দেয়া হয়। সেটি দেয়া বা হওয়া এতো সহজ না। কিন্তু সেটি না হলে ট্রাম্পরা নিজের পছন্দের অনুসারে সংবাদ না আসলে সেইটাকে 'ফেইক নিউজ' বলতেই থাকবে (ভক্স, ৯ মে, ২০১৮) এবং সংবাদ, সাংবাদিক ও সাংবাদিকতা ধীরে ধীরে আরো সংকুচিত হয়ে যাবে!
ফেইক মানে 'ফেইক', বাংলায় 'ভুঁয়া'। ভুঁয়া শব্দটিকে সংবাদের সঙ্গে যুক্ত করে বিশ্বের সমগ্র পুঁজিবাদী ক্ষমতাকাঠামো (ছোট থেকে বড়, প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি থেকে রাষ্ট্র বা গোষ্ঠী সবাই) সংবাদ ও সাংবাদিকতাকে নেতিবাচকতা আরোপ করে দানবায়িত করে। তাই গণমাধ্যম ও সংবাদ আর বিশ্বাসযোগ্যতা হারায়। এতে তথ্যের ভারসাম্য নষ্ট হয়। তথ্যশূন্যতার জায়গা নেয় গুজব, ভুল বার্তা। বিকল্প মাধ্যমে নাগরিক সাংবাদিকতার নামে যে যার মত 'তথ্য বা আধেয় উৎপাদন' করতে শুরু করে। ফলাফল দাঁড়ায়, তথ্যের দারুন সংশয়ী দশা! এই অবস্থা থেকে মানুষের পরস্পরের প্রতি বিশ্বাস বা আস্থা হ্রাস পাওয়ার সূত্রপাত। বিশ্বাস তখন রক্তের সম্পর্ক, আবেগ, পূর্বধারণার উপর নির্ভর করে 'সত্য' বা ' ফ্যাক্টকে' হারিয়ে দেয়। সমাজ সেই আদিম বংশ বা গোত্রপ্রধান চরিত্রে ফিরে যাওয়ার সম্ভাবনা আসে। এমন তথ্য নৈরাজ্য ভবিষ্যতে বিপ্লব, না কী সংঘর্ষ তৈরি করে তা আমরা এই মুহুর্তে বলতে পারবোনা। আমরা বলতে পারি, আমাদের তথ্য আমাদের হাত ছাড়া হয়ে যাচ্ছে! তাই সত্যের সঙ্গে আমাদের দেখাদেখিও প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে আসছে; ধীরে নয়, খুব দ্রুতগতিতে...।
বার্তা২৪ এর এডিটর ইন চিফ আলমগীর ভাইয়ের বক্তব্যটি নিম্নরূপ:
‘নিউজ কখনো ফেক হয় না। যেটা ফেক, সেটা তো নিউজই না। গণমাধ্যমের দায়িত্ব হলো শতভাগ নিশ্চিত হয়ে খবর প্রকাশ করা, সাংবাদিকতার নীতির জায়গায় অটল থাকা। তাহলে পাঠকও বিভ্রান্ত হবে না, সে জানবে যে এখানে এসে সঠিক খবর পাবে।’
0 Comments