সর্বশেষ

হজের ঘোষণার তাৎপর্য কী? হজ্বের ঘোষণা৷ লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক

হজ্ব বা হজ্বের জন্য মুসলমানরা সমস্বরে কী পাঠ করে?
এটি একটি ঘোষণা! 

এতো শক্তিশালী কাব্যিক ঘোষণা আমি আর একটিও এ জগতে পাইনি! 

যেকোনো মানুষ এর অন্তর্নিহিত অর্থ বুঝলে এই মহাশক্তিধর ঘোষণাটিকে ভালো না বেসে পারবে না।

"লাব্বাঈক আল্লাহুম্মা লাব্বাঈক

লাব্বাঈকা লা শারিকা লাকা লাব্বাঈক 

ইন্নাল হামদা, 

ওয়ান্নি'য়ামাতা

লাকা আল মুলক
লা শারিকা লাকা
লাব্বাঈক আল্লাহুম্মা লাব্বাঈক।"

হজ্বে গিয়ে প্রকাশ্যে এই ঘোষণা দেওয়ার মধ্যে গভীর তাৎপর্য রয়েছে৷ 

প্রথমত, আল্লাহর সামনে প্রকাশ্যে হাজিরা দিয়ে তাঁর উপর ঈমান এনে আর সমস্ত কিছুকে গৌণ হিসেবে গণ্য করা হয়

দ্বিতীয়ত, আল্লাহর একত্ববাদকে নির্দ্বিধায় স্বীকার করে নেওয়া হয় (অমুক আছে বলে এই পাচ্ছি, তমুক ছিলো বলে বেঁচে আছি, এর কারণে আমি শান্তিতে আছি এগুলো এড়িয়ে সর্বক্ষেত্রে আল্লাহকেই বিধানদাতা ও একমাত্র স্রষ্টা বলে গ্রহণ করা)

তৃতীয়ত, সমস্ত প্রশংসা একমাত্র আল্লাহর জন্য প্রাপ্য--এই ঘোষণা দেওয়া হয় (কোনো মানুষের বা সিস্টেমের তেলবাজি, অতিরঞ্জিত স্তুতি, অতিকীর্তন করিনা। সর্বক্ষেত্রে আলহামদুলিল্লাহ বলি। সমস্ত অর্জনের জন্য কৃতজ্ঞ হই। ব্যর্থ হলে আল্লাহর কাছে সাহায্য বা আশ্রয় চাই।)

চতুর্থত, হজ্বের ময়দানে বসে "রাজত্ব, আধিপত্য ও ক্ষমতাকাঠামোর কর্তৃত্ব কেবল আল্লাহর" এই ঘোষণা দেওয়া হয় (সরকার, পাওয়ার, সুপারপাওয়ার, এম্পায়ার যা আসুক না কেন এই সমস্ত ক্ষমতার বা কর্তৃত্বের চেয়ে মহাকর্তা আল্লাহ শ্রেষ্ঠ, তিনিই নিয়ন্ত্রণকারী এবং তাঁর নিকট সমস্ত কিছুর জবাবদিহি করতে হবে) এবং
পঞ্চমত, আবার একত্ববাদের ঘোষণা এবং স্রষ্টার সামনে উপস্থিত হয়ে এ ঘোষণার পুনরাবৃত্তি চলমান রাখা। 

হজ্ব কেবল বিলাসীতা বা লোকদেখানো হলে হজ্বের মূল্য বোঝা যাবে না। 

কেবল খেজুর খেয়ে আর বাড়িতে জমজমের পানি এনে পাপমুক্তির আসা করা বোকামি। 

হজ্বের ঘোষণা জীবনের সর্বক্ষেত্রে বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করাই হজ্বের মৌলিক শিক্ষা। মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (স) এর সমস্ত সাহাবি হজ্বের ঘোষণা কার্যকর করতে আজীবন পৃথিবীর প্রান্তে প্রান্তে দাবড়ে বেড়িয়েছেন। 

হজ্বের সময়েই আল্লাহ কুরবানী হিসেবে পশু জবাই করে তা থেকে দুস্থ ও অভাবীদের আহার করাতে নির্দেশ দিয়েছেন। 

একটি সময় হজ্ব করে আসা লোকের সমাজে আলাদা গ্রহণযোগ্যতা ছিল এ কারণে যে, তাঁরা নবীর দেখানো একটি পথে ঈমানের ঘোষণা দিয়ে এসেছেন! ঘরে ফিরে তা বাস্তবায়নও করেন।

তিতুমীর বা হাজি শরিয়ত উল্লাহর কথাই ভাবেন। 

তাঁরা হজ্ব করে এসে 'লাকা আল মুলক' ধারণ করে ক্ষমতাকাঠামোকে চ্যালেঞ্জ করে দাবি করলেন, 'আসমান ও জমিনের মালিক আল্লাহ। জমিদার বা তাদের দখলদার প্রভু ব্রিটিশ এই জমির মালিক নন। ফলে ভূমিহীন বলে কোনো শব্দ নাই। আমরা সবাই আল্লাহর জমির ওপর অধিকার রাখি। '!  

খুব ছোটবেলা থেকে মালিকানায় ব্যক্তিগত অংশ দেখে 'সমস্ত কিছু আল্লাহর' এই ধারণা আসতো। বড় হয়ে দেখি এটি খুবই আবশ্যিক ধারণা, ইসলামের জন্য। 

হাছন রাজা যখন গেয়ে ওঠেন, 'পরের জাগা পরের বাড়ি ঘর বানাইয়া আমি রই। আমি তো সেই জাগার/ঘরের মালিক নই' তখন এই ভূমির প্রশ্ন স্পষ্টরূপে সামনে আসে। 

ভূমির একক বা পারিবারিক মালিকানা দাবি করে যারা একে অপব্যবহার করে আল্লাহর মুল্লুকে 'জোর যার মুল্লুক তার' প্রতিষ্ঠিত করে তাদের জন্য হজ্বের ঘোষণাপত্রটি একটি মহাহুঁশিয়ারী।

অধ্যাপক আজফার হোসেনও আমাদের এ কথাই জানান যে, ইসলামে ভূমির এই সামষ্টিক মালিকানার ব্যাপারে সমাজতন্ত্রের তাত্ত্বিক গুরু কার্ল মার্ক্সও আগ্রহী হয়ে ছিলেন।

এ ব্যাপারে তিনি একাধিক নোট লিখেছেন। অন্য সময়ে এ নিয়ে বিস্তারিত আলাপ করবো।

হজ্বের শক্তিশালী এই ঘোষণা সমস্বরে উচ্চারিত হলে আমার ভীষণ ভালো লাগে, আপনারও লাগে হয়তো। 

কিন্তু এই ঘোষণার শিক্ষা গ্রহণ না করলে, বুঝে হৃদয়ে এই ঘোষণা বিশ্বাস না করলে আপনি অপূর্ণ থেকে গেলেন।

আল্লাহ আমাদের হজ্বের ঘোষণা থেকে শিক্ষা গ্রহণের মানসিকতা দিন।
পাঠ অনুভূতি

Post a Comment

0 Comments