সর্বশেষ

সন্ত্রাসী ইহুদীবাদী ইসরায়েলের প্রোপাগাণ্ডা ও মগজধোলাই প্রক্রিয়া || মুক্তি আছে?

ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ ও অবৈধ ইসরায়েলের বর্বরতা: নিউজ মিডিয়ার অপপ্রচার ও বাস্তবতা
~~~
আপনারা যারা ফিলিস্তিনীদের নির্মমভাবে নিপীড়নের শিকার হওয়ার পরেও অবৈধ ইসরায়েলের হত্যাযজ্ঞ, দখলদারত্ব, লুটতরাজ ও বোমাবাজিকে জায়েজ বা জাস্টিফাই করেন 'হামাস বা রকেট' ইত্যাদি বলে এরা কীভাবে গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও একাডেমিশিয়ান ইত্যাদি সাইকোলজিক্যাল এনটিটি অপপ্রচার বা প্রোপাগাণ্ডাকে আপনাদের মগজে গেঁথে দেয় এ বিষয়ে অজ্ঞতার শীর্ষে বাস করেন৷ কীভাবে নিউজ মিডিয়া, একাডেমিয়া, এজেন্ডা ও প্রোপাগান্ডা পরস্পরকে নিয়ে আপনার মধ্যে জালিমের পক্ষে সম্মতি বা অসম্মতি উৎপাদনের কাজে নিয়োজিত তা আপনারা ভাবতেও পারেন না। বৈশ্বিক সংবাদমাধ্যম আপনাদের কাছে আসমানী কিতাব। অথচ এর কনটেন্ট উৎপাদনকারীরা এই মর্ত্যেরই মানুষ এ কথা বেমালুম ভুলে যান৷ এর মালিকানা আমাদেরই চারপাশের মানুষ যাদের নিজস্ব রাগ, আদর্শ, ক্ষোভ,  মতামত ও পপক্ষ-বিপক্ষ আছে৷ সে কারণেই ফেইক নিউজ, পোস্ট ট্টুথ সিম্পটম বহুলভাবে আলোচিত৷ 

আমরা ছোটো বেলায় গডজিলা নামের একটি কার্টুন দেখতাম। গডজিলা মানুষকে বিপদে রক্ষা করা এক প্রাগৈতিহাসিক যুগের প্রাণী৷ সে আমাদের হিরো। কিন্তু এ বছর মুক্তি পাওয়া হলিউডের চলচ্চিত্র কং বনাম গডজিলায় দেখবেন 'কং' কে আপাদমস্তক ইতিবাচক দেখানো হলেও গডজিলাকে নেতিবাচক করে উপস্থাপন করা হয়েছে৷ বোঝা যায়, পরিচালক বা প্রযোজকের কংয়ের প্রতি ভালোবাসা একটু বেশি৷ ফলে বিদঘুটে গডজিলাকে আমাদের কাছে খল মানতে কষ্ট হলেও পর্দায় সে খলই। কারণ তাকে যাদের চোখে দেখানো হয়েছে তারা সেভাবেই তাকে প্রেজেন্ট করেছে৷ অর্থাৎ কং শুরু থেকেই হিরো আর গডজিলাকে ভিলেন থেকে কষ্ট করে নিজেকে প্রমাণ করতে হবে৷ যে আমি গডজিলার জন্য অপেক্ষায় থাকতাম, সেই আমি পর্দায় গডজিলায় না আসার জন্য দোয়া করছি। কারণ তাকে সেভাবে আমার সামনে আনা হয়েছে। এটাই এজেন্ডা। আর এই এজেন্ডা গণমানস দখলের প্রচেষ্টায় বারবার প্রচার করলে তা হয়ে ওঠে প্রোপাগাণ্ডা। ফিলিস্তিন বিষয়ে আপনার মগজে যেসব নেতিবাচক ধারণা আসে হামাস, রকেট ইত্যাদি নিয়ে এর সবই হচ্ছে ইহুদীবাদী মিডিয়ার দীর্ঘমেয়াদি এজেন্ডার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। আপনি জায়নবাদী মিডিয়ার প্রোপাগাণ্ডায় নিজের বিবেক বেঁচে দিছেন বা বন্ধক দিছেন।
হামাস ও ফাতাহ এর বিভাজন কী নিয়ে? ফাতাহ কথিত টু স্টেট সলিউশন এর মুলায় ঈমান এনে নিজেদের অস্ত্র ও মেরুদণ্ড অবৈধ ইসরায়েলের কাছে জমা দিয়েছে৷ ফলে পশ্চিম তীর পুরোটাই ইসরাইলী উপনিবেশ হয়েছে৷ আর হামাস এই নীতিতে না গিয়ে 'সেল্ফ ডিফেন্স' এর নীতি নেয়। এতে গাজা দাসবৃত্তি থেকে রক্ষা পেয়েছে৷ 

অন্যদিকে, হামাসকে পশ্চিমা মিডিয়া যেভাবে 'মিলিট্যান্ট' দেখায় আদতে তারা তা নয়৷ এটি একটি রাজনৈতিক দল৷ এর নিজস্ব ক্ষুদ্র একটি ইউনিট সম্ভবত কাসাম ব্রিগেড বা এ জাতীয় নাম হালকা অস্ত্র রাখে যা ইহুদীবাদীদের পারমাণবিক অস্ত্রসহ অন্যান্য মারণাস্ত্রের তুলনায় একেবারেই নগন্য৷ আবার হামাস ফিলিস্তিনবাসীদের ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত একটি দল। সরকারব্যবস্থার জন্য ম্যান্ডেট পাওয়া দল। আপনি মুখে গণতন্ত্রের বুলি আওড়াবেন আর গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত একটি রাজনৈতিক দলকে 'সন্ত্রাসী' বলবেন কেবল তাদের জান, মাল ও ইজ্জত রক্ষার জন্য 'যার যা কিছু আছে তা নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করার জন্য', এটা ভণ্ডামো নয় কি? মিডিয়া এভাবেই ফ্রেমিং (Framing) করে হামাসকে যে এরা 'রকেট ছোঁড়ে বলেই ইসরায়েল বোমা হামলা করে' এবং 'হামাস ফিলিস্তিনের কেউ নয়'৷ এভাবে ইসরায়েলের ট্যাংক, বোমারু বিমান, বন্দুক আর বোমাবাজি থেকে ক্যামেরা ও কলম এসে পড়ে 'হামাস মিলিট্যান্টস ও গাজা থেকে রকেটে'। একে বলে 'ছোটকে বড় করণ' বা প্রাইমিং (Priming) যা প্রোপাগাণ্ডায় বহুলভাবে ব্যবহৃত৷ মানে আপনি অন্য অনেক কিছু থেকে নিজের এজেন্ডা (Agenda) অনুযায়ী অংশকে তুলে আনলেন প্রোপাগাণ্ডার জন্য৷ লোকে সেটি নিয়েই এরপর কথা বলা শুরু করলো, সেটি নিয়ে তর্ক হলো। সূত্রে না গিয়ে, মূলে না গিয়ে ডালপালা নিয়ে ব্যস্ত হলো। ভুলে গেল ইতিহাসের গোড়ার কথা।

'ইসরায়েল উড়ে এসে জুড়ে বসে তার সেল্ফ ডিফেন্স (Self Defence) করতে পারলে ভূমিপুত্র ফিলিস্তিনীরাও দুইটা রকেট মেরে সেল্ফ ডিফেন্স করতে পারে' এই বোধ লোপ পেলো। এমন কী আজ পর্যন্ত একটি জাতিসংঘের শান্তি মিশনের জোরালো প্রস্তাবও পশ্চিমা মিডিয়ায় দেখবেন না৷ দেখবেন না ৪০ বারের অধিক আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের ইসরায়েলকে সুরক্ষায় অবৈধ ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগের নিন্দা করে নিউজ, এনালাইসিস, একাডেমিক ডিসকোর্স ইত্যাদি।  

এমন কী পশ্চিমা মানসিক দাসদাসী অন্যান্য দেশের সাংবাদিক, একাডেমিশিয়ানদেরও একই দশা৷ আজ পর্যন্ত নিরাপত্তা পরিষদের ৫ দেশের অবৈধ সুযোগ নিয়েই কোনো গ্লোবাল ডিসকোর্স তৈরি করতে পারেনি এরা৷ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ও সবচেয়ে বিস্তৃত জনগোষ্ঠীর কথা বলার জন্য নিরাপত্তা পরিষদে কোনো স্থায়ী সদস্য নেই! এর চেয়ে বেইনসাফ আর আছে?

শেষ করি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউজ মিডিয়া বা এন্টারটেইনমেন্ট ইন্ডাস্ট্রির ৯৬% ৫-৬টি বৃহৎ কোম্পানির হাতে যারা আবার সরাসরি ইহুদীবাদসম্পৃক্ত৷ এ কারণে হলিউডের সিনেমায় ' হলোকাস্ট ব্যবসা'কে রঙচঙে প্রকাশ করতে দেখবেন। এদের প্রোপাগাণ্ডা এতোটাই শক্তিশালী যে, আপনি একাডেমিক জায়গা থেকে মিডিয়া, সোস্যাল মিডিয়া থেকে পাবলিক স্ফিয়ার কোথাও ইহুদীদের অপরাধ নিয়ে বলতে পারবেন না৷ সিমাইট জাতির প্রকৃত রক্তধারা ফিলিস্তিনের আরব জাতি। তাদের হত্যা করে এন্টি জায়োনিজমকে 'এন্টি সিমাইট' বলে প্রতিষ্ঠিত করেছে ইহুদীবাদীরা। একে চ্যালেঞ্জ করার মত প্রতিবয়ান (Counter Discourse) দাঁড় করাতে চেষ্টা করছে কেউ? এখানেই এসময়ের বুদ্ধিবৃত্তিক অঙ্গন পঙ্গুত্ব বরণ করেছে। 

যখন অস্ত্র, অর্থ অসম হয় দুই পক্ষের তখন এক পক্ষ মজলুম ও অন্যপক্ষ জালিম৷ ইসরায়েল একটি জালিম রাষ্ট্র। কীভাবে এ জালিমদের অত্যাচার, হামলা, বর্বরতা, দখলবাজি, বোমাবাজিকে 'কনফ্লিক্ট', 'ওয়ার' ইত্যাদি লেখা হয়? এটাই প্রোপাগাণ্ডা। আপনার মগজকে ইসরায়েলের ফরেন মিনিস্ট্রি বানানোর ইন্টেলেকচুয়াল প্রজেক্ট। 

বলা হয়, পশ্চিম ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার মার্কিন ও কানাডার মুল্লুকে আপনি 'ঈশ্বরের নিন্দা করতে পারবেন, কিন্তু ইহুদীদের অপকর্ম নিয়ে বলতে পারবেন না'! এই মানসিক, আইনী দুরবস্থা তৈরি করেছে অসভ্য, বর্বর জায়নবাদীরা--মিডিয়া ও একাডেমিয়া দিয়ে৷ সুতরাং জালিম একাডেমি-মিডিয়াকে ধর্তব্যে নিয়ে ফিলিস্তিনের মজলুমদের প্রতি আপনার কর্তব্যে অবহেলা কইরেন না৷ আপনার নিন্দার গুরুত্ব রয়েছে বলেই খুনী, দখলদার, ইহুদীবাদী লোপাটকারীরা প্রোপাগাণ্ডায় মিলিয়ন ডলার খরচ করছে।

মগজকে একটু চাকরদশা থেকে মুক্ত করুন। আজ হোক কাল হোক, লড়াকু ফিলিস্তিনীরা মুক্তি পাবেই ইন শা আল্লাহ। কিন্তু যারা পশ্চিম ইউরোপ, আমেরিকা ও জায়নবাদের কাছে মগজ, বিবেককে সঁপে দিয়েছেন সেই আপনাদের পশ্চিমা মানসিক দাসত্বের মুক্তি আসবে কবে?

#ফিলিস্তিন 
#SaveGaza 
#IsraeliCrimes 
#SupportPalestine 
#savepalestine 
#BangladeshWithPalestine
পাঠ অনুভূতি

Post a Comment

0 Comments