সর্বশেষ

শ্রমিক দিবস মে দিবসে চাষা মজুরদের কথা কে ভাবে?

সরকারি বা বেসরকারি চাকরিজীবী বা সরাসরি পরিশ্রম ছাড়া অর্থকড়ির মালিক হওয়া অনেককে 'শ্রম দিবস' নিয়ে আবেগঘন স্ট্যাটাস দিতে দেখা যাচ্ছে। এটি এ জন্য 'ভালো' যে, শ্রমিকের মর্যাদা বোঝার একটি মানসিকতা আমাদের ভেতর এখনো রয়েছে!

কিন্তু অনেকের লেখায়ই ঘাম ঝরানো কিষাণ, দিন মজুর, কামলা, শ্রমিকের মত 'চাকরিজীবীরাও শ্রমিক' এমন একটি বার্তা দেওয়ার চেষ্টা আছে। 
হ্যাঁ, এটা সত্য যে, চাকরিজীবীরাও এক ধরনের 'শ্রমিক'। বড় ব্যবসায়ী, রাজনীতিক ও তাদের ঘরে জন্ম নেওয়ার সুবাদে পদ-খ্যাতি-অর্থ-ক্ষমতা পেয়ে যাওয়া সন্তানেরাও ক্ষেত্রবিশেষ শ্রমিক। নিশ্চয়ই তারা 'মানসিক শ্রম' এবং কদাচিৎ 'শারিরীক শ্রম'ও দিয়ে থাকেন। 

কিন্তু হাড়ভাঙা খাটুনি যারা দেন প্রখর রোদে পুড়ে, ঝড়-ঝঞ্ঝা-বৃষ্টিতে ভিজে, শীতে কেঁপে, ধুলা-কাদা মেখে, কোনোমতে এক বেলা আধাপেট ভাত অথবা টঙ দোকানের কলা-রুটি-কেক খেয়ে তাদের শ্রম আর চাকরিজীবীদের শ্রম এক হতে পারে না। এ দুটিকে এক ভাবা মানে ঘামঝরানো সভ্যতার নির্মাতা অথবা সভ্যতার জ্বালানি অত্যাবশ্যক খাদ্য ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসের যোগানদাতাদের ছোটো করে। এটা হওয়া উচিত নয়।

শ্রমিকরা এই দিনে ছুটি পাচ্ছে কি না আশেপাশের বড় বড় ভবনের নির্মাণ কাজে গিয়ে খবর নেন। চাষাবাদের জমিতে যান। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তার ঘরে যান। এই দিনটিতে তাদের ছুটি নিশ্চিত করা যায়নি। 

তাদের শ্রমের ন্যায্য মূল্য তো নির্ধারণ করাই যায়নি। ঘাম শুকিয়ে যাওয়ার আগেই শ্রমিকের অর্থ পরিশোধের কঠোর নির্দেশ মুহাম্মদ (স) দিয়েছিলেন। সেটি মানা হচ্ছে কোথাও? কৃষক ঘাম ঝরিয়ে যে ফসল ফলায় তার ন্যায্য মূল্য দেওয়া হয়? শ্রমিকের জীবনের নিরাপত্তা বীমা আছে?

অথচ 'সিউডো-শ্রমিকদের' শ্রমবিলাস সর্বত্র! 

তাতে সমস্যা নেই। সেটি এক অর্থে ভালো। ছবি, শব্দে শ্রমিকের জয়গান চলে। কিন্তু শ্রমিকের সুবিধা দেওয়ার আলাপ এর সঙ্গেই তুললে তা উত্তম হবে। 

বিশ্ব শ্রমিক দিবসকে অনেকেই 'মে দিবস' বলে। আমি একে শ্রমিক বা মজুর বা কামলা দিবস বলাকে উত্তম মনে করি। মে দিবস বলে কায়িক শ্রমকে এড়ানোর বুদ্ধিবৃত্তিক অপচেষ্টা থাকার সম্ভাবনা আছে। শব্দ ব্যবহারের রাজনীতি গভীর।
পাঠ অনুভূতি

Post a Comment

0 Comments