সর্বশেষ

তুরস্কের নির্বাচন ও বাংলাদেশ

তুরস্কের নির্বাচন নিয়ে আমার ভাবনা
~°~
তুরস্কের নির্বাচন নিয়ে আমার ভাবনা
~°~

তুরস্কের নির্বাচনে এরদোয়ান আর কামাল কিলিচদারোগলু দুটি বিপরীতমুখী অবস্থানে। 

কামাল তার নির্বাচনের শেষ সমাবেশ পশ্চিমের সেবক কামাল পাশার কবর যিয়ারতের মাধ্যমে শেষ করে। 

একইসঙ্গে সে নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপের ব্যাপারে তার খ্রিস্টান জায়নবাদী পশ্চিমা প্রভুদের নিকট নালিশ করে।

অন্যদিকে, রজব তৈয়ব এরদোয়ান ওসমানী তুর্কিদের নিকট ইউরোপীয়দের লজ্জাজনক পরাজয়ের সাক্ষি খ্রিস্টানদের নিকট থেকে ক্রয়কৃত আয়া সোফিয়া মসজিদে গিয়ে সমাপনী নির্বাচনী সমাবেশ করে। 

এটি তুরস্কের নির্বাচনে এরদোয়ানের প্রাচ্যমুখী অবস্থানকে নির্দেশ করে।

গতকাল ১৪ মে ২০২৩ তারিখ অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনে এরদোয়ান নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। যদিও সরকারনিয়ন্ত্রিত আনাদোলু এজেন্সি চেষ্টা করেছে এরদোয়ান জয়ী এই মিথ্যাচার করতে। 

পরে সংশোধন করে নেয় যদিও। তবে দ্বিতীয় দফায় ভোট গ্রহণ হবে এটি নিশ্চিত মোটামুটি। 

তুর্কির নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশের মানুষ দেখলাম বেশ আগ্রহী৷ বিশেষ করে কওমী ঘরানোর ও ইসলামপন্থী বলে পরিচিত হেফাজতি, জামাতি, দেওবন্দি লোকের আগ্রহও লক্ষ্যণীয়। যদিও এই লোকদের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত বিবেচনাপ্রসূত হওয়ার সম্ভাবনা বেশিরভাগ সময়ে কম। 

কারণ, এদেশের অনেকেই না বুঝে হুজুগে 'তালেবানদের সমর্থন করে', 'আল কায়েদা সন্ত্রাসীদের সন্ত্রাসী ভাবতে ইতস্তত করে', 'সৌদি আরবের শাসকদের বয়ানের ফেরি করে', 'ইরানের প্রতিরোধ লড়াইকে শিয়াবিদ্বেষের মাধ্যমে খারিজ করে', 'আলী রা ও হোসাইন রা এর প্রতি নিরঙ্কুশ ভালোবাসা প্রদর্শন না করে মুয়াবিয়া ও এজিদের প্রতি প্রেমের গোঁজামিল' ইত্যাদি বিশ্বাস করে। 

এ কারণে তুরস্কের এরদোয়ানকে এরা সমর্থন দিলেও কিছু আসে না, না দিলেও। তবে এদের সিদ্ধান্তের বৈচিত্র্য গবেষণার দাবি রাখে।

আবার, স্যুটেড-বুটেড তরুণ থেকে যুবকদেরও এরদোয়ানকে সমর্থন করছে দেখলাম। বয়স্ক অনেকেও এরদোয়ানপ্রেমী!

এর কারণ কী? ইখতিয়ার উদ্দিন বখতিয়ার খলজির বাংলায় আগমনের ইতিহাস? 

নাকি 'সুলতান সুলেমান' বা 'ওসমান' এর প্রভাব? নাকি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তুর্কি খেলাফতের উত্তরাধিকার হিসেবে 'সুলতান' এরদোয়ানের তুরস্কের নানা বৈশ্বিক কার্যক্রমের অতিরঞ্জিত প্রচার?

তুর্কি থেকে স্কলারশিপ নিয়ে যারা পড়ছেন তাদের ১০০%কে দেখলাম এরদোয়ানের বিজয়প্রত্যাশী৷ 

অন্যদিকে বাংলার সেকুলার নামে পরিচিত ইসলামবিদ্বেষী একটি অংশ আবার এরদোয়ানের পরাজয়ের আশায় নানা স্ট্যাটাস দিচ্ছে! 

আফ্রিকার অধিকাংশ দেশ যেখানে তুর্কি বিনিয়োগ করেছে সেখানে এরদোয়ানের জনপ্রিয়তা তুঙ্গে। তাদের অনেকেই ইউটিউবসহ সামাজিক মাধ্যমে এরদোয়ানের জয় কামনা করছে। 

মার্কিন ও পশ্চিমাপন্থীরা চাচ্ছেন, এরদোয়ান হারুক। ভারতের ও অবৈধ ইসরায়েলের গণমাধ্যমে এরদোয়ানবিরোধী টোনে সংবাদ প্রচার হচ্ছে। আমাদের দেশের সনাতনধর্মীদের এরদোয়ানের প্রতি সমর্থন আছে বলে মনে হয় না।

এই রকম নানামুখী হিসাবের কারণে আমার মনে হচ্ছে, আধুনিক তুরস্ক ঠিক ওসমানী সাম্রাজ্যের মত প্রভাবশালী না হলেও এর রাজনৈতিক প্রভাব আজো কিছুটা রয়েছে বৈশ্বিক রাজনীতির মাঠে। 

বাংলাদেশে তো বটেই এবং তা ক্রমে বেড়ে চলেছে। এর রাজনৈতিক অর্থনীতি নিয়ে গবেষণারও সময় নিশ্চয়ই হয়েছে।
পাঠ অনুভূতি

Post a Comment

0 Comments