অযোগ্যতার দুষ্টচক্র
~°~
অযোগ্যতার দুষ্টচক্র
~°~
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদ্বয় পরস্পরের কন্যার জন্য চাকরি সম্প্রদান করেছেন বলে খবর ছেপেছে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক ও অনলাইন সংবাদমাধ্যম।
তারা নিজ ক্ষমতাবলে এ নিয়োগ দিয়েছেন এতে সন্দেহ নাই। তবে সমস্ত দায় কেবল উপাচার্যদের দিলে সেটি উনাদের ব্যাপারে ''ফেয়ার জাস্টিস" হয়না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি শিক্ষক নিয়োগের সময় নানা মহল সক্রিয় হয়। এর মধ্যে উপাচার্যও একটি পক্ষ। এই পক্ষের মধ্যেই আরো উপপক্ষ রয়েছে।
যেমন--শিক্ষক সমিতি, ডীন, বিভাগের সভাপতি, এমন কি কখনো কখনো ক্ষমতাসীন বা বিরোধী রাজনীতি করা কোনো শিক্ষক/শিক্ষিকা৷
এই মহলগুলোর ক্ষমতা নির্ধারিত হয় উপাচার্যের কে কত বেশি কাছের তার ওপর ভিত্তি করে।
সব সময় কেবল যে উপাচার্যের পছন্দের প্রার্থী নিয়োগ হয় তা নয়, সভাপতির পদলেহনকারী বা সভাপতি নিজ ক্ষমতাবলয় শক্তিশালী ও টেকসই করার জন্য নিজের আনুগত্যের নিশ্চয়তা যার মধ্যে পাবেন এমন কাউকেই নিয়োগ দিতে চান৷
ত্রিশালে আমি একটি মৌখিক পরীক্ষা দিয়েছিলাম। সেই নিয়োগে বোর্ডে বিভাগের সভাপতির একচোখা পক্ষপাতিত্ব আজো আমার চোখে ভাসে। আমাকে কোনো উত্তরই শেষ করতে দিচ্ছিলেন না।
ধরেন, হিজিমনি, কালচারাল এগ্রেসন, এইসব নিয়ে প্রশ্ন করেছিল যা আমি আলহামদুলিল্লাহ অক্সফোর্ডের টিচারকেও ভেজে খাওয়াতে পারি। তো তিনি আমাকে কথাই বলতে দিলেন না, উত্তর শেষ করার আগেই আরেকটি প্রশ্ন করে ডিস্টার্ব করতেছিলেন! এ বিষয়টি খুবই বেদনার সঙ্গে তৎকালীন উপাচার্য ও এক্সটার্নাল লক্ষ্য করলেন, কিছুই বললেন না।
একই ঘটনা কুমিল্লায়ও ঘটলো। কুমিল্লার সে সময়ে সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত উপাচার্য মহোদয় একাডেমিক্যালি সাউন্ড ও ভীষণ কোয়ালিফাইড হওয়ায় অন্যদের দুষ্টুচিন্তা ধরে ফেললেন হয়তো। তিনি অন্যদের থামিয়ে আমাকে বলতে দিতে উনাদের নির্দেশ দিলেন! আলহামদুলিল্লাহ দারুন করলাম। আমার গবেষণা, লিখিত বই, অভিজ্ঞতার ধারে কাছেও কেউ ছিলোনা, এবং আমার বিশ্বাস ফেয়ারলি খাতা যাচাই করলে রিটেনেও আলহামদুলিল্লাহ ফার্স্টই হইছি! তথাপি, আমাকে নেওয়া সম্ভব হইলো না কী কারণে তা আজো আমি জানিনা।
আর এই বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি পরীক্ষায় আলহামদুলিল্লাহ সবচেয়ে ভালো করলেও আগের একজন নির্ধারিত থাকায় আমাকে নিলো না। বলা হলো পরের সার্কুলারে এপ্লাই করতে। সেই সার্কুলার আজো দেখা গেলো না! আল্লাহ সাক্ষি।
আমার অভিজ্ঞতা বলে, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগগুলোতে নিজের একাডেমিক যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা ও গবেষণার ওপর নির্ভর করে আপনি কোনো ধরনের লবিং, তদবির নিয়ে যাচ্ছেন না এটাই সবচেয়ে বড় 'অযোগ্যতা' বলে বোর্ডে পরিগণিত হয়৷ কারণ?
অনেক কারণের মধ্যে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর চলে আসবে। 'এক্সটার্নাল'--অন্য এক বা একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিয়োগ বোর্ডে থাকা অধ্যাপকরা নিজের বলয়ের ভেতরে নিয়োগ দিতে চান।
এই ক্ষেত্রে বিশেষ বিশেষ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকগণ নিজস্ব 'এক্সটার্নাল সিন্ডিকেট' তৈরি করেন। এ কারণে ও তো অমুক ছারের ছাত্র/ছাত্রী, ও তো অমুক ভার্সিটির ছাত্র/ছাত্রী বলে নিয়োগ হয় অনেকের। প্রকৃত মেধা যাচাইয়ের চেয়ে এ এক্সটার্নাল গ্যাং নিজেদের অপেক্ষাকৃত কম যোগ্যতাসম্পন্ন লোকদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভেড়াতে ব্যস্ত হয়। তাদের ইনফ্লুয়েন্স জোন বৃদ্ধি করতে এই চেষ্টা।
অর্থাৎ কেবল উপাচার্য ভোটের কারণে নিয়োগ দেন তা নয়, রাজনৈতিক ফোন বা এক্সটার্নালদের আবদার মেটাতেও নিয়োগ দেন, দিতে হয়।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে হইলো কী? ক্ষমতাসীন দলের সম্পূর্ণ বিপরীত রাজনীতির লোকের সন্তানদেরকেও শিক্ষক বানালো!
অবশ্য ব্যক্তিত্বসম্পন্ন গবেষণাপ্রিয় যোগ্যতায় অনন্য একাডেমিক্যালি এনরিচড উপাচার্য থাকলে তিনি যোগ্যজনকেই নিয়োগ দেন। এই নিয়োগে ভেতর বা বাইরের কোনো অসাধু প্রভাবই তাকে টলাতে পারে না। কারণ, একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হওয়ার পরে এ পৃথিবীতে তার কী চাওয়ার? এর চেয়ে সম্মান আর হতে পারে না৷
এক্সটার্নাল সিন্ডিকেটে আসি। আমার ক্ষেত্রে, বিশেষ একটি বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রীক যে সিন্ডিকেট রয়েছে সেটিই প্রধান বুদ্ধিবৃত্তিক অসততার নজির রেখে চলেছেন। আমার মনে হয় যারা বিভিন্ন পাবলিক বা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দেন তারা এটি ভালো করে অনুধাবন করেন, কিন্তু নিয়োগ না পাওয়া বা ভবিষ্যৎ অশ্বডিম্ব চাকরিটি হারানোর ভয়ে চুপ করে থাকেন।
প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় নিয়োগেও সমস্যা আছে। স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রগতিশীল বলে পরিচিত একজন সুশীলার এক্সটার্নাল হিসেবে অসাধুতা আমার চোখে এখনো ভাসে।
তাই, কেবল ক্ষমতার বলয়ের শিক্ষকরা এমন নিয়োগ দেন তা আমি বিশ্বাস করিনা, আমি মনে করি আমাদের শিক্ষকদের মধ্যে ক্ষমতা পেয়ে তাকে ন্যায়, হক্ব, সুবিচার ও সততার সঙ্গে ব্যবহার করার মত মানুষ খুব খুব কম।
যারা সৎভাবে রিক্রুট করেন আমি বিশ্বাস করি, তারা অশেষ পুন্যের কাজ করেন। আর যারা কারো হক্ব নষ্ট করে অন্যদের নিয়োগ দেন, তাদের এই হক্ব নষ্টের বিচার আল্লাহ ওপারে নিশ্চয়ই করবেন। এ পারেও অনেকে দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত হন, প্রায়শ্চিত্ত হয় কি তাতে?
শিক্ষক নিয়োগে শিক্ষকদের ইন্টার্নাল আর এক্সটার্নাল এই সিন্ডিকেটের বাইরে রাজনৈতিক ও প্রভাবশালী মহলের ক্ষমতার বলয়ও কাজ করে। এর মধ্যে জাতীয় রাজনীতি, স্থানীয় রাজনীতি এবং ছাত্ররাজনীতি তিনটি বিষয়ই একসঙ্গে বা পৃথকভাবে বা পরস্পরের সঙ্গে মিলিত হয়ে কাজ করতে পারে। তবে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, মেরুদণ্ডসম্পন্ন যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকাদের রাজনৈতিক প্রভাব অন্যায় আবদারে টলাতে পারে না। যার রাজনৈতিক ব্যক্তিদের নিকট থেকে সুবিধা পাওয়ার অভিলাষ আছে, কিংবা যিনি রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার করে সুবিধাভোগ করছেন তিনি তো রাজনৈতিক প্রভাবের কাছে নতি শিকার করবেনই, যদিও এর কোনো নীতিগত বৈধতা নেই।
এই ধরনের নিয়োগ সম্প্রতি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে হয়েছে বলে পত্রিকায় সংবাদ দেখবেন। আমি একমাত্র প্রার্থী হিসেবে অভিজ্ঞতা ও অনেক গবেষণা, একটি বই নিয়ে গেলাম, আলহামদুলিল্লাহ দারুন পরীক্ষাও দিলাম--তবুও আমার সঙ্গে জুলুম করলো। নামে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়--কাজে ইসলামী নয় এটি শতভাগ নিশ্চিত! নিশ্চয়ই আল্লাহ এর বিচার করবেন।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি পরীক্ষায় আমি আল্লাহর রহমাতে ভালো করার পরেও আমাকে বাদ দেওয়ায় খুবই বেদনাদায়ক নজির স্থাপিত হয়েছিল। আমি সে বিচার মহান আল্লাহর কাছে দিয়েছি। আমি ঐ বিচারালয়ে বিশ্বাসী যেখানে আমার সাক্ষি, উকিল, বিচারক সবই মহান আল্লাহ।
কন্যাদ্বয়ের চাকরিপ্রাপ্তিতে ফিরে আসি। উনারা হয়তো দেখবেন 'বেশ ভালো শিক্ষক/ শিক্ষিকা' হয়ে উঠবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্লাটফর্ম ব্যবহার করে নানা গবেষণা ও দেশের বাইরে পড়তে যাওয়ার সুযোগও লাভ করবেন।
একই সঙ্গে কলিগদের নিকট মনে হতে পারে 'আরে ওরা তো অতোটা অযোগ্য না', ছাত্রছাত্রীদের কাছে মনে হতে পারে '' ছার/ম্যাদামরা তো স্লাইড খুলে দারুন মিহিস্বরে পড়ান"! কিন্তু এসব হক্ব কথা বা ফেয়ার কম্প্যারিজন নয়। কারণ, তার আসল ইট, ভিত্তির গাঁথুনিতেই সমস্যা। তার 'বিসমিল্লায় গলদ'। সে এইখানে এসেছে ক্ষমতা, প্রভাব, লবিং বা তদবিরের কারণে এবং একই পদে তার চেয়ে অধিক যোগ্যতাসম্পন্ন কারো হক্ব নষ্ট করে।
তাকে বিচার করতে হবে এইখানে আসার প্রক্রিয়া দিয়ে বা এখানে আসার আগে তার একাডেমিক (যদিও একাডেমিক মূল্যায়নও অযোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকারা প্রশ্নবিদ্ধ করে ফেলেছেন) পারফরম্যান্স দিয়ে। অনৈতিক প্রক্রিয়ায় অন্যের হক্ব নষ্ট করে, অবৈধ পন্থায় শিক্ষকতায় এসে "হ্যান করেঙ্গা, ত্যান করেঙ্গা" দিয়ে তাকে মূল্যায়ন ভীষণ ভুল পদ্ধতি। মূল্যায়নের এই ত্রুটিপূর্ণ পদ্ধতির কারণেই অযোগ্যতার দুষ্টচক্রের সহায়তায় শিক্ষকতার মত মহান পেশায় অপদার্থ-অথর্ব অশিক্ষিতদের আধিপত্য দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে।
আবার এই অযোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকারা শিক্ষকতা পেশাকে কলঙ্কিত করছে একচোখা পক্ষপাতিত্ব এর মাধ্যমে, ছাত্রছাত্রীদের মানসিক নিপীড়ন করে, নম্বরপ্রদানে বৈষম্য করে, যৌননিপীড়ন করে, এবং আরো আরো অযোগ্য নিয়োগ দিয়ে।
একজন অযোগ্য কখনোই চাইবেনা তার চেয়ে অধিক যোগ্য কেউ শিক্ষক হোক। এ কারণে সে এমন কাউকে খোঁজে যার মেরুদণ্ড হবে বন্ধক দেওয়া, যার কাছে নিরঙ্কুশ আনুগত্য ও অন্ধ ভক্তি পাওয়া যাবে৷ এই অমেরুদণ্ডী দশার কারণেই এখন একাডেমিক অঙ্গনে ন্যায়বিচার নাই। কোনো সুশিক্ষা নাই।
একচোখারা আগে থেকে ঠিক করে রাখে কোনো তেলবাজটিকে প্রথম বানাবে, কাকে কিছুইতে প্রথম হতে দেওয়া যাবে না৷ এরা এমন জালিমের জালিম যে, এই বুদ্ধিবৃত্তিক সন্ত্রাসবাদ করেও শিক্ষক হিসেবে লজ্জা অযোগ্যতার দুষ্টচক্র
~°~
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদ্বয় পরস্পরের কন্যার জন্য চাকরি সম্প্রদান করেছেন বলে খবর ছেপেছে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক ও অনলাইন সংবাদমাধ্যম।
তারা নিজ ক্ষমতাবলে এ নিয়োগ দিয়েছেন এতে সন্দেহ নাই। তবে সমস্ত দায় কেবল উপাচার্যদের দিলে সেটি উনাদের ব্যাপারে ''ফেয়ার জাস্টিস" হয়না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি শিক্ষক নিয়োগের সময় নানা মহল সক্রিয় হয়। এর মধ্যে উপাচার্যও একটি পক্ষ। এই পক্ষের মধ্যেই আরো উপপক্ষ রয়েছে।
যেমন--শিক্ষক সমিতি, ডীন, বিভাগের সভাপতি, এমন কি কখনো কখনো ক্ষমতাসীন বা বিরোধী রাজনীতি করা কোনো শিক্ষক/শিক্ষিকা৷
এই মহলগুলোর ক্ষমতা নির্ধারিত হয় উপাচার্যের কে কত বেশি কাছের তার ওপর ভিত্তি করে।
সব সময় কেবল যে উপাচার্যের পছন্দের প্রার্থী নিয়োগ হয় তা নয়, সভাপতির পদলেহনকারী বা সভাপতি নিজ ক্ষমতাবলয় শক্তিশালী ও টেকসই করার জন্য নিজের আনুগত্যের নিশ্চয়তা যার মধ্যে পাবেন এমন কাউকেই নিয়োগ দিতে চান৷
ত্রিশালে আমি একটি মৌখিক পরীক্ষা দিয়েছিলাম। সেই নিয়োগে বোর্ডে বিভাগের সভাপতির একচোখা পক্ষপাতিত্ব আজো আমার চোখে ভাসে। আমাকে কোনো উত্তরই শেষ করতে দিচ্ছিলেন না।
ধরেন, হিজিমনি, কালচারাল এগ্রেসন, এইসব নিয়ে প্রশ্ন করেছিল যা আমি আলহামদুলিল্লাহ অক্সফোর্ডের টিচারকেও ভেজে খাওয়াতে পারি। তো তিনি আমাকে কথাই বলতে দিলেন না, উত্তর শেষ করার আগেই আরেকটি প্রশ্ন করে ডিস্টার্ব করতেছিলেন! এ বিষয়টি খুবই বেদনার সঙ্গে তৎকালীন উপাচার্য ও এক্সটার্নাল লক্ষ্য করলেন, কিছুই বললেন না।
একই ঘটনা কুমিল্লায়ও ঘটলো। কুমিল্লার সে সময়ে সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত উপাচার্য মহোদয় একাডেমিক্যালি সাউন্ড ও ভীষণ কোয়ালিফাইড হওয়ায় অন্যদের দুষ্টুচিন্তা ধরে ফেললেন হয়তো। তিনি অন্যদের থামিয়ে আমাকে বলতে দিতে উনাদের নির্দেশ দিলেন! আলহামদুলিল্লাহ দারুন করলাম। আমার গবেষণা, লিখিত বই, অভিজ্ঞতার ধারে কাছেও কেউ ছিলোনা, এবং আমার বিশ্বাস ফেয়ারলি খাতা যাচাই করলে রিটেনেও আলহামদুলিল্লাহ ফার্স্টই হইছি! তথাপি, আমাকে নেওয়া সম্ভব হইলো না কী কারণে তা আজো আমি জানিনা।
আর এই বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি পরীক্ষায় আলহামদুলিল্লাহ সবচেয়ে ভালো করলেও আগের একজন নির্ধারিত থাকায় আমাকে নিলো না। বলা হলো পরের সার্কুলারে এপ্লাই করতে। সেই সার্কুলার আজো দেখা গেলো না! আল্লাহ সাক্ষি।
আমার অভিজ্ঞতা বলে, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগগুলোতে নিজের একাডেমিক যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা ও গবেষণার ওপর নির্ভর করে আপনি কোনো ধরনের লবিং, তদবির নিয়ে যাচ্ছেন না এটাই সবচেয়ে বড় 'অযোগ্যতা' বলে বোর্ডে পরিগণিত হয়৷ কারণ?
অনেক কারণের মধ্যে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর চলে আসবে। 'এক্সটার্নাল'--অন্য এক বা একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিয়োগ বোর্ডে থাকা অধ্যাপকরা নিজের বলয়ের ভেতরে নিয়োগ দিতে চান।
এই ক্ষেত্রে বিশেষ বিশেষ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকগণ নিজস্ব 'এক্সটার্নাল সিন্ডিকেট' তৈরি করেন। এ কারণে ও তো অমুক ছারের ছাত্র/ছাত্রী, ও তো অমুক ভার্সিটির ছাত্র/ছাত্রী বলে নিয়োগ হয় অনেকের। প্রকৃত মেধা যাচাইয়ের চেয়ে এ এক্সটার্নাল গ্যাং নিজেদের অপেক্ষাকৃত কম যোগ্যতাসম্পন্ন লোকদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভেড়াতে ব্যস্ত হয়। তাদের ইনফ্লুয়েন্স জোন বৃদ্ধি করতে এই চেষ্টা।
অর্থাৎ কেবল উপাচার্য ভোটের কারণে নিয়োগ দেন তা নয়, রাজনৈতিক ফোন বা এক্সটার্নালদের আবদার মেটাতেও নিয়োগ দেন, দিতে হয়।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে হইলো কী? ক্ষমতাসীন দলের সম্পূর্ণ বিপরীত রাজনীতির লোকের সন্তানদেরকেও শিক্ষক বানালো!
অবশ্য ব্যক্তিত্বসম্পন্ন গবেষণাপ্রিয় যোগ্যতায় অনন্য একাডেমিক্যালি এনরিচড উপাচার্য থাকলে তিনি যোগ্যজনকেই নিয়োগ দেন। এই নিয়োগে ভেতর বা বাইরের কোনো অসাধু প্রভাবই তাকে টলাতে পারে না। কারণ, একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হওয়ার পরে এ পৃথিবীতে তার কী চাওয়ার? এর চেয়ে সম্মান আর হতে পারে না৷
এক্সটার্নাল সিন্ডিকেটে আসি। আমার ক্ষেত্রে, বিশেষ একটি বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রীক যে সিন্ডিকেট রয়েছে সেটিই প্রধান বুদ্ধিবৃত্তিক অসততার নজির রেখে চলেছেন। আমার মনে হয় যারা বিভিন্ন পাবলিক বা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দেন তারা এটি ভালো করে অনুধাবন করেন, কিন্তু নিয়োগ না পাওয়া বা ভবিষ্যৎ অশ্বডিম্ব চাকরিটি হারানোর ভয়ে চুপ করে থাকেন।
প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় নিয়োগেও সমস্যা আছে। স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রগতিশীল বলে পরিচিত একজন সুশীলার এক্সটার্নাল হিসেবে অসাধুতা আমার চোখে এখনো ভাসে।
তাই, কেবল ক্ষমতার বলয়ের শিক্ষকরা এমন নিয়োগ দেন তা আমি বিশ্বাস করিনা, আমি মনে করি আমাদের শিক্ষকদের মধ্যে ক্ষমতা পেয়ে তাকে ন্যায়, হক্ব, সুবিচার ও সততার সঙ্গে ব্যবহার করার মত মানুষ খুব খুব কম।
যারা সৎভাবে রিক্রুট করেন আমি বিশ্বাস করি, তারা অশেষ পুন্যের কাজ করেন। আর যারা কারো হক্ব নষ্ট করে অন্যদের নিয়োগ দেন, তাদের এই হক্ব নষ্টের বিচার আল্লাহ ওপারে নিশ্চয়ই করবেন। এ পারেও অনেকে দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত হন, প্রায়শ্চিত্ত হয় কি তাতে?
শিক্ষক নিয়োগে শিক্ষকদের ইন্টার্নাল আর এক্সটার্নাল এই সিন্ডিকেটের বাইরে রাজনৈতিক ও প্রভাবশালী মহলের ক্ষমতার বলয়ও কাজ করে। এর মধ্যে জাতীয় রাজনীতি, স্থানীয় রাজনীতি এবং ছাত্ররাজনীতি তিনটি বিষয়ই একসঙ্গে বা পৃথকভাবে বা পরস্পরের সঙ্গে মিলিত হয়ে কাজ করতে পারে। তবে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, মেরুদণ্ডসম্পন্ন যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকাদের রাজনৈতিক প্রভাব অন্যায় আবদারে টলাতে পারে না। যার রাজনৈতিক ব্যক্তিদের নিকট থেকে সুবিধা পাওয়ার অভিলাষ আছে, কিংবা যিনি রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার করে সুবিধাভোগ করছেন তিনি তো রাজনৈতিক প্রভাবের কাছে নতি শিকার করবেনই, যদিও এর কোনো নীতিগত বৈধতা নেই।
এই ধরনের নিয়োগ সম্প্রতি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে হয়েছে বলে পত্রিকায় সংবাদ দেখবেন। আমি একমাত্র প্রার্থী হিসেবে অভিজ্ঞতা ও অনেক গবেষণা, একটি বই নিয়ে গেলাম, আলহামদুলিল্লাহ দারুন পরীক্ষাও দিলাম--তবুও আমার সঙ্গে জুলুম করলো। নামে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়--কাজে ইসলামী নয় এটি শতভাগ নিশ্চিত! নিশ্চয়ই আল্লাহ এর বিচার করবেন।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি পরীক্ষায় আমি আল্লাহর রহমাতে ভালো করার পরেও আমাকে বাদ দেওয়ায় খুবই বেদনাদায়ক নজির স্থাপিত হয়েছিল। আমি সে বিচার মহান আল্লাহর কাছে দিয়েছি। আমি ঐ বিচারালয়ে বিশ্বাসী যেখানে আমার সাক্ষি, উকিল, বিচারক সবই মহান আল্লাহ।
কন্যাদ্বয়ের চাকরিপ্রাপ্তিতে ফিরে আসি। উনারা হয়তো দেখবেন 'বেশ ভালো শিক্ষক/ শিক্ষিকা' হয়ে উঠবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্লাটফর্ম ব্যবহার করে নানা গবেষণা ও দেশের বাইরে পড়তে যাওয়ার সুযোগও লাভ করবেন।
একই সঙ্গে কলিগদের নিকট মনে হতে পারে 'আরে ওরা তো অতোটা অযোগ্য না', ছাত্রছাত্রীদের কাছে মনে হতে পারে '' ছার/ম্যাদামরা তো স্লাইড খুলে দারুন মিহিস্বরে পড়ান"! কিন্তু এসব হক্ব কথা বা ফেয়ার কম্প্যারিজন নয়। কারণ, তার আসল ইট, ভিত্তির গাঁথুনিতেই সমস্যা। তার 'বিসমিল্লায় গলদ'। সে এইখানে এসেছে ক্ষমতা, প্রভাব, লবিং বা তদবিরের কারণে এবং একই পদে তার চেয়ে অধিক যোগ্যতাসম্পন্ন কারো হক্ব নষ্ট করে।
তাকে বিচার করতে হবে এইখানে আসার প্রক্রিয়া দিয়ে বা এখানে আসার আগে তার একাডেমিক (যদিও একাডেমিক মূল্যায়নও অযোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকারা প্রশ্নবিদ্ধ করে ফেলেছেন) পারফরম্যান্স দিয়ে। অনৈতিক প্রক্রিয়ায় অন্যের হক্ব নষ্ট করে, অবৈধ পন্থায় শিক্ষকতায় এসে "হ্যান করেঙ্গা, ত্যান করেঙ্গা" দিয়ে তাকে মূল্যায়ন ভীষণ ভুল পদ্ধতি। মূল্যায়নের এই ত্রুটিপূর্ণ পদ্ধতির কারণেই অযোগ্যতার দুষ্টচক্রের সহায়তায় শিক্ষকতার মত মহান পেশায় অপদার্থ-অথর্ব অশিক্ষিতদের আধিপত্য দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে।
আবার এই অযোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকারা শিক্ষকতা পেশাকে কলঙ্কিত করছে একচোখা পক্ষপাতিত্ব এর মাধ্যমে, ছাত্রছাত্রীদের মানসিক নিপীড়ন করে, নম্বরপ্রদানে বৈষম্য করে, যৌননিপীড়ন করে, এবং আরো আরো অযোগ্য নিয়োগ দিয়ে।
একজন অযোগ্য কখনোই চাইবেনা তার চেয়ে অধিক যোগ্য কেউ শিক্ষক হোক। এ কারণে সে এমন কাউকে খোঁজে যার মেরুদণ্ড হবে বন্ধক দেওয়া, যার কাছে নিরঙ্কুশ আনুগত্য ও অন্ধ ভক্তি পাওয়া যাবে৷ এই অমেরুদণ্ডী দশার কারণেই এখন একাডেমিক অঙ্গনে ন্যায়বিচার নাই। কোনো সুশিক্ষা নাই।
একচোখারা আগে থেকে ঠিক করে রাখে কোনো তেলবাজটিকে প্রথম বানাবে, কাকে কিছুইতে প্রথম হতে দেওয়া যাবে না৷ কেউ প্রশ্ন করলে সেই প্রশ্নের উত্তর দিতে না পারলে তাকে কম নাম্বার দেয়, নাম দেখে মুখস্ত নাম্বার দেয়! ফলাফল নিয়ে বাটপারের মত স্বেচ্ছাচারীতা করে! এরা এমন জালিমের জালিম যে, এই বুদ্ধিবৃত্তিক সন্ত্রাসবাদ করেও শিক্ষক হিসেবে লজ্জা পায়না! অর্থাৎ, একজন অযোগ্য যখন শিক্ষক-শিক্ষিকা হয় তাতে রাষ্ট্র কেবল আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় তা নয়, শিক্ষার্থীদের মনোজগতেরও অনিঃশেষ ক্ষতিসাধন হয়। বহু শিক্ষার্থী পাবেন যারা শিক্ষক-শিক্ষার্থী নামের পাষণ্ড অপদার্থদের জুলুমের কারণে ট্রমাটাইজড হয়ে গেছে! এটাই অযোগ্যতার দুষ্টচক্র এর নির্মম পরিণতি।
শিক্ষকদের সম্মান কেন লোপ পাচ্ছে এটা অনেকেই অনুধাবন করেন না। শিক্ষকদের সম্মান হ্রাস পাওয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ শিক্ষক হওয়ার প্রক্রিয়ায় গলদ। কোন শিক্ষক কীভাবে নিয়োগ পেয়েছে বা কীভাবে নিয়োগ দিচ্ছে তা বিশ্ববিদ্যালয়ে লুকানো থাকে না। আপনিই বলেন।
কেউ অন্যের হক্ব নষ্ট করে একটি জায়গায় এসেছে এটা আপনি জানার পরে তার মুখের নীতিকথা আপনার কানে সহ্য হবে? তার ঐ ডেস্কে দাঁড়ানোর যোগ্যতা নেই (আদতে স্লাইড, বই, নোট দেখে ছাড়া অধিকাংশই অযোগ্যরাই কিছু বলতে পারে না। এটাই ন্যাচারাল জাস্টিস), ঐখানে দাঁড়ানোর কথা তার নয়--সে অপর একজনের ন্যায্য অধিকার লুটে শিক্ষক/শিক্ষিকা সেজে বসে আছে। তাকে কেনো ছাত্রছাত্রী বা অন্য লোকে সম্মান করবে? সম্মান-মর্যাদা ভেতর থেকে আসে। এটি জোর করে আদায় করা সম্ভব নয়। এ কারণেই কিছু পেশাজীবি স্বচ্ছ নিয়োগ দেওয়ার শক্তিতেই শিক্ষকদের নানা প্রাপ্তিকে সংকুচিত করতে দ্বিধা করছেনা। অথচ রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজে একসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ডাকা হতো। এখন, আমাদের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে শিক্ষকদের অবদান একেবারেই কম এবং তাদের প্রায় ডাকাও হয়না বলতে গেলে। কেন ডাকবে? সবাই জানে কারা এখন কী প্রক্রিয়ায় শিক্ষকতায় আসছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে মেধাবী বলে যারা পরিচিত তারা তদবির বা সুনজরের অভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেনা অথবা নিজের মেধায় চাকরি পেতে শিক্ষকতা ছাড়া অন্যান্য যে সব পেশা ফেয়ার রিক্রুট করে সেখানে চলে যাচ্ছে। এইভাবেই শিক্ষকদের সম্মান যারা আনবে তারা অন্যান্য পেশাকে সমৃদ্ধ করছে! আর যার ওপেন কম্পিটিশনে একজন কম্পিউটার অপারেটর হওয়ারও যোগ্যতা নাই সে শিক্ষক-শিক্ষিকা হয়ে ৯-৫টা চাকরি করে দেশের মানুষের কষ্টের অর্থে বেতন-ভাতা খাচ্ছে!
অসৎ প্রক্রিয়ায় যারা শিক্ষক-শিক্ষিকা হচ্ছেন তাদের কোনো উৎপাদনশীল চিন্তা নাই, কোনো যুগান্তকারী ভাবনা নাই, কোনো পৃথিবী বদলানো কর্মের চিন্তা নাই, ছাত্রছাত্রীদের জীবনকে গড়ার ভাবনা ও কর্মপন্থা নাই, নীতি ও নৈতিকতা নাই, সমাজ ও রাষ্ট্রকে সুপরামর্শ দেওয়ার তাগিদ নাই, দল-মত-ধর্ম নির্বিশেষে নিরপেক্ষ ভাবনার ইচ্ছা নাই, গবেষণার প্রতি প্রেম নাই, এবং দুঃখজনক হলেও সত্য নিজেদের প্রাপ্য মর্যাদার অধিকার আদায়েরও সক্ষমতা নাই! কেবল নাই আর নাই!
এই হচ্ছে অযোগ্যতার দুষ্টচক্রের ফল। অথবা কুফল!
0 Comments