আহমেদ বনাম আজাদ
হুমায়ূন আজাদ বেনামে নিজের লেখার প্রসংশা করে নিজে পত্রিকায় লিখেও (সূত্র: তসলিমার আত্মজীবনী) হুমায়ুন আহমেদ হতে পারেননি৷
তো, এই যে 'খ্যাত' না হতে পাওয়ার ব্যথা এইটা থেকেই তিনি জনপ্রিয়তাকে ছোট করতে চেয়েছেন।
হালের আবুল খয়ের মোহাম্মদ রইছুদ্দিন ঢালীরাও এটা করে। নিজেরা যা পায়নি তাকে নানা কিছু ট্যাগ দিয়ে খারিজ করা। খারেজি এরা।
অথচ হুমায়ুন আহমেদ এর যে কয়েকটি চরিত্র--মিসির আলি, হিমু, শুভ্র--তার ধারেকাছে যেতে পারে এমন কোনো সৃষ্টি তাদের নেই।
এ অর্থে তারা হুমায়ুনের কাছে ছোট লেখক, তথাপি হুমায়ূনের বড়ত্বের জন্যই এদের তিনি গুরুত্ব দেননি অথবা অবাগ্মী হুমায়ুন তা চাননিও।
শুধু একটা সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, হুমায়ুন আজাদ যে বাজে মানের লেখা লিখেছেন তা পড়ে অপছন্দ করতে মৌলবাদী হওয়া লাগেনা।
একটু বাস্তবে ফিরে আসেন।
বাংলাদেশের এ সময়ের বেশিরভাগ ইসলামবিদ্বেষীর মানস গঠনে হুমায়ূন আজাদের একটি ছোট্ট তবে শীর্ষস্থানীয় ভূমিকা আছে। অন্তত তাদের প্রিয় লেখকদের তালিকায় তিনি সবার উপরে৷
এ অর্থে হুমায়ূন আজাদ আরিফ আজাদেরই এন্টি-ইসলামিক সংস্করণ।
একটি লেখায় হুমায়ূন আজাদ নির্লজ্জের মত 'পশ্চিমকে শ্রেষ্ঠ' বলে তার পিছনে তেল দিয়ে ওকালতি করলেন। প্রাচ্যকে গালি দিলেন!
এ থেকে ধারণা করা যায় হুমায়ূন আজাদ পশ্চিমের মানসিক দাস ছিলেন। তার অনুসারীদের মধ্যে এ দাসত্ব স্পষ্ট দেখা যায়। দেখবেন, সবকিছুতে পশ্চিমা স্কেল এদের মানদণ্ড!
বিপরীতক্রমে, হুমায়ূন আহমেদ বা আহমদ ছফা (বাজে লেখা বাঙালি মুসলমানের মন), আহমেদ শরীফ, জসীমউদ্দিন তারা এ মাটি নিয়ে লিখেছেন, এ মাটির ভেবেছেন ও তাদের কর্মে তার বাস্তবায়ন করেছেন।
এজন্য তাদের লেখা বা কর্মের ছাপ বিতর্কের ঊর্ধ্বে না উঠেও একটি বিশাল অংশের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে।
হুমায়ুন আজাদ একটি ক্ষুদ্র গণ্ডীতে আবদ্ধ হয়ে আছেন! ইসলামদ্বেষ ও ঘৃণার চাষাবাদের ওপর তার টিকে থাকা নির্ভর করে।
হুমায়ূন আহমেদ এ দিক থেকে আজাদের চেয়ে যোজন-যোজন এগিয়ে!
হিমুস্রষ্টার ভালো লেখা আছে (খারাপ লেখাও আছে), জনপ্রিয় নাটক আছে (একঘেয়ে নাটকও আছে), ভালো সিনেমা আছে (ঘেঁটুপুত্র কমলা এর মত ফালতু সিনেমাও আছে) এবং অজস্র মানব-প্রকৃতি আছে তাকে টিকিয়ে রাখতে।
অন্যদিকে, আজাদ আমার মনে হয় একটি সর্বংসহা পৃথিবীতে হারিয়ে যাবেন। ঘৃণার বীজ দরকার না হলে আজাদেরও দরকার পড়বেনা। তবে ঘৃণার ঘরে বা ঘৃণাহীন সমাজে মনের খোরাক মিটাতে মিসিরস্রষ্টাকে দরকার হবে।
হুমায়ূন আহমেদের একটি দারুন দ্বন্দ্ব ছিল।
তিনি ভারতের ভক্ত ছিলেন। বাংলাদেশে 'ভারত জুজু' নিয়ে তিনি কলম ধরেছিলেন!
অথচ বাংলাদেশে কলকাতার লেখকদের ভাত মারার জন্য তিনি এককভাবে দায়ী।
এ জন্য হুমায়ূন আহমেদ আমাদের ও দাদাদের দেশের সাহিত্যাঙ্গনে (অন)/ আলোচিত হবেন আরো কয়েক দশক, এভাবে হুমায়ূন বেঁচে থাকেন। আর, আজাদ? ঘৃণার প্রয়োজনে!
পক্ষান্তরে, আজাদের বেশ কিছু লেখা কুম্ভীলকবৃত্তির দায়ে অভিযুক্ত। ইন্টারনেট সবার হাতে না আসায় তিনি ধরা খাননি, এই যুগে বেঁচে থাকলে খুব লজ্জায় পড়তেন!
হুমায়ূন আহমদের সব যে উত্তম তা নয়। আজাদেরও সব লেখা খারাপ নয়(কবিতা কিছু আমার পছন্দ)।
জীবনে বহুকিছুতে তারা দৃষ্টান্তমূলক কিছু করেননি। কিন্তু তার পরেও আজাদভক্তকুল হুমায়ূন আহমেদকে যেভাবে নাই করে দেয় অতোটা নিম্নমানের লেখক তিনি নন।
বিংশ শতাব্দির শেষ ভাগ আর একবিংশ শতাব্দির শুরুর বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস লিখলে তাতে নিঃসন্দেহে হুমায়ূন আহমেদ সামনের সারিতেই থাকবেন। আপনার বিবেচনায় সেই সারি থেকে সরিয়ে তাকে দ্বিতীয় সারিতে দিতে পারেন, কিন্তু তাকে গুণতেই হবে।
শুধু আজাদই সব নন! আজাদ তার লাল-নীল-দীপাবলীতে খুবই নিষ্ঠুর ও নির্লজ্জভাবে কাজী নজরুল ইসলাম, জসীম উদ্দিনকে গায়েব করতে চেষ্টা করেছেন। কিন্তু পেরেছেন?
আজাদের বাচ্চারাও হুমায়ূন আহমেদকে গায়েব করতে পারবে না।
পথের বাঁকে একজন হিমু অথবা মিসির অথবা রূপা এসে মনে করিয়ে দেবে হুমায়ূন আহমেদকে...!
0 Comments