সর্বশেষ

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান কি স্বৈরাচারী একনায়ক?

রজব তৈয়ব এরদোয়ান কি স্বৈরাচারী একনায়ক?

~°~
এরদোয়ানের ব্যাপারে পশ্চিমাদের প্রোপাগান্ডার মূল হচ্ছে তাকে 'একনায়ক' বা 'ডিকটেটর' বলে পরিচয় করিয়ে দেওয়া।

পশ্চিমা মিডিয়া লজ্জা শরমের মাথা খেয়েই এই কাজটি করছে, করবে৷ 

কিন্তু একবার ভেবে দেখুন, মানে, বুদ্ধিটা খাটান আর কী যে, একজন একনায়ক ৪৯.৯% সমর্থনে এসে থেমে থাকবে কেন? 

সে তো কারচুপি হোক বা ভয় দেখিয়ে হোক বা ক্ষমতার অপব্যবহার করে হোক ০.২% ভোটের ব্যবস্থা করতেই পারতো। 

বরং বিভিন্ন কেন্দ্রে সরকারি দলের এজেন্টরাই একাধিক বার ভোট গণনা করার দাবি জানিয়েছে! 

এ থেকে বোঝা যায়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রচলিত অসৎ নির্বাচন ব্যবস্থার মত তুরস্কের নির্বাচন ব্যবস্থা পঁচে যায়নি। 

সেখানে প্রেসিডেন্টের বিশাল ক্ষমতা থাকার পরেও 'সুপ্রিম ইলেকশন কাউন্সিল' স্বাধীন।

পশ্চিমা গণমাধ্যম এই বিষয়গুলো কোনোদিন আনেনা সামনে। 

তাদের অনুকরণ করা আমাদের মিডিয়াও এটা বলবেনা।

আদতে ইউরোপের একটি ভীতি রয়েছে তুরস্কের প্রতি। এটি আদিকালের ভয়। 

তুর্কি জাতি যখনই ক্ষমতাধর হয়ে ওঠে তখন পশ্চিমাদের সভ্যতার ভিত্তিভূমি গ্রিসসহ নানা দেশ সন্ত্রস্ত হয়ে ওঠে! 

এ ভীতির যৌক্তিক কারণ রয়েছে৷ 

ওসমানী তুর্কি খেলাফত ইউরোপের বিভিন্ন দেশকে তাদের ছোট প্রদেশ বানিয়েছিল।

ইউরোপ যে তুর্কিয়েকে 'সিকম্যান' বলে এর কারণ একটি 'শক্তিশালী তুরস্ক'ভীতি।

সিকম্যানের হাতে চপেটাঘাত খাওয়ার ইতিহাস চাপা দিতে এই রেটরিক।

তুর্কিদের সঙ্গে ইউরোপের ১০০ বছরের নানা চুক্তি শেষ হচ্ছে ২০২৪-এ! 

বহু পুরোনো হিসেব নিকেশ যদি এরদোয়ান হাজির করেন?

ইতোমধ্যে তুর্কির ডিফেন্স সেক্টর সেল্ফ-ডিপেন্ডেন্ট তো হয়েছেই! অর্থনীতিও খারাপ নয়! 

পররাষ্ট্রনীতিতে অবৈধ ইসরায়েলের ব্যাপারে নীরবতা ছাড়া বাকি অংশে ভালোই বার্গেইনিং করছে তুরস্ক। 

আফ্রিকায়, বলকান ও ককেশাসে 'সাম্রাজ্য'ও বিস্তার করছে মানবতার নামে। 

এ দ্বন্দ্ব বহু আগের! 

ট্রয় বনাম গ্রিসের দ্বন্দ্ব তো জানেনই। এই সেইদিন ১৯৭৪ সালে সম্ভবত তুর্কি জাতি অধ্যুষিত সাইপ্রাসের একটি অংশ তুরস্ক গ্রিসের থেকে নিয়ে গেছে!

আর তুর্কি শক্তিশালী হলে বসফরাস পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করলে পশ্চিমাদের খবরদারি হ্রাস পায়। 

তুর্কি শক্তিশালী হলে মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্স, সৌদি আরব ও ইরানের খবরদারিতে ভাগ বসায়! 

ইউরোপীয় বিভিন্ন নীতিতে তুরস্ক বাঁধ সাধে৷ যেমন--ন্যাটো জোটে আসার ব্যাপারে ফিনল্যান্ড ও নরওয়ের ব্যাপারে তুর্কির আপত্তি বিশ্বগণমাধ্যমে এসেছে।
এ জন্য তারা কামাল পাশার মত একটি দালালকে ক্ষমতায় বসাতে মরিয়া!

তুর্কির শক্তিশালী অবস্থান পশ্চিমাদের মিত্র সৌদি আরবের নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জিং করে তোলে। 

এ কারণে আরব গণমাধ্যমেও দেখবেন এরদোয়ানবিরোধী বয়ান! 

মার্কিন, ইরান ও রাশিয়ার মিডিয়াও এরদোয়ানবিরোধী বার্তা দেখবেন, তার নিজস্ব নীতির কারণে।

এরদোয়ানের সমস্যা আছে। বিরোধীমত দমনে, কুর্দিদের ওপর নিপীড়নে, অবৈধ ইসরায়েলের সঙ্গে দহরম মহরমসহ বেশ নেতিবাচক কর্ম এরদোয়ানের খাতায় রয়েছে।

গণমাধ্যমকে ব্যবহার করে নিজের পক্ষে ক্যাম্পেইনের চেষ্টার অভিযোগ থাকলেও সেটিকে উৎরে গেছেন বলা যায়।

তথাপি এতসব নেতিবাচকতার মধ্যেও এতো দীর্ঘসময় ক্ষমতায় থাকার পরেও এরদোয়ান ভোট কারচুপি করেননি। বিরোধীরাও এ অভিযোগ দেয়নি। 

তারা ২৮ মে ২০২৩ নির্বাচনের জন্য কাজ করে যাচ্ছে! 'ডিকটেটর' এর অধীন নির্বাচনে জয়ের আশা করছে!

তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নিরঙ্কুশ বিজয় তো আসেই নাই, দ্বিতীয়বার ভোটে জিতবেন এর নিশ্চয়তাও নাই। 

এটাই তো আমার কাছে গণতান্ত্রিক সৌন্দর্য (যদিও গণতন্ত্রের মধ্যেও সমস্যা আছে। ধরেন কেউ ৫১% ভোট পেলো, সে বিজয়ী! তাইলে বাকি ৪৯% এর বিরোধীমতের মূল্য গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নেই।)। এই লোককে পশ্চিমারা যে 'ডিকটেটর' বলে তা যে অসত্য ও অপপ্রচার এই নির্বাচনগুলো তার সবচেয়ে উজ্জ্বল প্রমাণ।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেননি--এ কথা প্রমাণ করতে রবীন্দ্র মৌলবাদীদের অনেকেই বিভিন্ন যুক্তি, তর্ক, তথ্য হাজির করেন। 

তারা মুখে ফেনা তোলেন যে, রবীন্দ্রনাথ অমুক মাঠে তমুক মাঠে ছিলেন না ইত্যাদি। 

আসলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে রবীন্দ্রনাথ কী করেছিলেন তা জানতে আপনাকে রকেট সায়েন্স অধ্যয়ন করা জরুরি নয়।

আপনি শুধু বলবেন, রবীন্দ্রনাথ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সমর্থন করেছেন, সমর্থন করে জোরালো বিবৃতি বা কোনো লেখা লিখেছেন--এমন একটি দলিল দেন। 

ন্যায় আর অন্যায়ের লড়াইয়ে মুখ বুজে 'নন্দনতাত্ত্বিক ঘোর' সৃষ্টি করলে সেটি বুর্জোয়া সাহিত্যসমাজে বাহবা পেতে পারে, ইতিহাসের নিকট প্রশ্নহীন তা হয় না। 

এরদোয়ান ডিকটেটর কী না--এই প্রশ্নের জন্য 'ডিকটেটর' এর অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের ফলটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ বলে আমি মনে করি।
এরদোয়ানের বিরুদ্ধে অগণতান্ত্রিক সেনা অভ্যুত্থানে সমর্থনকারী দেশ ও সরকারগুলো, মুসলিম বিদ্বেষকে পার্লামেন্টের মাধ্যমে আইন করা লিবারেল বলয় আর ক্যাপিটল হিলে দাঙার মধ্যেও গণতন্ত্র খোঁজা মন-মিডিয়া এরদোয়ানকে 'ডিকটেটর' বলে প্রমাণ করতে চাইলে সেটিও প্রশ্নবিদ্ধ রাজনৈতিক রূপক বলে পঠিত হওয়া উচিত।
পাঠ অনুভূতি

Post a Comment

0 Comments