সর্বশেষ

কুয়েট, কুয়েত, আরবীয় জুব্বা ও সাংস্কৃতিক ভণ্ডামী বিষয়ক প্রতিবয়ান

সংস্কৃতি জ্ঞানহীন এই ধরনের প্রশাসন 
আমাদের চারপাশে অনেক! লুঙ্গি-শাড়ি-ধুতি-পাঞ্জাবী ইত্যাদি পরে এদেশের দপ্তর প্রতিষ্ঠান, বিদ্যালয়গুলোতে যাতায়াত করার নির্দেশনা কিন্তু কোনদিন আসেনা। প্রচণ্ড গরমেও প্যান্ট আর ব্লেজার গায়ে দেয়া এই দেশে জাতে উঠা অথচ ভৌগোলিক কারণেই গরমে এদেশে লুঙ্গি-গেঞ্জি-শাড়ি-পায়জামা-পাঞ্জাবী সবচেয়ে উপযুক্ত। কিন্তু নিজেদের বাপ-দাদা-নানা-নানী চৌদ্দপুরুষের পোশাককে আমরা বানিয়েছি 'ঘরের পোশাক', অথচ এই পোশাকেই তারা হাট-বাজার-বেড়ানো বা বিচার-সালিশী করেছে! আজ সেই পোশাককে কথিত ফর্মালের জালে ফেলে হত্যা করা হয়েছে আর এর সঙ্গে আমাদের তাঁত ব্যবসার মাজা ভেঙে দেয়া হয়েছে। এইগুলো প্রতিটি বিষয় একটি আরেকটির সঙ্গে জড়িত। নিজের মাটির পোশাক, কৃষি, কায়িক শ্রম ও ভাষার প্রতি আমাদের নির্লজ্জ হীনম্মন্যতার কারণেই আমাদের জাতীয় দুর্দশা। 
তাই কর্তৃপক্ষ নামধারী পশ্চিমের মানসিক দাসদাসীদের কাছে প্যান্ট-শার্ট হয়েছে আদর্শ পোশাক, যদিও তা গায়ে দিয়ে বা পরে ঘেমে অস্থির, নানা রোগবালাই হোক না কেন! এদের কাছে পশ্চিমের শ্যুট-টাই-কোর্টে সংস্কৃতির কিছু হয়না, কিন্তু প্রাচ্যের আরবের জুব্বায় ইজ্জত যায়! অথচ আরবের টাকায় হয়তো বেতন ভাতাই হচ্ছে এসব আরব পোশাক-সংস্কৃতি বিদ্বেষীদের! এরা ২০০ বছরের ব্রিটিশ শোষণের ভাষা, পোশাক, প্রথা দাঁত কেলিয়ে নিতে পারে তবে ১২০৪ সাল থেকে বা তারও আগে থেকে আসা হাজার বছরের পোশাক-ভাষা-প্রথাকে 'পর' ভাবে! এর পিছনে সূক্ষ্মভাবে কাজ করে ইসলাম ও মুসলমানদের বাঙালি সংস্কৃতির বাইরে ভাবার মত সংকীর্ণতা।  অথচ সংস্কৃতির যেকোন সংজ্ঞায়ই ইসলাম ও এর নিয়ম, আরব-পারস্য-তুর্কির পোশাক-ভাষা-প্রথার কিছুটা বা অনেকটা বা মিশ্র রূপটা বাঙালি স্বতঃস্ফূর্তভাবেই নিয়েছে। কারণ আরব-তুর্কি-আফগান-পার্সিরা এখানে ব্রিটিশ বা আর্যদের মত লোপাট করতে আসেনি, তারা এখানে স্থায়ী হয়েছে, বিয়ে করেছে, সম্পর্ক করেছে ও এই সংস্কৃতির সঙ্গে নিজেদের মিলিয়ে মিশিয়ে একাকার করেছে। কিন্তু পশ্চিমকে ও দিল্লির আধিপত্যবাদকে মানদণ্ড ধরে যারা সমাজ অধ্যয়ন করে তারা 'কুয়েত' বা আরবের পোশাককে বাঙালির থেকে বহু দূরের সেটি বলতে বা বোঝাতে চায়! ৭১ টিভির যে নির্লজ্জ উপস্থাপিকা কুয়েটের ছেলেটিকে শহীদ মিনারে জুব্বা পরে ছবি তোলা নিয়ে নিম্নরুচির প্রশ্ন করেছে তার নিজের গায়ে ছিল ইউরোপ আমেরিকার পোশাক। তা নিয়ে চিন্তা নাই। আরবের হলে সমস্যা🤣😂 কিন্তু আজকের আরবের ভোগবাদীদের সঙ্গে তো পশ্চিমাদের দহরম মহরম। তো আমাদের আরবের সংস্কৃতি বিদ্বেষী ও আরব্য ভোগবাদীদের প্রভু তো একই, দুজনের গোঁড়াই এক; ঐ আমেরিকা-ইউরোপ। তবু কেন সাধারণ আরবের পোশাকে ইনাদের জ্বলে? সাধারণ আরব ও সাধারণ বাঙালি মুসলমানদের কোন কোন জায়গায় মিল থাকলে অনেকের সমস্যা হয়? এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজেন। অনেক কিছু পাবেন। 

অন্ধপশ্চিমা মানসিক দাস এই শিক্ষক-প্রশাসন অজস্র এই দেশে। সে কারণে এদেশের মানুষের সহজে সাংস্কৃতিক মুক্তি আসছেনা। আর যে জাতির সাংস্কৃতিক মুক্তি নাই সে জাতির অর্থনৈতিক মুক্তি আসেনা। আপনি পৃথিবীর অর্থনৈতিকভাবে স্বচ্ছল প্রতিটি জাতির দিকে চেয়ে দেখবেন তারা নিজের ভাষা, পোশাক, সংস্কৃতি, পণ্য ইত্যাদিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয় বলেই তারা উন্নত। আর আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকেই অযোগ্যতার দুষ্টুচক্র খোলা হয়, আর দেশের কৃষি-ব্যবসা-পণ্য-সংস্কৃতি-পোশাক-ভাষাকে পশ্চিমের চেয়ে অধম ভাবার অধম ও অসত্য দীক্ষা দেয়া হয়। এই অবস্থার উন্নতি না হলে বাঙালি জাতির রাষ্ট্র বাংলাদেশের মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো কঠিন হয়ে যাবে। কারণ এই মগজহীন মানসিকতা 'র‍্যাগ ডে'-তে আরবের জুব্বা পরাকে বাংলাদেশের সংস্কৃতি মনে করেনা, তবে র‍্যাগডে-নিউইয়ার-বার্থডে এগুলো বাংলাদেশের সংস্কৃতি কী না সে প্রশ্ন ওঠেনা! সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের ছোবলে সবচেয়ে বেশি কুপোকাত আমাদের কথিত শিক্ষিত সমাজ। একদম লেজেগোবরে দশা তাদের! তো যারা সাংস্কৃতিক আগ্রাসন প্রতিহত করবে তারাই যদি স্বেচ্ছায় বা অনিচ্ছায় বা অজান্তে সাংস্কৃতিক আগ্রাসনকে কোলে তুলে মাথার মুকুট করে তবে অর্থনৈতিক-সাংস্কৃতিক  পরিবর্তন আসবে কেন বা কীভাবে?
পাঠ অনুভূতি

Post a Comment

0 Comments