যে লোকগুলো আন্তর্জাতিক রাজনীতি ব্যাখ্যা করছে এরা জানেইইনা হয়তো, ইরাক মূলত শিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ এবং শিয়াদের তীর্থস্থান (কারবালা, নাজাফ ইত্যাদি) বেশিরভাগ ইরাকে। এ কারণে ধর্মীয় কারণেই ইরাক-ইরানের শিয়াদের পলিটিকাল মুভ এক হয়। সাদ্দামের অনেক কারণের এটি একটি কারণ ছিল ইরানে আক্রমণের। সাদ্দাম প্রেসিডেন্ট হলেও শিয়াদের দিলপ্রাণ থাকতো ইরানের আয়াতুল্লাহের দিকে! এই জটিল থিওলজিকাল বন্ডিং বোঝা না গেলে ইরানের ইনফ্লুয়েন্স সহজে বোঝা যাবেনা। কাসেম কেবল ইরানের নয়, সমগ্র শিয়াদের নায়ক। কারণ?
শিয়াদের যে তাকফিরিরা (সন্ত্রাসী ইহুদীবাদী খারেজী আইএস, আলকায়েদা, আল নুসরা নরঘাতক রক্তখেকো) কাফের বলে হত্যা করতো তাদের হাত থেকে রক্ষা করতেই যেন মহান আল্লাহ কুদস ব্রিগেডকে পাঠিয়েছিল, এই মনস্তাত্ত্বিক অবস্থা শিয়াদের! একই সঙ্গে ইসরায়েলের হাত থেকে আল কুদস বা জেরুজালেম পুনরুদ্ধার করতে আল মাহদী ও ঈসা (আ) যে যুদ্ধ করবেন সেটির প্রস্তুতিও নিচ্ছে শিয়ারা! এইখানে এসে সুন্নীদের একটি সচেতন অংশ শিয়া-সুন্নী বিভাজনের সংকীর্ণতা থেকে বের হতে চায়। থিওলজির এই মারপ্যাঁচ নেতানিয়াহু বুঝে। তাই বলদ ট্রাম্পের কাঁধে বন্দুক রেখে পথ পরিষ্কার করছে। আর ট্টাম্পের মেয়ে ইভাঙ্কা ধর্মান্তরিত ইহুদী, জামাই কুশনার যে মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক প্রতিনিধি সেও খাঁটি ইহুদী। হোয়াইট হাউজ মূলত তেল আবিভের হাতের ঈশারায় চলছে। এ রাজনীতি ধরতে অনেকেই পারছেনা।
আর কিছু সুন্নী নামের ওহাবী গাধারা যে অনলাইন-অফলাইনে অবৈধ ইসরায়েল তথা দাজ্জালের দালালী করছে এই বোধও তাদের নাই। অথচ এরাও দাজ্জালকে পরাজিত করতে লড়বে এই বিশ্বাস করে! ধর্মতত্ত্ব ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি এখন যে জটিল রূপ ধারণ করছে তাতে সাধারণ মানুষের অন্যের দ্বারা মগজ ধোলাই খাওয়ার সম্ভাবনা সর্বাধিক! এ কারণেই সৌদি আরব 'ওহাবী ব্যাখ্যার' রাজতান্ত্রিক ইসলামের প্রচারে বিলিয়ন ডলার খরচ করে। কী কারণে দেওবন্দ বা কওমী প্রতিষ্ঠানগুলোয় সৌদি আরব ব্যাপক বিনিয়োগ করে খোঁজ নিয়েছেন?
এখান থেকে বের হওয়া কথিত আলেমদের কাছে খুনী ইহুদীদের চেয়ে শিয়া-মাজার-পীর-নাস্তিক বিশাল বড় শত্রু, আর সৌদি আরব ইসলামের ঝাণ্ডাধারী (আমেরিকা-ইসরায়েলের দাসত্ব করেও; বাংলাদেশীসহ বিভিন্ন দেশের নারীদের নিয়ে ব্যভিচারে বাধ্য করলেও, ইয়েমেনে লাখ জায়েদী মুসলমানদের হত্যা করলেও, ইসরায়েলের সঙ্গে দহরম-মহরম থাকলেও; তৃতীয় বিশ্বের মুসলমানদের দাসদাসী মনে করলেও সৌদি আরব তাদের বিশাল ধর্মপরায়ণ রাষ্ট্র)। এর থেকে উত্তরণ হবে কীভাবে?
হওয়া কঠিন। কারণ এখন উত্তর-সত্য কাল(Post-Truth Era)। মানুষ তথ্য, উপাত্ত, যুক্তির থেকে পূর্ব-ধারণ ও আবেগনির্ভর হয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।
আরেকটি বিষয় ভয়ংকর। ইরান আর আমেরিকার মুখোমুখি অবস্থান ইরান-আমেরিকা ও বাকি পৃথিবীর সকলের জন্য ক্ষতিকর হলেও কেবল অবৈধ ইসরায়েলের জন্য লাভজনক। কারণ অবৈধ ইসরায়েল জানে আজ অথবা কাল আল মাহদী ও তার বাহিনী যেটি সমগ্র ধর্মের বিশ্বাসীদের নিয়ে গঠিত হবে তাদের সঙ্গে তার যুদ্ধ অনিবার্য। আজ ইরানের সাংসদগণ সর্বসম্মতিক্রমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সকল সেনা উপস্থিতিকে 'সন্ত্রাসী' হিসেবে অভিমত দিয়েছে। খুবই শঙ্কার কথা। এই মুহূর্তে ইরানের বাহিনীগুলো যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। এরা আগেও দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধ করেছে। কিন্তু আমেরিকা নিজেদের মদদে তৈরি গুচ্ছ গুচ্ছ বাহিনীর সঙ্গে সাফল্যের সঙ্গে লড়লেও রাষ্ট্রীয় কোনো বাহিনীর সঙ্গে কিন্তু লড়েনি সফলভাবে (ভিয়েতনাম, আফগানিস্তান উদাহরণ)।
ইরান অন্যদিকে দশকের পর দশক অবরোধের পরেও টিকে আছে। সে কারণে এই যুদ্ধে কোনো পক্ষই না জিতলেও এর ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেড়ে যাবে। এমন কী হরমুজ প্রণালী আক্রান্ত হয়ে সমগ্র তেল ও গ্যাসনির্ভর দুনিয়া অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে। এই অস্থিতিশীলতার মধ্যেই তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণ নিহিত। যুদ্ধ থামাতে বা নিজ স্বার্থের জন্য অন্যান্য দেশগুলো কোনো না কোনো পক্ষকে সমর্থন করবে। এই সমর্থন বৈশ্বিক যুদ্ধের দামামা বাজাতে ভূমিকা রাখতে পারে। অন্যদিকে ইরান নিজের অস্তিত্ব সুরক্ষায় 'শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যেই' পারমাণবিক বোমার পরীক্ষা চালাতে পারে। সেক্ষেত্রে এক মহাযুদ্ধই সামনে আসছে। এটাই হয়তো মালাহামা বা আর্মেগেডন বা ভয়াবহ মহাযুদ্ধের প্রাথমিক ভিত্তি হয়ে সামনের ঘটনাগুলোকে ত্বরান্বিত করবে...!
0 Comments