সর্বশেষ

নূর-মেন্দি সাফাদি গোপন বৈঠক || সাফাদি কেনো চায় নূর ধ্বংস হোক? গণঅধিকার পরিষদ ভাবনা

অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, নূরুল হক্ব নূরের পাশে গণঅধিকার পরিষদের অপেক্ষাকৃত তরুণদের সংখ্যা অধিক। 

অন্যদিকে একটু বয়স্ক এবং নূরের সঙ্গে পদের দ্বন্দ্বে হেরে যাওয়া অনেকেই রেজা কিবরিয়ার সঙ্গে আছেন। 
আমি মনে করি, বাংলাদেশের রাজনীতিতে গণঅধিকার পরিষদের একটি সম্ভাবনা ছিল (এবং নিঃসন্দেহে তা মরে যায়নি)। 

নুরুল হক নূরের অবৈধ ইসরায়েলের নাগরিক মেন্দি সাফাদির সঙ্গে বৈঠক এবং রেজা কিবরিয়ার ফরহাদ মজহারের জাতীয় ইনসাফ কায়েমের সঙ্গে বৈঠক--তাদের কোন্দলের সূত্রপাত সেটি আমার মনে হয় না। 

এখানে আরো একটি বা একাধিক পক্ষ কাজ করতে পারে। সেখানে দেশীয় বা আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা সংস্থা বা তাদের দালালরাও কাজ করতে পারে।

নূররা যে ভুলটি শুরুতেই করেছে তা হচ্ছে, অর্থের স্বচ্ছতার অভাব রেখেছে। 

তারা নতুন ধারার রাজনীতিক হিসেবে বার্ষিক নিরীক্ষা বা অডিট রিপোর্ট প্রকাশ করেই তাক লাগাতে পারতো।

দ্বিতীয়ত, রেজা কিবরিয়াকে দলে আনা বা সাফাদির সঙ্গে বৈঠক করা ভুল কাজ। এ ধরনের ভুল করলে তা স্বীকার না করা রাজনীতির মাঠে ভালো নজির না।

সাফাদির সঙ্গে র এর এজেন্ট শিপনের সম্পর্ক এটি সবাই জানে। এরা আবার সরাসরি ভারতবর্ষের সঙ্গে আবার যুক্ত। 

নূরদের রাজনীতির অন্যতম নীতিই ছিল 'বাংলাদেশে ভার‍তবর্ষ বা অন্য যেকোনো রাষ্ট্রের আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধাচারণ' (যদিও মার্কিন, ভারত ও অন্যান্য এম্বাসির সঙ্গে তাদের যোগাযোগ- যাতায়াত দৃষ্টিকটু)। 

'ভুলে' সাফাদির সঙ্গে নূরের আলাপ করা রাজনৈতিক ভুল। আবার, কাউকে না জানিয়ে ভারতের দূতাবাসে যাওয়াও গর্হিত ভুল। 
ভারতের বিরুদ্ধে কড়া কথা বলে জনপ্রিয়তা পাওয়া নূরের ভারতের সঙ্গে গোপনীয় বৈঠক করা গর্হিত ভুল। 

তবুও এসব ভুল স্বীকার করে, অর্থের স্বচ্ছ হিসেব দিলেই সমস্ত কিছু বাদ দিয়ে আবার শুরু করা যেতো।

রাজনীতিতে ভুল হতেই পারে। মানুষের কাছে ক্ষমা চাইলে মানুষ ক্ষমা করে।

কিন্তু ইগোর কারণে হোক আর যার কারণেই হোক এটি হচ্ছেনা। 

এভাবে দলীয় কোন্দল যে "গণঅধিকার (রেজা)" ও "গণঅধিকার (নূর)" তৈরি করবে সেটি এরা কেন অনুধাবন করছে না?

যে ঘোষণাপত্র দিয়ে এরা দল গঠন করেছিল তার মৌলিক নীতিই ছিল ব্যক্তি ও পরিবারতান্ত্রিকতাকে পরিহার করা। 

কিন্তু দেখা যাচ্ছে রেজা বা নূর দুইজন ব্যক্তিস্বার্থে দলটির সমস্ত সম্ভাবনা নষ্ট করছে।

এখন সমাধান?

সমাধান হচ্ছে,  এ দুইজনকে এক জায়গায় করে এক হওয়া। 

তাদের দুইজনকেও বুঝতে হবে, ব্যক্তির চেয়ে দল বড়। 

এতো সুপ্ত শক্তি ও সম্ভাবনার একটি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের যেন ক্ষতি না হয় সেই চিন্তা করা।

তা না হলে কঠিন হবে টিকে থাকা। 

এই মাটিতে প্রবল পরাক্রমশালী মুসলিম লীগ উধাও হয়ে গেছে! 

আর এ দলটি এখনো নিবন্ধনও পায়নি (যদিও গণদল হয়ে উঠলে নিবন্ধন প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত নয়। গণের দল হলে নিবন্ধন ঘরে চলে আসবে একা একা)! 

তাই ভেবেচিন্তে দ্বন্দ্ব করা উচিত ছিলো।

এই মুহূর্তে আমি কী ভাবছি?

যদিও জাকারিয়া পলাশ ভাইয়ের মত প্রজ্ঞাবান ব্যক্তি নূরদের বিরুদ্ধে রেজার পাশে দাঁড়িয়েছেন (এবং সরকারকে নূরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছেন যা আমার মতে এই মুহূর্তে ক্ষোভের প্রকাশ ঘটলেও সর্বোচ্চ বিচক্ষণ আলাপ নয়) তথাপি সময়টিভিতে (৮ জুলাই,  ৯ জুলাই তাজওয়ার মাহমুদ, ২০২৩ এ) মেন্দি সাফাদির দেওয়া সাক্ষাৎকার আমাকে ক্রিটিক্যালি চিন্তা করতে বাধ্য করছেন!

ইন্টারেস্টিং না?

সাফাদি যদি নূরের সঙ্গে বৈঠক করেও থাকে তবে বিশ্বস্ত ষড়যন্ত্র সঙ্গী হিসেবে সাফাদির উচিত ছিলো নূরকে রক্ষায় এগিয়ে আসা। এ জন্য সে বলতে পারতো (বৈঠক করা বা না করার পরেও) যে, 'নূর বলে কাউকে আমি চিনিনা বা আলাপের ব্যাপারে আলাপ করতে চাইনা' এ ধরনের কথা।। 

যেমন--সময় যখন তারেক বা আসলাম এর কথা জানতে চেয়েছে মেন্দি সাফাদি তখন বলেছে এই সাক্ষাৎকার কেবল নূরের ব্যাপারে। 

এর মানে নূরকে ক্ষতি করার অনুমতি এসেছে র থেকে, কিন্তু তারেক বা আসলামের ব্যাপারে নীরব থাকার কথা বলা হয়েছে! 

অর্থাৎ নূরের ও গণঅধিকার পরিষদের এই নাজুক পরিস্থিতিতে সে নূরের কফিনে শেষ পেরেকটি মেরে দিতে সময় টিভিতে সাক্ষাৎকার দিয়েছে। 

তার মানে নূরের সঙ্গে বৈঠকে সাফাদির উদ্দেশ্য কী ছিলো? কয়েকটি অপশন ভাবুন।

১। নূরের সাপেক্ষে: সরকার পতনে সহায়তা করা। আন্তর্জাতিক সমর্থন আনা এবং নূর ও গণঅধিকার পরিষদের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি বৃদ্ধি করা বা আর্থিক সহায়তা (এ সময় নূর যদি তাকে না চেনে তবে সে মিথ্যুক। কেননা আসলাম চৌধুরী বা সজীব ওয়াজেদ জয়ের সঙ্গে তার নাম বেশ কিছু সংবাদমাধ্যমে আসে। নূর এ কথা সেদিনও ডয়েচে ভেলেতে 'খালেদ মুহিউদ্দিন জানতে চায়' অনুষ্ঠানে বললো। সুতরাং অর্থ বা সমর্থন যে কারণেই নূর এ লোকের সঙ্গে দুবাইতে দেখা করুক তা রাজনৈতিক ভুল। মহাভুল। কেননা, পার্টি এ বিষয়ে জানতোই না। পার্টির অনুমতি ছাড়া ব্যক্তি নূরের এ ধরনের সাক্ষাত ধৃষ্টতা ও গনবিরোধী কর্মকাণ্ড। এ জন্য তাকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়া উচিত।)

২। মেন্দি সাফাদির সাপেক্ষে: ক) আওয়ামীলীগ সরকারের বিরুদ্ধের শক্তিকে মদদ দেওয়া (যার কার্যত কোনো যৌক্তিক কারণ থাকতে পারে না। কারণ, আওয়ামী লীগের শাসনামলেই ইসরায়েলের ব্যাপারে বাংলাদেশের পাসপোর্টে থাকা অহিংস প্রতিবাদ 'Except Israel' বাদ দেওয়া হয় বা স্পাইওয়ার কেনাকাটাও হয় কিছু ইসরায়েলীদের কোম্পানি থেকে। যদিও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘে ভরা মজলিশে ফিলিস্তিনের মুক্তি আন্দোলনের সমর্থনও করেন।)

খ) মেন্দির সাপেক্ষে দ্বিতীয় কারণ, বাংলাদেশে ইসরায়েলের বন্ধু ভারতের আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধাচারণ করে রাজনৈতিক জনপ্রিয়তা অর্জন করা নুরুল হক নূর ও গণঅধিকার পরিষদকে 'ফাঁদে ফেলা'। ট্রাডিশনাল পলিটিকাল পার্টিগুলো ভবিষ্যতে সরকার গঠন না করলে নূররা সেই শূন্যস্থান পূরণে এগিয়ে আসলে যেন তাদের 'ফাঁদে ফেলে' আয়ত্বে রাখা যায় সেই চিন্তায় নূরকে  অভিলক্ষ্য করা (নূর নিজেও 'হানিট্রাপ' বিষয়ে বলেছে। এরশাদ এ ধরনের ট্রাপেই কি আজীবন ভারতের সপক্ষে ছিলেন?)। 

মেন্দি সাফাদি আমার মনে হয়, একইসঙ্গে ভারত ও ইসরায়েলের পক্ষে কাজ করেন। আন্তর্জাতিক রাজনীতি যারা বোঝেন তারা খোঁজ নিলে দেখবেন, বিজেপিশাসিত ভারত ও ইসরায়েল বিভিন্ন সময় নানা ইস্যুতে একই দলে অবস্থান করে।

আমার ব্যক্তিগত বিশ্লেষণ থেকে মনে হচ্ছে, নূর এই ফাঁদ বা ট্রাপে পড়ার আগেই ঘটনা ফ্ল্যাশ হয়েছে অথবা আগামী নির্বাচনের আগেই তাকে রাজনীতি থেকে উধাও বা ভ্যানিশ করার চিন্তা করা হচ্ছে। 

সাফাদি নূর ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ যোদ্ধাদের 'সন্ত্রাসী' বলছে এ কথা কেন মিডিয়ায় বলবে? 

এর অর্থ বাংলাদেশের মূলধারার মুসলিম গণমানসে নূরকে গণশত্রুতে পরিণত করা।

কোনো বৃহৎ শক্তির স্বার্থ ছাড়া মেন্দি এটি করবে না।

অর্থাৎ মেন্দি সাফাদি মূলত উপরে উল্লেখিত ২ এর (খ) কারণে নূরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। আর, নূর একেবারে ব্যক্তিগত পর্যায় থেকে এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন যা হয়তো খুবই ঘনিষ্ঠ কয়েকজন জানতে পারেন। 

তবে যারাই জানুক, এটা নূরের রাজনৈতিক জীবনকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে যেমন, তেমনই এ থেকে মুক্তি পেলে তার কঠিন একটি শিক্ষাও হবে যাতে ভবিষ্যতে আর এ ধরনের ভুলে জড়ানোর সম্ভাবনা কমার সুযোগ আছে।।

আমার এখনকার অভিমত, "নূর সাফাদির সঙ্গে 'জেনে' বা 'না জেনে' বৈঠক করেছিলেন এটি সত্য এবং এই বৈঠক নূরের রাজনৈতিক জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল। "

এটি মাফ চাইলে ক্ষমা পাওয়ার যোগ্য এখন হয়েছে, যখন সাফাদি মুখ খুলেছেন ভিডিওতে। 

সাফাদি কথা বলা মানেই হচ্ছে নূরের বিরুদ্ধে সে গিয়েছে। এর অর্থ মহাভুল করার পরেও নূরের ক্ষমা পাওয়ার সম্ভাবনা টিকে আছে।

এমন বৈঠক হওয়ার পরেও সাফাদির স্বার্থের জন্য নূর দীর্ঘমেয়াদী বিশ্বস্ত সহযোগী হবেনা--এটা জেনেই মেন্দি সাফাদি নূরের ব্যাপারে সাক্ষাৎকার প্রদান করেছেন। সাফাদিদের (তার প্রভু বা অথোরিটি) নিকট নূরুল হক নূর মোটেই নিরীহ নয় (বরং সম্ভাব্য হুমকিও বটে!), তারচেয়ে রেজা অপেক্ষাকৃত নিরীহ। 


নূর ইসরায়েলী নাগরিক মেন্দি সাফাদির সঙ্গে বৈঠক করেছে। 

এটি আবার সাফাদি প্রথম আলো ও সময় টিভিতে এসে বীরবিক্রমে বলছে এবং এই বলাটা নূরের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার ধ্বংস করেও দিতে পারে--এটি বোঝা যাচ্ছে!

মেন্দি এন সাফাদির সেই বক্তব্যকে গুরুত্বপূর্ণ প্রামাণ্য ধরে আবার নূরুল হক নূরের গোষ্ঠী উদ্ধার করছে একদল লোক!

কন্ট্রাডিকশন বুঝতে পারছেন?

ভাবা যায়, কী রাজনৈতিক বিচারবোধ এই নূরবিরোধী মাথা মোটাদের?

নাকি বোধ ঠিকই আছে (এ মাথা মোটা দশা কোনো এজেন্ডা বা পরিকল্পনার অংশ!)?

রেজা-নূরের দ্বন্দ্ব তারুণ্যনির্ভর গণঅধিকার পরিষকে ক্ষতিগ্রস্ত করলে সেটি মেন্দি সাফাদি বা ভারতবর্ষে তার আশ্রয়দাতাদের জন্য অধিক রাজনৈতিক মুনাফাপ্রদাকারী বলেই এই দুর্বল মুহূর্তে নূরকে আরো দূর্বল করতে সাফাদি সামনে এসেছে! 

শিপনের ফেসবুক পেইজ দেখলেও দেখবেন, রেজার অনুকূলেই তার এক্টিভিটি মনে হবে।

এ অবস্থায় নূরদের টিকে থাকা ভীষণ মুশকিল! 

না টিকলে অঙ্কুরেই সম্ভাবনা শেষ হবে! 

তবে যদি নূর ও তার নেতৃত্ব রেজাদের সঙ্গে মিশে-মিলে বা এককভাবে টিকে যায় তবে বাংলাদেশের রাজনৈতিক মাঠে তারা পাকা খেলোয়াড় হিসেবেই স্থায়ী আসন গেঁড়ে টিকে থাকবে এবং অদূরভবিষ্যতে তারা চমকপ্রদ সাফল্য পেলে তা সে সময়ের প্রেক্ষাপটে স্বাভাবিক ঘটনা হিসেবেও পঠিত হতে পারে।

সত্য উন্মোচিত হোক। অসত্যের পতন হোক।
পাঠ অনুভূতি

Post a Comment

0 Comments